পরমা(গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন অলীক সুখ ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৪২:৫৭ সন্ধ্যা

অনেকদিন ধরেই ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টটা ঝুলছিল পরমার হোম পেজে। পরমা ইচ্ছা করেই আইডিটির ভেতরে ঢুকত না। দেখত কোন মিউচুয়াল নেই। মিউচুয়াল ছাড়া সে আবার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে না। আইডিটার নামও অদ্ভুত। তাই সে ইচ্ছা করে আরো ঢুকে না। পরমা চিন্তা করে "অম্বুবাহ" কারো নাম হয় নাকি? সে মাঝেমাঝে ভাবে রিকুয়েস্ট টা ডিলিট করে দিবে। কিন্তু কেন জানি তাও পারে না। মাঝে মাঝে পরমা ভাবে এই আইডি থেকে কোন মেসেজ আসে না কেন? সবাই রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে মেসেজ দেয়। কিন্তু এ যেন অন্যরকম।

একদিন দুপুরবেলা ফেসবুকে অলস সময় কাটাচ্ছিল পরমা। হঠাৎ কি মনে করে যেন সে "অম্বুবাহ" নামের আইডিটাতে ঢুকল। ঐ আইডিতে ঢুকেই পরমা অবাক। এ যে তাদের কলেজেরই ছেলে। কিন্তু সাথে সাথে তার মনে হয় তাদের কলেজেরই যদি হবে তাহলে মিউচুয়াল নাই কেন? এ রকম সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পরমা আইডিটার এবাউট পড়লো। এবাউট পড়ে পরমা সম্পূর্ণ বিস্মিত। এত সুন্দর করে কেউ কারো বায়ো ফুটিয়ে তুলতে পারে তা পরমার আগে জানা ছিল না।

পরমা কোন চিন্তা না করেই আইডিটার টাইমলাইনে ঢুকল। কিন্তু এ কি? যা দেখছে তা কি সত্যি নাকি? টাইমলাইনে কিছু কিছু সাহায্যের আবেদন ছাড়া বাকি সব পোষ্ট ই যে তাকে নিয়ে লেখা। পরমা কিছুই বুঝলনা। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে টাইমলাইনের দিকে তাকিয়ে রইলো।

কিছুদিন থেকেই পরমা লক্ষ্য করেছে তাদের ক্লাসে মেঘ নামের ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু চোখে চোখ পরলেই চোখ সরিয়ে নেয়। এতে পরমা কিছুটা আন্দাজ করলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারলো না। তাই সেদিন বাসায় গিয়ে পরমা অম্বুবাহ নামের অর্থ বের করলো। সে যখন দেখলো অম্বুবাহ মানে মেঘ তখন সে নিশ্চিত হল যে এই মেঘ ছেলেটাই তার প্রেমে পরেছে।

পরমা ভাবে মেঘ ছেলেটা তো একদম হাঁদারাম। সারাদিন বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে রাখে বলে বন্ধুরা সবাই ওকে "আবুল" বলে ডাকে। এতে মেঘের প্রতি তার মায়াই জমত, অন্যকিছু না। কিন্তু মেঘের পোষ্ট গুলো পড়ে মেঘের প্রতি অন্য রকম ভালোলাগা সৃষ্টি হয় পরমার। এই ভালোলাগাই যে কিভাবে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হল সেটা পরমা বুঝতেও পারল না। একদিন পরমা বুঝতে পারল সে মেঘকে ভালবাসে।

কিন্তু মেয়েরা সারাজীবন একই রকম, "বুক ফাঁটে তো, মুখ ফোঁটে না।" পরমা মেঘকে ভালবেসে ফেললেও কারো কাছে প্রকাশ করলো না। শুধুমাত্র তার বেস্ট ফ্রেন্ড অপিকে জানালো।

অপি এই কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তার বন্ধু যে প্রেমে পরছে এতে সে অনেক খুশি হল। অপি পরমাকে বলল, নো টেনশন দোস্ত, আমি আছি না। অপির উপর পরমার আস্থা আছে। অপি অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারে।

এরপর কি হল কেউ জানেনা। হঠাৎ অপি একদিন পরমাকে বলল, দোস্ত কালকে নীল শাড়ি পরে মোহাম্মদপুর তাজমহলের সামনে থাকিস। পরমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অপি চলে গেল।

পরদিন যথাসময়ে পরমা তাজমহলের সামনে গেলো। সেখানে গিয়ে পরমা হতভম্ব হয়ে গেলো। পরমা দেখলো স্বয়ং মেঘ তার জন্য লাল গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে পরমা আবেগ ধরে রাখতে পারলোনা। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরা শুরু হল।

এ কাহিনীর এরকম সুখের সমাপ্তি হলেও পারত। কিন্তু বিধাতা সবসময় মানুষকে সবকিছু দেয় না।

পরদিন পরমা কলেজে এসে যখন অপিকে খুঁজলো তখন তাদের আরেক বন্ধু নুসরাত পরমাকে একটি চিঠি দিল। চিঠিতে লেখা ছিলো:

"দোস্ত আমার একটা স্বপ্ন ছিলো। আমি সে স্বপ্নের পথেই হাঁটছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম আমার সবথেকে কাছের বন্ধু আমার স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়েছে তখন নিজে ইচ্ছে করেই নিজের স্বপ্নটাকে বিসর্জন দিলাম। মন থেকে দোয়া করি, তোরা সুখী হ।

চিঠিটা পড়ে পরমা হু হু করে কেঁদে দিল। নুসরাত ভাবলো কাঁদুক মেয়েটা। কাঁদলে মানুষের মন হাল্কা হয়।

বিষয়: সাহিত্য

১০০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File