.........ব্যর্থ প্রেম

লিখেছেন লিখেছেন ব্যর্থ জীবন ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪১:৫০ রাত

আমার খুব কাছের বন্ধু সুমন।খুবই ভাল ছিল সে। আচার- আচারণ ও ব্যবহার ছিল শালীন।সে আজ আগের মত নেই।পাল্টে গেছে আজ অন্যরকমভাবে। সে ভাল ছাত্র হিসেবে কলেজে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। কিন্তু ফার্স্ট ইয়ারের

পরীক্ষার পর তার লেখাপড়ায় অধঃপতন হতে থাকে।এর কারণ হল,তার ক্লাসমেট

নিপা নামের একটি মেয়ের সাথে তার

ভাবপ্রীতি জমে ওঠে। তার সাথে ডেটিং করতে গিয়ে তার লেখাপড়া গোল্লায় ওঠে। সুমনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা। টানাটানি করে দিন চলতো।

একমাত্র ওর বাবার আয়েই ওদের সংসার চলতো। সুমনের পড়া লেখার খরচের জন্য তিনি খুব কষ্ট করে টাকা জমিয়ে পাঠাতেন। কিন্তু নিপাকে সামলাতে গিয়ে সুমনের বেশী টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই

বাড়ীতে অতিরিক্ত টাকার জন্য চাপ দেয় সুমন।

তার বাবার যতটুকু সাধ্য ততটুকু তিনি দেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে হলেও ছেলের চাহিদা পূরণ করতে চেষ্টা করেন। তার বাবার আশা,সে যেন মানুষের মত মানুষ হতে পারে। হঠাত্‍ করে সুমন একদিন বাড়িতে এসে উপস্থিত হল। তাকে দেখে তার মা-বাবা খুবই খুশী। অনেক দিন পর বাছা বাসায় ফিরেছে। সে এসেই

মাকে বলল-মা! একটা কথা বলব। তার মা বললেন-

কী বলবি বাবা,বল্।

সে বলল,২০ হাজার টাকার প্রয়োজন। একটি কোম্পানীতে লোক নিয়োগ করছে।ইন্টারভিউ

দিয়ে পাশ করেছি। এখন শুধু টাকার প্রয়োজন। টাকা হলেই চাকরিটা হয়ে যাবে। এরপর

থেকে আমাকে আর

তোমাদের টাকা দিতে হবে না। আমিই আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারব।এখন প্রয়োজন শুধু ২০ টাকার।তার মা বললেন,বাবা!এত টাকা কোথায় পাব?

দেখছস না,সংসারের কী অবস্থা!তোর বাবাও তো এখন অসুস্থ।এত

টাকা কিভাবে দিব বল্ বাবা? সে বলল,মা! তুমি বুঝতে চেষ্টা কর।

মাত্র ২০ হাজার টাকা হলেই এনাফ।

অনেক কাকুতি মিনতি করল

সে।শেষ পর্যন্ত ছেলের চাকরির আশায় সুখের স্বপ্ন

দেখে মা একরকম রাজী হয়ে গেলেন। তিনি তার বাবাকে রাজী করালেন।

তার বাবা খুব কষ্ট করে একমাত্র সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে ২০ হাজার

টাকা এনে দিলেন সুমনের হাতে।আর বললেন,বাবা!তোর চাকরির প্রথম

বেতন কিন্তু তোর মায়ের হাতে এনে দিবি। সে বলল,আচ্ছা ঠিক

আছে বাবা। তার দু'দিন পর সুমন

কলেজে ফিরে গেল। নিপাকে বলল,তুমি কম্পিউটার

চেয়েছিলে না?চল তোমার পছন্দের

কম্পিউটার তোমাকে কিনে দেব। এই

বলে নিপাকে নিয়ে একটি মার্কেটে গেল। চাকুরীর

কথা বলে বাবার থেকে নেয়া সেই

১৮হাজার টাকায় নিপাকে নতুন একটি কম্পিউটার

কিনে দিল সুমন। নিপা যত্ন করে সেটাকে হোস্টেলে নিয়ে গেল। এর সুবাদে তাদের প্রেম কিছুটা গাঢ় হল। ক'দিন বাদে সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা। দেখতেই দেখতেই পরীক্ষা এসে গেল। সুমন পরীক্ষা দিল। কিন্তু পড়া বাদ দিয়ে প্রেমচর্চায় পড়ে থাকায় সুমনের রেজাল্ট বিপর্যয় হলো। তারপর নিপা নতুন এক বায়না ধরলো,তাকে একটি সোনার আংটি দিতে হবে। প্রেমিকার আবদার রক্ষার্থে

সুমন আবার বাড়িতে গেল টাকার জন্য। তাকে দেখামাত্রই সুসংবাদ শুনার আশায় মায়ের মুখে উজ্জল

হাসি ভেসে উঠল। বাবা!চাকরির কী খবর? সে বলল,হয়ে গেছে মা। তবে জয়েন্টের জন্য

আরো ৫ হাজার টাকা দরকার।

তারা বলেছেন,এই ৫ হাজার টাকা দিলে তুমি অফিসে আসতে পারবে এবং পরবর্তী মাস হতেই বেতন পাবে। মা বললেন,বাবা! দেখ, একদমই ঘরে টাকা নেই।এর আগে যে ২০হাজার টাকা তোর বাবা দিয়েছে,সেটা ঘরের

পেছনের জমিটা বিক্রি করে দিয়েছে।

এবার তো কোন

বুদ্ধি নেই বাবা! কী করে দেব বল্? সে বলল,মাত্র ৫ হাজার

টাকা দিতে পারলেই

একেবারে কেল্লাফতে। আর কোন টাকায় লাগবে না। পাশ থেকে তার

বাবা বললেন,দেখি, আমি কী করতে পারি। এরপর তার

বাবা এক মহাজনের

কাছে বসত বাড়ী সব বন্ধক রেখে ৫ হাজার টাকা এনে দিলেন। আর

বললেন,বেতনের টাকা পাঠালে আগে এ ঋণ পরিশোধ

করে বন্ধক ফিরিয়ে আনবেন। টাকা পাওয়ার সাথে সাথে সুমন চলে গেল কলেজে। তারপর

নিপাকে সাথে নিয়ে স্বর্ণকারের দোকানে গিয়ে আংটি বানানোর অর্ডার দিল। এতে তাদের প্রেম জোরেসোরে চলল আরো কিছুদিন। কিন্তু অল্প ক'দিন পরই

পরিস্থিতি বিগড়াতে লাগল। নিপা সুমনের পাশে বেশী ভিড়তে চায় না। সুমন বুঝতে পারে,নিপা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই হাত

ছাড়া হওয়ার আগেই

সে নিপাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। কিন্তু

নিপা এটা সেটা বলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করল। সুমনের মন

এতে ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন পর অবস্থা একেবারে উল্টে গেল। নিপা সুমনকে কোন পাত্তাই দেয় না। এতে সুমন

একেবারে ভেঙ্গে পড়ল। সে ভারসাম্য

হারিয়ে বিপথে পা বাড়াল। সে নেশায় বুদ হয়ে থাকে।সূঁচ

ব্যবহার করে। এমনকি সাথে সবসময় একটি টিপ

ছুরি রাখে ভয়ংকর কিছু ঘটানোর

জন্য। একদিন খুবই

বিষণ্ন মনে হাঁটছে ফ্যান্টাসি পার্কের সামনে দিয়ে।হঠাত্‍

পার্কের ভেতরে তাকিয়ে তার দু'চোখ

ছানাবড়া হয়ে যায়। একি দেখছে সে।

খুব দ্রুত সে পার্কের

ভেতরে গিয়ে উঠল। সোজা নিপার সামনে গিয়ে উঠে রাগত স্বরে বলল-

ওটা কে? নিপা বলল,"দিস ইস মাই লাভার বয়।"

সুমন যেন আকাশ থেকে মাটিতে পরে গেল। কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,তাহলে আমি কে? নিপা বলল,"তুমি তো এক

অপদার্থ,না আছে ব্যক্তিত্ব, না আছে অর্থ।"কথাটি কয়েকবার সুমনের

কানে প্রতিধ্বনিত হল। সুমনের

চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। অন্যরকম হয়ে গেল সে। কিছুক্ষণ স্তব্ধ

থেকে কোমরের ভাজ হতে ছুরিটা বের করল।তারপর

সেটা প্রবল শক্তি দিয়ে কয়েকবার নিপার পেটে বিদ্ধ করল। রক্তের

বন্যা বয়ে গেল সেখানে।মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল নিপা। কিছুক্ষণের

মধ্যেই পুলিশ এলো। সুমনকে হাতকড়া পরালো। তখনও সে নির্বাক পাথরের মত

দাড়িয়ে আছে।।।""

কাঁচা হাতে লিখা, সাহিত্যগত, শাব্দিকগত অনেক ভুল থাকতে পারে।আশা করি, ভুলগুলো সংশোধন করে দিবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৫০৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200370
৩০ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান। আরো বেশী বেশী লিখুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File