রবীন্দ্রনাথ পাঠঃ অসাম্প্রদায়িকতার মিথের আড়ালে একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং মুসলিম বিদ্বেষী রবীন্দ্রনাথ।
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০৮ মে, ২০১৭, ১১:৪৫:২৩ রাত
রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িক কিনা এটা নিয়ে অনেকের মনে সংশয় আছে তবে যাকে নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই তিনি হলেন শ্রী যুক্ত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উগ্র সাম্প্রদায়িক লেখার ধারক এবং বাহক তিনি। বঙ্কিমের সাহিত্যের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য,
“মুসলমান বিদ্বেষ বলিয়া আমরা আমাদের জাতীয় সাহিত্য বিসর্জন দিতে পারি না। মুসলমানদের উচিত নিজেদের জাতীয় সাহিত্য নিজেরাই সৃষ্টি করা”।
[‘মুসলিম জননেতা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী একটি বক্তৃতায় মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ সাহিত্য বন্ধের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষন করলে, “ভারতী পত্রিকা’য় রবীন্দ্রনাথ এই মন্তব্য করেন] [https://goo.gl/n38lPa]
তিনিও শিবাজির মত অখণ্ড ব্রাহ্মন্যবাদী ভারতের স্বপ্ন দেখতেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গঙ্গাধর তিলকের “শিবাজি উৎসব” প্রচলনে বড় ভূমিকা রাখেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি লেখেন শিবাজি উৎসব কবিতা,
‘একধর্মরাজ্য হবে এ ভারতে’ এ মহাবচন
করিব সম্বল।।
মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কণ্ঠে বলো
‘জয়তু শিবাজী’।
কিন্তু স্বপ্নের ব্রাহ্মন্যবাদী ভারত রাজ সৃষ্টিতে মুসলমানরা বড় সমস্যা বলে মত প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ । তিনি বলেছিলেন, ‘মুসলমানরা একমাত্র বেয়াদব যাহারা হিন্দু পরিচয় স্বীকার করিবে না’।
[সাম্প্রদায়িকতা, সলিমুল্লাহ খান। বণিক বার্তা ২০ অক্টোবর, ২০১২, https://goo.gl/9ZSYTo]
রবীন্দ্রনাথের জমিদারি ছিল কুষ্টিয়া এবং পাবনায়। যদিও তিনি পাবনায় বাড়ি করার স্বপ্ন দেখে কবিতা লিখেছেন,
‘পাবনায় বাড়ি হবে গাড়ি গাড়ি ইট কিনি
রাধুনিমহল-তরে করেগেট-শষ্ট কিনি’
কিন্তু পাবনা বা কুষ্টিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় দূরে থাক একটা স্কুলও বানাননি। এই এলাকার মানুষের কাছ থেকে দ্বিগুণ কর নিয়ে তিনি শান্তি নিকেতনে বানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রম। এর কারন কি বলুন তো?!
রবীন্দ্রনাথের লেখায় মুসলিম চরিত্রের উপস্থিতি খুবই কম। কিছু কিছু লেখায় মুসলিম প্রসঙ্গ এসেছে এবং তা খুবই উগ্রভাবে। যেমনঃ
“ভালো মানুষি ধর্ম নয়; তাতে দুষ্ট মানুষকে বাড়িয়ে তোলে। তোমাদের মহম্মদ সে কথা বুঝতেন, তাই তিনি ভালোমানুষ সেজে ধর্ম প্রচার করেন নি।”
[গোরা, ১৭]।
“খুন করাটা যেখানে ধর্ম, সেখানে না করাটাই পাপ। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম”।
[নাটক ,‘প্রায়শ্চিত্ত’]
‘রীতিমত নভেল’ গল্পে মুসলিমদের উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত বাজে ভাবে-
‘আল্লা হো আকবর’ শব্দে রণভূমি প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে। একদিকে তিনলক্ষ যবনসেনা, অন্যদিকে তিনসহস্র আর্যসৈন্য। হর হর বোম্ বোম্! পাঠক বলিতে পার, কে ঐ দৃপ্ত যুবা পঁয়ত্রিশজন মাত্র অনুচর লইয়া মুক্ত অসি হস্তে অশ্বারোহণে ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর করনিক্ষিপ্ত দীপ্ত বজ্রের ন্যায় শত্রুসৈন্যের উপরে আসিয়া পতিত হইল? বলিতে পার, কাহার প্রতাপে এই অগণিত যবনসৈন্য প্রচণ্ড বাত্যাহত অরণ্যানীর ন্যায় বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল?— কাহার বজ্রমন্দ্রিত ‘হর হর বোম্ বোম্’ শব্দে তিনলক্ষ ম্লেচ্ছকণ্ঠের ‘আল্লা হো আকবর’ ধ্বনি নিমগ্ন হইয়া গেল? ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র।”
“কিছুদিন হইল একদল ইতর শ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্র খন্ড হস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে- উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষরূপে ইংরেজদেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে- ইটটি মারিলেই পাটকেলটি খাইতে হয়; কিন্তু মূঢ়গণ (মুসলমান) ইটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল। অপরাধ করিল, দণ্ড পাইল; কিন্তু ব্যাপারটি কি আজ পর্যন্ত স্পষ্ট বুঝা গেল না। এই নিম্নশ্রেণীর মুসলমানগণ সংবাদপত্র পড়েও না, সংবাদপত্রে লেখেও না। একটা ছোট বড়ো কাণ্ড – হইয়া গেল অথচ এই মূঢ় (মুসলমান) নির্বাক প্রজা সম্প্রদায়ের মনের কথা কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই সাধারণের নিকট তাহার একটা অযথা এবং কৃত্রিম গৌরব জন্মিল। কৌতূহলী কল্পনা হ্যারিসন রোডের প্রান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া তুরস্কের অর্ধচন্দ্র শিখরী রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সম্ভব ও অসম্ভব অনুমানকে শাখা পল্লবায়িত করিয়া চলিল। ব্যাপারটি রহস্যাবৃত রহিল বলিয়াই আতঙ্ক চকিত ইংরেজি কাগজ কেহ বলিল, ইহা কংগ্রেসের সহিত যোগবদ্ধ রাষ্ট্র বিপ্লবের সূচনা; কেহ বলিল মুসলমানদের বস্তিগুলো একেবারে উড়াইয়া পুড়াইয়া দেয়া যাক, কেহ বলিল এমন নিদারুণ বিপৎপাতের সময় তুহিনাবৃত শৈলশিখরের উপর বড়লাট সাহেবের এতটা সুশীতল হইয়া বসিয়া থাকা উচিত হয় না।”
[‘কণ্ঠরোধ’, ভারতী, বৈশাখ-১৩০৫]
‘বৌ ঠাকুরানীর হাট’ আরও একটি সাম্প্রদায়িক উপন্যাসের উদাহারন। এতে রবীন্দ্রনাথ প্রতাব চরিত্রের মুখ দিয়ে ম্লেচ্ছদের (অপবিত্র মুসলমানদের) দূর করে আর্য ধর্মকে রাহুর গ্রাস থেকে মুক্ত করার সংকল্প করে।
সলিমুল্লাহ খান রবীন্দ্রনাথের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন তাকে থেকে কিছু কোট করছি,
“ইংরেজি বিশ শতকের গোড়ার দিকে লিখিতে বসিয়া ভারতবর্ষের ইতিহাসের অব্যবহিত আগেকার সাতশত বছরকে ঠাকুর ‘বিদেশি শাসন’ বলিয়া রায় দিয়াছেন। ব্রিটিশ মহাজনেরা ততদিনে প্রায় দেড়শত বছর এই উপমহাদেশ শাসন করিয়াছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যখানে শুরু ধরিলে হিসাব তাহাই দাঁড়ায় বৈ কি! এর আগের সাড়ে পাঁচশত বছরের মুসলিম শাসনকেও রবীন্দ্রনাথ ‘বিদেশি শাসন’ বলিতেছেন। সমস্যার গোড়া এই জায়গায়।
মুসলিম শাসনের ব্যাপারে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলতেন,
“ইংরেজরা আসার ৫০০ বছর আগে পর্যন্ত ভারতবর্ষে যুদ্ধবিগ্রহ ঢের হয়েছে, মগর একটিও সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ হয় নাই। মানে হিন্দু বনাম মুসলমান যুদ্ধ হয় নাই একটিও।
ভারতবর্ষ যে মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল বিদেশাগত হইলেও তাহারা মনেপ্রাণে ভারতবর্ষীয় হইয়া গিয়াছিলেন। ব্রিটিশ শাসকশ্রেণী এই সত্য অস্বীকার করিতেন। ভারতে ব্রিটিশ প্রবর্তিত সাম্প্রদায়িকতার মূলে ছিল সরকারের এই নীতি।
সাম্প্রদায়িকতা শব্দটিও ঔপনিবেশিক শাসনের জের। প্রমাণস্বরূপ দুইটি কথা উল্লেখ করা যায়। এখন ভারতের ‘ইতিহাস ব্যবসায়ী’দের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সংখ্যাই বেশি। তাঁহারা সাড়ে পাঁচশত বত্সরের মুসলিম শাসনকে বিদেশি শাসনই মনে করেন। সাম্প্রদায়িকতার গোড়া এই জায়গায়। আমাদের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে ছুঁইয়া কথা বলিবেন না। সত্যকে স্বীকার করিবেন না। ঘটনার মূলে যাইবেন না। তাঁহারা ভারতের ইতিহাস সাম্প্রদায়িকভাবে পড়িবেন ও লিখিবেন। সাম্প্রদায়িকতা জিইয়ে থাকার মূল কারণ এইখানেই পাওয়া যায়”।
[https://goo.gl/9ZSYTo]
#ইতিহাস_পাঠ ৮
#রবীন্দ্রনাথ_পাঠ ৪
#KnowYourHistory
পুনশ্চঃ আমার রবীন্দ্রনাথ পাঠের উদ্দেশ্য আক্রোশ নয় বা চরিত্র হনন নয়। তার অনেক কথাই শুধু মাঝের এক লাইন কপি করলে অনেক কঠিন পয়েন্ট বের করা যায়। তাকে নিয়ে পড়তে গিয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক বড় বড় গভীর ক্ষত চোখে এসেছে যা প্রকাশ্যে বলাই অস্বস্তিকর। তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই, তিনি বেড রুমে কার সাথে কি করবেন সেটা উনার ব্যাপার। আমার উদ্দেশ্য ছিল সে সব বিষয় জানা, যা সামস্টিক এবং আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এবং যে বিষয়গুলো মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখে।
প্রথম ৩ পর্ব ছিল...
প্রথম পর্বঃ রবীন্দ্রনাথ এবং শিবাজি
দ্বিতীয় পর্বঃ একজন জমিদার রবীন্দ্রনাথ
তৃতীয় পর্বঃ একজন গর্বিত হিন্দু এবং সতীদাহ প্রথার সমর্থক রবীন্দ্রনাথ
বিষয়: বিবিধ
১৫০৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইংরেজদের Divide and rule এর কারণে হিন্দুদের উপরে তুলে এনে মুসলমানদের কোনঠাসা করে রাখার ফলে রবীন্দ্রনাথদের মত লোক মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানেরা যাতে শিক্ষা দীক্ষা ও কর্মে এগিয়ে না আসতে পারে সেজন্য হিন্দুরা বৃটিশদের পা চেটে গেছে। তাদের কারণেই বৃটিশরা প্রায় ২ শ বছর এখানে রাজ করেছে।
বঙ্গভঙ্গের ফলে এতদ অন্চলের মুসলমানেরা লাভবান হবে বুঝে গোঁড়া হিন্দুদের প্রতিভূ রবীন্দ্রনাথের মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । এটার প্রতিফলন উনি উনার লেখা সমূহের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সোজাসাপ্টাভাবেই।
একজন মুসলমানবিদ্বেষী হিসেবেই এখন রবীন্দ্রনাথের কথা স্মরণে আসে। পূর্ব বাংলায় মুসলমানেরা বেশী ছিল বলেই উনি এখনকার উন্নতি দুই চোক্ষে দেখতে পারতেন না।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথের মূল্য থাকার কথা না কারণ উনি ছিলেন চরম মুসলিমবিদ্বেষী এবং এদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেও ছাড়েন নি।
অথচ উনার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তার এই ঘৃণার পাত্ররাই তাকে বেশী স্মরণ করে , তাকে নিয়ে গর্ব বোধ করে !
আমার কাছে এটা রবীন্দ্রনাথের সাফল্যই। কারণ উনার তো পাওনা ছিল ধিক্কার ।
আমরা বাংলাদেশী মুসলমানেরা নিজেদের ধর্মকে , নিজেদের মান সন্মানকে অন্যের পায়ের তলায় বিলিয়ে দিয়েছি যাতে বিধর্মীরা সেগুলো ইচ্ছেমত লাথ্থাতে + পাঁড়াইতে পাড়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন