“চিন্তার কি আর শেষ আছে?”

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৪ জুলাই, ২০১৪, ০৬:০৪:১৮ সন্ধ্যা



নাকি সুরে খুব অভিমান করে একজন গৃহিনী অভিযোগ করছেন। খুব সম্ভবত একটা গুড়া মশলার অ্যাড হবে। সেখানে গৃহিণী বলতে থাকে, ঘরের বুয়া ঠিকমতন আসে না, বাচ্চাদের অসুখ- ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে “চিন্তার আর তার কোন শেষ নাই”. কিন্তু এতসব ঝামেলার মধ্যেও অমুক ব্র্যাণ্ডের গুড়া মশলার কল্যাণে যে তার রান্না-বান্না নিয়ে কোন চিন্তাই করতে হয় না !!!অতএব, ‘গৃহিণীর মুখের হাসি, অমুক গুড়া মশলা ভালোবাসি’’ – এই টাইপ টিপিকাল বাংলা অ্যাড আর কি। গৃহিণীর ঐ নাকি সুরের ডায়লগ টা কিভাবে কিভাবে জানি আমার মাথায় ঢুকে গেলো। কিছু একটা হলে তখন আমিও নাকি নাকি সুর করে বলতাম, “চিন্তার কি আর শেষ আছে?” অনেক মজা লাগতো বলতে! আবার, তখন বয়সটাও কম ছিলো।

এখন জীবনের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার করতে করতে আজ বুঝি, আসলেই এই ক্ষণিকের জীবনে চিন্তার কোন শেষ নাই! এই ঝামেলা শেষ তো ঐ সমস্যার শুরু, এই সমস্যার সমাধান হলো তো খুব কাছের কারো সাথে অযথাই ক্যাচাল লেগে গেলো, এই ক্যাচাল ভুলে তার সাথে পুনর্মিলনী করতে করতেই উষ্ঠা খেয়ে পরে হাটুর ছাল ছিলে গেলো ...এমন কিছু না কিছু ... লেগেই আছে ... সবসময়! সবসময়!! এরকম ঝুট-ঝামেলার চক্র কার জীবনে না থাকে?

কিন্তু, একজন বিশ্বাসী জানে এবং সে বুঝে যে, জীবনে এমন কিছু অভিমান, কিছু দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ, ক’ ফোটা চোখের জল— এগুলোর-ও দরকার আছে। হ্যাঁ এগুলো-ও জরুরী ! নিজেদের কিছু গুনাহ্‌ মাফ হবার জন্যে হোক, কঠিন মুহুর্তগুলোতে জীবনে আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রয়োজনীয়তাটার গুরুত্বকে নতুন করে উপলব্ধি করতে হোক, কঠিন পরীক্ষাতে নিজের ঈমানকে যাচাই করতে হোক, এমন সময়ে ধৈর্য্য ধরে আরো কিছু সওয়াব কামিয়ে নিতে হোক, জান্নাতের জন্যে সংগ্রামের একটা অংশ হিসেবেই হোক না কেন... আছে ... দরকার আছে কিছু দুঃখ-কষ্টের।সব সুখ দুনিয়ায় পেয়ে গেলে আখিরাতের জন্যে আর কি রাখলাম বলেন তো?

সময় সময় অনেক মন খারাপ হয়, নিষ্ঠুর পৃথিবীর কিছু নিষ্ঠুরতা দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই, কোন জালিমের অবিচারের শিকার হয়ে আমি কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখ ফুলাই ...তবুও ভিতর থেকে কে জানি বলে, “ধুর বোকা! কাদিস্‌ কেন? স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস চাস্‌ তো ?????সেটা নিবার জায়গা তো জান্নাত, এই দুনিয়া নাহ্‌ !! ..."

রসূল(সাঃ) এর একটা হাদীস আছে যেটা পড়ে আমি আশ্চর্য্য হয়ে গিয়েছিলাম,

“দুনিয়া মুমিনদের জন্য জেলখানা আর কাফেরদের জন্য জান্নাত” [মুসলিম]

অবাক হয়ে ভাবতাম, বিশ্বাসীদের জন্যে দুনিয়া জেলখানা হবে কেন? আর অবিশ্বাসী কাফেরদের জন্যেই বা কেন সেটা জান্নাত হবে?? এখন বুঝি বিশ্বাসীরা তো বিশ্বাস করে এই দুনিয়াটাই আমাদের শেষ ঠিকানা নয়! তারা এই দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত টা আল্লাহ্‌-র কাছে কিনে নেয়। তাই তো, তাদের কাছে এই দুনিয়াটা জেলখানায় মতন লাগে! কবে যে জান্নাতে যাবো, আমার রবকে দেখবো, জান্নাতের ঝর্ণার পাশে বসে বসে রসূল(সাঃ) এর সাথে গল্প করবো- সেটার জন্যেই তার মন টা ছট-ফট করতে থাকে! অপরদিকে, কাফেরদের জন্যে "জীবন তো একটাই, মৌজ-মাস্তি করে যাই"- টাইপ চিন্তাতে ওরা যা পাবার এই দুনিয়াতেই তার শুরু, এই দুনিয়াতেই তার শেষ! আখিরাতে তার একটা ফোঁটাও কিছু পাবার নেই! তাই এক দিক থেকে ভাবলে, এই দুনিয়াতেই আল্লাহ্‌ তা'আলা তাদের অবকাশ দিচ্ছে, এটাই তাদের জান্নাত। সত্যিকারের জান্নাতের ধারকাছেও তারা ঘেঁষতে পারবে না! তাই, দুনিয়াতে আমাকে এমন ভাবে থাকতে হবে যেন জেলখানায় আছি! জেলখানা !! আমার আসল মুক্তি এখানে না! আমার সব কিছুর চাওয়া-পাওয়া আমি গিয়ে পাবো ওপাড়ে গিয়ে ইন শাল্লাহ্‌! এপাড়ে আমার চিন্তার শেষ হবে না তো কি ... আর ওপাড়ে আমার পুরস্কারের-ও শেষ হবে না ইন শা আল্লাহ্‌- এই বিশ্বাস একজন বিশ্বাসীকে সব অবস্থায় শক্ত রাখে, আশাবাদী রাখে, ধৈর্য্যশীল রাখে !

**"মুমিনের ব্যাপারটা বড়ই আশ্চর্যজনক! কেননা তার প্রতিটি অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর এটা কেবল মুমিনের জন্যই নির্ধারিত, অন্য কারো জন্য নয়। মুমিনের কাছে সুখের কিছু এলে শুকরিয়া আদায় করে। আর এটা তার কল্যাণের কারণ। অনুরূপভাবে যখন কোনো দুঃখ তাকে স্পর্শ করে তখন সে ধৈর্যধারণ করে। আর এটাও তার কল্যাণের কারণ’ (মুসলিম)**

**"কাঁটার ঘা অথবা এর অধিক কোনো কষ্ট মুমিনকে স্পর্শ করলে এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ মাফ করে দেন বৃক্ষ যেভাবে তার পাতা ঝরিয়ে দেয় ঠিক সেইরূপ’ (বুখারী)।**

**"কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই’ (সূরা যুমার: ১০)।**


[ লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, এই রিমাইন্ডার গুলি দিয়েই মনে হয় গাজার ভাই-বোন, মা গুলির অন্তরকে আল্লাহ্‌ তা'আলা শান্ত রাখেন! আল্লাহ্‌র রহমত ছাড়া কক্ষণো কোন মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না ! কক্ষনো না !! রব্বানা আফরিগ আ'লাইনা সবরাওউ ওয়া সাব্বিত আক্‌দামানা ওয়াংসুরনা আ'আলার কওমিল কাফিরীন !!

--হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে। [সুরা বাকারা: ২৫০]

]



বিষয়: বিবিধ

২২৯৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244685
১৪ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : Very beautiful writing Masha Allah. It is true this world is jail for mumin. Jajakalla khairan apuni. May Allah gives you more strength for writing more and more.
২১ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:০৬
191420
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : আমিন ! লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে অসংখ্য শুকরিয়া ! ফী আমানিল্লাহ্‌!
244699
১৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:০৩
নুরুজ্জামান লিখেছেন : আসলে আপু দুনিয়াতে অনেক কষ্ঠ পাই ক্ষানিক পরে পরে নতুন নতুন যন্ত্রনার উদয় হয়।অনেক সময় দেখতে পাই আমার চারপাশে কষ্ঠ আমাকে ঘিরে আছে।আবার অনেক সময় আল্লাহ তায়ালার অসীম করুনার কথা চিন্তা করলে শীর নত হয়ে আসে।অনেক সময় বললে ভুল হবে সবসময়ই আল্লাহ তায়ালার করুনার মধ্যে আছি।

যখন কষ্ঠের মাত্রাটা একটু বেড়ে যায় তখন এই একটা মাত্র আশা মনের উত্তপ্ত যন্ত্রনাকে সহ্য করার মানসিকতা সৃষ্টি করে যে,পরকালে যদি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার এই কষ্ঠের বিনিময়ে আমাকে সফলকাম করে জান্নাত দান করেন।

আসলে জান্নাতের আশা মনে লালন করলে দুনিয়ার কষ্ঠ গুলো আর কষ্ঠ মনে হয় না।

আপনার লেখা পড়ে অনেক শান্তি পাইলাম আপু।ধন্যবাদ এরকম একটা লিখার জন্য।
২১ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:০৭
191421
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া ! ফী আমানিল্লাহ্‌!
244738
১৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৪২
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
Rose Rose Rose Rose
জাজাকাল্লাহু খাইরান। ঈমান, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, সবর এই চারটি মুমিনের সম্পদ। এই চারটি সম্পদ যাদেরকে আল্লাহপাক দিয়েছেন, তাদের কিছুই হারাবার নাই, যতই বিপদ-আপদ, সমস্যা আসুক।

২১ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:১১
191423
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : বারোকাল্লহু ফিক। লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে ও মূল্যবান কথা টি বলার জন্যে শুকরিয়া ! ফী আমানিল্লাহ্‌!
244758
১৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:০৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : লেখাটা শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। খুবই ভালো লেগেছে।
২১ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:১১
191424
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া ! ফী আমানিল্লাহ্‌!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File