আল্লাহ্‌ তা'লার মহাশক্তিধর শব্দগুচ্ছের ১ টি নজিরঃ জীবন বদলে দেওয়া ৩ টি আয়াত

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৩ জুলাই, ২০১৪, ১১:১৩:১৪ রাত



** আ'উজুবিল্লাহি মিনাশ্‌ শায়তানির রাজিম, বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহিম **

সুরাহ্‌ আস্‌র!

কুরআন শরীফের ১০৩ নং সুরাহ্। মাত্র ৩ টি আয়াতের ছোট্ট একটি সুরাহ্‌। কিন্তু, ওয়া-আল্লাহি!! এই ৩ টি আয়াতের মধ্যে যে কি পরিমাণ শক্তিধর বার্তা ও শিক্ষা লুকিয়ে আছে- সেটা নিয়ে ভাবলেই আমার কাছে কুরআনের আরেকটি আয়াত সুষ্পষ্ট হয়ে যায়, যেখানে আল্লাহ্‌ রাব্বুল-আ'লামীন বলেছিলেন যে, তিনি যদি এই কুরআনকে কোন পাহাড়ের উপর নাযিল করতেন, তাহলে সেই পাহাড় ভেঙ্গে-চুরমার হয়ে যেত।

"আমরা যদি এই কুরআনকে কোন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তোমরা দেখতে পেতে, আল্লাহ্‌র ভয়ে তা নুইয়ে পরেছে, ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে। আর এই উপমা আমরা লোকদের জন্যে বিবৃতি করেছি যেন তারা চিন্তা করে।"( সুরাহ্‌ হাশ্‌রঃ আয়াত ২১)

কিভাবে যে আল্লাহ্‌ তা'আলার শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে পাহাড়কে ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব- আল্লাহ্‌-র কসম! সুরাহ্‌ আসরের তাফসির জানার পর আমার কাছে এটা ভোরের আকাশের মতই পরিষ্কার। সূরাহ্‌ আস্‌র তো কেবল একটি উদাহরণ- গোটা কুরআন জুড়েই ভাষাগত অলৌকিকতার নজির পাবেন আয়াতে আয়াতে ! সুবহানাল্লাহ্‌ !!

কি ভাষা শিল্প আমাদের স্রষ্টার!! কি শক্তি তাঁর কিতাবের ভাষাশৈলীতে !! আর যাদের জন্যে এই ভাষাশৈলী-শিল্প চয়ন করা হয়েছে- সেই মানবসমাজেরই নাকি আজ সেই কুরআন শরীফকে "সময়" দিতে পারেনা(!) !! যাক, "সময়" শব্দ টা যখন চলেই আসলো তখন সরাসরি সূরাহ্‌ আসরের আলোচনায় চলে যাওয়া যাক।

"ওয়াল্‌ আস্‌র" শব্দটির খসড়া আক্ষরিক অনুবাদ করতে সেটা দাঁড়াবে "সময়". কিন্তু, এখানেই শেষ নয়,"আস্‌র" শব্দটির তাৎপর্যের গভীরতা বুঝার এখনও বাকি। ঠিক একই ভাবে, আমি এখন সম্পূর্ণ সূরাটির একটি শব্দ-টু-শব্দ আক্ষরিক অনুবাদ পেশ করছি, যেটা কিনা আপনাকে সূরাটি নিয়ে প্রাথমিক ধারণা-মাত্র দিবে ঠিক-ই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর গভীরতা উপলব্ধির ক্ষেত্রে অনুবাদ-মাত্র অনেকাংশেই অপূর্ণই রয়ে যাবে। কিন্তু, গভীরতা বুঝতে হলে, আগে প্রাথমিক ধারণা টাও থাকা জরুরি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সূরাহ্‌ আসরের আক্ষরিক অনুবাদটুক করলে দাঁড়ায়-

(১) কসম সময়ের

(২) নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত

(৩) কিন্তু তারা ব্যতিত, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।


আমি আগেই বলেছি, আক্ষরিক অনুবাদ মাত্র আপনাকে সাহায্য করবে না এর গভীরতার উপলব্ধিতে, কিন্তু অন্তত এখন আপনার মোটামুটি একটা ধারণা হলো সূরাহ্‌ আসর নিয়ে। তাহলে আমি এখন ইনশা আল্লাহ্‌ চেষ্টা করছি আপনাকে এর তাৎপর্যের গভীরতার দিকে নিয়ে যেতে। তার আগে এই ৩ টি আয়াত নিয়ে ৩ টি জিনিস মাথায় রাখুন,

এক, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীন এখানে সময়ের কসম খাচ্ছেন। কুরআন শরীফের অনেক জায়গাতেই আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীন কসম খেয়েছেন এবং মনে রাখুন, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীন স্বয়ং যেখানে কসম খেয়ে আমাদের সামনে কিছু পেশ করতে যাচ্ছেন, সেটা যেন-তেনো কোন ব্যাপার না !

দুই, আল্লাহ্‌ বলছেন যে, "নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত". খেয়াল করুন, আল্লাহ্‌তা'আলা কিন্তু বলেন নি যে, "কাফির-মুশরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত", তিনি বলেননি যে "যারা প্রকৃত মুসলিম নয়" -তারা ক্ষতিগ্রস্ত, তিনি কিন্তু নির্দিষ্ট কাউকে উল্লেখ করেননি বরং তিনি গোটা মানব-সমাজকেই উল্লেখ করে বলেছেন- নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত- তাহলে এই মানবসমাজের মধ্যে কারা পরছে? কাফির-মুশরিক-মুসলিম-মু'মিন- সেকুলার- হাসিনা-খালেদা-আমি-আপনি- সকলেই !! হ্যাঁ সব্বাই ক্ষতিগ্রস্ত, এই আয়াত অনুসারে প্রত্যেকটি দুই-পেয়ে, মস্তিষ্কধারী, সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল আখলুকাত এই মানুষ হচ্ছে- মহাক্ষতিগ্রস্ত !!কিন্তু, সবাই মিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে কিভাবে চলবে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্যে আপনাকে যেতে হবে তিন নং আয়াতে।

তিন, হ্যাঁ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু ব্যতিক্রম-ও আছে। একমাত্র তারা ব্যতিত যারা কিনা এই ৩ নং আয়াতে বর্ণিত ৪ টি কাজের সাথে নিজেকে এবং অপরকে নিয়োজিত রাখে। সেই ৪ টি কাজ হলো

# ঈমান আনা তথা, বিশ্বাস স্থাপন করা

# সৎকর্ম করা

# পরস্পরকে সত্যের তাগীদ দেওয়া

# পরস্পরকে ধৈর্য্যের তাগীদ দেওয়া

এখন মাথায় রাখুন, যদি মহাক্ষতিগ্রস্ত দের ঐ ক্যাটাগরি থেকে নিজের নাম মুছাতে চান, তাহলে কিন্তু আপনাকে এই চারটি আমলের চারটি-ই করতে হবে। কোন ফাঁক-ফোকর নেই.

আপনি ঈমান আনলেন, মুখে বললেন, "লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহু(সাঃ)" কিন্তু, নামাজের আজান শোনা স্বত্তেও যদি ফেসবুকের স্ক্রীণ থেকে আপনার চোখ না সরে -- ভাই/বোন!! আপনি ক্ষতিগ্রস্ত !

আপনি ঈমান আনলেন, নামাজের আজানের সাথে সাথে নামাজটা-ও পড়লেন মাশাআল্লাহ্‌, কিন্তু আপনি যদি আপনার আশেপাশের মানুষ গুলোকে নামাজ পরার মাধ্যমে সত্যের পথে আসার তাগীদ-ই না দিলেন- -- ভাই/বোন!! আপনি ক্ষতিগ্রস্ত !

আপনি ঈমান আনলেন, নামাজের আজানের সাথে সাথে নামাজটা-ও পড়লেন মাশাআল্লাহ্‌, এমনকি আশেপাশের সবাইকে নামাজ পরার দাওয়াত তো দিলেন, মাশাল্লাহ্‌। ধরুন, যাদের দাওয়াত দিচ্ছিলেন- তাদের-ই মধ্যে কেউ হয়তো অধৈর্য্য হয়ে গেলো আপনার "বয়ান বা লেকচার" শুনে,আর অপ্রীতিকর কিছু বলে বসলো, ব্যস !! আপনাকে আর পায় কে- আপনি-ও সমান তালে অধৈর্য্য হয়ে গেলেন, হয় পাল্টা কিছু বললেন, কিংবা কিছু না বললেও মনে মনে এই অধৈর্য্যতা নিয়ে শপথ করে বসলেন- "... আর যদি এমন কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিতে গেছি !!" যদি এমনটাই হয়ে থাকে তাহলে আবারো বলছি --- ভাই/বোন!! আপনি ক্ষতিগ্রস্ত.

সূরাহ্‌ আসরের বৃহত্তর তাৎপর্য সহজে বুঝার খাতিরে আমি আপনাদের সাথে একটা কল্পিত দৃশ্য অবলোকন করতে চাই। এই কল্পিত দৃশ্যটির উদাহরণ আমি শুনেছি, উস্তাদ নুমান আলী খানের "বাইয়্যিনা পডক্যাস্ট" নামক কুরআন তাফসির সিরিজের "সূরাহ্‌ আসর" সেকশানের লেকচার থেকে। উস্তাদ নুমান আলী খান যেই কল্পিত দৃশ্য নিয়ে বলেছিলেন, তার সংক্ষিপ্ত সারমর্ম অনেকটা এরকম,

"... আমার সাথে সবাই কল্পনা করতে থাকুন যে, আপনি ডুবে যাচ্ছেন এবং আপনি পুরোপুরি অজ্ঞান। তাহলে দুইটি জিনিস, এক তো আপনি অকূল পাথারে ডুবন্ত, যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি- দুই, আপনি নিজেও অচেতন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আপনার হাতে কি অফুরন্ত সময় ? আপনি যদি অজ্ঞাত অবস্থায় ডুবতে থাকেন- আপনার হাতে কি অনেক সময় আছে?? না !!! আপনার হাতে তো কোন সময়ই নাই, যার মানে হচ্ছে আপনার সময় চলে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। আর আরবী ভাষায় যখন সময় চলে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই- সেটাকে কোন শব্দটি দিয়ে প্রকাশ করা হয় জানেন? "ওয়াল আস্‌র" ! এজন্যেই আমরা যখন আসরের নামাজ পরি, তখন "আস্‌র" নামটি দিন যে শেষ হয়ে আসছে তার ইঙ্গিত দেয়, কারণ আসর নামাজের পরে যে মাগ্‌রিব শুরু হচ্ছে ,ততক্ষণে তো সূর্য ডুবে যাচ্ছে এবং দিনেরও সমাপ্তি ঘটছে। "আস্‌র" শব্দটি আসলে এসেছে "ওয়াল আসির" শব্দটি থেকে। "আসির" মানে হচ্ছে যখন কোনকিছু "নিঙ্গড়ে/চিপে" হাত থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। যেমনটি আপনি দেখেন, ধোয়া কাপড় জোরসে চিপে পানি নিঙ্গড়ে সব পানি বের হয়ে যাচ্ছে, ওই পানির ফোঁটা গুলোর মতই, একই ভাবে সময়-ও আপনার হাত ফস্‌কে প্রতিনিয়ত বের হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যপারে-ও আমরা অন্যান্য ব্যপারগুলোর মতই ক্ষমতাহীন।

তো ফিরে যাই সেই দৃশ্যে যেখানে, আপনি অজ্ঞান, আপনি ডুবন্ত, এবং আপনার সময় নিঙ্গড়ে বের হয়ে যাচ্ছে- এমতাবস্থায় যদি আপনি এই মহাক্ষতিগ্রস্ত অবস্থাটি থেকে রেহাই পেতে চান, সর্বপ্রথম আপনাকে কি করতে হবে? অনেক কিছুই তো করতে হবে, কিন্তু এক নম্বর কাজটি কোনটা বলে আপনি মনে করেন ?? ইয়েস! "সজ্ঞানে ফিরা", জেগে উঠা, এই ঘুম থেকে জেগে উঠাই হবে আপনার বাঁচার সর্বপ্রথম চাবিকাঠি-- হোক না আপনি ঘুমে সবচেয়ে মোহনীয় ও আকর্ষণীয় স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, ওই স্বপ্নেই যদি বিভোর থাকেন তো ধ্বংস অনিবার্য- কারণ একে তো ডুবে যাচ্ছেন, তার উপর জ্ঞান নেই। তো প্রথমত এবং প্রধানত আপনাকে জেগে উঠতে হবে এবং এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, "হায়রে এতক্ষণ ধরে আমি খালি মিছামিছি স্বপ্নই দেখছিলাম, আসলে তো আমি এখানে ডুবে যাচ্ছি। "এখন আপনি ঘুম থেকে উঠলেন ঠিক-ই কিন্তু ভাবলেন, "এ কেমন নিষ্ঠুর বাস্তবতা! কি সুন্দর ঘুমায় ঘুমায় স্বপ্ন দেখতেছিলাম, যাই তো আমার সুন্দর স্বপ্নেই ফিরে যাই"- এটাই যদি আপনার ভাবনা হয় তাহলে আপনার ঐ জেগে উঠা আদৌ আপনাকে কোন সাহায্য করলো কি?? অবশ্যই না !! আর আপনার এই বোকামির জন্যে কি তারা নিজেরা ছাড়া আর কাউকে আদৌ দোষ দিতে পারবেন? অবশ্যই না ! ক্ষণিকের মোহনীয় স্বপ্নের আনন্দের বিনিময়ে আপনি নিজের অনন্তকালের জীবনটাকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্যে আপনি এবং কেবলমাত্র আপনি-ই দায়ী।

এখন দেখা যাক, মুদ্রার উল্টা পিঠ, ধরেন, বাস্তবিক উপলব্ধির মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারলেন যে, ওই ক্ষণিকের মোহনীয় স্বপ্ন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই না, ওই স্বপ্ন তাদের যত আনন্দই দেক না কেন- ওই ক্ষণিকের আনন্দের লোভে আবার ঘুমিয়ে পড়া নিরেট মূর্খের মতন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা ছাড়া আর কিছু না। তাহলে, এখন কি উপায়? আপনাকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। বাঁচার জন্যে জেগে উঠার পর এখন তাদের সর্বপ্রথম করণীয় কাজ টি কি হবে? কাজে লেগে পরতে হবে, যেটা এই দৃশ্যের ক্ষেত্রে হবে- সাঁতরানো !! আপনি সাঁতার জানুন বা না জানুন, বাঁচার তাগীদে আপনি তখন যত ভাবে সম্ভব আপনার হাত-পা নড়ানো- ততভাবে নাড়াতে থাকবেন, থাকবেন কিনা? এবং যেভাবে নাড়ালে আপনি আস্তে আস্তে পানির উপ্রে ভেসে থেকে তীরের দিকে এগুতে পারবেন, সেভাবেই আপনি নিষ্ঠার সাথে আপনার কর্মে নিয়োজিত থাকবেন। তো ধরুন, আপনি আপনার সকল শক্তি-ক্ষমতা দিয়ে সাঁতরিয়ে তীর পর্যন্ত চলে আসলেন, আহ্‌ ! সে কি শান্তি! তীর পর্যন্ত এসে যেই না আপনি সৈকতের কিনারা ধরতে যাবেন,...হলো কি জানেন??? . কোন একটা কিছু পানির নিচ থেকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে আপনাকে আবারো পানির অতলে নিয়ে গেলো...

কিন্তু কি এই "কোন একটা কিছুর হ্যাঁচকা টান" ? আপনি এই "হ্যাঁচকা টান" এর উৎস খুঁজতে গিয়ে যখন নিচে তাকালেন, তখন কি দেখলেন জানেন? তখন দেখলেন যে, আপনার-ই পায়ের সাথে একেবারে নিরেট শিকল দিয়ে বাঁধা আপনার-ই মামাতো ভাইইয়ের পা। এবং অনুমান করুন তো আপনার মামাতো ভাইটি কি করছে ? ইয়েস !! সে-ও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে !! এখন আপনার নিজেকে বাঁচতে হলে কি করতে হবে ?? আপনার ভাইকে ঘুম থেকে উঠাতে হবে, তাকে বুঝাতে হবে যে, যেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে সে ঘুমাচ্ছে- সেই স্বপ্ন মিথ্যা ! মিথ্যা! মহামিথ্যা ! আসল সত্য হচ্ছে- আপনারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এখন আপনার ভাই যদি ঘুম থেকে উঠে বিরক্ত হয়ে বলে," ধুর মিয়া! কি সুন্দর দেখতিসিলাম স্বপ্ন! হুদাই ঘুম ভাঙ্গাইয়া কি সব শুনাইতেছেন, দেখায়তেছেন?"- এটা যদি বলে আপনার ভাই- আপনি-ও কি পাল্টা উত্তরে বলতে পারবেন যে," উপকার করতে আসলাম ভালো লাগলো না! যাহ্‌ ঘুমা তুই!"- আছে কি কোন উপায় আপনার এটা বলার ?? উত্তর হচ্ছে- ন-এ-কার "না !!"

সেই উপায় নেই, আররেহ্‌ ! আপনার পায়ের সাথেই তো আপনার ভাইয়ের পায়ে শিকল বাঁধা ! আপনি রাগ করে তাকে এভাবে ডুবতে দিতে গেলে তো আপনি সহই ডুবে মরবেন, তাহলে কি করতে হবে? ভাইকে জানাতে হবে, ধৈর্য্য ধরে বুঝাতে হবে। তাগীদ দিতে হবে সত্যের, তাগীদ দিতে হবে ধৈর্য্যের !

ধরেন, ধৈর্য্য আর সত্যের তাগীদের মাধ্যমে আপনার ভাইকে কষ্ট-মষ্ট করে নাহয় আপনার সাথে সাঁতরাতে রাজি করালেন। আপনি আর আপনার ভাই সাঁতরাচ্ছেন। সাঁতরাতে শুরু করতে না করতেই আবারো সেই হ্যাঁচকা টান !! এবার কি হল?? নিচে তাকিয়ে দেখলেন, আরেকটা শিকল দিয়ে আপনার ভাইয়ের পায়ের সাথেই বাঁধা আরেকজন- সে হচ্ছে আপনার-ই কলিজার টুকরা 'দোস্ত"; এবং এটাই শেষ নয় বন্ধু- তার পায়ে বাঁধা আপনার মা, তার পায়ে বাঁধা আপনার বাবা, আপন ভাই, বোন, স্ত্রী/স্বামী,সন্তান-সন্ততি চাচা, খালা, দাদা, দাদী প্রতিবেশী... এই চেইন রিঅ্যাকশান চলছে তো চলছেই। এর কোন শেষ নাই... ! এখন বলুন তো- বাঁচতে হলে আপনাকে কি করতে হবে?? এই শিকলে বাঁধা আশে-পাশের সবাইকে সেই একই সত্যের তাগীদ দিতে হবে, সেই একই ধৈর্য্যের তাগীদ দিতে হবে। একটা বিষয় খেয়াল করেন যে, আপনি যে এতকষ্ট করে সবাইকে সত্য এবং ধৈর্য্যের তাগিদ দিচ্ছেন, আপনি কি এসব একাগ্রচিত্তে তাদের বাঁচাতে করছেন ? আপনি অবশ্যই তাদের ভালো চান বটে, কিন্তু আপনার এত কষ্টের মূল প্রেরণার উৎসটা কি ? আরেহ্‌ ! ওরা ডুবলে তো আপনি ও ডুবে মরবেন ! ঘুম থেকে উঠে-ও, সত্য উপলব্ধি করেও কোন লাভ-ই হবে না ! যার জন্যে একে অপরকে সত্য ও ধৈর্য্য-এর মাধ্যমে নিয়ে যেতে হবে সত্যিকার গন্তব্যে ...। "

এই ছিলো মোটামুটি উস্তাদের উদাহরণটি। এখন ফিরে আসি সূরাহ্‌ আসরে। সূরাহ্‌ আস্‌রে ছিল যে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীন সময়ের কসম কেটে বলেছেন যে, মানবসমাজের প্রতিটি মানুষ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত, শুধুমাত্র তারা ক্ষতিগ্রস্ত নয় যারা ঈমান আনবে এবং নেক কাজ করবে এবং একে অন্যকে সত্যের তাগীদ দিবে এবং একে অন্যকে ধৈর্য্যের তাগীদ দিবে। এখন "এবং" শব্দ টি লক্ষ করুন, এটা "এবং", "অথবা" নয়।

অর্থাৎ আপনাকে চারটি কাজের চারটি-ই করতে হবে- যেটার অসাধারণ চিত্রিত ব্যাখা পাই উস্তাদের উদাহরণ টিতে। শুধু জেগে উঠলেই হবে না, উপলব্ধি করতে হবে যে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত- অর্থাৎ শুধু ঈমান আনলেই হবে না, ঈমান দিয়ে বুঝতে হবে যে এই দুনিয়ায় আমাদের উপভোগ্য যেই জীবন নিয়ে আমরা পরে আছি- সেটা এক ক্ষণস্থায়ী স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। আবার শুধু উপলব্ধি করে বসে থাকলেই হবে না, সেই ঈমান বাঁচাতে সৎ কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে তক্ষুণি,কারণ সময় যে একেবারেই নেই। যেমনটা আপনি করেছেন ততক্ষণাৎ সাঁতরানোর মাধ্যমে। আবার শুধু সাঁতরিয়ে তীরে পৌঁছালেই দায়িত্ব শেষ না- আপনার সাথে "লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু" এই এক কালেমা দিয়ে বাঁধা যেই প্রতিটি মুসলিম- ভাই, বোন, নিকটাত্মীয়রা আছেন- তাদের সবার কাছে এই সত্য পৌঁছাতে হবে এবং এই সত্য পৌঁছানোর কঠিন কাজটি ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সহিত চালিয়েই যেতে হবে- চূড়ান্ত গন্তব্য সেই জান্নাতুল ফেরদাউসের দ্বারে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত, ইনশা আল্লাহ্‌ !!

এখন, আমার দাঈ মুসলিম বোন/ভাই যারা আছেন, তাদের জন্যে এই সূরা থেকে শিক্ষা হচ্ছে- হ্যাঁ ! দাওয়াহ্‌ দিবার সময় হয়তো কটু কথা শুনতে হবে, কিন্তু সত্যের সাথে সাথে তাগীদ থাকতে হবে ধৈর্য্যের-ও। ধৈর্য্য না থাকলে তো, আপনি-ও শামিল হয়ে গেলেন সেই ক্ষতিগ্রস্তদের দলে।

আর যারা মনে করছেন আজকের সমাজ হচ্ছে- "নিজের চরকায় নিজে তেল দেওয়ার সমাজ''- আপনি যত রকমের আকাম করে বেড়ান না কেন - তাতে কার কি যায় আসে? আপনার গুনাহ্‌ হলে এদের কি? কেন আসবে একদল গোঁড়া(!) ধর্মান্ধ(!) আপনাকে উপদেশ দিতে??

তাদেরকে বলি-"ভাই/বোন !! ওইসব গোঁড়া(!) ধর্মান্ধ(!) মানুষগুলো না আসলে আপনার চরকায় তেল দিতে মোটেও আগ্রহী নয়- এক আল্লাহ্‌- রাব্বুল আ'লামীনের খাতিরে, নিজেদের চরকার তেলটুকু বাঁচাতেই তাদের এই সত্য ও ধৈর্য্যের দাওয়াতের প্রচেষ্টা। যদি এই নেক নিয়তটিকে সাধুবাদ না জানান, অন্তত তিরস্কার টুকু করা থেকে বিরত থাকুন।"

এই অতি সংক্ষেপে, ৩ আয়াতের সূরাহ্‌ আসরের মাহাত্ম্যটা অনেকটা এরূপ। আশা করি এখন বুঝতে পারছেন কেন শুরুতে বলেছিলাম, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীনের শব্দগুচ্ছ যে কিভাবে পাহাড়কে ভেঙ্গে-চুরমার করে দিতে সক্ষম- তা আমার কাছে ভোরের আকাশের মতই পরিষ্কার।

এই লিখাটার পরিপূরক হিসেবে আমি অনুরোধ করবো, সূরাহ্‌ আসরের তাফসির টুকু পড়ে নিতে। কারণ আমি খুব সংক্ষেপে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীনের শব্দগুচ্ছের মহাশক্তির একটি ঝলক আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি মাত্র! আলহামদুলিল্লাহ্‌! পরিপূর্ণ ঝলকের জন্যে খোদ কুরআন শরীফ স্টাডি এর কোনই বিকল্প নাই!

আমার এই লিখায় যদি কোন ভুল-ত্রুটি থেকে থাকে, ক্ষমার মালিক এক আল্লাহ্‌- রাব্বুল আ'লামীন যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ'লামীন যেন বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম ভাই/বোন কেই ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের সকলকে তৌফিক দেন সূরাহ্‌ আসরের শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত করবার।-আল্লাহুম্মা -আ'মীন

আর দেরি করবেন না ভাই/বোন !!

এখনই,ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচতে এক্ষুণি কাজে নেমে পড়ুন... এক্ষুণি !!

আল্লাহ্‌- তা'আলা যে সময়ের কসম কেটে বলে দিয়েছেন, সময় একদম-ই নেই,

সময় আমাদের হাত ফস্‌কে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিটা সেকেণ্ডে, প্রতিটা মুহুর্তে, ওই নিই নিঙ্গড়ে বেরিয়া যাওয়া পানির ফোঁটা গুলোর মতন...

THE TIME IS RUNNING OUT...

মুসলিম উম্মাহ্‌-র জেগে উঠার সময় চলে গেল বলে।। !

আস্‌সালামুআলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহে ওয়াবারাকাতুহু...



বিষয়: বিবিধ

১৫৯৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

241459
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৫৮
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
241477
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৩৩
ভিশু লিখেছেন : কুরআনের প্রতি আকর্ষণ, এর মর্মার্থ নিজে বুঝা এবং অন্যদের জন্য খুব সুন্দর করে উপস্থাপনার এক বিশেষ যোগ্যতা দেখছি আপনার মধ্যে, মাশাআল্লাহ...Praying ভালো লাগছে বেশ! এভাবেই মহাগ্রন্থের বাণীর চর্চা এবং ছড়িয়ে দেয়া চলতে থাকুক নিরন্তর, অবিরাম! জাযাকাল্লাহ খাইরান!
241479
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪২
মাটিরলাঠি লিখেছেন : তিন আয়াতের বিস্ময়কর এই সূরাটি সমস্ত ইসলামী জীবনব্যবস্থার সারাংশ। সুন্দর আলোচনা করেছেন। জাজাকাল্লাহু খাইরান। Rose Rose Good Luck Good Luck
241483
০৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৫৫
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : মাশা আল্লাহ! আপুমনি মনোমুগ্ধকর আলোচনা খানি পড়লাম! এজন্যইতো সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম গন দেখা হলে এই সূরা তিলাওয়াত না করে বিদায় নিতেন না! আল্লাহ আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ দল হতে হিফাজত করুন! সফলকামদের দলে শামিল করে নিন!জাযাকাল্লাহু খাইর! Good Luck Rose Angel Praying
241520
০৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:০৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Masha Allah very very intellectual discussion on holy quran with proper explanation and consequence. It is really heart touching apuni. Ramjanul mubarrok.
241621
০৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File