একদিন বায়োলজি ক্লাসে .. . .
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৫:৩৭ সকাল
“সাইকোলজি” ও “বায়োলজি-১”-- সেমিস্টারের ২ টা কোর্স.
২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট করে প্রতিটা ক্লাস। ওয়া আল্লাহি, এই ২ টা ঘণ্টা আর ৪৫ টা মিনিটের মধ্যে যতক্ষণ ধরে লেকচারে মগ্ন থাকি, প্রতিটা মিনিটে আমি বোধ করি, আমার আল্লাহ্-র নিয়ামতের প্রতি শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতা-বিস্ময়- আনুপাতিক হারে যেন বেড়েই চলেছে। সুবহানাল্লাহ্ !
কি অবাক লাগছে না শুনতে? ২ জন নন-মুসলিম প্রফেসরের মানবদেহের ব্যবচ্ছেদ আর ব্রেইনের নিউরনের কারসাজি নিয়ে কঠিন কঠিন অপারেশানের উপর দেওয়া লেকচারের মধ্যে আমি আল্লাহ্-ভক্তি পাই কিভাবে?
বলছি, তার আগে সূরাহ্ আল-জাছিয়ার ৩ নং আয়াতটা দেখুন,
“নিঃসন্দেহে আকাশমালা ও জমীনে বিশ্বাসীদের জন্যে (আল্লাহ্ তা’আলাকে জানার অগণিত) নিদর্শন রয়েছে”।
তাহলে বুঝা গেলো, আপনি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, আপনার জন্যে এই আকাশ-পৃথিবীজুড়ে আল্লাহ্-রাব্বুল আ’লামীন তাঁকে জানতে, চিনতে, বুঝতে অগণিত নিদর্শন রেখে দিয়েছেন... সুবহানাল্লাহ্ !
ফিরে যাই আমার ক্লাসরুমের লেকচার হলে। উদাহরণ দেওয়া শুরু করলে তো শেষ হবেনা। প্রতিটা চ্যাপ্টারের প্রতিটা পাতার প্রতিটা শব্দই যেন আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার পবিত্রতা ঘোষণা করে যাচ্ছে। এই যেমন গতকালের উদাহরণটাই দেই। আমার প্রফেসর ক্লাসে “DNA Replication” পড়াচ্ছেন। কোষ বিভাজনের সময় কিভাবে DNA টা দুই ভাগে বিভক্ত হয় সেই প্রক্রিয়া। সে এক বিশাল লীলাখেলা। সেই লীলাখেলার বর্ণনায় আমি যাবনা। তো সেই বহু্ত কাহিনী-করসত-রিএকশান শেষে এনজাইম যখন ঠিক একই রকম আরেকটা DNA এর প্রতিরূপ তৈরি করে শেষ করলো, তখন দেখা গেলো যে নতুন সৃষ্ট DNA অণুটির (আনুমানিক)প্রতি ১০ লক্ষ পরমাণুর একটাতে করে ভুল “বেইস” বসানো। ট্রিলিয়ন-জিলিয়ন পরমাণুর কথা চিন্তা করলে এই ভুলের সংখ্যা টা মনে হবে নগণ্য, কিন্তু এই ভুল আমাদের কোষের জন্যে এটা হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তো এই ভুল ঠিক করতে এনজাইমটা নাকি আবার কাজে লেগে পরে। সে পুরো DNA অণু ঘুরে একটা চক্কর দিয়ে দেখে. যেখানে যেখানে ভুল “বেইস” পায়, সেখানে সঠিক “বেইস”টা আবার বসিয়ে দেয়। কিন্তু, তারপরো বেশ কিছু সংখ্যক ভুল পরমাণু থেকে যায়। সেটা ঠিক করতে এবার মঞ্চে চলে আসে অন্য আরেকটা এনজাইম- তার কাজ হচ্ছে আবারো আরেকটা ঘুরান দিয়ে Double-check করে নিশ্চিত হওয়া যে, “নাহ্! এবার ঠিক আছে সব”. তো লেকচারের এই পর্যায়ে আমার প্রফেসর বললেন,
“… See… these enzymes are not going to stop their work until they make sure that your DNA is good enough to go without all those mistakes in the atoms…”
… তার কথাটা টং করে আমার মাথায় বাজলো। তিনি কি বললেন ? তিনি বললেন যে “ এই এনজাইম তোমার DNA এর ভুল গুলো শুদ্ধ না করা পর্যন্ত থামবে না...”
কিন্তু, আমি কি উনার মত চিন্তা করবো?
“...যারা (আল্লাহ্) কে জানেন, আর যারা জানে না- তারা কি এক সমান?” (সূরা যুমারঃ৯)
আমি তো বিশ্বাসীদের একজন। আমি তো জানি, ঐ DNA, ওই এনজাইম, ঐ Replication প্রক্রিয়া-সব তো সেই একজন স্রষ্টার সৃষ্টি। তাহলে আমার জন্যে বাক্যটি দাঁড়াবে, “আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন আমার DNA এর সবগুলো পরমাণু ঠিক-ঠাক না হওয়া পর্যন্ত এনজাইমকে থামতে দিবেন না!!” সুবহানাল্লাহ্ !!
আমাকে এতটুকু চিন্তাও করতে হচ্ছে না, আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন আমার প্রতিটা পরমাণুর কোথাও যেন এতটুকু কম্তি না পরে যায়-প্রতিনিয়ত তিনি সেই খেয়ালটুকুও রেখে যাচ্ছেন... সুবহানাল্লাহ্ !!
এরকম প্রায় ক্লাসেই টং করে মাথায় বেজে উঠে। সে এক ঐশী অনুভূতি! আমার আশেপাশের মানুষ গুলোর দিকে তখন তাকিয়ে দেখি-তারা নাক-মুখ সিটকে লেকচার নোট্সের দিকে তাকিয়ে থাকে –আমার মায়া হয়! তাদের যে “বিশ্বাস” নেই! তারা আমার সেই ঐশী অনুভূতির টিকি টুকু-ও যে ছুঁতে পারছে না।
আমার উপলব্ধি হয়- মাথা নুয়ে আসে-- “কে জানে, আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন আমাকে অনুগ্রহ না করলে হয়তো আমিও আজকে ওদের মধ্যেই একজন হয়ে থাকতাম! আমারো তো একটা নন-মুসলিম পরিবারে জন্ম হতে পারতো !!” আলহামদুলিল্লাহ্ তা হয়নি, আল্লাহ্ আমাকে বিশ্বাসীদের একজন বানিয়েছেন ...
আর শেষমেশ আফসোস হয়- তাদের জন্যে ... যাদেরকে আল্লাহ্-রাব্বুল আ’লামীন স্বীয় অনুগ্রহে বিশ্বাসীদের একজন বানালেন, কিন্তু তারপরো তারা সেই ঐশী অনুভূতি অনুভব করতে পারলো না ...
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?
খুবি সুন্দর লিখেছেন। অনেক ভালো লেগেছে পোস্টটি।
বলুন-
"সমুদ্রের পানি যদি কালি হয়ে যায়, তবে সমুদ্রের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে তবু তোমার পালনকর্তার প্রশংসা লিখে শেষ করা যাবে না। "
আলহামদুলিল্লাহ্!
কিছুদিন আগে আমার কন্যা এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেছিলো আমার সাথে! যাক আমাকে বিরক্ত করলে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেয়া যাবে আপু!
প্রথম লিখাতে অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো!
অবশ্যই সারাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে! আমি আর সারামণি মিলে ডিএনএ জগতের রহস্য গুলি উন্মোচন করবো !
<:-P <:-P <:-P
এই আপি! কমেন্টে ছবি এড করতে পারছি না! এক গোছা ফুল দিতাম তোমাকেও
Alhamdulillah.
সুন্দর পোস্ট
অনেক ধন্যবাদ আপু
মন্তব্য করতে লগইন করুন