আপনি প্রস্তুত না হলেও কিন্তু আরো অনেক কিছুই প্রস্তুত আছে আপনার জন্যে
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১২ মে, ২০১৪, ১০:৫৪:৫৭ রাত
ঘটনা-১
সেদিন একজন আন্টী আমাকে বলছিলেন, “অদ্রি! আমাদের সবার জন্যে দুয়া করবা!”
আমি বললাম, “অবশ্যই চাচী! কি দোয়া করবো বলেন?’
চাচী বললো, “দুয়া করবা আল্লাহ্ যেন আমাদের পরিবারের সবাইকে ভালো রাখে, সুস্থ সবল রাখে।“
আমি বললাম, “আর?’
চাচ্চী বলে, “এইতো দুয়া করবা যাতে আল্লাহ্ আমার ফ্যামিলির সবাইকে হিফাজত করে, ভালো রাখে।“
আমি- “আর কিছু না চাচী?”
চাচী বলে, “আর কি আবার?”
*** *** ***
ঘটনা-২
অনেক দিন পর আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে কথা হচ্ছে। ওর পরীক্ষা খুব সম্ভবত। এক-দুই কথা পর পর বলতেসে, “দোস্ত দুয়া করিস” , “দোস্ত দুয়া করিস” ...
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি দুয়া করবো বল?”
দোস্ত বলে, “দুয়া করবি যাতে পরীক্ষা গুলি ভালোয় ভালোয় দিতে পারি...”
আমি বলি- “আর?”
দোস্ত—“আর দুয়া করিস যেন সব প্রশ্ন কমন পরে”
আমি- আর কিছু না ?
দোস্ত- “না এই তো! আর কি ??
*** *** *** ***
উপরের ঘটনা দুইটা... এদের দুই জনের কাছেই বার বার “আর কি দুয়া করবো?” জিজ্ঞেস করে করে আমি না আরো কিছু শুনতে চাচ্ছিলাম।দুঃখজনকভাবে ওরা কেউ-ই সেটা বুঝে নাই ।
আচ্ছা আমরা যখন আল্লাহ্-র কাছে চাই, আমাদের চাওয়ার মন-মানসিকতা টা কেমন থাকে? কেমন হওয়া উচিত সেটা ? আল্লাহ্-র কাছে চাওয়াটা কেন আমরা এত limited করে চাইবো ? কেন শুধু দুনিয়ার জীবনেই পরিবারের সবার হিফাজত চাইবো, কেন চাইতে পারি না যে, আল্লাহ্ আখিরাতের জাহান্নামের আগুন থেকে আমার পরিবারের সবার জন্যে এখনি নিরাপত্তা লিখে দাও ...? সেই আগুন থেকে আমার পরিবারের প্রতিটা প্রিয় মানুষ কে হিফাজত কর ... (আমীন) ... ? আমাদেরকে এই দুনিয়ায় যেভাবে সুন্দর ভালোবাসা দিয়ে একটা পরিবারের বন্ধন করে দিয়েছ_ ঠিক একই ভাবে জান্নাতের বাগানেও আমাদের মিলিয়ে দাও ... ? আমীন...
... এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম চাচীর কাছে... !
আর আমার ফ্রেন্ড টা !এই যে Education Institution এর চার দেয়ালের ভিতরে যেমন একটা পরীক্ষা চলছে, তেমনি গোটা জীবনটাই আমাদের জন্যে একটা Exam hall! এই Exam হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত মোহ কে হারিয়ে দিয়ে আখিরাতের জন্যে বেঁচে থাকতে পারার পরীক্ষ! সেই পরীক্ষায় কমন পড়ার-ও আবার কিছু নেই … প্রশ্ন-পত্র সব উত্তর সহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৪০০ বছর আগেই কু্রআনের মাধ্যমে!কেন আমরা সেই পরীক্ষাটা যেন ভালোয় ভালোয় দিতে পারি সেটার জন্যে আল্লাহ্-র কাছে কেন চাইতে পারি না? আমাদের এই পরীক্ষা যেন আল্লাহ্ আমাদের জন্যে সহজ করে দেন ... পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের পুরস্কার স্বরূপ জান্নাহ্ দেন- কেন সেটা চাওয়ার কথা কেন ভুলেও মাথায় ক্রস করে না ?
... এটাই শুনতে চেয়েছিলাম ফ্রেন্ডের মুখ থেকে… !
যাহোক, প্রথম পয়েন্ট হচ্ছে… আল্লাহ্-র কাছে চাইতে আবার কিপ্টামি কিসের ? চাবেন তো আকাশ-বাতাসের সব সব সীমানা ছাড়িয়ে আল্লাহ্-র কাছে চাবেন- দুনিয়ার টা চাবেন, আখিরাতের টা চাবেন …! এখানের ভালো রেজাল্ট চাবেন, ওখানের ভালো রেজাল্টও আরো বেশি বেশি চাবেন … … আমরা কেন অন্তর খুলে আল্লাহ্-র কাছে চাইতে পারি না ??
আর দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে, আমাদের চাওয়া সব এত দুনিয়া-কেন্দ্রিক কেন? কেন আমাদের চাওয়াকে আমরা খালি দুনিয়ার পরীক্ষা, দুনিয়ার ভালো থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি ? দুনিয়াতে কয় দিন আছি আমরা ? কেন আমাদের চাওয়া দুনিয়ার গন্ডী ছেড়ে আখিরাত পর্যন্ত যেতে পারে না? আল্লাহ্-র সামনে যে দাঁড়াতে হবে কেন আমরা বার বার সেটা ভুলে যাই ?
হ্যাঁ, দুনিয়াটার ও দরকার আছে! দুনিয়াকে একেবারে ফেলে দিলে চলবে না! দুনিয়াকে আমরা use করবো একটা tool হিসেবে। এখানে দুনিয়াকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করবো, সেইরকম ফল-ই আখিরাতে গিয়ে পাবো। দুনিয়াকে ব্যবহার করতে হবে আখিরাতের জন্যে... দুনিয়াকে দুনিয়ার জন্যে ব্যবহার করলে চলবে না।
এই উদাহরণ টা অনেক টা এরকম যে, ধরুন আপনি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে যাবেন ... আপনার পরীক্ষা দিবার Tool হচ্ছে আপনার পেন্সিল। পেন্সিল ছাড়া আপনি লিখতে পারবেন না, এটা আপনার Exam এর একটা দরকারী tool. কিন্তু সে জন্যে যদি পরীক্ষার preparation হিসেবে আপনি সারাদিন-রাত ধরে যদি খালি এ দোকান থেকে ঐ দোকানে গিয়ে পেনসিল-ই কিনতে থাকেন,... আর পরীক্ষার পড়া কিছুই না পড়েন- তাহলে আপনার পরীক্ষা টা কেমন হবে আপনি-ই বলেন!
আমরা মুসলিম রা এখন ঠিক তাই করছি! আমরা দুনিয়া নিয়ে নিজেদের কে এতই ব্যস্ত করে ফেলেছি যে, এটা যে আমাদের আখিরাতের জান্নাতে যাবার Tool হিসেবে ব্যবহার করার কথা, সেটা না করে দুনিয়ার জীবন নিয়ে আমাদের সব চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা-চেতনা!! ঐ ব্যক্তির মতন যার ঐ পেন্সিল কে নিয়েই সব চিন্তা-চেতনা। পেন্সিল দিয়ে পরীক্ষায় কি যে লিখবে-সেটার জন্যে যে পড়তে হবে- তার কোন চিন্তা নাই!
... আমাদেরও তো সেই মহাপরীক্ষার কোন চিন্তা নেই...পরীক্ষার রেজাল্টের সেই মহাদিবসের চিন্তা নাই ... আমাদের আল্লাহ্-র দেওয়া এই পরীক্ষা গুলি আমরা কিভাবে যে উত্তীর্ণ হব- তার জন্যে যেটা পড়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা... সেটার ধারকাছেও আমরা ঘেঁষি না... কোন প্রস্তুতি নেওয়ার মাথা-ব্যথাও নেই ...
তবে, আমরা প্রস্তুত থাকি বা না থাকি, আমাদের জন্যে কিন্তু অনেক কিছুই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে –
* “নিশ্চয় জাহান্নাম – তা প্রতীক্ষায় থাকবে,
* সীমালংঘনকারীদের (জন্যে) আশ্রয়স্থলরূপে।
* তারা সেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে।
* সেখানে তারা কোন শীতলতা এবং পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে না;
* শুধু ফুটন্ত পানি ও পূঁজ ব্যতীত।
* এ (তাদের জন্যে) এক পরিপূর্ণ ও যথাযথ প্রতিদান।
* নিশ্চয় তারা হিসাব-নিকাশের কতাহ ভাবে নি।
* এবং আমার আয়াতসমূহে পুরোপুরি মিথ্যারোপ করত।
* আমি সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষিত করেছি।
* সুতরাং, স্বাদ গ্রহণ কর, আমি তোমাদের জন্যে শাস্তি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবো না।
[অপরদিকে]
* যারা (আল্লাহ্কে) ভয় করে তাদের জন্যে রয়েছে মহাসাফল্য।
* ফলের বাগান ও আঙুর,
* আর সমবয়স্ক পরিপূর্ণ-যৌবনা ফুটফুটে সাথী,
* এবং পরিপূর্ণ পানপাত্র।
* তারা সেখানে কোন অসার ও মিথ্যা বাক্য শুনবে না।
* এটা আপনার প্রভুর তরফ থেকে যাথযথ প্রতিদান, -- হিসাবমতো পুরস্কার, --
* যিনি এই মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর এবং তাদের মধ্যে যা-কিছু আছে তার প্রভু, পরম করুণাময়,, তাঁর কাছে বক্তব্য রাখার কোনো ক্ষমতা তারা রাখে না।
* যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে।
* দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে।
* এই দিবস সত্য!
* অতঃপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে (যাবার) ঠিকানা তৈরী করুক।
* আমি তোমাদের সতর্ক করছি এক নিকটবর্তী শাস্তি সম্পর্কে, -- যেদিন মানুষ দেখতে পাবে তার হাত দু’খানা কী সামনে প্রেরণ করেছে, আর অবিশ্বাসী ব্যক্তি বলবে –
''হায় আমার আফসোস! আমি যদি ধুলো হয়ে যেতাম!’’
(সূরা নাবাহ্-
ভাবার্থঃ- আয়াত ২০ থেকে ৪০)
বিষয়: বিবিধ
১৩৪১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
"দুনিয়া কর্মস্থল, কর্মফল নয়।"
০ ... এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম চাচীর কাছে... !
০ ... এটাই শুনতে চেয়েছিলাম ফ্রেন্ডের মুখ থেকে… !
* আপনি উনাদের কাছ থেকে এসব শুনতে চেয়েছেন এবং এটাই ঠিক ছিল । তবে ....
আপনার তাদের বলা উচিত ছিল যে ,'' তুমি (চাচী/বন্ধু )নিজেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর , বরং সেটাই ভাল হবে ,আল্লাহ বান্ধার প্রার্থনা শোনেন ।''
মন্তব্য করতে লগইন করুন