বঙ্গাব্দ ১৪২১ : মঙ্গল শোভা যাত্রায় উত্তাল ঢাকা, এবারের স্লোগান- জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’।

লিখেছেন লিখেছেন খেলাঘর বাধঁতে এসেছি ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৫৭:১৫ সকাল



চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা- নববর্ষের প্রধান বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের এবারের স্লোগান ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’।

চারদিকে আজ সাজ সাজ রব। লাল-সাদা পোশাকের সমাহার। বাজছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে ভেঁপু। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাসে। ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা, বয়সনির্বিশেষে সব মানুষ শামিল হয়েছেন বৈশাখী উৎসবে। ভেদাভেদ ভুলে উৎসবের রঙে ১৪২১ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি।

রাজধানীর রমনার বটতলায় আজ সোমবার ভোর ছয়টার কিছু পর ছায়ানট আয়োজন করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ‘স্বদেশ ও সম্প্রীতি’।

ভোর থেকেই রাজধানীর পথে পথে নেমেছে উত্সবমুখর নগরবাসীর ঢল। চারুকলা, রমনা, টিএসসি লোকে লোকারণ্য। নারীদের পরনে সুতির শাড়ি। হাতে কাচের চুড়ি। কবরীতে তাজা ফুলের মালা। পুরুষদের রঙিন পাঞ্জাবি।

পথের পাশে বসেছে লোকজ খেলনা, কারুপণ্যের পসরা। চলছে কেনাকাটা।

প্রকৃতিও সেজেছে নবরূপে। গাছে গাছে নতুন পাতা। চকচক করছে প্রখর রোদে।

চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা সকাল নয়টায়। নববর্ষের প্রধান বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের এবারের স্লোগান ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’।

শিশুপার্কের সামনে নারকেলবীথি চত্বরে সকালে রয়েছে ঋষিজের গানের অনুষ্ঠান। ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ধানমন্ডি ক্লাবের আয়োজনে বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে ভোর ছয়টায়।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ধানমন্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে তিন দিনের অনুষ্ঠান। সুরের ধারার আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে গতকাল, আজ সকালে সহস্র কণ্ঠের গানে গানে আবাহন জানানো হয়েছে নতুন বছরকে। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ‘আমাদের বাংলা শোভাযাত্রা’ শীর্ষক মঙ্গল শোভাযাত্রা করছে ইউডা।

শিল্পকলা একাডেমিতে তাদের প্রাঙ্গণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মঙ্গল শোভাযাত্রা সকাল সাড়ে নয়টায়।

সারগাম ললিতকলা একাডেমির আয়োজনে গানের অনুষ্ঠান সকাল আটটায় ধানমন্ডি লেকের পাশে। জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সকাল নয়টা থেকে শুরু হবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সঙ্গে থাকবে বিশেষ ভোজ। বৈশাখী মেলা শুরু হবে বিসিক ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে একাডেমি প্রাঙ্গণে, মেলা চলবে ১০ দিন।চারুকলা অনুষদের সামনে আজ মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। ছবি: মনিরুল আলম

ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক যুগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। সম্রাট আকবর ফসলি সন হিসেবে বৈশাখ মাসকে প্রথম ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন। বৈশাখ মাস থেকে বাংলায় প্রথম খাজনা আদায় করা শুরু করেন নবাব মুর্শিদকুলি খান। জমিদারি আমলে পয়লা বৈশাখের প্রধান আয়োজন ছিল খাজনা আদায় উপলক্ষে ‘রাজপুণ্যাহ’ ও ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’। জমিদারি প্রথা বিলোপের পর ‘রাজপুণ্যাহ’ লুপ্ত হয়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেনেও আসে পরিবর্তন। হালখাতাও জৌলুস হারিয়ে ফেলে। ইদানীং নাগরিক জীবনে যে সাংস্কৃতিক চেতনায় পয়লা বৈশাখের উত্সব হচ্ছে, তা প্রবর্তনের কৃতিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনিই প্রথম শান্তিনিকেতনে ঋতুভিত্তিক উত্সবের আয়োজন করেন। এর অংশ হিসেবে বৈশাখ বরণের উত্সবের জন্য বাংলা নতুন বছরকে সম্ভাষণ জানিয়ে রচনা করেছেন বহু কালজয়ী সংগীত ও কবিতা। বাঙালির কণ্ঠে আজ ছড়িয়ে যাবে সেই চেনা সুর ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’।

আধুনিক জীবনযাত্রার নানাবিধ প্রয়োজনে সব ক্ষেত্রে বাংলা সনের অনুসরণ এখন আর সম্ভব না হলেও নিজের বর্ষপঞ্জিটি নিয়ে বাঙালির রয়েছে বিশেষ গৌরব। পয়লা বৈশাখ নেহাত একটি বছরের শুরুর দিন নয় বাংলাভাষীদের কাছে। এটি এই জনপদের মানুষের সুদীর্ঘকালের আপন সাংস্কৃতিক চেতনা ও ঐতিহ্যের স্মারক। আপন জাতিসত্তায় অনুপ্রাণিত হওয়ার উত্স। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্যবোধে দীপ্ত হওয়ার উপলক্ষও। এ কারণেই এই উত্সবের গুরুত্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিণত হয়েছে বাঙালি জাতির জীবনে এক মহত্ উত্সব হিসেবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

207500
১৪ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : @ ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’।
208589
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৫:৫৩
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : মাইনাস

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File