একটু সময় হবে কি ভেবে দেখার ?
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৩ জুন, ২০১৪, ১১:১৫:৪৫ রাত
ছবিটির দিকে ভালোমতন তাকিয়ে দেখুন তো! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এটা কিন্তু আপনার-ই ছবি! আপনার-আমার-ই দেহটার ব্যবচ্ছেদ-ই এটা !!
কি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি ? হুম, হবার-ই কথা! কারণ, খালি চোখে তো আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব কিছুই দেখা যায় না । তাই বলে কিন্তু, দিন-রাত আমাদের দেহে যে কত রকমের ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে চলছে – সেটা অস্বীকার করার-ও কোন উপায় নেই!
আচ্ছা! আমাদের দেহের এই প্রক্রিয়া গুলির কয়টার খবর রাখি আমরা ? দেহটা তো আমাদের-ই, তাই না? তাহলে নিত্য আমাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া সবগুলি প্রক্রিয়ার খবর রাখতে পারি না কেন ? আমাদের দেহ কি তাহলে আমাদের কন্ট্রোলের বাইরেও অন্য কারো কন্ট্রোলে আছে? !
হুম্!! আসুন তো এই চিন্তাটা নিয়ে সামনে এগুনো যাক ...
এই যে আমি এখন আঙ্গুল গুলো নাড়িয়ে নাড়িয়ে কী-বোর্ড টিপে যাচ্ছি, চামড়ার নিচের মাইক্রোফিলামেণ্ট- অ্যাক্টিন-মায়োসিন নামের প্রোটিন গুলা যে এটিপির সাথে মিলে এনার্জি তৈরি করে আমার পেশী গুলার ঠিকমতন নড়া-চড়া নিশ্চিত করার জন্যে কি এক লীলাখেলা করে যাচ্ছে – আমার কিন্তু এই নিয়ে কোন একটা চিন্তাও করতে হচ্ছে না। একটা এটিপির সাথে মিলে যদি একটা প্রোটিনেরও বিক্রিয়া ভালোমতন না ঘটে, তাহলে কিন্তু আমার পেশী ঠিকমতন নড়বে না! অবশ লাগবে !
আমি তো আমার মতন সুন্দর টাইপ করে যাচ্ছি- আমার কিসের একটিনের চিন্তা, প্রোটিনের চিন্তা! তবে, সুনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া চলমান!
আবার নিঃশ্বাস নিচ্ছি মুহুর্তে মুহুর্তে। আমি আমার মতন বাতাস টেনে যাচ্ছি! প্রতিটা নাকের লোমে কতগুলা যে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া আটকে আছে- কে রাখে তার খবর! ফুসফুসে শুদ্ধ বাতাস ঢুকে কিভাবে যে বাতাসের বিষাক্ত অংশটুকু কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাথে বের হয়ে যাচ্ছে- আমার কিন্তু তার কোন খেয়াল নেই! তবে, সুনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া চলমান!
আমার ক্ষুধা পেয়েছে- যা সামনে পাচ্ছি খেয়ে নিচ্ছি । এই খাবার গুলি কিভাবে যে পেটে গিয়ে শত শত ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে পুষ্টি যাবার কথা-পৌঁছে যাচ্ছে! আর ক্ষতিকারক জিনিস গুলি কোষ থেকে বের হয়ে জমা হচ্ছে পায়ুতে, সব বর্জনীয় পদার্থগুলি ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিস্টেমেকালি বের হয়ে চলে যাচ্ছে -- কই আমাকে তো এই নিয়ে এতটুকু চিন্তা করতে হচ্ছে না !! খাই-দাই-ফুর্তি করি! তবে ঠিক-ই কিন্তু সেই সুনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া চলমান!
এমনি করে পুরোটা দেহজুড় এই যে কত-শত সুনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া চলমান!- যার বেশিরভাগ-ই আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা তো দূরে থাক, চামড়ার নিচে দিয়ে কিছু দেখতেই আমরা পাই না! তাহলে, কে চালাচ্ছে আমাদের দেহের এই বিশাল কারিগর ?
কি ভাবনার খোরাক জুটলো কিছু ? আসুন আরো কিছু চমকপ্রদ কথা শুনতে শুনতে এগুনো যাক ... ...
আচ্ছা আপনি কি কখন ভেবে দেখেছেন- এই যে আপনার হৃদপিণ্ডের এক পাশের ডান নিলয়ের দূষিত রক্তগুলো কিভাবে সেই একই হৃদপিণ্ডের খোপের বাম পাশের নিলয়ের পরিশুদ্ধ রক্তের ধার কাছেও ঘেঁষে না?
উত্তর হচ্ছেঃ- ছোট্ট একটা অর্ধাচন্দ্রাকৃতির গেট দিয়ে এই দুই নিলয়ের দূষিত আর শুদ্ধ রক্তের মিশে যাওয়াকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে!
আপনাকে-আমাকে কি একটা বারের জন্যেও এটা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয়েছে ?
চিন্তা করেছেন কি কখনো... আপনি তো চামড়ার নিচে কি চলছে বা কি না চলছে সেটা দেখতেই পারছেন না, তাহলে কোষের প্রতি পরতে পরতে পরম যত্ন নিয়ে কে আপনার জন্যে একটা স্বাভাবিক সুন্দর জীবন-যাপন নিশ্চিত করে দিচ্ছেন ? ভাবা হয়েছি কি কখনো?
আপনি-আমি এগুলির কোন খবর না রাখলে কি হবে- সাত আসমানের উপর থেকে একজন ঠিক-ই আমাদের দেহের প্রতিটা কোষ, টিস্যু, অণু, পরমাণু, পরমাণূর কণিকা- সব কিছুর খেয়াল রেখে চলেছেন .. প্রতিটা নিঃশ্বাসে, প্রতিটা মুভমেন্টে, প্রতি লোকমা খাবারে!!
প্রতিটা মুহুর্তে বর্ষণ হচ্ছে তার রহমতের বৃষ্টি এই দেহের উপর ... প্রতিটা মুহুর্তের ভগ্নাংশে চলছে তার খেয়াল রাখা !!
তারপরো কি বলবেন যে, এই সবকিছু সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ, এই প্রতিটা নিয়ম-নীতি- শুধু এমনি এমনি হয়ে চলেছে ?? আমি যদি বলি এই লিখাটা কারো কোনরকমের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এমনি এমনি কীবোর্ড নিজে নিজে টিপে টিপে লিখা হয়েছে, করবেন বিশ্বাস ? তাহলে একই যুক্তিতে আমাদের সমগ্র দেহের এই সুনিপুণ কারিগর এমনি এমনি হয়ে চলেছে ভাবা টা কতটা হাস্যকর!
একটু ভেবেই দেখুন না -- একেকটা প্রক্রিয়ার কি সব জটিল জটিল নাম রে বাবাহ্ !
— ক্রেবস সাইকেল, মেটাবলিসম্, মায়োসিস-মিয়োসিস, ফ্যাগোসাইটোসিস ... ইত্যাদি ইত্যাদি ... - এত এত জটিল জটিল নামের তো কোন দরকার নাই।
এগুলো সবগুলোকে একটি নামেই অভিহত করা যায়--- "রহ্মত" !!
রাহ্মানুর রাহীম দয়াময় এক স্রষ্টার রহমত বৈ এগুলো আর তো কিছু না। সুবহানআল্লাহ্! বেশি দূর যাওয়া-ও লাগবে না- একটিবার অন্তর চক্ষু মেলে খালি নিজের দেহের দিকে চোখ বুলান- প্রমাণ পেয়ে যাবেন- স্রষ্টা আছেন, স্রষ্টা আছেন এবং স্রষ্টা আছেন!!
আমরা মোটামুটি সবাই কম-বেশি এই তথ্যগুলি Biology subject নিয়ে থাকলে পড়েছি , মুখস্থ করেছি , পরীক্ষার খাতায় বিদ্যুৎ বেগে লিখেছি , আর দিন শেষে সব ভুলে গেছি – এত কিছু করতে পেরেছি, কিন্তু যেটা পারি নাই করতে সেটা হচ্ছে- 'চিন্তা' !
চিন্তা করি নাই যে একটা বার-ও , এই যে আমার নিজ শরীরটার মধ্যে ঘটে যাওয়া লীলাখেলাগুলোর উপর আমার কতটুকু নিয়ন্ত্রণ ! কতটুকু অক্ষমতা!
এর পিছনে কোন সেই মহা ক্ষমতাধরের হাত! আচ্ছে তাহলে, কেমন ক্ষমতাধর হতে পারেন সেই মহান সত্তা ?
আমরা এই চিন্তাগুলি করি না দেখে আরো একটা জিনিস যেটা করতে পারি না-
সেটা হচ্ছে 'শুকরিয়া আদায়'.
সকল নিয়ন্ত্রণের অধিকারী যিনি, আমাদের মনের অজান্তেই আমাদের দেহের প্রতিটা পরমাণুর সুনিশ্চিত চাহিদা পূরণ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন- একটাবারো থেমে সেজন্যে বলা হয় না ,
"আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন!!"
যে আমাদের সবচেয়ে ভালোবাসেন, তাকেই কি না আমরা সবচেয়ে বেশি হতাশ করি! অবুঝের মতন তার নিয়ামত অস্বীকার করি! অহঙ্কার করি! অবাধ্য হই!
যিনি আমাদের সবচেয়ে বেশি নিয়ামত দেন, তাকেই কিছু দিবার বেলায় আমাদের যত কৃপণতা!
এত এত নিয়ামত ভোগ করেও কিভাবে পারে মানুষ আল্লাহ্-র ইবাদাত ছাড়া থাকতে? আল্লাহ কে স্মরণ করা ছাড়া দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে ?
বুক টা খা খা করে না কি তাদের একটুও ??
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৭ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন...
৬) হে মানুষ ! কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে ,
﴿الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ﴾
৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন , তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন
﴿فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاءَ رَكَّبَكَ﴾
৮) এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন ৷
ভালো লাগলো...
খোদা তোমার মেহেরবানী, খোদা তোমার মেহেরবানী।
এই জীবনটার জন্য এবং মুসলমানের ঘরে জন্ম দেওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
যাদের হৃদয় অন্ধ তারা কখনও সত্যকে জানতেও চায়না।
কতশত প্রক্রিয়া আল্লাহ অটোমেটিক চালাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
মাঝে মাঝে অবাক লাগে এটা ভেবে যে বিভিন্ন খাবারের বিভিন্ন রকম স্বাদ যদি না হতো মুখটা যদি ঘাড়ে থাকতো চোখটা যদি পিছে থাকতো হাতটা যদি মুভমেন্ট না করা যেতো তাহলে কত কষ্ট হতো।
যদি কেউ আম গাছে কাঠাল হতে দেখে তাহলে সেটা কুদরত ভাবে।
কিন্তু আমাদের শরীর এ আল্লাহ যা দিয়েছেন তা অনেক বড় কুদরত।
জাজাকাল্লাহ খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়া ফি আখিরাহ।
চিন্তার খোরাক তৈরি করা লিখার জন্য।
ছবিটা মানব দেহের
লাল বক্স করা শব্দটা একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হয় ।
হলে শরীরের কোন অংশ এই কাজে নিয়োজিত ?
ফী আমানিল্লাহ্, দুয়াপ্রার্থী!
মন্তব্য করতে লগইন করুন