বাক্হীন অনুভূতি! জীবনের জন্য সংগ্রাম।

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৩৮:৩৬ দুপুর

আবদুল হক স্যার, স্কুল প্রতিষ্ঠার কিছুদিন থেকেই প্রধান শিক্ষক। তার মেধা, যোগ্যতা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে থানা/জেলার নামকরা হাইস্কুলগুলোর মধ্যে অন্যতম তার স্কুলটা। শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি যেমনি কঠোর তেমনি কোমল হৃদয়ের অধিকারী। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজের সন্তানের মতই মনে করেন। স্কুল আর শিক্ষার্থীদের পেছনে সময় ব্যয় করতে গিয়ে নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারলেননা। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। নিজের সন্তান আর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য জ্ঞান না করাতে হয়তো তার ছেলেগুলো বাবার মত হয়নি। তাই বলে স্যারের মনে কোন দু:খ নেই। কারণ তারই হাত ধরে অসংখ্যা ছেলে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর আইনজীবি। তারা স্যারকে এখনো বাবার মতই সম্মান করে। সেই কাক ডাকা ভোরে স্কুলে আসেন; শিক্ষার্থীদেরও আগে। স্কুল থেকে বের হন সবার শেষে, কখনো কখনো মাগরিব পর্যন্তই স্কুলে থাকেন। স্কুলের সকল দায়িত্ব যেন উনার একার তাইতো স্কুলকে এত আপন মনে করেন।

নিত্যদিনের মত স্কুল থেকে বেরিয়ে বাজারে শেষ মাথায় একটা চায়ের দোকানে ডুকলেন। নিয়মিতই এ দোকানে চা খান। দোকানদার ভদ্র মানুষ; কর্মচারীগুলো্ও ভাল, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এ দোকানটায়ই বসে কখনো দুপুরের খাবার খান।

স্যার চেয়ারে বসাতেই ১১/১২ বছরের একটা ছেলে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে বলল স্যার কি খাবেন? চিন্তামগ্ন স্যার প্রথমে খেয়াল না করলেও মুহূর্তেই যেন একটা ধাক্কা খেলেন। ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। যদিও তিনি নিয়মিত কোন ক্লাশ নেননা, তারপরও প্রায় প্রতিটি ক্লাসে সপ্তাহে ২/১দিন গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের খোজ খবর নেন। ছেলেটা ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্র। অনাকাংখিত এমন পরিস্থতির জন্য স্যার মোটেও প্রস্তুত ছিলেননা। তাই বললেন- "তুমি! তুমি ছালেহ না?"

জ্বি স্যার..,

তো-তুমি এখানে কি কর?

স্যার স্কুল শেষে এখানে কাজ করি।

কবে থেকে এখানে কাজ কর?

স্যার এ স্কুলে ভর্তি হ্ওয়ার ২দিন পর থেকে।

কতক্ষণ পর্যন্ত কাজ কর??

হঠাত দোকানের মালিক ডাক দিল- এই ছালেহ স্যার কি খাবে খাবার দেয়, আর এই টেবিলটা পরিস্কার কর।

স্যার আমি আসছি বলেই ওই দিকে চলে যায়। টেবিল পরিস্কার করে আবারও স্যারের পাশে দাড়ায়।

স্যার আবারও প্রশ্ন করলেন- কতক্ষণ পর্যন্ত কাজ কর??

স্যার স্কুল ছুটি হলে বই খাতা নিয়েই এখানে আসি, বই খাতা ভিতরে রেখে এই পোশাকটা পরে কাজ শুরু করি। রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত কাজ করি। হাটবারের দিন দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত থাকতে হয়।

তোমাকে এতদিন দেখিনি কেন?

আপনাকে আমি নিয়মিতই দেখি। কিন্তু আমি দূরে থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু আজকে দোকানে আর কোন ছেলে নেই তাই আমিই আসলাম আপনার কাছে।

তো রাত নয়টা থেকে দশটা এখানে থাকলে তুমি পড়া লিখা কখন কর?

স্যার ফজরের পরে যখন আলো ফুটে তখন পড়তে বসি আর স্কুলের আগ পর্যন্ত পড়ি।

রাতে পড়না?

রাত্রে পড়তে হলে বাতি লাগে আমাদের তো কেরোসিন কেনার টাকা নাই; বাতি জ্বালাব কি দিয়ে? এখানে যে বেতন পাই তা দিয়ে মা আর ছোট ভাই বোনের খাবার জুটানোই কষ্ট হয়ে যায়।

আমাদের তো কেরোসিন কেনার টাকা নাই কথাটা যেন স্যারের কানে বাজতে লাগল বার বার, নিজের অজান্তেই চশমার নিচ দিয়ে এক ফোটা পানি ঝরে পড়ল। ওদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই বলল তোমার বাবা কোথায়?

স্যার বাবা মারা গেছে ৩বছর। মা আর ছোট এক ভাই ও বোন আছে। মা পাশের বাড়িতে কাজ করেন চাউলের বিনিময়ে, আমার টাকা দিয়ে মা কে সাহায্য করি...

শিক্ষক নিজের অজান্তে চেয়ার থেকে দাড়িয়ে ছেলেটাক বুকে জড়িয়ে নিলেন। আর বললেন আগামী কাল তুমি অফিসে এস তোমার সাথে কথা আছে। শুধুমাত্র একটা চা খেয়েই ভারাক্রান্ত মনে বেরিয়ে গেলেন দোকান থেকে। আর ভাবছেন ধনীর ছেলেরা যেখানে অগাধ টাকা পেয়ে বিপথে যাচ্ছে তারই পাশে এক দরিদ্র মেধাবী নিদারুন কষ্ট করেও জীবন সংগ্রাম অব্যাহত রাখছে।....... শুধু বেঁছে থাকার জন্যই এ সংগ্রাম।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203767
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩২
153025
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
203837
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
ফেরারী মন লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান। আরো বেশী বেশী লিখুন
০৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৪
153091
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File