রমজান আলোচনাঃ ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। (পর্ব – ১)
লিখেছেন লিখেছেন আহ জীবন ২২ জুলাই, ২০১৪, ০৯:২৬:২৮ সকাল
প্রথমেই সবার প্রতি রইল মাহে রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা। আর ক্ষমা চাইছি এত দেরিতে পোস্ট করার জন্য। ভিশু ভাই বিষয় যখন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তখন মহা উৎসাহী হয়েছিলাম আমিও কিছু লিখতে পারব এই আশায়। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলাম কিছুই জানি না। তবুও ভাবনা গুলো জানাব। নেট ঘেঁটে যা পেয়েছি তাও জানাব।
প্রথমেই বলে রাখি আমি বিজ্ঞ কেউ নই। আমার সল্প জ্ঞানে যা বুঝি তাই আপনাদের সামনে পেশ করলাম। আমার নিয়ত আপনাদের জানানো যা আমি বুঝি। এর বাইরে কিছু নাই। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা। আমার লিখার সাথে অনেকেই দ্বিমত হতেই পারেন। আলোচনার জন্য সাদর আমন্ত্রন কোন বিতর্ক নয়। যে কেউই আমার ভুল ত্রুটি সংশোধন করে আমাকে ভুলের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনবেন এই আশা করি আমি সব ব্লগার ভাই বোনের কাছ থেকে।
ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি কি? সহজ ভাষায় কাউকে কোন কিছু বলে দেওয়া, করে দেওয়া ইত্তাদির জন্য কথা দেওয়াকেই ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি বলে। সংজ্ঞা এটুকুই। এর ব্যাপকতা হচ্ছে গুরুত্তে। এর গুরুত্ব শুধু মাত্র বেক্তি জীবনে নয় পারবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনেও ব্যাপক। ধর্মীয় গুরুত্ব তো আছেই। ধর্মীয় গুরুত্ব হচ্ছে সহজ ভাষায় এটি একটি ইবাদত। ওয়াদা পালন করতে হবে ইবাদত মনে করে। ধর্মীয় গুরুত্তের অন্যতম দিক হচ্ছে ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফিকের সাথে তুলনা।
আমি আমার মত করে বলছি ভুল ত্রুটি শুধরে দিবেন।
আগেই বলেছি ওয়াদা ইবাদত মনে করে পালন করতে হবে। ইবাদত সম্পর্কে একটু বলি। ইবাদত দু প্রকার। ১> হাক্কুল্লাহ ২> হাক্কুল ইবাদ। হাক্কুল্লাহ হচ্ছে আল্লাহর সম্পর্কিত ইবাদত। যেমন- নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি। উদ্দেশ্য আল্লাহকে রাজি খুশী ও আনুগত্য লাভের জন্য। আর মানুষে মানুষে সম্পর্কিত ইবাদত হাক্কুল ইবাদ। যেমন ওয়াদা রক্ষা করা, সুন্দর ব্যাবহার, সাহায্য সহযোগিতা করা ইত্যাদি। উদ্দেশ্য অপরের কাছ থেকে ভাল ব্যাবহার প্রাপ্তি, সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হওয়া ইত্যাদি। তবে আমার মতে এটাকে উদ্দেশ্য হিসেবে না দেখে ফলাফল হিসেবে দেখাই ভাল। আমাদের সকল কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করা ও আনুগত্য লাভ করা। হাক্কুল ইবাদ ধর্মের সৌন্দর্য। যেটা প্রকাশ পায় ভাল ব্যাবহারে। হাক্কুল ইবাদ আল্লাহর রাহে সমগ্র মানব জাতির জন্য। ওয়াদা রক্ষা করা আপনার চরিত্র সংশোধন করে।
ওয়াদার প্রকারভেদঃ ওয়াদার এমন কোন প্রকার ভেদ নেই। হযরত মাওলানা তকি উসমানীর “মিথ্যা ওয়াদা ভঙ্গ ও খেয়ানতের বিভিন্ন রুপ “ বইটি পড়েছি ওখানেও কোন প্রকারভেদ পাইনি। তবে আমার কাছে মনে হল এভাবে প্রকারভেদ করা যায় কিনা কমেন্ট করে জানাবেন। আমি তিন ভাগে ভাগ করেছি।
১> আল্লাহর সাথে ওয়াদা (তওবা)।
২> মানুষে মানুষে ওয়াদা (ওয়াদা)।
৩> নিজের সাথে নিজের ওয়াদা (প্রতিজ্ঞা)
১> আল্লাহর সাথে ওয়াদা (তওবা)- আল্লাহর সাথে ওয়াদা ইসলাম গ্রহনের পর পরই শুরু হয়ে যায়। যেটা কলেমা পাঠ করার মাধ্যমে শুরু। আল্লাহর দেওয়া বিধি বিধান মেনে চলবো। এটা আল্লাহর সাথে ওয়াদা। এটা প্রাথমিক অবস্থা। এর গুরুত্ব ও ব্যাপকতা প্রত্যেকটা মুসলিম নর নারীর সমগ্র জীবনটাই। কিন্তু তারপর ও আমরা ভুল করি। তাই বলে ফিরে আসার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। তওবা হচ্ছে সেই দরজা। তওবা করার সময় যে বিষয়ে তওবা করছি সেটার পুনরাব্রিতি সজ্ঞানে ঘটাবো না এটাই তওবার শর্ত। এই শর্তটাই আল্লাহর সাথে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি। তওবা করলে আল্লাহ খুশি হন । তাই বলে ইচ্ছাকৃত বার বার ভুল ক্ষমা যোগ্য নয়। এতে আল্লাহর দয়া কে হেয় করা হয়। এর উদাহরন নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন। আর ওয়াদার এই অংশ টুকু আমার মনে হয় হাক্কুল্লাহ। ওয়াদা পালনে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয় রহমত নাজিল হয়।
২> মানুষে মানুষে ওয়াদা (ওয়াদা)ঃ প্রচলিত ভাবে আমরা এই ওয়াদা কেই ওয়াদা বুঝি। কাউকে কিছু দিব, করে দিব, বলে দিব ইত্যাদি এই ওয়াদা। এর গুরুত্ব একজন মানুষের সমগ্র জীবনটাই। এই ওয়াদাতে লুকিয়ে আছে বেক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সৌন্দর্য। ধর্মীয় সৌন্দর্যের সবছেয়ে চরমতম উৎকর্ষ সৌন্দর্য ওয়াদা। কারন কাল কি হবে তা কেউ জানেনা। আপনি কথা দিয়েছেন তাই কথা রাখতেই হবে একজন মুমিন হিসেবে। আর এজন্য আপনাকে বিরাট কোন ক্ষতি স্বীকার করতে হতে পারে বা নাও হতে পারে। কিন্তু সব ধরনের কষ্ট স্বীকার করে অপর একজন মানুষের ওয়াদা রক্ষা করা এটা একটা সাহসের এবং সম্মানের ব্যাপার। এই ওয়াদা একজন মানুষের সাথে অপর একজন মানুষের হতে পারে , একজন মানুষের সাথে একটা সমাজ বা রাষ্ট্রের হতে পারে। একটা রাষ্ট্রের সাথে অপর একটি রাষ্ট্রের হতে পারে। ওয়াদা পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসা সহানুভুতি বৃদ্ধি করে। অন্যায় হতে দূরে রাখে। এ অংশটুকু হাক্কুল ইবাদ বলে মনে করি। এতে আল্লাহর রহমত নাজিল হয় বেক্তি এবং সমষ্টির উপর।
৩> নিজের সাথে নিজের ওয়াদা (প্রতিজ্ঞা)ঃ ওয়াদার গুরুত্ব এমনিতেই অপরিসীম। তার ভিতর আমি মনে করি নিজের সাথে নিজের ওয়াদা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেন (তওবা) বা মানুষের সাথে ওয়াদা করেন(ওয়াদা) আপনার নিজেকেই করতে হবে। নিজে যদি নিজের কাছে দায়বদ্ধ না হন তাহলে কোন ওয়াদার প্রতিই আপনার কোন রুপ দায়বদ্ধতা, প্রেরনা বা উৎসাহ মনোবল আসবেনা। তওবা করলেন বা ওয়াদাই করলেন নিজেকে নিজে বলতে হবে আমাকেই করতে হবে। এই বলাটাই নিজের প্রতি নিজের ওয়াদা। এই অংশটাই আপনার বেক্তিত্ত গড়ে দেয়। সাহস বৃদ্ধি করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, দায়িত্ব নিতে শেখায়, দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করে। সেই সাথে এর বরখেলাপ নিজেকে ভাঙ্গে, হীনমন্যতা সৃষ্টি করে, আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, দীর্ঘসূত্রিতায় আবদ্ধ করে, পলায়ন মনোবৃত্তি তৈরি করে। সর্বোপরি নিজের সাথে নিজের অন্যায় করা শিখাবে, গোপন পাপে উদ্বুদ্ধ করাবে। মনের খারাপ অংশ আপনাকে নিয়ন্ত্রন করবে। সর্বশেষে খারাপকে আর খারাপ মনে হবে না। পজিটিভ দিকগুলো যেমন সময় নিয়ে ঘটবে তেমনি নেগেটিভ দিকগুলোও সময় নিয়ে ঘটবে। আর এগুলো ঘটবে খুব ছোট ছোট বিষয় দিয়ে। পজিটিভ কোন কারনে নামাজ এক রাকাত মিস করলেন । প্রথন দিন নিজেকে বুঝাতে পারলেন কিন্তু কনটিনিউ হয়ে গেলেই ওই রাকাত মিস করা কোন ব্যাপার মনে হবে না। নিজের কাছে নিজের পতনের শুরু এভাবেই। যদি ভাবতে পারেন “ছোট ছোট বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে উঠে মহাদেশ সাগর অতল”। পজিটিভ যেমন গড়ে তেমনি নেগেটিভ কি গড়তে পারেনা?
আজ আর নয়। তবে যাওয়ার আগে কয়েকটি কথা। ওয়াদা যার সাথেই করেন না কেন কয়েকটি ব্যাপার মনে রাখবেন-
১। নিয়ত যেন সহি হয়।
২। আল্লাহর রাহে আল্লাহর ওয়াস্তে করবেন।
৩। কথা দেওয়ার আগে “ইনশাল্লাহ” বলবেন।
৪। কথা দেওয়ার আগে নিজের সামর্থ্য যাচাই করে নিবেন।
৫। চিন্তা ভাবনা করে কথা দিবেন যাতে ইসলামের কোনোরূপ ক্ষতি না হয়। ক্ষতি হয় এমন কথা দেবেন না।
৬। যদি সামরথে না থাকে বা ইচ্ছা না হয় (অন্য কোন কারন ও থাকতে পারে) তবে বিনীত ভাবে ক্ষমা চেয়ে অপারগতা প্রকাশ করুন। রুঢ় ভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন না।
৭। কথা দিয়ে না রাখতে পারলে বিনীত ভাবে অক্ষমতা প্রকাশ করে ক্ষমা ছেয়ে নিন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। দোয়া করুন।
আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।
পর্ব - ২
পর্ব - ৩
শেষ পর্ব
বিষয়: বিবিধ
২৩৫৫ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা অনুরুধ প্রকারভেদ গুলো নিয়ে ছিন্তা ভাবনা করবেন।
আল্লাহ আমাদের ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার তৌফিক দান করুন ।আমীন ।
আগাম ঈদের শুভেচ্ছা রইল --ঈদ মোবারক ।
একটা অনুরুধ প্রকারভেদ গুলো নিয়ে ছিন্তা ভাবনা করবেন।
একটা অনুরুধ প্রকারভেদ গুলো নিয়ে ছিন্তা ভাবনা করবেন।
একটা অনুরুধ প্রকারভেদ গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন।
নিজের যা ভাবনা ছিল এতটুকুই। এবার নেট থেকে পাওয়া গুলো জানাব।
একটা অনুরুধ প্রকারভেদ গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ওযাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করু্ন। আপনার সুন্দর আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
হা ঠিকই বলেছেন। কেমন যেন "নদীর এইকুল গড়ে ওইকুল ভাঙ্গার মত"।
নদীর এইকুল গড়ে ওইকুল ভাঙ্গার মত.........
আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম আমাদের করা যেখানে অত্যাবশ্যক সেখানে আমরা ভাঙ্গছি অনায়েসে। আর ওরা সেটা করছে প্রান দিয়ে।
আমার কাছে যে তীর আছে সেটা বড় কথা নয়, তীরটি আমি সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে লক্ষ্যভেদ করতে পারছি কিনা সেটাই বড় ব্যাপার। রাগ করবেননা। মনে আছে আপনার একটি পোস্ট এ উদাহরন সৃষ্টির ব্যাপারে একটি মন্তব্য করেছিলাম। আমি নিজের ক্ষেত্রে ও একই ভয় পাচ্ছি।
আপনার লেখার সর্বশেষ ৭টি পয়েন্ট মেনে চলার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ এবং অন্যদেরকে এটি জানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবো।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন