বাবাই সব(গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন অলীক সুখ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৩:১০:৪৫ দুপুর
ফারিহার আজ মনটা খুবই খারাপ। মন খারাপের কারন দুটো। সে শহরের একটা নামীদামী স্কুলের ক্লাস সেভেন এ পড়ে। আজকে তার চুলের বেণী ছোট বড় হওয়ায় তার ক্লাসের সব মেয়েরা হেসেছে। আর দ্বিতীয় কারনটা হল মা দিবস উপলক্ষে ছোট বক্তৃতা দেয়ার জন্য আজ ম্যাডাম তার নাম নিয়ে গেছেন। এটা মন খারাপের কারন হতনা যদি তার মা থাকত।
কিন্তু ওর চার বছর বয়সেই মা মারা যান। এরপর থেকে ফারিহার বাবাই তার মা।
ফারিহার বাবার নাম জামান চৌধুরী।একজন সরকারী কলেজের শিক্ষক তিনি।মেয়ের জন্য তাই ভালই সময় পান।মায়ের অভাব পূরণে তার সবটুকু চেষ্টাই তিনি করেন।মেয়েকে ভালবাসেন তার জীবনের চেয়েও বেশী। আজ তাই মেয়ের পছন্দের প্রিয় চকলেট কেক নিয়ে যাচ্ছেন বাসায়।
বাসায় ঢোকার পর মেয়েকে পেলেন তার বারান্দায়,মন খারাপ। মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। ফারিহা উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে ফিরেই প্রশ্ন করল"কেন আমার মা নেই?কেন আমার মা আমাকে চুল বেধে দেয়না? সবাইকে ওদের আম্মু আদর করে?আমাকে কেন শুধুবাবাই আদর কর? মা দিবসে আমাকে মা নিয়ে বলতে হবে। কিন্তু আমার তো মা ই নেই,আমি কাকে নিয়ে বলব? জামান সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ভেজা চোখে বললেন, আমি ই তো তোর মা। আমাকে নিয়ে ই বলবি।
মা দিবসের দিন সকালে জামান সাহেব ফারিহাকে সাজিয়ে দিতে দিতে বললেন,কিরে আমাকে শোনাবিনা আজ কি বলবি মা'কে নিয়ে? ফারিহা মুচকি হেসে বলল যখন বলব তখন তো শুনবেই।
নির্দিষ্ট সময়ে ফারিহার ডাক পড়ল মঞ্চে।সবাইকে সালাম জানিয়ে বলতে শুরু করল"আমার নাম ফারিহা।সবার একটা আব্বু আর আর একটা আম্মু থাকলেও, আমার আম্মু আব্বু একজনই। তার নাম জামান চৌধুরী।তিনি আমাকে প্রতিদিন সকালে ব্রাশ করিয়ে দেন,আমার জন্য ত্রিভুজ রুটি বানান,বাকা করে ঝুটি বেধে দেন,আমার হোমওয়ার্ক করে দিয়ে টিচার এর বকা খান,লাল আর গোলাপী কোনটা বোঝেননা,ডান পায়ের মোজা বাপ পায়ে পড়ান, ঘুম পাড়ানী গল্প বলতে যেয়ে নিজেই ঘুমিয়ে যান।কিন্তু তিনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,আমার আব্বু আমার আম্মু।
তোমায় খুব ভালবাসী আব্বু।পচা আম্মুটার মত আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা প্লিজ। ভালবাসী তোমায় খুব। শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেননা জামান সাহেব। দৌড়ে যেয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ভেজা গলায় বললেন"কখখনো যাবনা মা,তুই ই তো আমার সব।তোকেই ভালবাসি সবচেয়ে বেশী।
বিষয়: বিবিধ
১১০২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লা খায়র... অনেক ভালো লাগলো পড়ে। চোখে পানি আটকাতে পারলাম না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন