"তুই ওকে বলতে দিলি কেমনে?" (রমাদান প্রস্তুতি-২)
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৭ জুন, ২০১৪, ০৪:৪৬:৪০ রাত
-জানিস্ জানিস্ ওরা তোর নামে গতকাল আমাকে কি যে বলতেসিল?
-ওরা যেটাই বলুক না কেন- সেইটা আমি জানতে চাই না, বরং আমি জানতে চাই ওরা যা বলেছে-- সেটা তুই কিভাবে ওদেরকে এত Comfortably বলতে দিলি ??
- অ্যাঁ ?? আমি বলতে দিলাম মানে?
- শুনেন মাননীয় শ্রোতা! গীবাহ্ বা পরনিন্দা যে করে এবং যে মন ভরে কান পেতে গীবাত শুনে- দুই জন-ই যে গুণাহ্-র ভাগীদার সেটা জানো তো*?
-ইয়ে মানে... এখন আমার সামনে সেধে এসে বক্ বক্ করতে থাকলে আমার কি করার আছে বল?
-করার আছে! অনেক কিছুই করার আছে! তুই ওদের কে বলবি যে, তুই ওদের সাথে মৃত ভাইয়ের মাংস খাবার মতন জঘন্য পাপে শামিল হতে চাস না** !পিরিয়ড!
-ইশ্শিরে! কি জিনিস মনে করায়া দিলি রে!!
-ইয়েস্!! মনে করায়া দিলাম এন্ড এখন থেকে মনে থাকে যেন! সুন্দর করে বললেই পারিস যে, “ নারেহ্ ভাই! এটা কিন্তু গীবাত হয়ে যাচ্ছে! থাক্ না আমি আর শুনতে চাই না! অন্য কিছু বলেন” ব্যস! তাহলেও তো হয়! কি হয় কি না বল?
-হুম্ ম্যাডাম! হয় বৈকি!
-শুন রে শুন!
গীবাহ্ ভয়াবহ রকমের অপরাধ কিন্তু! উঠতে-বসতে মানুষের মুখে মুখে এখন গীবাহ্-র খই ফুটে দেখেই কিন্তু এটার ভয়াবহতাকে কিছু মাত্র কম মনে করিসনা! এই যে, এখন তুই যার যার গীবাহ্ করতেসিস, ওর কাছ থেকে ক্ষমা না চেয়ে নিলে তোর কিন্তু গুণাহ্ মাফ হবে না!** আবার, তুই যার যার গীবাহ্ করতেসিস, তোর গীবাহ্-র কারণে ওরা কিয়ামত দিবসে প্রত্যেকে তোর নেক আমল থেকে ভুরি ভুরি করে তোর নেকী গুলি নিয়ে চলে যাবে! তোর চোখের সামনে তোর পাল্লা নেকী শূন্য হয়ে যাবে, আর তুই কিছুই করতে পারবি না !! চিন্তা করতে পারিস?! আর গীবাহ্-র কারণে দুনিয়ার জীবনে সম্পর্কে সম্পর্কে অশান্তির কষ্ট-ও তো আছেই, আখিরাতেও রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি!!
-ইয়া মা’বুদ!! ইয়া মা’বুদ! আল্লাহ্ ক্ষমা কর!!
-দেখ্ এত লেকচার মারতেসি তোরে কিছু মনে করিস না! কিন্তু তুই আমার মুসলিমাহ্ বোন না বল ? তাই তো আমি নিজের জন্যে যেই জান্নাহ্ চাই, তোর জন্যেও সেই একই জান্নাহ্ চাই! চাই আমরা যেন একই সাথে সেই জান্নাতে মজা করতে পারি! জান্নাতের মতন মহানিয়ামতের জন্যে নিজেদের কে এতটুকুন সংযত তো আমাদের কে রাখতেই হবে রে! সংযত থাকার জন্যে একে অন্যকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে সাহায্য করে যেতে হবে,... খবরদারি করে নয়, একজন আরেকজনের সহোযোগী হয়ে! তাই না বল?
- হয়সে ! তোমার ঘ্যানঘ্যানানি কি আর আজকে নতুন নাকি! ওটার তো আমার ভালোই অভ্যাস হয়ে গেছে! তুই খালি বলে যাবি যেটা বলার, বুঝলি? আলহামদুলিল্লাহ্! এরকম কথার যে কত দরকার আল্লাহ্ সেটা জানেন দেখেই তোকে পাঠায়সে আমার লাইফে! সো ফরমালিটি কম, কথা বেশি!:-))
- হা হা হা! পারিস-ও তুই রে দোস্তি!!
-তুই-ও বা কম কি!
যাক, আমার আজকের Lesson of the Day-
Don’t tell me what they said about me, instead tell me WHY they were so comfortable saying that to YOU??
WHY??
-ইয়েস্ ম্যা’ম!!!
সুন্দর একটা হাসি দিয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন শেষ হল!
*** *** *** ***
**গীবত সংক্রান্ত কিছু শরীয়াতের রেফারেন্স -
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
‘তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো’।
[সূরা হুজুরাত – ১২]
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’
[সূরা হুমাজাহ-১]
ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের সেই নখ দিয়ে মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)
আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’
সুপ্রিয় পাঠকগণ, আল্লাহ্ সুবহানুতা'আলা যদি আপনাকে লিখার এই পর্যন্তে পৌঁছে দেন, তবে আলহামদুলিল্লাহ্ চলুন রমাদানকে সামনে রেখে নিজেরা নিজেদের কে এই প্রমিজ টা করে ফেলি যে, সিয়াম অবস্থায় আমরা নিজেরা তো গীবত করবই না, প্লাস অন্য কাউকে করতেও দিব না !! ইনশা আল্লাহ্!! জানেন-ই তো আল্লাহ্-র নবী(সাঃ) বলেছেন যে, যদি রোজা রেখে অনর্থক কথাই ছাড়তে না পারলাম তবে সেই রোজার আল্লাহ্-র রব্বুল আ'লামীনের কোন দরকার নেই!
“যে বাতিল কথা ও কাজ এবং মূর্খতাপূর্ণ আচরণ পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।”
(সহীহ আল বুখারি)
মূল্যবান মাসে আমাদের মূল্যবান ইবাদাহ্ মূল্যহীন হয়ে যাক- সেটা নিশ্চয়ই আমরা চাই না?
তাহলে চলুন, এইবারের রমাদানকে সামনে রেখে নিজেদের সাথে নিজেরা এই প্রমিস্টা না হয় করেই ফেলি! নিজেদেরকে প্রস্তুত করি ফেলি একটা "গীবত-ফ্রী" রমাদানের জন্যে!
নো গীবত করা, নো গীবত শোনা!
নাহ কি বলেন?
:-))
আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সেই তাওফিক দেন যেন.
আল্লহুম্মা আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খাইরান কাসীরা...
Barokallohu feek.
দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া আমার আপু মনিকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন