রমজান আলোচনাঃ ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ( শেষ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আহ জীবন ২৫ জুলাই, ২০১৪, ০৯:২১:১৭ সকাল

পর্ব - ১

পর্ব - ২

পর্ব - ৩

ওয়াদা পূরণের গুরুত্তের উদাহরনে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি কাহিনী।

নিজেকে যাচাই করার জন্য, এবং ঈমানের বলে বলীয়ান করার জন্য।

হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওয়াদা ও অত্যাচারী শাসক হরমুজান।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

ইসলামী শাসনকালের লৌহমানব হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফতকাল। তখন ইরানের একটি প্রদেশের শাসক ছিলেন হরমুজান। হরমুজান একদিকে যেমন অত্যাচারী অপরদিকে ঘোর ইসলাম বিরোধী। মুসলমানদের সাথে তার লড়াই হতো প্রায়ই। লড়াইয়ে পরাজিত হলেই তিনি বিভিন্ন শর্তে সন্ধী করতেন এবং নিজের রাজ্যে ফিরে যেতেন। কিন্তু এরপর আবার যখনই সুযোগ পেতেন মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করেতেন।

শেষে খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আদেশ দিলেন, হরমুজানকে জীবন্ত ধরে এনে তাঁর মজলিসে হাজির করতে। ইতিমধ্যে এক যুদ্ধে হরমুজান মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। খলীফার হুকুম মোতাবেক তাকে বেঁধে খলীফার দরবারে হাজির করা হলো।

খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে লক্ষ্য করে বললেন,

“আপনি আমাদের সাথে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আর আপনার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই আমাদের বারবার যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। ফলে অসংখ্য মুসলিম সৈন্যকে অযথা প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাদের অর্থ সম্পদ নষ্ট হয়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি আপনি ধ্বংস করেছেন। নিরীহ অনেক লোকের উপর আপনি অন্যায়ভাবে অত্যাচার চালিয়েছেন। আপনাকে আর সুযোগ দেয়া যায় না। আপনার একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পূর্বে আপনার কোন কথা থাকলে বলতে পারেন।”

হরমুজান ছিলেন খুব সূক্ষবুদ্ধির লোক। সুযোগ পেয়ে তিনি একটি ফন্দী আঁটলেন। তিনি বললেন,

“মহানুভব খলীফাতুল মুসলিমিন, আমার বড়ই পিপাসা পেয়েছে, দয়া করে আমাকে একটু পানি পান করতে দিন।”

খলীফার নির্দেশে তাকে একটি পাত্রে পানি পান করতে দেয়া হল। সুচতুর হরমুজান পানির পাত্র হাতে নিয়ে তা পান না করে ভীতু ভীতু ভাব দেখাতে লাগলেন এবং ডানে বামে তাকাতে লাগলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “কি হলো, আপনি পানি পান করছেন না কেন?” তিনি জবাব দিলেন,” আমিরুল মুমিনিন, আমার ভয় হচ্ছে যে, পানিটুকু পান করার আগেই আমাকে হত্যা করে ফেলা হয় কিনা?”

খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “আপনি নির্ভয়ে পান করুন। হাতের পানি পান করার পূর্বে আপনাকে হত্যা করা হবে না। এ ব্যাপারে আপনাকে নিশ্চয়তা দিলাম।”

হরমুজান আমীরুল মুমিনিনের এ কথা শেষ হবার সাথে সাথেই হাতের পানির পাত্রটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, আর বললেন,

“মহামান্য খলীফা, আপনি নিজেই বলেছেন, হাতের পানিটুকু পান করার আগে আমাকে হত্যা করবেন না। আমি পানি ফেলে দিয়েছি, সে পানি আর পান করবো না। ওয়াদা অনুযায়ী আপনিও আমাকে আর হত্যা করতে পারবেন না।”

হরমুজানের এ চাতুরীপূর্ণ কথা শুনে মুসলিম সৈনিকেরা খুব রেগে গিয়ে বললেন, ” আমীরুল মুমিনিন, আপনি অনুমতি দিন আমরা এখনই তার চাতুরীর সাধ মিটিয়ে দেই।তাকে এখনই হত্যা করে ফেলবো।”

কিন্তু খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “না তা হতে পারে না। মুসলমানের কথার মূল্য অনেক। সুতরাং যে কথা আমি বলে ফেলেছি, যেকোন মূল্যে আমি তা রক্ষা করবই ইনশা’আল্লাহ। যেহেতু আমি তাকে বলেছি, তার হাতের পানিটুকু পান করার পূর্বে তাকে আমি হত্যা করব না, আর সে যখন পানি পান করেনি সুতরাং, বন্দী হরমুজানকে হত্যা করা চলবে না।”হরমুজানকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, “যান। আপনি মুক্ত। আমার কথার খেলাফ আমি করবো না।”

কথার কি অদ্ভুত দাম ! ওয়াদা পালনের কি অপূর্ব নযীর। হরমুজান কল্পনাও করতে পারেননি যে, তিনি এত সহজে মুক্তি লাভ করতে পারবেন। খলীফা হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মহানুভবতা দেখে তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত হলেন। তিনি ভাবলেন, এই যদি হয় ইসলামের আদর্শ তবে এর থেকে দূরে থাকা হবে আমার জন্যে চরম দুর্ভাগ্যজনক। ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে তিনি সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করে নিলেন।

এমনিভাবেই যুগে যুগে ইসলামের অতুলনীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

আমরা যেন দায়িত্ববান মুসলিম হতে পারি আল্লাহর কাছে এই মোনাজাত করি

আমার সবগুলো পোস্ট "ছিচকে চোর" ভাইকে উৎসর্গ করলাম। যিনি একই বিষয়ে পোস্ট করার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারনে পোস্ট করতে পারেন নি।

উনি ক্ষমা চেয়েছিলেন।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

248029
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:২৫
ভিশু লিখেছেন : আমীন! খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিকের ওপর কমপ্লিট লেখা! ভালো লাগ্লো!
জাযাকাল্লাহ খাইর ... Praying Praying Praying
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:৩৫
192562
আহ জীবন লিখেছেন : সবই আপনার উৎসাহে। আল্লাহ আপনার এই উদ্যোগের জন্য আপনার দুনিয়া আখিরাতের জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করুন এই দোয়া করি আজ এই পবিত্র দিনে। আমীন। পবিত্র ঈদের আগাম শুভেচ্ছা রইল।
248030
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
দিশারি লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক ভাল লাগলো।
২৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:১০
192769
আহ জীবন লিখেছেন : আপনি আমার ব্লগে প্রথম এলেন। আমার খুব ভাল লাগছে। ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। দোয়া করুন আমরা যেন ওয়াদা সঠিক ভাবে পালন করতে পারি।
248032
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:১৮
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এমনই হওয়া উচিত মুসলমানদের চরিত্র। Rose Rose Rose
২৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:০৬
192765
আহ জীবন লিখেছেন : আপনি এই প্রথম আমার ব্লগে। আমার ভাল লাগছে খুব। অনেক দিন আগে হলেও গেঞ্জাম ভাইয়ের কাছ থেকে জেনেছিলাম আপনি অসুস্থ। তারপর ব্লগে উপস্থিতি দেখে ভেবেছিলাম সুস্থ হয়েছেন নিশ্চয়ই। একটা পোষ্টে জানতে চেয়েছিলাম কেমন আছেন। হয়ত বেস্ততায় চোখ এড়িয়ে গেছে। আজ একই প্রশ্ন- কেমন আছেন? শরীর কেমন আছে?

ঈদের শুভেচ্ছা রইল। ভাল থাকার দোয়া করুন সবার জন্য।
২৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:৩৯
192830
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি। তবে প্রচন্ড ব্যস্ততা যাচ্ছে। গতকাল অফিস হতে ফিরেছি রাত ১১ টায়। ব্যস্ততার দরুণ নফল ইবাদতে ঘাটতি হচ্ছে খুব। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

অগ্রিম ঈদ মোবারক।
248045
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : It is a very interesting story for learning. Mashallah. Jajakalla khair
২৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৫৯
192763
আহ জীবন লিখেছেন : thanks from the inner core of heart for reading the whole series. EID MUBAROK.

বিঃদ্রঃ- আমি ইংরেজি ভাল বলতে পারিনা। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। শিখিয়েও দিতে পারেন।
২৬ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৩১
192826
সন্ধাতারা লিখেছেন : Sorry vhaiya giving comment in English bcoz I can not type bangla in my mobile due to spelling mistakes. Jajakalla
248168
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:১৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
২৬ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
192757
আহ জীবন লিখেছেন : সব গুলো পড়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ। ঈদের শুভেচ্ছা রইল।
259647
৩০ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
মামুন লিখেছেন : আবারো মুগ্ধ হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছা লেখাটির জন্য। Rose Rose Rose
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২০
205152
আহ জীবন লিখেছেন : মামুন ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পড়ার জন্য। কপি পেস্ট গুলোই পড়লেন আমার মৌলিক লিখা ১পর্বটা পড়লে আর ভালো লাগা রেখে গেলে আরও ভালো লাগত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File