কলংক কি আসলেই মুক্ত হচ্ছি, না কি যুক্ত হচ্ছি????
লিখেছেন লিখেছেন হক সাহেব ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৮:০৬ দুপুর
আমি যদি শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ করে থাকি, তাহলে অবশ্যই আমার শাস্তি হওয়া উচিত। এবার আমি হুজুর
হই, ইসলামীক স্কলার হই, অনেক বড় ইসলামী দলের নেতা বা অন্য যে ই হইনা কেন।
ক্ষমার অযোগ্য কোন অপরাধ করে, শুধুমাত্র একটা ইসলামী দলের নেতা এই জন্য পার পেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আবার সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন অভিযোগ প্রমান করতে না পারলে শুধুমাত্র গনমাধ্যমের চাহিদার উপর ভিত্তি করে কাওকে সাজা দেওয়ার এখতিয়ার ও আদালতের নাই।
এই যে আমরা তরুন প্রজন্ম যুদ্বাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি। শুধু আবেগের বশে বিচার চাইলে তো হবে না, বিচার টা কিভাবে হচ্ছে সেই খোজ খবর টা ও তো আমাদের রাখা
উচিত...
যেমন ধরুন জামায়াত নেতা মুজাহিদ.....
মুক্তিযুদ্বের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে সাতটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।
*এর মধ্যে ১,৬,ও ৭ নম্বর অভিযোগ মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
-১ নম্বর অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের বাঙালি সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি দৈনিকে প্রবন্ধ লেখায় ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তুলে নিয়ে হত্যা।
-৬ নম্বর অভিযোগ ছিল ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা
অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ গণহত্যা করা।
-৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের সদর থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার
ঘটনা।
ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে মুজাহিদ আপিল করলে -
আপিল বিভাগ ১ নং অভিযোগ থেকে ওনাকে খালাস দেয়।(অথচ এই অভিযোগটি ছিলো সুনির্দিষ্ট)
অন্যদিকে ৬নং অভিযোগে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় আপিল বিভাগ।
কিন্তু ৭ নং অভিযোগে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
তবে এই অভিযোগে বিচারিক ও আপিল আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা
বলেছেন- রাজাকার, আলবদর বা আলশামসের সাথে মুজাহিদ জড়িত থাকার কোনো তথ্য-প্রমাণ পাননি।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো - (১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৬(গ) ধারায় সুম্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ
সুনির্দিষ্টভাবে আনতে হবে।)
★★কিন্তু মুজাহিদকে আলবদর বাহিনীর প্রধান আখ্যা দিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে
যাতায়াতকারী আখ্যা দিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তিনি কবে, কাকে, কিভাবে হত্যা বা অপহরণ
করেছেন সুনির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ উল্লেখ নাই। কোন আর্মি অফিসারের সঙ্গে কোথায় বসে পরামর্শ করেছেন
তাও বলা হয়নি অভিযোগে। এমনকি পরামর্শের সময় আর কেউ উপস্থিত ছিলো কিনা তার সুনির্দিষ্ট কোন
তথ্যও দেয়া হয়নি।
★★ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে ধরে নিয়ে যেসকল বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করা হয়েছে তাদের স্ত্রী বা সন্তান-
সন্ততি এবং পরিবারের অন্য সদস্য রা এখনো জিবিত। কিন্তু তারা ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেননি যে মুজাহিদ তাদের স্বজনদের হত্যায় জড়িত।
★★অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সার্বক্ষণিক নিরাপত্ত রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন রহম আলী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওইখান কী ঘটেছিল তা নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে তিনি একাধিক
সাক্ষাৎকার ও দেন কিন্তু কখনোই মুজাহিদের কথা বলেননি তিনি।
★★মুজাহিদের সেখানে যাতায়াতের ব্যাপারে রহম আলীকে যেমন সাক্ষী করা হয়নি, তেমনি ডাকা হয়নি
ইন্সটিটিউটের তৎকালীন অধ্যক্ষ মুহিবুল্লাহ খান মজলিস এবং তার ছেলে বর্তমান অধ্যক্ষ তারেক ইকবাল
খান মজলিসকেও (যিনি ১৯৭১ সালে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন)। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় ইনস্টিটিউটের
কোয়ার্টারে থাকা কোন স্টাফ, অধ্যাপক বা অন্য কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি তদন্ত
কর্মকর্তা!
★★অপর দিকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়,সে সময়ের ১৪ বছর ও ১৩ বছর বয়সী কিশোর রুস্তম আলী মোল্লা ও জহির উদ্দিন জালাল কে। এর মধ্যে রুস্তম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখানো হয়, আর জালাল তার কাছ থেকে শুনে সাক্ষী।
আবার কিশোর রুস্তম আলী মোল্লা মুক্তিযুদ্ধকালীন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দারোয়ান রহম আলী মোল্লার ছেলে।
★★সে সময়ের কিশোর রুস্তম আলী তার সাক্ষ্যে দাবি করেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ৩/৪ মাস পর মুজাহিদকে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গেটে দেখেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই আগে স্বীকার করেছেন, মুজাহিদকে আগে থেকে চিনতেন না।
★★অপর দিকে জহির উদ্দিন জালাল তার সাক্ষ্যে বলেছেন যে, নিজামী, মুজাহিদরা ফিজিক্যাল ট্রেনিং
ইনস্টিটিউটে আসতেন-এই খবরগুলো রুস্তম আলী মোল্লা কেরানীগঞ্জে তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু জালালের
সঙ্গে আগে পরিচয় থাকার কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে তদন্তকালে জানাননি রুস্তম।
-----------------------------
এখন এই ধরনের তৎকালীন ১৩ ও ১৪ বছর বয়সী ২ কিশোরের অসংলগ্ন কথার উপর ভিত্তি একজন মানুষ কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া কতটুকু ন্যায় বিচার সেটা বুজার জন্য
নিশ্চয় আমাকে /আপনাকে আপীল বিভাগের বিচারক হওয়া লাগবে না। সবচেয়ে বড় আদালত নিজের বিবেক,
বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন।
(মামলা সংক্রান্ত তথ্য গুলো, ইতিপূর্বে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে)
বিষয়: রাজনীতি
১৬৯৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন