তাসনিমের ডাইরি . . .
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৯ মে, ২০১৪, ১২:৩৭:৪৮ রাত
“আল্লাহ্ !!!
আমি অনেক স্যরি আল্লাহ্! আমি আসলেই এটা করতে চাই নাই, আপনি তো সবই জানেন! ... আল্লহ্ বলেন... আমার মনের ভিতরের খবর... আপনার চেয়ে ভালো আর কে বুঝবে? আর কেউ না বুঝুক, আপনি তো বুঝেন আপনার বান্দা আপনাকে অখুশি করতে চায় না... একটু-ও চায় না... কিন্তু ঐ যে শয়তান টা! খুব জ্বালায় আল্লাহ্, মানে খুব্বি জ্বালায়! কি করবো বলেন আল্লহ্ ... এমন ওয়াস্-ওয়াসা দেয় কানের মধ্যে, আপনার অপছন্দের কাজগুলিকে এমন আকর্ষণীয় করে তুলে আমার চোখের সামনে ... যে কি আর বলব! দুর্বল হয়ে যাই! আপনি যে আমাকে শয়তানের সাথে ফাইট করার নিয়ম সব বলে দিসিলেন না কুরআনে? তখন না আমি সব ভুলে যাই!
স্যরি আল্লহ্ আমি আর ভুলবো না! আপনি আমার ঈমানটাকে আরেকটু শক্ত করে দিবেন প্লিজ? প্লিজ আল্লাহ্! আপনি চাইলে কি না হয়! কত্ত ক্ষমতা আপনার আল্লাহ্! আপনি চাইলে আমার গুণাহ্-র জন্যে এই মুহুর্তে আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু কত দয়া করেছেন এবং করে যাচ্ছেন ! এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন। আপনার রহমত, নিয়ামত সব সেকেন্ডে সেকেন্ডে খাচ্ছি-দাচ্ছি-সুস্থ-সবল চলা-ফেরা করতেসি! আল্লাহ্ আরেকটু দয়া করে না হয় আমার ঈমানটাকে আরো শক্ত করে দেন, ক্ষমা করে দেন আল্লাহ্, বেশি বেশি ধৈর্য্য ধরার তাওফিক দান করেন... বাঁধভাঙ্গা ধৈর্য্য!! আর আমার তাওবা টা প্লিজ Accept করেন নিন আল্লাহ্, আমি Promise!! আর হবে না। দেইখেন আপনি Next time, শয়তানের সাথে ফাইট করে একদম শয়তানের বারোটা বাজিয়ে দিব আমি...
আপনি আমাকে ক্ষমা না করলে আমি আর কার কাসে যাবো আল্লাহ্ বলেন ??? ... আল্লাহ্ প্লিজ … প্লিজ আমি খুব স্যরি ... খুব খুব স্যরি ... ..."
এ পর্যন্ত লিখে থামলো তাসনিম। বেচারী কান্নার দম্কে আর লিখতেও পারছে না।জানা ভুল গুলি করার মতন বোকামি গুলি করে ওর খুব কান্না পায়!
কিন্তু, তারপরো আল্লাহ্-র কাছে চিঠি লিখার পর মনের মধ্যে ওর অন্যরকম শান্তি! একটা বিরাট পাথর যেন নেমে যাওয়া.... কেউ ভালোমতন না বুঝুক, আল্লহ্ বুঝেন এবং জানেন যে তাসনিম কোন পরিস্থিতিতে কি করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে বা কেন করেছে ...
তাস্নিম চায় না তো, যে প্রভু তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে ... কিন্তু, হয়ে গেল যে!! করে-ই ফেললো তো গুনাহ্ টা! আল্লহ্ তা’আলার স্পষ্ট দিনের আলোর মতন পরিষ্কার বিধান নাযিল করে যাবার পর তো আর কোন Excuse এর অবকাশ থাকে না ওর জন্যে! কি দিয়ে নিজের জন্যে উকালতি করবে? শয়তানের ধোঁকা? নাহ্! শয়তানের কোনই ক্ষমতা নেই ওকে খারাপ কাজটা করানোর, সে খালি কানে ফিস্ফিসায়... যা করার ওর নিজের দুই হাত-ই করে!
আর কি Excuse? দুনিয়ার মোহ্? হাহ্! দুনিয়ার মোহ্ যে কত তুচ্ছ আর তার বিপরীতে এমন জান্নাতের বর্ণনা আল্লাহ্ ওকে দিয়েছেন যার তলদেশে ঝর্ণা-ধারা প্রবাহিত... যার সীমানা সাত আসমান-জমিন ছাড়িয়ে ... আর সেটা চিরকালের!! সেই জান্নাতের বর্ণনা শোনার পরো বোকার মতন কেন দুনিয়ার মোহে পড়তে গেলো? ও কি বোকা নাকি?
আর কি Excuse দিবে? নিজে নফ্স? ওটার সাথে Fighting এর নিয়ম-ও তো আল্লহ্ বলে গেছেন, সব্র, দুয়া আর তাওয়াক্কুলকে আল্লহ্ ওর অস্ত্র করে দিয়েছেন... এরপরো ও ভুল করলো?
ডাইরি টার উপর মাথা রেখে আবার কান্নার স্রোত বেয়ে যেতে লাগলো ... ওর কান্না-কাটির চোটে ডাইরি র কিছু পাতা উল্টে গেল... ও কিছুদিন আগে কিছু কুরআনের আয়াহ্ note করে রেখেছিল, সেই পাতা টা বের হয়ে আসছে --- ওখানে লিখা-
““আপনি আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু ”।
[সূরা আল হিজর: ৪৯]
“আপনি বলে দিন! আত্মার প্রতি যুলুমকারী আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহর নেয়ামত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সকল গোনাহ মোচনকারী। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[সূরা আয-যুমার: ৫৩]
“কিন্তু যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, এদের গোনাহগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা নেকী দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[সূরা আল-ফুরকান: ৬৯]
“ হে আদম সন্তান, তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। হে আদম সন্তান, যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরীক না করে সাক্ষাত করো, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।“
[তিরমিযী] "
সুবহান আল্লাহ্! মুহুর্তেই মেয়েটার অন্তর একদম ঠান্ডা হয়ে গেল... একেবারে কান্নার সাথে পাল্লা দিয়ে হাসতে লাগলো! সান্ত্বনা চলে এসেছে ওর জন্যে সাত আসমানের উপর থেকে...আর কি চাই?? ও আল্লহ্ কে স্মরণ করেছে, আল্লাহ্-ও ওকে স্মরণ করেছে ! আলহামদুলিল্লাহ্!
ভাগ্যিস আশে-পাশে কেউ নেই! যেমনে এই হাসে আর এই কাঁদে... কেউ দেখলে নির্ঘাত ধরে পাবনায় ভর্তি করিয়ে দিত!
দিলে দেক! বান্দা আর প্রভুর মধ্যে কি সুন্দর একটা কথপোকথন হয়ে গেল—সেটার অপার্থিব আনন্দ ওরা কি বুঝবে!
এজন্যেই তো প্রতিবার ও আল্লহ্ কে স্যরি বলে! এ জন্যেই মন খুলে আল্লাহ্-র কাছে ও চাইতে থাকে ... তাসনিম জানে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লহ্ ওকে খালি হাতে ফেরাবেন না! কক্ষণই না!!
এখন ব্যস নিজের কাছে যেই শক্ত ওয়াদা টা করলো সেটাকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হবে ... ডাইরি তে আজকের তারিখের নিচে ছোট করে লিখলো,
“এই যে শায়তান! Here I come...
তোর সাথে আল্লহ্ নেই, কিন্তু আমার সাথে আমার রব আছেন, এরপর-ও তুই কোন সাহসে আমার সাথে লড়তে আসিস রে? আসিস Next time, খবর করবো তোর আমি!”
... লিখে একটা “মুহাহা” হাসি টাইপ Emoticon দিলো ...
“তাসনিম... !! এই মেয়ে !!...” ওই যে আম্মু ডাকে... ডায়রীটা সযতনে জায়গা মতন রেখে পরম তৃপ্তিতে সে আম্মুর ডাক শুনতে গেল .
“When Allah is ALL you have, you have ALL you need …”
বিষয়: বিবিধ
২০৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
Nabbi iibadee annee anal ghafoorurraheem.
O Prophet! Tell My devotees that I am indeed the Forgiving, the Merciful.(Al-Hijr 49)
[সূরা আয-যুমার: ৫৩]
মন্তব্য করতে লগইন করুন