ভালো বাসি খাবার
লিখেছেন লিখেছেন নিয়াজুল হক সাগর ০৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:২২:০১ রাত
চিনব কিভাবে? একটা চিন্তা শুধু মাথায় ঘুরছে রবিনের। কিছু তো বললও না- ভাবলো সে। শেষ মেস সিদ্ধান্ত নিল ফোন করেই জিজ্ঞেস করা যাক। সাথে সাথে ফোন করল রিয়াকে।
- হ্যালো।
- হ্যাঁ বলো রবিন।
- আজ প্রথম বারের মত দেখা করছি। প্লিজ বল না কিভাবে চিনব তোমাকে?
- বলেছি। তো।
- কি?
- জানিনা।
ফোন কেটে গেল। রবিনের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। যাই হোক ঠিক চারটার সময় কমলা শার্ট পড়ে তৈরি হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ল রবিন। একদম তৈরি! শার্টের হাতা একেবারে কব্জি পর্যন্ত লাগানো। চোখে মোটা ফ্রেমের গোল গ্লাসের চশমা। মাথার চুল উস্কো খুস্কো। খুশিতে গদ গদ হয়ে রবিন ভাবলো- কিভাবে চিনব তাতো বলনি। দেখব এবার আমাকে কিভাবে চিনো? ভাবতে ভাবতে আর মনে মনে খুশি হতে হতে রবিন গন্তব্যে চলল।
চারটা ত্রিশ। চারটা পয়তাল্লিশ। এখনও রিয়া আসছে না। যখন রবিন ভাবল যে চলে যাবে তখনই রিয়া পেছন থেকে টেনে ধরল রবিনকে।
- হাই রবিন।
- রিয়া! তুমি আমাকে চিনলে কি করে?!
- আমাকে কি গাধী ভেবেছো। আমিও এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছিলাম। দেখলাম যে সবার গতিবিধি আছে বাট তোমার নেই। ব্যস বুঝে গেলাম। আমি জানতাম তুমি এরকমই ছদ্দবেশ নিয়ে আসবে।
- তাই নাকি?
- হ্যাঁ তাই। এবার বলো আমি শার্লক হোমস হতে পারব তো?
- শার্লক হোমস আর তুমি! যাও তুমি ওয়াটসন। আমি হলাম দি গ্রেট শার্লক হোসম!
- শার্লক না ছাই। আচ্ছা শোনো-
কথাটা শেষ করতে পারল না রিয়া। তার আগেই একটা ফোন কল আর রিয়ার পনের মিনিটের দীর্ঘ আলাপ শুরু হয়ে গেল। অবশেষে ফোন রেখে বলল, অনেক দিন পর আমার বান্ধবী ফোন করেছিল। তাই একটু বেশিই কথা বলে ফেললাম।
রবিন বলল, আরে আমি কখনও মাইন্ড করি না। আমি হলাম-
- তাই তুমি মাইন্ড কর না! ওয়াও। এখন চল যাই কোথাও। বলেই রিয়া উঠে পড়ল। আর ইচ্ছে করেই রবিনের পায়ে তার হাই হিল বসিয়ে দিল। তারপর বলল, সরি সরি রবিন। তুমি কি..
- না না। রিয়া। আমি মাইন্ড করি নি। রবিনের উত্তর।
- না আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম তুমি কি ব্যথা পেয়েছ?
- না। মোটেও না। ওগুলো কিছুই না।
রিয়া হাসি চাপছে অনেক কষ্টে। কিন্তু রবিন বেচারা বেশ ভালই ব্যথা পেয়েছে।
- আচ্ছা রিয়া তখন কি জানি বলতে চেয়েছিলে আমাকে? বলো।
- হ্যাঁ। বলতে চাইছিলাম তোমাকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।
- তাই?
- হ্যাঁ। কেন? বিশ্বাস হয় না?
রবিন কোনো উত্তর না দিয়ে কেবল হাসলো। তারপর ও ওয়েইটারকে ডাকল।
- ভাইয়া এই মেন্যুতে আপনার যেটা সবচেয়ে প্রিয় খাবার সেটা নিয়ে আসুন। ওয়েইটারকে বলতেই সে একগাল হেসে নিয়ে চলে গেল।
- এরকম কেন করলে? রিয়া জিজ্ঞেস করল।
- মানুষের ছোট খাটো চাওয়া। ঐ চাওয়াতেই সে খুশি হয়। দেখলে না ওনাকে? ওরকম এর আগে কোনো কাস্টমারের সাথে এভাবে হেসেছেন কিনা সন্দেহ আছে। রিয়া রবিনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এরকম ছেলেই হয়ত ও চায়।
- আচ্ছা রবিন ওটা বাদ দাও। আমি আজ তোমাকে খুব বাসি খাবার খাওয়াব।
- বাসি? কেন কেন কেন? বাসি কেন? দুনিয়াতে কি ভালো খাবারের অভাব পরেছে নাকি?
- আরে তুমি খাবে কিনা বলো।
- আচ্ছ ঠিকাছে। তবে এক শর্তে।
- কি?
- তোমার কাছে এ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার আছে তো।
- আছে। নো টেনশন।
- বাহ্। বেশ ভালো তো তুমি।
কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো ওরা।
- যাই হ্যাঁ? রিয়া বলল।
- আচ্ছা।
- কিছু বলবে আমায়?
- হ্যাঁ।
রিয়া বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ল।
- বলোনা।
- হ্যাঁ বলছি।
- হুমম।
- আমি কিন্তু আসলেই মাইন্ড করিনি। বলেই ফিক করে হেসে ফেলল রবিন।
- তোমার মাইন্ডের নিকুচি করি আমি। তোমার সাথে কোনো কথা নেই। বাই!
রিয়া হাঁটা ধরল এক দিকে। রবিন পেছন থেকে ডেকে থামালো।
- আজকে এই ড্রেসে আমাকে মোটেও হ্যান্ডসাম লাগছে না রিয়া। সো তখন যে কথাটা বলতে চেয়েছিলে বলে ফেল।
- তুমি আসলেই...
- হোমস! রিয়াকে থামিয়ে বলল রবিন। হ্যাঁ এবার বলো কি বলতে চেয়েছিলে?
- তোমার শার্টের পকেটে দেখ।
রবিন ওর শার্টের পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে আনলো। সেখানে লেখা - আমি তোমাকে খুব ভালো বাসি একটা খাবার খাওয়াব। খাবে? ;-)
রবিন সেটা পড়ার পর বলল, তুমি আজ প্রমাণ করে দিলে তুমি শার্লক হোমস মানে আমার বেশ বড় অনুসারী। হা হা হা।
রিয়া রাগে ফেটে পড়ল। আগের মতই প্রবল বেগে উল্টো দিকে হাঁটা দিল। রবিন দৌঁড় দিল আর বলতে লাগলো, আরে রিয়া। আমি খাব তো। প্লিজ। দাঁড়াও!
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন