রমাদান, তাক্ওয়া এবং একটি ট্রেইনিং এর গল্প
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ৩০ জুন, ২০১৪, ০৩:২৮:৫৮ রাত
গতবছর আমার স্কুল থেকে নার্সিং এর একটা ফ্রী কোর্স অফার করলো! খুশিমনে জয়েন করলাম।বলা হলো, ৩ মাসের “ট্রেইনিং” শেষে লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেই অর্জিত হবে সেই কাঙ্খিত নার্স হতে পারার সার্টিফিকেট!
এই “ট্রেইনিং” শব্দ টির সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। আর যে কোন ট্রেইনিং মানেই, তার শেষে থাকবে একটি অর্জন!
যেমনঃ মিলিটারীরা তাদের ট্রেইনিং শেষে যে স্বীকৃতি পায়, তা তাদের অর্জন। মেডিকেল ছাত্র, ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র বা নতুন কোন চাকুরিজীবি -তারা সবাই তাদের নিজ নিজ ইন্টার্নি বা ট্রেইনিং শেষে নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী কিছু না কিছু অর্জন করে থাকে। সেই অর্জনটা করতে পারার মাধ্যমেই তাদের সব ট্রেইনিং সার্থক, নাহলে তো সব গুড়ে বালি! তাই না?
এখন, ট্রেইনিং জিনিস টা মাথায় রেখে যদি আমরা বলি যে, রমাদান একটি ৩০ দিনের ট্রেইনিং,
তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়- কিসের ট্রেইনিং?
কি সেই স্বীকৃতি, কি সেই সাফল্য- যা অর্জন করার জন্যে এই ট্রেইনিং ?
তাহলে চলুন, মহাবিশ্বের স্রষ্টার কাছেই না হয় শুনে নেই, কি উদ্দেশ্য এই ট্রেইনিং এর ?
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা “তাক্ওয়া” অর্জন করতে পার।
[সুরা বাকারা: ১৮৩]
ওয়াও! উত্তর মিল গ্যায়া!
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাসী ঈমানদারদের উপর আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন রোজা রাখাকে ফরজ করে আইন করে দিয়েছেন- যেন আমরা [b]তাক্ওয়া [/b]অর্জন করতে পারি !!
আচ্ছা কি জিনিস এই তাক্ওয়া ?
“তাক্ওয়া” শব্দটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে সেই চিকন-চাকন “ইসলাম শিক্ষা” পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে । সেখানে এক কি হাফ্ পেইজের মধ্যে তাক্ওয়া নিয়ে দু-এক কথা যা লিখা ছিল, তাতে বুঝলাম সহজ ভাষায় “তাক্ওয়া” অর্থ “আল্লাহ্-ভীরুতা”। আল্লাহ্কে ভয় পেয়ে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারা হচ্ছে “তাক্ওয়া”। আরো সেখানে লিখা ছিল যে, তাক্ওয়াবান ব্যক্তির সম্মান আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার কাছে সবচাইতে বেশি!
এই তো! আর অত-শত কে বুঝতে যায়? মুখস্থ করে নিলাম সেই হাফ্-পাতার তাক্ওয়া! পরীক্ষায় খাতায় ধুমায়া লিখলাম। অতঃপর দিন শেষে সব ভাতের সাথে মিশায়ে খেয়ে ফেললাম! দিন যেতে থাকলো দিনের মতন। দিনে দিনে দেখি যে আমার সেই ইসলাম শিক্ষা বইয়ের স্বাস্থের আরো অবনতি ঘটতে লাগলো, এক সময় চিকন হতে হতে উচ্চ-মাধ্যমিকে এসে বেচারা একেবারে নাই-ই হয়ে গেল!!
HSC তে নাকি কোন ইসলাম শিক্ষা বই নাই- শুনে আমার বুকের ভিতর কেমন মোচড় দিসিল- এখনো মনে আছে!
যা হোক, দিন যেতে থাকলো দিনের মতই। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম যে, আমার ইসলাম শিক্ষাকে টা-টা-বাই-বাই! কিন্তু, আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার প্ল্যান ছিল আরো দারুন কিছু!
কিভাবে কিভাবে যেন অন্তর টা আস্তে আস্তে নরম হতে লাগলো, কিছু বোনেদের সাথে কথা হতে লাগলো! কিন্তু, তারা যেন অন্য গ্রহের কেউ! তাদের কাছে তাদের ধর্ম, তাদের ইসলাম এমন একটা কিছু- যেভাবে আমি কখনই ইসলামকে দেখিনি, শুনিনি! সুবহান আল্লাহ্!
তাদের মধ্যে যেন দেখলাম “তাক্ওয়া”-র একটা Different LEVEL! কি সেই তাক্ওয়া তাদের !!
সুবহান আল্লাহ্!!
পরবর্তী তে আমার রব আমাকে নতুন ভাবে “তাক্ওয়া”-র সংজ্ঞা শিখালেন! বুঝলাম যেখানে তাক্ওয়া নিয়ে একটা বই লিখে ফেলা যাবে, সেখানে সেই হাফ্ পেইজের বর্ণনা কতই না নগণ্য! তাক্ওয়া শুধুই আল্লাহ্কে ভয় পাওয়া- এই সংজ্ঞা কতই না অসম্পূর্ণ!!
এখন, আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন কে কম-বেশি ভয় কে না পায়! জাহান্নাম, আগুণ, কবরে আযাব, মাটির কামড়- এসমস্ত বর্ণনা শুনলে যে কারো প্রাণ ভয়ে ওষ্ঠাগত হবেই! আর সেই ভয়টুকু পাবার পর ২/৩ বার “আস্তাগ্ফিরুল্লাহ্! আল্লাহ্ মাফ করো!” – এই বলে-টলে শেষ করে ২ মিনিট পরেই যদি আবার টিভির রিমোট হাতে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার উদ্দাম নৃত্যের সাথে মাথা দোলানো শুরু হয়ে যায়- THEN THIS IS NOT TAQWA !!!
তাক্ওয়া হচ্ছে সে জিনিস যা বিলাল(রাঃ)কে প্রচন্ড রৌদ্রে খালি গায়ে শুইয়ে চামড়া ঝলসে রক্তাক্ত হবার পর-ও “আহাদ, আহাদ” (আল্লাহ্ এক আল্লাহ্ এক) বলে চিৎকার করার শক্তি দিয়েছিল!
তাক্ওয়া হচ্ছে সে জিনিস্, যা আম্মার(রাঃ) কে উত্তপ্ত জ্বলন্ত লোহা দিয়ে ঝলসে দিবার পরো ঈমানের উপর অটল থাকার শক্তি দিয়েছিল!
যুরারাহ্ বিন আওফা(রাঃ) এর নাম শুনেছেন কখনো ? একবার ফজর সলাতের ইমামতি করতে করতে তার সামনে আসলো সূরা মুদ্দাসসিরের এই আয়াত- “যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে; সেদিন হবে কঠিন দিন!” তিনি এই আয়াত পাঠ করতেই ভয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন! একে বলে তাক্ওয়া!
উসমান(রাঃ) কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় এত কান্না করতেন যে তার দাঁড়ি ভিজে একাকার হয়ে যেত! একে বলে তাক্ওয়া!
উমার(রাঃ) জামাআতে সালাহ্ আদায়ের সময় কুরআন তিলাওয়াতের সময় এমন ভাবে ফুঁপিয়ে কাঁনতেন যে পিছনের সারিগুলি থেকেও তার কান্নার আওয়াজ শুনা যেতো! একে বলে তাক্ওয়া!
মুসআব ইবনে উমাইর(রাঃ)! উহুদের যুদ্ধের সময় মহানবী(সাঃ) তার হাতে মুসলিমদের যুদ্ধের পতাকা ধরার দায়িত্ব দিলেন! এক পর্যায়ে, এক কাফের সৈন্য তরবারির হ্যাঁচকা টানে তার হাতটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। তিনি তখন আরেক হাত দিয়ে পতাকা ধরে রাখলেন, এবার সেই হাতটিও একই ভাবে কেটে দিল। এরপরো তিনি রক্তাক্ত ২ বাহু দিয়ে তাওহীদের ঝাণ্ডা উঁচু করে ধরে রাখলেন। This is called তাক্ওয়া!!
আনসার যুবক মু’আয বিন আমর(রাঃ)! তার-ও যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে এক হাত শাঁই করে কাটা পড়লো! হাত টা কেটে গিয়ে চামড়ার সাথে ঝুলতে লাগলো। এভাবে ঝুলন্ত রক্তাক্ত হাত নিয়ে তার যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে সে তার ঐ হাতের উপর পা রেখে এক টানে চামড়া ছিড়ে ঐ হাতকে দেহ থেকে আলাদা করে দেয়। তারপর, আরেক হাতে তরবারি নিয়ে বীরের মতন কাফেরদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন, যেন কিছুই হয়নি! ! This is called
তাক্ওয়া!!
জ্বী!! তাক্ওয়া এমন-ই পাওয়ারফুল!
“আমি আল্লাহ্ কে দেখতে না পারলে কি হয়েছে, তিনি তো আমাকে ঠিক-ই দেখছেন!”- এই বুঝকে অন্তরে শুধু ধারণ করেই শেষ না!
তাক্ওয়া অর্জনকারীর মধ্যে একটাপরিবর্তন ডিমাণ্ড করে!
হ্যাঁ
সত্যিকারের তাক্ওয়া আপনার মধ্যে আমূলে পরিবর্তন আনতে বাধ্য! যে এই তাক্ওয়ার গুণ অর্জন করতে পেরে নিজের মধ্যে আল্লাহ্ তা’আলার জন্যে পরিবর্তন আনতে পারে, সে আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান!
আর সেই সৌভাগ্যটাই অর্জন করার জন্যেই প্রতি বছর-ই মহান আল্লাহ্ তা’আলা আপনার-আমার জন্যে একটি ৩০ দিনের কোর্স ঠিক করে রাখেন।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন মাননীয় পাঠক যে, তাক্ওয়া এমন কিছু না যে, সকালে ঘুম থেকে উঠলাম আর মুদির দোকান থেকে গিয়ে এক কেজি তাক্ওয়া কিনে আনলাম!!
তাক্ওয়া একটা অর্জন করার বিষয়!! কোন কিছু অর্জন করতে হলে অধ্যবসায় লাগে, পরিশ্রম লাগে, ট্রেইনিং লাগে! ঠিক তেমনি ভাবে তাক্ওয়া অর্জনের জন্যে ট্রেইনিং হিসেবে আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন আমাদের রমাদান মাস দিয়েছেন।
এখন কিভাবে রমাদানে তাক্ওয়ার ট্রেইনিং হয়?
একটু ভেবে দেখুন, আপনি যখন রোযা রাখছেন, তখন অনবরত আপনার পেট, আপনার শুকনা গলা আপনার কাছে আকুতি করে যাচ্ছে “ ক্ষুধা! ক্ষুধা খেতে দাও!” “তৃষ্ণা! পিপাসা! পানি দাও!”
তাই না ? কিন্তু যতই আপনার ক্ষুধা লাগুগ, যতই আপনার পানি পিপাসা পাক না কেন, আপনি সেই সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিক-ই আপনার শরীরকে ধমকে সোজা রাখেন,
“একদম চুপ! এখনো মাগ্রিবের আযান দেয় নাই! তার আগ পর্যন্ত নো খাওয়া-পানি”
আপনার সম্পূর্ণ শরীর আপনার কাছে ভিক্ষা চাইতে থাকে, “ যা না! একটু খেয়ে নেহ্! কেউ দেখবে না”
কিন্তু, আপনার অন্তর শক্তি, শরীরকে দমিয়ে রাখে। “কেউ না দেখলে কি? আল্লাহ্ কি দেখছেন না!! আমি রাতের বেলা আল্লাহ্-র কাছে নিয়ত করেছি যে, সারাদিন রোযা রাখবো! বললেই হলো!”-
এই ভেবে কেউ না দেখলেও আপনি কিন্তু খাচ্ছেন না !
আর এই একটি মাস জুড়ে চলে এমনি শরীর-মনের এই যুদ্ধ! এই একটি মাস ধরে আপনার অন্তর, আপনার শরীরকে কন্ট্রোল করে রাখে খাওয়া-পানি থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে!
এই ৩০ দিন ধরে আপনি আপনার অন্তরের শক্তিকে ট্রেইন করতে থাকেন প্রবল শারীরিক Desire এর বিরুদ্ধে জয়ী হতে!
আর এভাবেই আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার বান্দারা নিজেদের কে তাক্ওয়ার ট্রেইনিং-এর মধ্যে ব্যস্ত রাখে।
তারা ভাবে, আমি যদি আমার রবের খুশির জন্যে খাওয়া-পানির মতন হালাল কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারছি, তাহলে কিসে আমাকে সেই একই রবের সন্তুষ্টির জন্যে হারাম কাজ থেকে দূরে থাকতে বাধা দেয়?
সে চিন্তা করে, আমার ঈমানী শক্তি যদি আমাকে আমার ক্ষুধা,পিপাসা, দৈহিক চাহিদার মতন স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখতে রাখার মতন শক্তি-শালী হতে পারে ,
তাহলে কেন আমি শয়তানী কু-প্রবৃত্তি গুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখাতে আমার ঈমানকে মতন শক্তি-শালী করতে পারবো না ?
দিন শেষে, লাভ তো আমার-ই! রবের সন্তুষ্টি ও পাচ্ছি আমি, জান্নাতের প্রাসাদ-ও পাচ্ছি আমি, সফল-ও হচ্ছি আমি- তাহলে কেন হারামের কাছে যাবো?
আর এভাবেই, দীর্ঘ একটি মাসের ট্রেইনিং শেষ করে পরবর্তীতে যখন তার সামনে কোন হারাম কিছু উঁকি-ঝুঁকি মারতে থাকে, তার সাথে সাথে মনে পরে যায়-
“কেউ না দেখলে কি হয়েছে আল্লাহ্ তো দেখছেন!”
যেভাবে সে তার প্রচন্ড ক্ষুধার সময় হাতকে কন্ট্রোল করে রেখেছিল খাবারের দিকে হাত বাড়াতে, ঐ ভাবেই তার প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে তার হাতকে হারাম কিছু করা থেকে কন্ট্রোল করে ফেলবে!!
রমাদানের সময় যেভাবে সে তার শরীরের আকুতিকে বলতো ““একদম চুপ!এখন খাবার পাবি না! আল্লাহ্ রাগ করবেন! ”
ঠিক একই ভাবে রমাদান শেষ হলেও সে তার কান কে বলবে,
“ একদম চুপ! এসমস্ত হারাম শুনবি না! আল্লাহ্ রাগ করবেন!”
সে তার চোখকে বলবে, “একদম চুপ! এসমস্ত হারাম দেখবি না! আল্লাহ্ রাগ করবেন”
সে তার হাতকে বলবে, “একদম চুপ! আর একটাও বেপর্দা ছবি আপলোড না! আল্লাহ্ রাগ করবেন”
সে তার মুখকে বলবে, “একদম চুপ! আর একটাও মিথ্যা না, পরনিন্দা না, কূটনামী না!!আল্লাহ্ রাগ করবেন!”
আর এভাবেই একটি মাসের তাক্ওয়ার ট্রেইনিং তাকে বাকি ১১ টা মাস ধরে নিরাপত্তা দিবে!! নিরাপত্তা দিবে পথভ্রষ্টের মতন অন্ধকারের গর্তে পড়ে যাওয়া থেকে!
আর আমরা কিন্তু নিজেরা তাক্ওয়া অর্জন করতে পেরে আল্লাহ্কে ধন্য করে দেই- এমন কিছু ভাবার দরকার নেই! আমরা তাক্ওয়ার ট্রেইনিং নেই, নিজেরাই নিজেদের বাঁচানোর জন্যে ... দুনিয়ার হাজারো ফিত্না থেকে, আল্লাহ্র ক্রোধ থেকে, জাহান্নাম থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে আমাদের তাক্ওয়া !!
আচ্ছা শেষ-মেশ আমার নার্সিং এর ট্রেইনিং টার কাছে ফিরে যাই আবার একটু!
কি সুন্দর স্কুল থেকে ফ্রী এমন একটা কোর্সের সুযোগ! কিন্তু, তার পরো দেখতাম যে, কিছু Student ট্রেইনিং এ ঠিক-মতন আসতো না। হসপিটালে ইন্টার্নির সময় নার্সদের ভালোমতন ফলো করতো না, পড়া-শোনা করতো না ... ইত্যাদি ইত্যাদি! WELL! Guess what? আমরা বাকিরা সবাই যখন কোর্স শেষে খুশি খুশি একজন certified licensed Nurse হবার আনন্দ লুটছিলাম- ওদের আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না!
একই ভাবে, কেউ আপনাকে যতই ভাল ট্রেইনিং এর সুযোগ করে দিক না কেন, আপনি যদি আপনার সময়, শ্রম এতে ব্যয় না করেন- তাহলে কিন্তু কোনই লাভ নেই!
আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন এই যে, এত এত বরকত-রহমত ঢেলে ঢেলে আপনার সামনে রমাদানকে রাখলেন, আপনাকে রমাদান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিলেন, ফ্রী ট্রেইনিং এর সুযোগ করে দিলেন, চিরশত্রু শয়তানকে পর্যন্ত বেঁধে রাখলেন, তারপর-ও যদি আপনি আপনার সময়, শ্রম, নিষ্ঠা এতে না ঢালেন- দিন শেষে ফলাফল শূণ্য!!!
আমার ঐ ফ্রেন্ডদের মতন পরে আফসোস করতে হবে যে, এমন একটা সুবর্ণ সুযোগ পাবার পরো তাক্ওয়ার মতন মহা মূল্যবান গুণের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারলেন না !!
দুয়া করি, আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন যেন আমাদের কাউকেই সে সকল হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত না করেন!
এই রমাদান হোক আমাদের ট্রেইনিং এর মাস!! আমাদের তাক্ওয়া অর্জনের মাস, আর তাক্ওয়ার উপর অটল থাকার মাধ্যমে নিজেদের জন্যে জান্নাতের সেই লাল-নীল হীরার প্রাসাদ টি বুকিং দিয়ে নেওয়ার মাস ...
আমীন ইয়া রাব!!
( ( দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া! ))
বিষয়: বিবিধ
১৩৪০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
All praise to Allah who gave us knowledge to think better,to do better, to be a good Muslim during Ramadan .
You have a Brilliant understanding power and as well good hand.
তাক্ওয়া হচ্ছে সে জিনিস্, যা আম্মার(রাঃ) কে উত্তপ্ত জ্বলন্ত লোহা দিয়ে ঝলসে দিবার পরো ঈমানের উপর অটল থাকার শক্তি দিয়েছিল!
যুরারাহ্ বিন আওফা(রাঃ) এর নাম শুনেছেন কখনো ? একবার ফজর সলাতের ইমামতি করতে করতে তার সামনে আসলো সূরা মুদ্দাসসিরের এই আয়াত- “যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে; সেদিন হবে কঠিন দিন!” তিনি এই আয়াত পাঠ করতেই ভয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন! একে বলে তাক্ওয়া!
উসমান(রাঃ) কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় এত কান্না করতেন যে তার দাঁড়ি ভিজে একাকার হয়ে যেত! একে বলে তাক্ওয়া!
উমার(রাঃ) জামাআতে সালাহ্ আদায়ের সময় কুরআন তিলাওয়াতের সময় এমন ভাবে ফুঁপিয়ে কাঁনতেন যে পিছনের সারিগুলি থেকেও তার কান্নার আওয়াজ শুনা যেতো! একে বলে তাক্ওয়া!
মুসআব ইবনে উমাইর(রাঃ)! উহুদের যুদ্ধের সময় মহানবী(সাঃ) তার হাতে মুসলিমদের যুদ্ধের পতাকা ধরার দায়িত্ব দিলেন! এক পর্যায়ে, এক কাফের সৈন্য তরবারির হ্যাঁচকা টানে তার হাতটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। তিনি তখন আরেক হাত দিয়ে পতাকা ধরে রাখলেন, এবার সেই হাতটিও একই ভাবে কেটে দিল। এরপরো তিনি রক্তাক্ত ২ বাহু দিয়ে তাওহীদের ঝাণ্ডা উঁচু করে ধরে রাখলেন। This is called তাক্ওয়া!!
আনসার যুবক মু’আয বিন আমর(রাঃ)! তার-ও যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে এক হাত শাঁই করে কাটা পড়লো! হাত টা কেটে গিয়ে চামড়ার সাথে ঝুলতে লাগলো। এভাবে ঝুলন্ত রক্তাক্ত হাত নিয়ে তার যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছিল দেখে সে তার ঐ হাতের উপর পা রেখে এক টানে চামড়া ছিড়ে ঐ হাতকে দেহ থেকে আলাদা করে দেয়। তারপর, আরেক হাতে তরবারি নিয়ে বীরের মতন কাফেরদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন, যেন কিছুই হয়নি! ! This is called
তাক্ওয়া!!
জ্বী!! তাক্ওয়া এমন-ই পাওয়ারফুল!
চমৎকার লিখলেন। পড়ে খুশী হলাম,হতাশ হলাম যে আমার ভেতর মাল নেই....ইয়া আল্লাহ আমাকে মুত্তাকী হিসেবে কবুল করুন এবং ক্ষমা করুন..
আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন