রমজান আলোচনাঃ ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। (পর্ব -৩)
লিখেছেন লিখেছেন আহ জীবন ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৯:২৯:৫০ সকাল
পর্ব - ১
পর্ব -২
এটিও নেট ঘেঁটে পাওয়া একটি আর্টিকেল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
একনজরে- বিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর দেয়া ২৫টি ওয়াদা (শেইখ আনওয়ার আল আওলাকি (রঃ) এর লেকচার অবলম্বনে)
বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে ২৫টি ওয়াদা করেছেন। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসী হয়েছেন আল্লাহ তাদের জন্যে কিছু পুরস্কার কিছু সাহায্যের ওয়াদা করেছেন এবং তা অবশ্যই আল্লাহ পুরোন করবেন ।
কারন আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না। (সুরা যুমার আয়াত ২০)
এখন আসুন ঝটপট দেখে নেই আল্লাহর সেই ওয়াদা গুলো কি কি !!
১, জান্নাতের ওয়াদাঃ
আল্লাহ বিশ্বাসীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, আল্লাহ বলেনঃ
“আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।” [সুরা বাকারাঃ২৫]
অর্থাৎ যারা ইমান আনবেন তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত। এইটা আল্লাহর ওয়াদা।
২, নুর বা আলোঃ
হাসরের ময়দানে যখন পুলসিরাত পার করতে বলা হবে তখন থাকবে অন্ধকার , ঘুট ঘুটে অন্ধকার। যদি আল্লাহ আলো না দেন তাহলে সেই পুলসিরাত পার হওয়া হবে অসম্ভব। তাই দুনিয়াতে যারা বিশ্বাসী ছিল বা যারা ইমান এনেছিল তাদের ইমানের আলোই তখন পুলসিরাত পার করতে কাজে লাগবে। এখন যেটা আধ্যাতিক আলো তখন সেইটাই হবে বাহ্যিক আলো। আল্লাহ মুমিনদেরকে সেইদিন তাদের ইমানের আলো দেওয়ার ওয়াদা দিয়েছেন আল্লাহ বলেনঃ
যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।
(সুরা আল হাদিদঃ১২)
৩, আল্লাহ আপনার সাথে থাকবেন
আল্লাহ বলেনঃ
“জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।"
(সুরা আনফালঃ১৯)
যখন আল্লাহ বলেন আল্লাহ বিশ্বাসীদের সাথে আছে, তার মানে হচ্ছে বিশ্বাসীদের আর কারও প্রয়োজন নেই। তাদের জন্যে আল্লাহই যথস্ট।
৪, আল্লাহর অনুগ্রহ আল্লাহর করুনার ওয়াদা করেছেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
"...আল্লাহর মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।"
(সুরা আল ইমরান১৫২)
আল্লাহর দয়া , তার করুনা অসীম। আমরা যে টুকু দয়া বা করুনা পাওয়ার যোগ্য তার থেকে হাজার গুন বেশি অনুগ্রহ আল্লাহ আমাদের প্রতি প্রদর্শন করেন।
৫, আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করার এবং তার বন্ধুত্বের ওয়াদা করেছেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চয়ই ঐ সব লোক ইবরাহীমের নিকটতম যারা তার অনুগামী হয়েছেন আর এই নবী এবং মুমিনগন এবং আল্লাহ তা’আলা বিশ্বাসীগণের বন্ধু।”
(সুরা আল ইমরানঃ৬৮)
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে তিনি বিশ্বাসীদের বন্ধু। সুতরাং আল্লাহর বন্ধুত্বের ওয়াদা পাওয়ার পর একজন বিশ্বাসীর আর কি বা চাওয়ার থাকতে পারে!!!
৬, আল্লাহ তার রহমতের ওয়াদা করেছেন (কারন আল্লাহ হচ্ছেন রাহমান):
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য।”
(সুরা আল-যাসিয়াঃ ৩০)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ওপর তার রহমত বর্ষণ করবেন। আর আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
৭, বিজয়/সফলতাঃ
আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতে বিজয় দানের ওয়াদা করেছেন ।
আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চই আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে।”
(সুরা গাফির আয়াতঃ ৫১)
আল্লাহ আরও বলেনঃ
“...মুমিনদের সাহায্য(বিজয়) করা আমার দায়িত্ব।”
(সুরা আর রুমঃ ৪৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে বিজয়ের ওয়াদা করেছেন । তাই প্রথমে আপাত দৃষ্টিতে সময়িক ভাবে মনে হতে পারে যে বিশ্বাসীরা হেরে যাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেষ পর্যন্ত জয় বিশ্বাসীদেরই হবে। কারন এটা আল্লাহর ওয়াদা।
৮, আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতরের মন্দকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।”
(সুরা আনকাবুতঃ৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতর থেকে মন্দকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন।
কারন জান্নাত হচ্ছে পবিত্র স্থান এবং কোন অপবিত্র ব্যক্তি বা বস্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। জাররাহ পরিমান গুনাহ বা অপবিত্রতা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব। নিজের গুনাহ থেকে সম্পূর্ন বিশুদ্ধ না হয়ে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
আর আল্লাহ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বাসীদেরকে গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করেন আর সেই পদ্ধতি গুলো হলঃ তাওবা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, রোগব্যাধি, কষ্ট, আরো অনেক পরিক্ষার সম্মুক্ষিন করে আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে বিশুদ্ধ করেন।
আল্লাহ বিশ্বাসীদের মধ্যে কতককে এতটাই পছন্দ করেন যে তাদের কারও কারো গুনাহ বা অপরাধ আল্লাহ এই দুনিয়াতে গোপন রাখেন এবং পরকালেও গোপণ রাখবেন।
এই ভাবেই আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতর থেকে মন্দ নিশ্চিহ্ন করবেন।
৯, আল্লাহর ভালোবাসাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালবাসা দেবেন।”
(সুরা মারইয়ামঃ৯৬)
বিশ্বাসীরা আল্লাহর ভালোবাসা পাবেন। এটাও আল্লাহর ওয়াদা
১০, আল্লাহ ওয়াদা করেছেন বিশ্বাসীদের কোন ভালো কাজই বৃথা যাবে নাঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।”
(সুরা কাহাফঃ৩০)
মাঝে মাঝে মনে হয় যে সব কাজ বৃথা হয়ে যাচ্ছে তাই না। ধরেন দাওয়ার কাজ করতে অনেক সময়ই মনে হতে পারে যে নষ্ট হচ্ছে। কেউ কথা শুনছে না অথবা দাওয়ার ফলে কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। সেই সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ মুমিনদের কোন কাজকেই বৃথা যেতে দিবে না। এবং আপনার এই দাওয়ার কাজের পুরষ্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে।
১১, শয়তান থেকে সুরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।”
(সুরা নাহলঃ৯৯)
আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে আল্লাহ শয়তানের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেন।
১২, অবিচল, দৃঢ় তার ওয়াদাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“আল্লাহ তা আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।”
(সুরা ইবরাহিমঃ২৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ওয়াদা করেছেন যে আল্লাহ তাদেরকে জীবনের পথে দৃঢ়তা দান করবেন। এবং সিরাতুল মুস্তাকিমে অবিচল রাখবেন।
১৩, একটা ভালো সমাপ্তিঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল�� �”
(সুরা রা’আদঃ২৯)
আল্লাহ মুমিনদের বা বিশ্বাসীদের একটা সুন্দর সমাপ্তির ওয়াদা করেছেন, সুতরাং জীবনে যত বন্থুর পথ পারি দিতে হোক না কেন একজন বিশ্বাসী হলে তার শেষটা হবে চমৎকার এবং সুখের।
১৪, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নেই নিজের রসূলগণকে এবং তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এমনিভাবে। ঈমানদারদের বাঁচিয়ে নেয়া আমার দায়িত্বও বটে।
(সুরা ইউনুসঃ১০৩)
সুতরাং যদি কোন ইমানদার বিপদে পতিত হয় তাহলে আল্লাহ তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। যেমন ইউনুস (আঃ) যখন মাছের পেটে ছিলেন। এই ভয়ংকর বিপদে তিনি একমাত্র আল্লাহকে স্মরন করলেন তার কাছে সাহায্য চাইলেন এবং আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন।
১৫, পথ প্রদর্শন(হিদায়াহ) :
আল্লাহ বলেনঃ
অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে। এমন সুসময় কানন-কুঞ্জের প্রতি যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ।
(সুরা ইউনুসঃ৯)
এবং মুমিনদের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল আল্লাহর দেয়া এই গাইডেন্স বা হিদায়াত। দুনিয়ার জীবনে সরল পথে থাকাটাই বিশ্বাসীদের জন্যে সবার্থকতা আর আল্লাহর ওয়াদা আছে যে তিনি মুমিনদেরকে পথ পদর্শন করবেন।
১৬, আল্লাহ বরকত দেয়ার ওয়াদা করেছেনঃ
“আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।”
(সুরা আল আরাফঃ৯৬)
শুধু মাত্র দুনিয়ার ভালোর জন্যে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মটেই সমিচিন নয় বরং দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা করে আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই মুমিনদের কাজ।
আর আল্লাহ তা’আলা ইমানদার দের প্রত্যেক ভালো কাজে বরকত দিয়ে দেন। কারন এইটা আল্লাহর ওয়াদা।
১৭, শান্তি এবং সুরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।”
(সুরা আল আনামঃ৮২)
বিশ্বাসীদের জন্যে আল্লাহ শান্তির ওয়াদা করেছেন। এবং হৃদয়ের এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি দেয়ার মালিক এক মাত্র আল্লহ।
বদরের যুদ্ধে যখন প্রায় ৩১৩ জন নিয়ে প্রায় ১০০০ সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মোকাবেলা করতে হয়েছিল তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়ে প্রশান্তি (সাকিনাহ) দিয়ে দেন এবং যুদ্ধের আগে তাদের সবার চখে পরসান্তির ঘুম এনে দেন। এইভাবেই আল্লাহ মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন।
১৮, আল্লাহর ক্ষমাঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
(সুরা মায়েদাঃ৯)
মানুষের জন্যে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজনিয় তা হল আল্লাহর ক্ষমা। আর সেই সৌভাগ্যবান যাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন , আর মুমিনদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।
১৯, আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রাপ্য পরিপূর্ন রূপে বুঝিয়ে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
(সুরা আল ইমরানঃ৫৭)
২০, ভয় – দুঃখ , দুর্দশা দূর করে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
(সুরা বাকারাঃ২৭৭)
২১, আল্লাহ অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
(সুরা বাকারাঃ২৫৭)
২২, আল্লাহ কখনই কাফিরদেরকে সম্পুর্নরূপে মুমিনদের ওপর প্রতিপত্তি বিস্তার করতে দেবেন নাঃ
কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।
(সুরা নিসাঃ১৪১)
এখন আমাদের একটু চিন্তা করার সময় এসেছে। কাফেররা আংশিক ভাবে সাময়িক সময়ের জন্যে বিজয়ের স্বাদ পেলেও প্রকৃত বিজয় কিন্তু হবে বিশ্বাসীদেরই।
২৩, প্রতিরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
(সুরা হজঃ৩৮)
আল্লাহ তার বিশ্বাসীবান্দাদে�� �কে প্রতিরক্ষার ওয়াদা দিয়েছেন।
২৪, একটা ভালো ও সুন্দর জীবনঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।
(সুরা নাহলঃ৯৭)
বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ একটি সুন্দর জীবন প্রদান করেন। অনেকেই বোকার মত বাহ্যিক অবস্থা দেখে জীবনের ভালো খারাপ বিচার করতে যায় যেটা বোকামি। আল্লাহ মুমিনদেরকে ধনি করুক বা দরিদ্র –তারা সব সময় সর্ব ক্ষেত্রেই শান্তির একটা জীবন লাভ করেন।
২৫, বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।
(সুরা –আন নুর আয়াত ৫৫)
আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন মুমিনদেরকেই আল্লাহ দুনিয়ার কর্তৃত্ব দেবেন।
সুতরাং একজন বিশ্বাসী আল্লাহর কাছ থেকে উপরোক্ত প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা পেয়ে থাকে। এবং আল্লাহ কখনই তার প্রতিশ্রুতির ব্যাতিক্রম করে না।
আচ্ছা আল্লাহ তো আল্লাহর ওয়াদা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা কি তার এই ওয়াদা গ্রহন করার জন্যে প্রস্তুত বা আমরা কি সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি বা পারছি??
আল্লাহ আমাদের সবাই কে মুমিন হিসেবে জীবিত রাখুন এবং মুমিন হিসেবেই মৃত্যু দিন। এবং বিনা হিসেবে জান্নাত দিন বারযাখের জীবনকে সুখের করুন। আমিন।
আজ এই পর্যন্তই। আসসালামুয়ালাইকুম।
আগামীকাল ওমর (রাঃ) একটি ঘটনা দিয়ে পর্ব শেষ করব।
এটিও নেট ঘেঁটে পাওয়া একটি আর্টিকেল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
একনজরে- বিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর দেয়া ২৫টি ওয়াদা (শেইখ আনওয়ার আল আওলাকি (রঃ) এর লেকচার অবলম্বনে)
বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে ২৫টি ওয়াদা করেছেন। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসী হয়েছেন আল্লাহ তাদের জন্যে কিছু পুরস্কার কিছু সাহায্যের ওয়াদা করেছেন এবং তা অবশ্যই আল্লাহ পুরোন করবেন ।
কারন আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না। (সুরা যুমার আয়াত ২০)
এখন আসুন ঝটপট দেখে নেই আল্লাহর সেই ওয়াদা গুলো কি কি !!
১, জান্নাতের ওয়াদাঃ
আল্লাহ বিশ্বাসীদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, আল্লাহ বলেনঃ
“আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।” [সুরা বাকারাঃ২৫]
অর্থাৎ যারা ইমান আনবেন তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত। এইটা আল্লাহর ওয়াদা।
২, নুর বা আলোঃ
হাসরের ময়দানে যখন পুলসিরাত পার করতে বলা হবে তখন থাকবে অন্ধকার , ঘুট ঘুটে অন্ধকার। যদি আল্লাহ আলো না দেন তাহলে সেই পুলসিরাত পার হওয়া হবে অসম্ভব। তাই দুনিয়াতে যারা বিশ্বাসী ছিল বা যারা ইমান এনেছিল তাদের ইমানের আলোই তখন পুলসিরাত পার করতে কাজে লাগবে। এখন যেটা আধ্যাতিক আলো তখন সেইটাই হবে বাহ্যিক আলো। আল্লাহ মুমিনদেরকে সেইদিন তাদের ইমানের আলো দেওয়ার ওয়াদা দিয়েছেন আল্লাহ বলেনঃ
যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।
(সুরা আল হাদিদঃ১২)
৩, আল্লাহ আপনার সাথে থাকবেন
আল্লাহ বলেনঃ
“জেনে রেখ আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।"
(সুরা আনফালঃ১৯)
যখন আল্লাহ বলেন আল্লাহ বিশ্বাসীদের সাথে আছে, তার মানে হচ্ছে বিশ্বাসীদের আর কারও প্রয়োজন নেই। তাদের জন্যে আল্লাহই যথস্ট।
৪, আল্লাহর অনুগ্রহ আল্লাহর করুনার ওয়াদা করেছেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
"...আল্লাহর মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।"
(সুরা আল ইমরান১৫২)
আল্লাহর দয়া , তার করুনা অসীম। আমরা যে টুকু দয়া বা করুনা পাওয়ার যোগ্য তার থেকে হাজার গুন বেশি অনুগ্রহ আল্লাহ আমাদের প্রতি প্রদর্শন করেন।
৫, আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করার এবং তার বন্ধুত্বের ওয়াদা করেছেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চয়ই ঐ সব লোক ইবরাহীমের নিকটতম যারা তার অনুগামী হয়েছেন আর এই নবী এবং মুমিনগন এবং আল্লাহ তা’আলা বিশ্বাসীগণের বন্ধু।”
(সুরা আল ইমরানঃ৬৮)
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলছেন যে তিনি বিশ্বাসীদের বন্ধু। সুতরাং আল্লাহর বন্ধুত্বের ওয়াদা পাওয়ার পর একজন বিশ্বাসীর আর কি বা চাওয়ার থাকতে পারে!!!
৬, আল্লাহ তার রহমতের ওয়াদা করেছেন (কারন আল্লাহ হচ্ছেন রাহমান):
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য।”
(সুরা আল-যাসিয়াঃ ৩০)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ওপর তার রহমত বর্ষণ করবেন। আর আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
৭, বিজয়/সফলতাঃ
আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাতে বিজয় দানের ওয়াদা করেছেন ।
আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চই আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে।”
(সুরা গাফির আয়াতঃ ৫১)
আল্লাহ আরও বলেনঃ
“...মুমিনদের সাহায্য(বিজয়) করা আমার দায়িত্ব।”
(সুরা আর রুমঃ ৪৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে বিজয়ের ওয়াদা করেছেন । তাই প্রথমে আপাত দৃষ্টিতে সময়িক ভাবে মনে হতে পারে যে বিশ্বাসীরা হেরে যাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেষ পর্যন্ত জয় বিশ্বাসীদেরই হবে। কারন এটা আল্লাহর ওয়াদা।
৮, আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতরের মন্দকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।”
(সুরা আনকাবুতঃ৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতর থেকে মন্দকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন।
কারন জান্নাত হচ্ছে পবিত্র স্থান এবং কোন অপবিত্র ব্যক্তি বা বস্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। জাররাহ পরিমান গুনাহ বা অপবিত্রতা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব। নিজের গুনাহ থেকে সম্পূর্ন বিশুদ্ধ না হয়ে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
আর আল্লাহ কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্বাসীদেরকে গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করেন আর সেই পদ্ধতি গুলো হলঃ তাওবা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, রোগব্যাধি, কষ্ট, আরো অনেক পরিক্ষার সম্মুক্ষিন করে আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে বিশুদ্ধ করেন।
আল্লাহ বিশ্বাসীদের মধ্যে কতককে এতটাই পছন্দ করেন যে তাদের কারও কারো গুনাহ বা অপরাধ আল্লাহ এই দুনিয়াতে গোপন রাখেন এবং পরকালেও গোপণ রাখবেন।
এই ভাবেই আল্লাহ বিশ্বাসীদের ভেতর থেকে মন্দ নিশ্চিহ্ন করবেন।
৯, আল্লাহর ভালোবাসাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদেরকে দয়াময় আল্লাহ ভালবাসা দেবেন।”
(সুরা মারইয়ামঃ৯৬)
বিশ্বাসীরা আল্লাহর ভালোবাসা পাবেন। এটাও আল্লাহর ওয়াদা
১০, আল্লাহ ওয়াদা করেছেন বিশ্বাসীদের কোন ভালো কাজই বৃথা যাবে নাঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।”
(সুরা কাহাফঃ৩০)
মাঝে মাঝে মনে হয় যে সব কাজ বৃথা হয়ে যাচ্ছে তাই না। ধরেন দাওয়ার কাজ করতে অনেক সময়ই মনে হতে পারে যে নষ্ট হচ্ছে। কেউ কথা শুনছে না অথবা দাওয়ার ফলে কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। সেই সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ মুমিনদের কোন কাজকেই বৃথা যেতে দিবে না। এবং আপনার এই দাওয়ার কাজের পুরষ্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে।
১১, শয়তান থেকে সুরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।”
(সুরা নাহলঃ৯৯)
আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে আল্লাহ শয়তানের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেন।
১২, অবিচল, দৃঢ় তার ওয়াদাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“আল্লাহ তা আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।”
(সুরা ইবরাহিমঃ২৭)
আল্লাহ বিশ্বাসীদের ওয়াদা করেছেন যে আল্লাহ তাদেরকে জীবনের পথে দৃঢ়তা দান করবেন। এবং সিরাতুল মুস্তাকিমে অবিচল রাখবেন।
১৩, একটা ভালো সমাপ্তিঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল�� �”
(সুরা রা’আদঃ২৯)
আল্লাহ মুমিনদের বা বিশ্বাসীদের একটা সুন্দর সমাপ্তির ওয়াদা করেছেন, সুতরাং জীবনে যত বন্থুর পথ পারি দিতে হোক না কেন একজন বিশ্বাসী হলে তার শেষটা হবে চমৎকার এবং সুখের।
১৪, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নেই নিজের রসূলগণকে এবং তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এমনিভাবে। ঈমানদারদের বাঁচিয়ে নেয়া আমার দায়িত্বও বটে।
(সুরা ইউনুসঃ১০৩)
সুতরাং যদি কোন ইমানদার বিপদে পতিত হয় তাহলে আল্লাহ তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। যেমন ইউনুস (আঃ) যখন মাছের পেটে ছিলেন। এই ভয়ংকর বিপদে তিনি একমাত্র আল্লাহকে স্মরন করলেন তার কাছে সাহায্য চাইলেন এবং আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন।
১৫, পথ প্রদর্শন(হিদায়াহ) :
আল্লাহ বলেনঃ
অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে। এমন সুসময় কানন-কুঞ্জের প্রতি যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ।
(সুরা ইউনুসঃ৯)
এবং মুমিনদের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল আল্লাহর দেয়া এই গাইডেন্স বা হিদায়াত। দুনিয়ার জীবনে সরল পথে থাকাটাই বিশ্বাসীদের জন্যে সবার্থকতা আর আল্লাহর ওয়াদা আছে যে তিনি মুমিনদেরকে পথ পদর্শন করবেন।
১৬, আল্লাহ বরকত দেয়ার ওয়াদা করেছেনঃ
“আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।”
(সুরা আল আরাফঃ৯৬)
শুধু মাত্র দুনিয়ার ভালোর জন্যে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মটেই সমিচিন নয় বরং দুনিয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা করে আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই মুমিনদের কাজ।
আর আল্লাহ তা’আলা ইমানদার দের প্রত্যেক ভালো কাজে বরকত দিয়ে দেন। কারন এইটা আল্লাহর ওয়াদা।
১৭, শান্তি এবং সুরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।”
(সুরা আল আনামঃ৮২)
বিশ্বাসীদের জন্যে আল্লাহ শান্তির ওয়াদা করেছেন। এবং হৃদয়ের এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি দেয়ার মালিক এক মাত্র আল্লহ।
বদরের যুদ্ধে যখন প্রায় ৩১৩ জন নিয়ে প্রায় ১০০০ সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মোকাবেলা করতে হয়েছিল তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়ে প্রশান্তি (সাকিনাহ) দিয়ে দেন এবং যুদ্ধের আগে তাদের সবার চখে পরসান্তির ঘুম এনে দেন। এইভাবেই আল্লাহ মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন।
১৮, আল্লাহর ক্ষমাঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
(সুরা মায়েদাঃ৯)
মানুষের জন্যে যেটা সবচেয়ে প্রয়োজনিয় তা হল আল্লাহর ক্ষমা। আর সেই সৌভাগ্যবান যাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন , আর মুমিনদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।
১৯, আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রাপ্য পরিপূর্ন রূপে বুঝিয়ে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
(সুরা আল ইমরানঃ৫৭)
২০, ভয় – দুঃখ , দুর্দশা দূর করে দেবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।
(সুরা বাকারাঃ২৭৭)
২১, আল্লাহ অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
“যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
(সুরা বাকারাঃ২৫৭)
২২, আল্লাহ কখনই কাফিরদেরকে সম্পুর্নরূপে মুমিনদের ওপর প্রতিপত্তি বিস্তার করতে দেবেন নাঃ
কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।
(সুরা নিসাঃ১৪১)
এখন আমাদের একটু চিন্তা করার সময় এসেছে। কাফেররা আংশিক ভাবে সাময়িক সময়ের জন্যে বিজয়ের স্বাদ পেলেও প্রকৃত বিজয় কিন্তু হবে বিশ্বাসীদেরই।
২৩, প্রতিরক্ষাঃ
আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
(সুরা হজঃ৩৮)
আল্লাহ তার বিশ্বাসীবান্দাদে�� �কে প্রতিরক্ষার ওয়াদা দিয়েছেন।
২৪, একটা ভালো ও সুন্দর জীবনঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।
(সুরা নাহলঃ৯৭)
বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ একটি সুন্দর জীবন প্রদান করেন। অনেকেই বোকার মত বাহ্যিক অবস্থা দেখে জীবনের ভালো খারাপ বিচার করতে যায় যেটা বোকামি। আল্লাহ মুমিনদেরকে ধনি করুক বা দরিদ্র –তারা সব সময় সর্ব ক্ষেত্রেই শান্তির একটা জীবন লাভ করেন।
২৫, বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করবেনঃ
আল্লাহ বলেনঃ
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।
(সুরা –আন নুর আয়াত ৫৫)
আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন মুমিনদেরকেই আল্লাহ দুনিয়ার কর্তৃত্ব দেবেন।
সুতরাং একজন বিশ্বাসী আল্লাহর কাছ থেকে উপরোক্ত প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা পেয়ে থাকে। এবং আল্লাহ কখনই তার প্রতিশ্রুতির ব্যাতিক্রম করে না।
আচ্ছা আল্লাহ তো আল্লাহর ওয়াদা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা কি তার এই ওয়াদা গ্রহন করার জন্যে প্রস্তুত বা আমরা কি সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি বা পারছি??
আল্লাহ আমাদের সবাই কে মুমিন হিসেবে জীবিত রাখুন এবং মুমিন হিসেবেই মৃত্যু দিন। এবং বিনা হিসেবে জান্নাত দিন বারযাখের জীবনকে সুখের করুন। আমিন।
আজ এই পর্যন্তই। আসসালামুয়ালাইকুম।
আগামীকাল ওমর (রাঃ) একটি ঘটনা দিয়ে পর্ব শেষ করব।
শেষ পর্ব
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল থাকবেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন