বড় একা একা লাগে বুঝি?
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৪:২৮:৪০ বিকাল
- কিরেহ মুখটা অমন বাংলার পাঁচের মতন করে রাখছিস কেন ?
- বড় একা একা লাগে !! ( দ্বীর্ঘশ্বাস!)
- আহারে!! তাই বুঝি? থাক কান্দিস না! সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লহ্!
(একটু পরে)
- আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি তোকে?? তুই কি কল্পনা করতে পারিস ?
- একা থাকার সাথে কল্পনার কি সম্পর্ক!!
- আহা বল না আগে … তুই কি কল্পনা করতে পারিস্ কি না?
- হুম্ পারি তো! কেন কি হয়সে?
- জানিস, আমার কল্পনার জন্যে না আমি একটা সেকেন্ড-ও একা থাকতে পারি না!
- তোর এতসব আধ্যাত্মিক আলাপ আমি বুঝি না রে বাপ! ভাইঙ্গা বললে বল, নাইলে আমি এখনি গেলাম, ফেসবুকে Status দিতে হবে “Feeling Lonely” …
- আরেহ্ দাঁড়া দাঁড়া … রাখ তোর Status … আচ্ছা শুন শুন বলতেসি দাঁড়া! বলি কি যে, আমার কল্পনার চোটে তো আমি একটা মুহুর্তের জন্যেও একা থাকতে পারি না! মানে একটা সেকেন্ড-ও না বুঝলি! সেটা কিভাবে? কারণ, দেখ আমি যেখানেই যাই না কেন- আমি কল্পনা করি যে, আমার দুই কাঁধের দুই ফেরেস্তাও আমার সাথে সাথে সেখানে যাচ্ছে! যেটাই করতে যাই না কেন, দুইজন-ই একেবারে কলম নিয়ে রেডি! যেটাই করতেসি খপ্ করে টুকে রাখতেসে, ডান কাঁধের জন ভালো কাজটা লেখে তো, বাম কাঁধের জন খারাপ কাজটা! আমাকে একটু-ও একা থাকতে দেয় না রে!
- ... এই তোর দোকা থাকার কাহিনী?
- দাঁড়া দাঁড়া কাহিনী তো এখনো শেষ হয় নাই! এই গেলো আমার দুই Angel সাথী এর কথা! তারপর শুন না আমার কল্পনা, এই যে আমি এখন হাত-পা নাড়ায়া নাড়ায়া যে কথা বলতেসি না- এমন একটা দিন আসবে যখন এই হাত-পা গুলাই উল্টা কথা বলবে-- আমি কি করে আসছি কি না করে আসছি! উল্টা-পাল্টা যাই করি না কেন, আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে!* এখন বল, এমন তো না যে পাঁচ মিনিটের জন্যে হাত টাকে আলমারি রে ঢুকায়া রেখে কাজ টা করে ফিরার পথে নিয়ে যাবো! তাই, ঐ কথা বলা হাত-পায়ের কল্পনাটাও আমাকে একটু-ও একা থাকতে দেয় না রে ! এই হাত-পা গুলাও তো আমার সাথে সাথেই যাচ্ছে- যেখানে যাই করতেসি! They are with me!
- হুম্! ইন্টারেস্টিং ...
- তারপর শুন শেষ হয় নাই তো ! শুধু হাত-পা আর ফেরেস্তাই না! আরো একজন সারাটাক্ষণ-ই আমার সাথে আছেন! আমার রব, আমার আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা!!! এক পলকের জন্যেও তো আমি তাঁর দৃষ্টির বাইরে যেতে পারছি না! তিনি একেবারে আমার ঘাড়ের ধমনীর থেকেও আমার নিকটে*। সুবহান আল্লহ! আমার যখন যা নালিশ করার, আবদার করার, শেয়ার করার- সব করেই যাচ্ছি তাঁর সাথে! বল এখন, একা থাকার তো প্রশ্নই উঠে না!
- ওরে! তোর দোকা থাকার কাহিনী কি আর শেষ হবে না !!!
- এখনি অধৈর্য্য হয়ে গেলে কিভাবে হবে ? এখনো তো কাহিনীর ক্লাইমেক্স টাই তো শুনলি না এখনো!
- আচ্ছা শুনাও শুনাও! শুনায়া আমারে ধন্য করো!
- শুন, মন দিয়ে শুন! আরেকজন আছে বুঝলি সারাটাক্ষণ জোঁকের মতন আমার সাথে লেগে থাকে! দিন নাই, রাত নাই পরম নিষ্ঠার সাথে সে আমার কানে ফিস্ফিস্ করতে থাকে! দিন-রাত তার সাথে আমার ডব্লিউ-ডব্লিউ-এফ এর মতন রেসলিং করা লাগে! একটু যদি একা ছাড়তো রে সে আমারে!
- কে রে ??? শয়তান নাকি রে ???
- ইয়েস্! রাইট!! ইবলিশের ইবলিশ শয়তানটা আমাকে একা ছাড়বেই না বুঝলি! সে আল্লাহ্-র কাছে কিয়ামত পর্যন্ত টাইম নিয়ে রেখেছে, চ্যালেঞ্জ দিয়ে এসেছে আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্-র স্মরণ থেকে বিমুখ রাখবেই রাখবে! কাউকেই ছাড়বে না! আমাকেও না! তোকেও না! এই যে, আমি বক্বক্ করতেসি, শয়তান তোর কানে কানে ঠিক-ই বলে যাচ্ছে, “কিসব লেকচার শুনতেসিস এইসব! বাদ্ দে শোনা লাগবে না! যাহ্ ফেবুতে ঘুরে আয়”
- আরেহ্ আল্লাহ্! কেমনে বুঝলি আমার আসলেই কেমন জানি শুনতে ইচ্ছা চলে যাচ্ছিল! আল্লাহ্ মাফ করুক!
- দোস্ত, তুমি তো দেখি ভালো সাইকোলজির সমস্যার Expert হইতে পারবা !
- হুম্! আমি যেই কিতাব পড়ি, সেই আল-কুরআন হচ্ছে সমস্ত রকমের সমস্যার মহা-ঔষধ! বুঝলা? একটু পইড়াই দেখ না! তুমিও এমন Expert হয়া যাইবা!
- হুম ! ইনশাআল্লহ্ পড়বো!!
- এখন বল, আর জীবনে কোন দিন ফেবুতে “Feeling Lonely” Status দিবার কথা বলবি??
- ফিলিং Lonely মাই ফুট!!!
- হি হি! ফেবু থেকে “Feeling lonely” বইলা ফিলিং টা উৎখাত করা কাম!
- হা হা! দোস্ত! আমি তো আর একটা সেকেন্ডের জন্যেও Lonely feel করতে পারবো না রে!
- গুড ! গুড! আলহামদুলিল্লাহ্!
** রেফারেন্স--
১) ‘যেদিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা যা কিছু তারা করত। সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য স্পষ্ট ব্যক্তকারী’
[ সূরা নূর ২৪-২৫]
২)আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।
যখন ২ ফিরেশতা ডানে ও বামে বসে আমল তার আমল গ্রহণ করে,
সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।
[সুরা ক্বাফ: ১৬-১৮ ]
৩) শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
[সুরা বাকারা: ২৬৮]
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
নু’আইম ইবন হাম্মাদ বলেনঃ
আবদুল্লাহ ইবন মুবারাককে (রাহিমাহুল্লাহ) একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “হে আবু আবদ আর-রাহমান, আপনি প্রায়ই ঘরে একা একা কেন বসে থাকেন?”
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি কি একা থাকি? আমি তো থাকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার সাহাবাদের সাথে।” (অর্থাৎ তিনি হাদিস অধ্যয়ন করতেন)
[ইবন 'আসাকির, তারিখ দিমাশক, ৩২/৪৫৮]
আবারো শুকরিয়া
নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন! ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু! সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর! এটা ক্ষমাশীল করুনাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন! ফুসসিলাত: ৩০-৩২
মন্তব্য করতে লগইন করুন