রমাদানঃ একটি গিফট !!

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৭ জুন, ২০১৪, ১০:২০:২৪ রাত



খুব সুন্দর করে লাল ফিতা, নীল ফিতা দিয়ে মোড়ানো একটা গিফ্টের বক্স আপনার সামনে আনা হলো। বলা হল, এই গিফ্ট খাস্ আপনার জন্যে পাঠিয়েছে আপনাকে ভালোবাসে এমন স্পেশাল কেউ একজন! কেমন লাগবে আপনার তখন? কতটা উত্তেজনা, উদ্দীপনা আগ্রহ নিয়ে আপনি গিফ্ট টার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন, খুলে দেখার জন্যে ? কি এই গিফ্ট ? কে পাঠালো এত ভালোবেসে? আচ্ছা যে পাঠালো, তাকেও তো এখন কিছু দিতে হয়- কি এমন উদগ্রীব আমরা হয়ে উঠি কি না ?

এখন এই উত্তেজনা টুকু তুলনা করুন রমাদান আসার আনন্দের সাথে। রমাদান যখন আসতে থাকে, আপনার কি কখনো মনে হয় যে, আপনার জন্যে খুব স্পেশাল কারো কাছ থেকে একটা গিফ্ট আসতে যাচ্ছে, রমাদানের এক নম্বর দিন থেকেই সেই গিফ্ট খুলে কি জিনিস সন্ধান করার মতন রমাদানের রহমত ও বরকত গুলি সন্ধান করার ঝোঁক কতটুকু থাকে আমাদের?

আচ্ছা, রমাদানকে বার বার “গিফ্ট গিফ্ট" কেন করছি জানেন? কারণ, এই মাসেই নাযিল করা হয় বিশ্বমানবতার জন্যে প্রেরিত সবচাইতে বড় গিফ্ট- কুরআনুল কারীম! আমরা সবাই জানি কম-বেশি যে, কুরআন হচ্ছে আমাদের জন্যে পথ-প্রদর্শক! কুরআনে অনেক জায়গায় আল্লাহ্-র হিদায়াতকে তুলনা করা হয়েছে আলোর সাথে। কিন্তু, কেন আলোর সাথে কখনো ভেবে দেখেছেন কি ?

লোড-শেডিং এর সময় নিকষ-কালো অন্ধকার যখন আপনাকে ঝেঁকে ধরে, কেমন লাগে তখন ? একটু ঠিক মতন নড়তে পারি না আমরা পাছে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যাই। আর নড়ে যাবোই বা কোথায়, কোনটা সঠিক পথ আর কোন টা ভুল পথ – সেটাই ত বুঝার জো নেই! না খেতে পারছি কিছু, না দেখতে পারছি কিছুম, না কিছু করতে পারছি!! তার উপর আবার আছে অন্ধকারের অমানিশায় যে কোন রকমের বিপদের ভয়!

. এর মধ্যে কেউ যদি আপনার হাতে একটা লন্ঠন, মোমবাতি বা টর্চ ধরিয়ে দেয়- কেমন শান্তি লাগবে আপনার তখন! হাফ্ ছেড়ে বাঁচার মতন নিবেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস!

এই রমাদান সেই মাস, যে মাসে গোটা মানবজাতির হাতে রহমানুর রহীম তাদের জীবনের সকল অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত সঠিক পথে চলার লন্ঠন টি ধরিয়ে দেন- এই লন্ঠন আর কিছু না- কুরআনুল কারীম! এই গিফ্ট জীবনে থাকলে আর কি লাগে ? প্রতিটা তালার চাবি আছে এখানে!

রমাদান মাস স্পেশাল হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই মাসে আমাদের জন্যে এই আসমানী গিফ্ট মর্ত্যে নেমে আসে। আর আমরা যদি সেই গিফ্টের কোন পরোয়া না করেই এই ৩০ টা দিন এমনি উপোস কাটিয়ে দেই, তাহলে আসল উদ্দেশ্য টাই কি এখানে ব্যহত হচ্ছে না?

আবার অনেকে তো এই মাসে এই “গিফ্ট টা কে খতম” করার মহা আয়োজনে লেগে পড়ে! মাশা আল্লাহ্ নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ কুরআন এই পবিত্র মাসে শেষ করার অফুরন্ত সওয়াব। কিন্তু, আসলে কুরআন কি ‘খতম’ করার জিনিস? টর্চ আপনাকে দেওয়া হল সেটা দেখে দেখে পথ চলার জন্যে, আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে শুধু সেই টর্চ পর্যবেক্ষণ-ই করে গেলেন, জায়গা থেকে এক চুল-ও নড়লেন-ও না! তাহলে টর্চের আসল উদ্দেশ্য টাই কি ব্যহত হল না ?

অর্থ না বুঝে শুধু সওয়াবের আশাতে কুরআন তিলাওয়াত করে যাওয়া টা একই ভাবে আমাদেরকে আমাদের আসল উদ্দেশ্য থেকে বিমুখ করে রাখে! মাশা আল্লাহ্ নিঃসন্দেহে এটা অতি সওয়াবের কাজ, কিন্তু এটাকেই কুরআন পাঠের মুখ্য কারণ করে নিলে চলবে না! – আর এই মেসেজ টাই প্রতি বছর বছর রমাদান মাসের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা আমাদেরকে একটা ধাক্কা দিয়ে আবারো মনে করিয়ে দেন –

চলুন শুনি আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীন কি বলেন,

“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর”

[সুরা বাকারা: ১৮৫]


ভালো ভাবে আয়াত টা পড়ুন! ভালো মতন না বুঝলে আবার পড়ুন! আবার পড়ুন!! রমাদান সেই মাস যে মাসে আমাদের জন্যে নাযিল হয় এমন এক কিতাব যা কি না “মানুষের জন্য হেদায়েত” , “সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ” এবং “ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী” এখন কুরআন যে কিভাবে আপনার জীবনের সত্য পথ আর মিথ্যা পথ কে সুস্পষ্ট ভাবে আলাদা করে দিয়েছেন- সেটা অর্থ সহ কুরআন না পড়লে আপনি বুঝবেন তো কিভাবে বুঝবেন?

আয়াতের শেষের অংশটুকু আরো ভালোভাবে খেয়াল করুন,

“তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর” ...

সুবহান আল্লাহ্‌! এখানে আল্লাহ্‌ রব্বুল আ’লামীন নিজেই আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন, রমাদানে এমন একটা গিফ্‌ট যে আমি পাঠালাম তোমাদের জন্যে হে বান্দা! কেন জানো? যেন তুমি আমাকে অন্তত ‘Thank you” টুকু বলতে পারো!

এই আয়াতটির তাফ্‌সীর-ব্যখ্যা পড়তে থাকলে অন্তরকে ভিতর থেকে নাড়া দিতে থাকে।

বুঝলেন তো প্রিয় পাঠক, আমার-আপনার জন্যে সাত আসমানের উপর থেকে আসা গিফ্‌ট টি বছর ঘুরে আবারো আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।

আসুন আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলাকে “Thank you” বলার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাই।

প্রস্তুত হয়ে যাই আরো বেশি বেশি ইবাদাতের মাধ্যমে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে, তাওবা করতে, তার সাথে নতুন করে একটা সম্পর্ক গড়তে! একটি করে আয়াত হলেও প্রতিদিন অর্থ সহ কুরআন বুঝে পড়ার মাধ্যমে স্বয়ং রবের সাথে মিষ্টি কথোপকথন শুরু করতে।

তিনি কখনো হাসাবেন, কখনো কাঁদাবেন, কখনো উৎসাহ দিবেন, কখনো ভয় দেখাবেন – কিন্তু সবসময় রহমতের বৃষ্টির বন্যা বইয়ে দিতে তৈরি আছেন, সবসময়!!

শুধু আপনার উঠে দাঁড়ানোর অপেক্ষা !! আপনার আকুল ইচ্ছা আর চেষ্টার অপেক্ষা!

এই রমাদান হোক আমাদের জন্যে সেই ক্রান্তি-লগ্ন!



বিষয়: বিবিধ

১৮৮০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

239464
২৭ জুন ২০১৪ রাত ১০:৩৯
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চমৎকার লেখা,আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের মাধ্যমে গুনামাফ করে নেওয়ার মত নেকহায়াত ও ইমানী্‌,এলেমী ও আমোলী যোগ্যতা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
187338
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : শুকরিয়া। আমিন .
239492
২৮ জুন ২০১৪ রাত ১২:১২
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : এবার রমজান থেকে নিয়ত করছি আমৃত্যু পর্যন্ত আর নামাজ কাযা করবো না। আল্লাহ যেন আমার এই দুয়া কবুল করেন সে জন্য সবার দোয়া প্রার্থী। Praying Sad
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
187339
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : ফি আমানিললাহ! শুকরিয়া, আমিন
239494
২৮ জুন ২০১৪ রাত ১২:২৯
ভিশু লিখেছেন : টর্চ আপনাকে দেওয়া হল সেটা দেখে দেখে পথ চলার জন্যে, আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে শুধু সেই টর্চ পর্যবেক্ষণ-ই করে গেলেন, জায়গা থেকে এক চুল-ও নড়লেন-ও না! তাহলে টর্চের আসল উদ্দেশ্য টাই কি ব্যহত হলো না?...মাশাআল্লাহ...নতুন একটি উদাহরণ জানলাম! জাযাকাল্লাহ খাইর...Praying Happy Good Luck
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
187340
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : শুকরিয়া।
239507
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০২:১৭
বাজলবী লিখেছেন : খুব সুন্দর পড়ে ভালো লাগলো যেন অামল করে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যেমে অাল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।অামিন।
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০১
187341
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : শুকরিয়া. আমিন
239513
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৪:২৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : It is a beautiful post. Jajakalla khairan
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
187342
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : Barokallahu feek dear api.. Shukriya for taking your time and reading.. Fee amanillahHappy
239521
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৪:৫৭
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : রমজান আমােদর জীবেন যে শুদ্ধতা এবং শুভ্রতার আবহ নিয়ে এসেছে তাতে তওবা করে আল্লাহ আমাদের সকলের জীবনকে আলোকিত করার সুযোগ করে দিন Prayingজাজাকাল্লাহ আপু
রমজান মুবারক Love Struck Rose Good Luck
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০৪
187343
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : বারকাল্লহু ফিক আপুমনি. আল্লাহ রব্বুল আলামিন তোমার দুয়া কবুল করে নিক..
রমাদানের অনেক অনেক মুবারকবাদ তোমাকেও !
ফি আমানিল্লাহ .. বারকাল্লহু ফিকি. শুকরিয়া সময় নিয়ে পড়ার জন্যে Happy
239755
২৮ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : মাশা আল্লাহ ! আপু মনটা ভরে গেলো্! বহুদিন পর মন নাড়া দেয়া লিখা পড়লাম! আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন! আমীন! বারাকাল্লাহু ফিক! Rose Good Luck Love Struck Praying

241327
০৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০৫
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : Jazakillah khoir আপুমনি. আল্লাহ রব্বুল আলামিন তোমাকেও কবুল করে নিক..
রমাদানের অনেক অনেক মুবারকবাদ তোমাকেও !
ফি আমানিল্লাহ .. . শুকরিয়া সময় নিয়ে পড়ার জন্যে Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File