রবীন্দ্রনাথ পাঠঃ একজন গর্বিত হিন্দু এবং সতীদাহ প্রথার সমর্থক রবীন্দ্রনাথ।

লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০৪ মে, ২০১৭, ১০:১৮:৪৯ রাত

রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। আর কয়েকদিন পর তার জয়ন্তী। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া কোন এক অজানা কারনে তার জীবনের অনেক দিক আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখে বা ধোঁয়াসা সৃষ্টিকরে। তাই এই মাসের ইতিহাস পাঠ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আজ তৃতীয় পর্ব রবীন্দ্রনাথের ধর্ম।

রবীন্দ্রনাথের ধর্ম নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু মিথ প্রচলিত আছে। একটা ধোঁয়াসা রয়েছে। এর কারন তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ।

১৮২৮ সালের আগস্ট মাসে রামমোহন রায় একটা ধর্মমত প্রতিষ্ঠিা করেন। তার নাম দেন ব্রাহ্ম সভা [পরে ব্রাহ্ম সমাজ নাম ধারন করে]। ব্রাহ্ম ধর্ম নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী, এতে নেই জাতভেদ বা মূর্তি পুজা। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহন করেন। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান পুরুষে পরিণত হন এবং মহর্ষি উপাধি ধারন করেন [https://goo.gl/pZEWTo]।

তবে ব্রাহ্ম সমাজের মহর্ষি হওয়া সত্ত্বেও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাবার শ্রাদ্ধ হিন্দু পদ্ধতিতেই করেছেন। ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহন করলে পৈতা ত্যাগ করার কথা, অথচ রবীন্দ্রনাথকে অনুষ্ঠান করে পৈতা দেওয়া হয়েছিলো।

[ এ এক অন্য ইতিহাস, গোলাম আহমদ মর্তুজা]

ব্রাহ্ম সমাজে জাতিভেদ নিষিদ্ধ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পৈতা পরার অনুষ্ঠানে রাজনারায়ণ বসু নামক এক ব্যক্তিকে শূদ্র বলে অপমানিত করে বের করে দেওয়া হয়।

[ আত্মচরিত, রাজনারায়ন বসু পৃ:১৯৯]

ঠাকুর পরিবারই হিন্দু মেলা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ [[https://goo.gl/I7ZdKF ]। এই হিন্দু মেলা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘হিন্দু মেলার উপহার’ [https://goo.gl/4fKcjc]।

এছাড়া ঠাকুর পরিবারে নিয়মিত দুর্গা পুজা হতো। ঠাকুর পরিবারের মোটামুটি সবাই বৈবাহিক সম্পর্ক করেন ব্রাহ্মণদের সাথেই [পুরো তালিকা বেশ খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না। কারো নিকট থাকলে দেবেন প্লিজ]।

অর্থাৎ এটা যদি বলা হয় ব্রাহ্ম ধর্ম ছিলো পোশাকি কথা, তাহলে সেটা কতটা অযৌক্তিক হবে?

ঠাকুর পরিবার কাজে ছিল একটা নেতৃত্বস্থানীয় ব্রাহ্মণ পরিবার। রবীন্দ্রনাথও ছিলেন তাই। তিনিও তার ছেলে-মেয়েদের ব্রাহ্মণদের সাথেই বিয়ে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব ভারতীতে ব্রাহ্মণদ ছাত্রদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম”।

এছাড়া হিন্দু দেবীদের বন্দনা করে তিনি লিখেছেন কবিতা, গান ।

“ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বা হাত করে শঙ্কাহরণ,

দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাট নেত্র আগুন বরণ।

ওগো মা তোমার কী মুরতি আজি দেখিরে!”

তিনি উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদীদের জাতীয় বীর শিবাজিকে বন্দনা করে কবিতা লিখেছেন,

"মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো

জয়তু শিবাজি"

তিনি ব্রাহ্মণদের প্রশংসা করে বলেছেন,

“সেই পূজ্য ব্রাহ্মণদের আমরা নমস্কার করি। কেবল মাথা নত ক'রে নমস্কার করা নয়--তাঁরা যে শিক্ষা দিয়েছেন তাই গ্রহণ করি, তাঁরা যে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তার অনুসরণ করি। তাঁদের মতো হবার চেষ্টা করাই হচ্ছে তাঁদের প্রতি ভক্তি করা”। [https://goo.gl/GnaZ0e]

রবীন্দ্রনাথ হিন্দু সমাজ তথা মানবতার ইতিহাসের বর্বরতম প্রথা সতীদাহের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ব্রিটিশরা সতীদাহ বন্ধে আইন পাশ করলে উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের সাথে তিনিও প্রতিবাদে অংশ নেন। লেখেন,

“জ্বল জ্বল চিতা ! দ্বিগুন দ্বিগুন

পরান সপিবে বিধবা বালা

জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন

জুড়াবে এখনই প্রাণের জ্বালা

শোনরে যবন, শোনরে তোরা

যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে

স্বাক্ষী রলেন দেবতার তার

এর প্রতিফল ভুগিতে হবে”

#ইতিহাস_পাঠ ৭

#রবীন্দ্রনাথ_পাঠ ৩

#KnowYourHistory

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File