এ এক অদ্ভুত আশ্চর্য্য সম্পর্ক!

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৯ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩১:১২ রাত

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِِ



তিনি আমার প্রভু।

অথচ তিনি-ই আমার দেখা-শোনা করেন, আমাকে খাওয়ান, আমার যা কিছু করার ক্ষমতা, যা কিছু না করার অক্ষমতা- সব কিছু তিনি-ই সুনিপুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নিশ্চিত করছেন প্রতিটা মুহুর্তে আমার দেহের অক্সিজেন পাওয়া-না পাওয়া, আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসের ফুসফুস, হৃদক্রিয়া- সবকিছু তিনি দেখাশোনা করে যাচ্ছেন আমার অগোচরে । তিনি-ই আমাকে ভালোবাসেন সবচাইতে বেশি, সবার চেয়ে বেশি। এই পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যস্থ ও বহির্ভুত যে কোন কিছুর সাথে তার ভালোবাসার কোন রকম কোন তুলনা নেই। তাঁর ইশারাতেই আমি হাসি, তাঁর ইশারাতেই কাঁদি। এমনকি আমার প্রতিটা অশ্রুকণার পিছনেও যে কি পরিমাণ কল্যাণ থাকতে পারে- তাও তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। সময়ে সময়ে তিনি আমার পরীক্ষাও নেন । কিন্তু কি আশ্চর্য্য দয়াবান আমার প্রভু, তিনি সকল পরীক্ষার প্রশ্ন-পত্র, একেবারে উত্তর সহ আমার জন্যে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন ১৪০০ বছর আগেই। পরীক্ষায় কি কি আসতে পারে, পরীক্ষায় পাশ করতে কে ও কি কিভাবে বাধা দিয়ে পারে, কোনটার মোকাবিলা কিভাবে করতে হবে, পরীক্ষায় পাশ করলে কি পুরস্কার পাবো তার অপরূপ বর্ণনা, পাশ না করলে কি শাস্তি হবে তার ভয়ঙ্কর স্বরূপ- সবকিছু! সবকিছুর দিকনির্দেশনা দেওয়া ১৪০০ বছর আগেই!!

অথচ তাও আমি এই অধম পাশ করতে পারি না!

ফেইল করি.

একবার না, দুইবার না, বার বার! বার বার !!

আর আমার প্রভু?

আমি ঠিকমতন ক্ষমা চাইলেই তিনি আমাকে ক্ষমা করে দেন!

দুনিয়ার অন্যকারো মতন তিনি কখনো বলেন না, “তোকে দিয়ে তো কিছুই হবেনা”।

পরম দয়ালু ও অসীম করুণাময় তাঁর দয়ার বারিধারা বর্ষণ করতে থাকে আমার মতন তাঁর এক নগণ্য বান্দার উপর। আমি আবার ভুল করি, ক্ষমা চাইলে তিনি আবার ক্ষমা করে দেন, আবার ভুল, আবার ক্ষমা, আবার ভুল, আবার ক্ষমা, আবার ভুল, আবার ক্ষমা ... ... ... আমি যেন ভুল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই, কিন্তু তিনি আমাকে ক্ষমা করতে করতে ক্ষান্ত দেন না এবং এমনকি তিনি আমাকে ওয়াদাও দিয়েছেন- তিনি তাওবা কবুল করতে থাকবেন, তিনি আমাকে ক্ষমা করতেই থাকবেন সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত দিবার আগ পর্যন্ত!

তাও আমার টনক নড়ে না। তাও আমার ভুল-ত্রুটির শেষ নাই। তাও আমার সেই প্রভুকে আমি ভুলে যাই, অকৃতজ্ঞ হয়ে যাই, অহংকার করি, মনে চাইলে তাঁর কথা শুনি, মনে না চাইলে তাঁর কথা শুনি না ... শয়তান কানের কাছে এসে একটু ফিস্‌ফিসানি কি দিলো, ব্যস! আর আমাকে পায় কে? চারপাশ থেকে আওয়াজ শুনতে পাই- “ I have to listen to my heart”, নিজের ঈমানটাকে শক্ত করতে পারি না যেন সে আমাকে শুনাতে পারে, “…but not caring about the Creator of my heart?” আমি ভুলে যাই আমার প্রভুকে... আমি ভুলে যাই আমার পালনকর্তাকে, আমার বিধানদাতাকে, আমার রিযিকদাতাকে, আমার স্রষ্টাকে ... আমি ভুলে যাই ... অথচ আমি কে? আমি কি??

দাস !! দাস, সামান্য এক দাস। নগণ্য এক গোলাম, এ ছাড়া কিছুই না। একটা নিঃশ্বাস নিতে পারি না আমার প্রভুর হুকুম ছাড়া। একটা Heartbeat সম্পূর্ণ হয় না আমার পালনকর্তার ইচ্ছা ছাড়া। আমার প্রভু, তিনি আমাকে সৃষ্টি করলেন, আমাকে কিছু দায়িত্ব দিলেন, সেই দায়িত্ব পালনের ক্ষমতাটুকুও দিয়ে দিলেন। তাও আমি ব্যর্থ হই । ব্যর্থতা, ভুল-ত্রুটি, পাপ-পঙ্কিলতা, পাপের উপর পাপ, গুণাহ্‌ , কবীরাহ্‌ গুণাহ্‌, সাগীরাহ্‌ গুণাহ্‌ , জেনে করা গুণাহ্‌, না জেনে করা গুনাহ্‌ ...(এই তালিকার শেষ টা কোথায়- আমার প্রভুই ভালো জানেন) ... এক পর্যায়ে আমি যেন নিরাশ-ই হয়ে যাই ... এ কি! এত পাপ নিয়ে দাঁড়াবো কিভাবে আমার প্রভুর সামনে? এখন-ই যদি মালেকুল ম’উত আসে, জাহান্নাম যেন অবধারিত! এ কি করেছি আমি!!

তখন কে আসে আমাকে সান্ত্বনা দিতে জানেন?

ঠিক ধরেছেন, আমার প্রভু!

তিনি-ই আমাকে বলেন,

"আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।" [ সূরা ইউসূফ -৮৭]

এ এক আশ্চর্য্য অদ্ভুত সুন্দর প্রভু-দাসের সম্পর্ক ! এর সাথে তুলনা চলে না এই পৃথিবী ও তার মধ্যস্ত কোন দাস-প্রভুর সম্পর্কের! এমন প্রভু একটাই, একজন-ই, অতুলনীয়, অদ্বিতীয় ... “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ ...” --“এক আল্লাহ্‌ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্‌ নেই” ...

"হে মহাবিশ্বের মালিক, সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌ রাব্বুল আ’লামীন!

আমি তোমার দিকে থাকি কিংবা না থাকি, এতে না তোমার কোন ক্ষতি হবে, না কোন লাভ। তুমি কারো মুখাপেক্ষী নও। তোমার অনেক বান্দা ! অনেক অনেক নেক বান্দা ! আমার চেয়ে কত লক্ষ গূন ইস্পাতের মতন দৃঢ় ঈমান ও তাক্‌ওয়াবান বান্দা তোমার! কিন্তু, আমার? আমার জন্যে তো তুমি-ই এক আল্লাহ্‌। আমার তো তুমি-ই এক প্রভু আছো। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো, তাহলে আমার যে ক্ষমা চাওয়ার আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তুমি যদি আমাকে তোমার দিকে ফিরিয়ে না নেও, আমি অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের, পথভ্রষ্টদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবো।

ইয়া রাব্বানা ! দিন শেষে আমলের ডায়রী যেন শুষ্ক চারণভূমির মতন শূণ্য, কিন্তু তোমার রহ্‌মত নিয়ে লেখা শুরু করলে যদি সাগরের সব পানি কালি হয়, আর গাছগুলো হয় কলম-- লিখতে লিখতে সাগরের সব পানি শুকিয়া যাবে- তাও লিখে শেষ হবে না তোমার নিয়ামত, তোমার দয়া, তোমার রহ্‌মত। তোমার স্বীয় রহ্‌মতে আমাদের ক্ষমা করে দাও, পথভ্রষ্টদের পথ থেকে দূরে রেখে সীরাতুল মুস্তাকিমের পথে অটল থাকবার তৌফিক দাও, তোমার রহ্‌মত পাবার জন্যে যোগ্য করে যেন নিজেদের গড়ে তুলতে পারি সেই তৌফিক দাও, দুনিয়ায় ও আখিরাতে তোমার একজন সার্থক বান্দা হবার তৌফিক দেও, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভুর যেন শ্রেষ্ঠ দাসদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি সেই তৌফিক দেও ...

-আল্লাহুম্মা আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১১৯২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

199994
২৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:০৪
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : ইয়া রাব্বানা ! দিন শেষে আমলের ডায়রী যেন শুষ্ক চারণভূমির মতন শূণ্য, কিন্তু তোমার রহ্‌মত নিয়ে লেখা শুরু করলে যদি সাগরের সব পানি কালি হয়, আর গাছগুলো হয় কলম-- লিখতে লিখতে সাগরের সব পানি শুকিয়া যাবে- তাও লিখে শেষ হবে না তোমার নিয়ামত, তোমার দয়া, তোমার রহ্‌মত।

জাজাকাল্লা খায়র... অনেক ভালো লাগলো পড়ে। আরো বেশী বেশী লিখুন
200000
২৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১০
নীল জোছনা লিখেছেন : আল্লাহর রহমতের শেষ নেই ভাই। ছুবহানআল্লাহ
202490
০৪ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : মাশা আল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে আরো বারাকাহ দান করুন! Good Luck Love Struck Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File