বৈশাখের প্রথম দিনে(গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন অলীক সুখ ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:০৬:৪২ রাত
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আবেগ তাড়াহুড়ো শুরু করল। কোন কাজই ঠিকমত করতে পারছিল না। আবেগের মা এসে কয়েকবার ধমক দিয়ে গেল। আবেগের মা বলল, এত তাড়াহুরো করছিস কেন? একটু ধীরে সুস্থে কাজ কর। বিয়ের দিনও তোর পাগলামী গেল না?
মা'র এই কথাটি শুনেই আবেগের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আসলেই তো সে একটা পাগল। আজ তার বিয়ে। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সেই মেয়েটির সাথে তার বিয়ে হচ্ছে। আজ তার কত কাজ। আর এখন কিনা রাজ্যের চিন্তা তার মাথায় এসে ভর করেছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে আবেগ তাদের সম্পরকের প্রথম দিককার কথা ভাবতে শুরু করল। ভার্সিটিতে প্রথম দিন গিয়েইএকটি মেয়েকে আবেগের ভাল লেগে যায়। যাকে এককথায় বলে, প্রথম দেখায় ভালবাসা।মেয়েটি দেখতে খুব একটা সুন্দর ছিল তা না। দেখতে কিছুটা শ্যামবর্ণের ছিল। কিন্তুতার চোখজোড়া ছিল অত্যন্ত মায়াবী। এই চোখদুটোই আবেগকে পাগল করে তুলেছিল।
কিন্তু প্রথম কয়েকদিন আবেগ কিছুই করতে পারল না। কি ই বা করার ছিল? সে মেয়েটির নাম ঠিকানা কিছুই জানত না। পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে আবেগ মেয়েটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়। তথ্য যে অনেক কিছু ছিল তা না। সে শুধুমাত্র মেয়েটির নাম "টুম্পা" এবং কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে তা জানতে পেরেছিল। তাতেই বা কম কি? সেদিন থেকেই আবেগ শেষ ক্লাস মিস দিয়ে টুম্পার ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত।
টুম্পা প্রথম কয়েকদিন লক্ষ্য করলেও কিছু বলত না। সে বুঝতে পারে ছেলেটি তাকে পছন্দ করে। কয়েকজন বান্ধবীর কাছ থেকে সে আবেগ সম্পর্কে জেনে নেয়। এভাবেই দিন কেটে যেতে থাকে। আবেগ আর কিছুতেই থাকতে পারেনা। সে ভাবে কালকে যে করেই হোক টুম্পার সাথে কথা বলবে।
পরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে আবেগ যথারীতি তার শেষ ক্লাস মিস দেয়। যখন টুম্পার ক্লাস ছুটি দেয় তখন আবেগের বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়। তারপরেও অতি কষ্টে সে টুম্পাকে ডাক দেয়। এই টুম্পাঃ
- হুম। আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
- এক বন্ধুর কাছে জানছি।
- ও আচ্ছা। কিছু বলবেন?
- না এমনি। আমি আবেগ।
- হুম। এমনি আবার কেউ ডাক দেয় নাকি?
- না কিছু বলার ছিল।
- তাহলে বলেন।
- আপনি কইরা বলতেছ কেন? আমরা তো একই ব্যাচের। তুমি কইরা বললেই খুশি হব।
- আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি কইরাই বলব। তো কি বলবেন বলুন?
- আবার আপনি......
- ও স্যরি ভুল হয়ে গেছে। কি বলবা?
- যেহেতু আমরা একই ব্যাচের আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
- দেখ আবেগ বন্ধুত্ব জিনিসটা অনেক বড়। হুট কইরা তো আর কারো বন্ধু হওয়া যায় না। তাই না?
- হুম তা ঠিক। কিন্তু কথা দিচ্ছি আমি তোমার খুব ভাল বন্ধু হতে পারব।
- সময়ই সব বলে দেবে।
- তোমার নাম্বারটা.........
- কিছুক্ষণ ভেবে আচ্ছা নাও।
এভাবেই আবেগ আর টুম্পার পরিচয় হয়। সেদিন রাত্রে আবেগ অনেক ভয়ে ভয়ে টুম্পাকে ফোন দেয়। টুম্পার সাথে কিছুক্ষণ কথাও হয়। এভাবে নিয়মিতই তাদের কথা হতে থাকে। তারা পরস্পর অনেক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। একে অন্যের কাছে সবকিছু শেয়ার করে। তার খুব ভাল বন্ধু হয়ে উঠে। কিন্তু আবেগ যে টুম্পাকে ভালোবাসে এই কথাটি সে কিছুতেই টুম্পাকে বলতে পারছিল না। তার সবসময় ভয় হত যদি টুম্পা না করে দেয় তাহলে তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।
হঠাৎ একদিন আবেগ চিন্তা করল সামনে পহেলা বৈশাখ যে করেই হোক টুম্পাকে প্রোপোজ করবে। আবার মাঝে মাঝে ভয় এসে মাথায় ভর করে। কিন্তু আবেগ আর পারে না। সে ভাবে যা হয় হবে, কিন্তু এর একটা বিহিত দরকার। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে টুম্পার সাথে আবেগের অনেক কথাই হয়। কিন্তু আবেগ ঘূণাক্ষরেও টুম্পাকে কিছু বুঝতে দেয় না।
পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা আবেগ অনেক টেনশনে ছিল। সে কোনমতে তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসে যায়। ক্যাম্পাসে গিয়ে টুম্পাকে অনেক খোঁজে। খুঁজতে খুঁজতে যখন আবেগ ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছে তখন দেখে টুম্পা মাত্র ভার্সিটিতে আসতেছে। টুম্পার পরনে ছিল লাল পার যুক্ত সাদা শাড়ি। এমনিতে শ্যামবর্ণের মেয়েদের কাজল দিলে ভাল লাগে না। কিন্তু চোখে কাজল টুম্পার সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল। টুম্পাকে তখন অপূর্ব লাগছিল। যা দেখে আবেগ চোখ ফেরাতে পারছিল না।
টুম্পা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। আবেগ কথা বলার কোন সুযোগ ই তৈরী করতে পারছিল না। মাঝে মাঝে ভীতুরাও অনেক সাহসী হয়ে উঠে। এতটাই সাহসী হয়ে উঠে যা সে নিজেও কল্পনা করতে পারে না। আবেগ এই দিনটির কথা মনে করলে আজো রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে। যাই হোক আবেগ তখন সাহস করে টুম্পাকে ডাক দেয়। সে ডাক এতটাই গাম্ভীর্যপূর্ণ ছিল যে, টুম্পা কোন কিছুই বলতে পারল না। শুধু আবেগের পিছনে হাঁটা শুরু করল।
টুম্পাকে একটি গাছের আড়ালে নিয়ে আবেগ বলল, কিভাবে প্রোপোজ করতে হয় আমি জানিনা। শুধু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া নিজেকে একমূহুর্ত কল্পনা করতেও আমার কষ্ট হয়। এই কথাগুলো বলে আবেগ হাঁটা শুরু করল। টুম্পা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। হঠাৎ কি হয়ে গেল সে বুঝতেও পারল না। যখন টুম্পা ব্যাপারটা বুঝতে পারল তখন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আবেগকে থামাল। টুম্পা বলল, শুধু নিজের কথাই বললে। আমি কি বলতে চাই তা শুনলে না। আমিও যে তোমাকে ভালবাসি। এই কথাটি বলার পর মেয়েরা যা আশা করে আবেগ তাই করল। আবেগ টুম্পাকে জড়িয়ে ধরল এবং কপালে আলতো করে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।
আজ কতদিন হয়ে গেল। কত বৈশাখ পার হল। আজ আবারও পহেলা বৈশাখ। আবেগ আর টুম্পার সম্পর্কের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। আবেগের ধৈর্য্য অনেক কম তাই সে আর পারলনা। টুম্পাকে আগের রাতে বলেছে, সে কিছু শুনতে চায় না। টুম্পা যেন সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে আসে। আজকেই আবেগ টুম্পাকে বিয়ে করবে। টুম্পাও আর অমত করেনি। শুধু মা'র কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
অবশেষে কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হল। তাদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু সেখানে ছিল। আবেগ আর টুম্পা আবারও সেই গাছটির নীচে গেল যেখানে আবেগ টুম্পাকে প্রোপোজ করেছিল। সন্ধ্যা নেমে আসছে। সূর্যের আলোতে টুম্পাকে অপূর্ব লাগছে। আবেগ টুম্পাকে জড়িয়ে ধরল। এইবারও সে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। আজ আর কপালে নয়। সরাসরি টুম্পার ওষ্ঠে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো আবেগ। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আজ অন্ধকার না হলে তারা একজন আরেকজনকে ছাড়বে না।
থাকুক তারা এইভাবে। গোধূলির সূর্য আর রাতের চাঁদ তাদের পাহারা দিক। চলো আমরা যাই।
বিষয়: সাহিত্য
১২৮৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
..আহারে। বিয়ে করে বুঝি গাছের নীচে....। কাক পক্ষীর বুঝি নজর লাগেনি। সুন্দর প্রেম কাহীনি। ভাল লাগল। তয় কাহীনিটি আপনার হলে আরও ভাল লাগত। ধন্যবাদ।
আমার তো ভাউ প্রেম করারই বয়স হয় নাই। বিয়ে তো অনেক দূরের জিনিস। ;-)
১)আবেগ নামখানা শুনিয়া কিঞ্চিত বিমূঢ় হইয়াছি।
২)শ্যামবর্ণ মেয়েদের কাজল পড়লে ভালো লাগেনা এইরুপ ভুল তথ্য আপোনাকে কেঠা সাপ্লাই করিয়াছে!!! কাজল এমনি একখানা জিনিস যাহা সকলেরই জন্য মানানসই। নারীর রুপ প্রস্ফুটিত হইবার যে কয়েকখানা প্রাকৃতিক উপাদান রহিয়াছে তাহার মধ্যে কাজল প্রথম স্থানে আছে। বিকট রুপী নারীর চেহারায়ও মায়ার বাঁধ ভাঙ্গিতে পারে একটুখানি কাজলরেখায়..ইঁদুর গোত্রিয় নয়নও হরিণের রুপ লাভ করিতে পারে এক চিলতে কাজলের ছোঁয়ায়..আশা করি বুঝাইতে পারিয়াছি নির্বোধ বালক!!!!
আর কাজলের ব্যাপারটা আমার এক বন্ধু আমাকে বলছে। আপনার তথ্যের জন্যের ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে সঠিক তথ্য দিব।
এই কথাটি বলার পর মেয়েরা যা আশা করে আবেগ তাই করল ... কি আশা করে?
আর আশা করে যাতে একটু জড়ায় ধরে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন