রবীন্দ্রনাথ পাঠঃ রবীন্দ্রনাথ এবং শিবাজি
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০৩ মে, ২০১৭, ১২:২৪:৪৩ রাত
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্প, গান, নাটকসহ সবক্ষেত্রেই তিনি সোনা ফলিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে। তবে শুধুমাত্র সাহিত্যিকই নন, রবীন্দ্রনাথ একজন প্রভাবশালী দার্শনিকও। কয়েকদিন পরেই তার জয়ন্তী। তাই এবার ইতিহাস পাঠ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আজকের পর্ব রবীন্দ্রনাথ এবং শিবাজি।
শিবাজী ভোঁসলে অথবা ছত্রপতি শিবাজী [১৬৩০–১৬৮০], হলেন মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। সে ছিল চরম ব্রাহ্মণবাদী এবং মুসলিম বিদ্বেষী। ঐতিহাসিক স্যুলিভ্যান এই শিবাজী সর্ম্পকে লিখেছেন,
‘শিবাজী ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লুন্ঠক ও হন্তারক দস্যু। আর তিনি যাদের সংগঠিত করেছিলেন সেই মারাঠা জাতি ছিল এমন অপরাধপ্রবণ যে, মুহূর্তের মধ্যে তারা তাঁদের লাঙ্গলের ফলাকে তরবারিতে রুপান্তরিত করে এবং ঘোড়া ধার অথবা চুরি করে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তো। যেখানেই তারা গিয়েছে সেখানেই কেবল ধ্বংস ও মৃত্যু রেখে এসেছে'
[https://goo.gl/2lQABx]
মিঃ হলওয়েল তাঁর “Interesting History/ Events Holl Well” বইয়ে লিখেছেন, ‘‘সে ভীষণতম ধ্বংসলীলা ও ক্রুরতম হিংসাত্মক কার্যে আনন্দ লাভ করতো”।
মারাঠা লুন্ঠনের প্রত্যক্ষদর্শী গঙ্গারাম বাবু এক কবিতায় লিখেছিলেনঃ
‘‘কারু হাত কাটে, কারু নাক কান,
একি চোটে কারু বধ এ পরাণ।
ভাল ভাল স্ত্রলোক যত ধইরা লইয়া জাএ
আঙ্গুষ্ঠে দড়ি বাঁধি দেয় তার গলা এ।
একজনে ছাড়ে তারে আর জনে ধরে
রমণের ডরে ত্রাহি শব্দ করে।’’
শিবাজির দল বাংলাতেও তাদের ডাকাতির কালো থাবা বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলায় তখন ছিলেন শায়েস্তা খাঁ। তিনি শিবাজির দলকে দমন করে বাংলাকে রক্ষা করেন। শিবাজির দলের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে একরাতে শায়েস্তা খাঁ তার শয়নকক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিশ্রামরত নিরস্ত্র শায়েস্তা খাঁ কে কাপুরুষের মতো অতর্কিতে আক্রমণ করল মারাঠা দস্যুসর্দার শিবাজী। শায়েস্তা খাঁ জানালা ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। কিন্তু তার অল্পবয়স্ক পুত্র দুর্ঘটনাবশত ঘরেই থেকে যায়। তার নিষ্পাপ পুত্রকে শিবাজী একা পেয়ে খন্ড- খন্ড- করে কেটে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করে। এই ঘটনাটি ঘটে ১৬৬ সালের এপ্রিল মাসে। [চেপে রাখা ইতিহাস, ১৭৯ পৃষ্ঠা]
শিবাজী যখন তার লুটপাট ও অত্যাচারের অতিষ্ঠ মানুষ সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছে সাহায্য চায়। তখন তিনি ১০ হাজার সেনা নিযে সেনাপতি আফজল খাঁ কে পাঠিয়েছিলেন মারাঠা দস্যুদের দমনের জন্য। খবর পেয়ে শিবাজী বুঝতে পারে সম্মুখ যুদ্ধে পারা সম্ভব নয়। তাই সে ভিন্ন রাস্তা নেয়। সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে শিবাজী গেলো আফজল
খাঁর সাথে দেখা করতে। যুদ্ধক্ষেত্রে একটি নিয়ম হচ্ছে, সন্ধি করতে আসলে তাকে সম্মান করতে হবে, তার কোন অনিষ্ট করা যাবে না। সেনাপতি আফজল খাঁ শিবাজীকে সাদর সম্ভাষন জানালো। এ সময় দু’জনে সৌজন্য মোলাকাতও করলো। কিন্তু মারাঠা দস্যু নেতা শিবাজী ছিলো ধোঁকাবাজ। সে আগেই তার পোষাকের নিচে ‘বাঘনখ’ নামক একটি ধারালো অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিলো, মোলাকাতের সময় সে হঠাৎ সেনাপতি আফজল খানের উপর আক্রমণ করে তাকে হত্যা করে।
শিবাজির উপাধি ছিল ‘গো-ব্রাহ্মণ’ প্রতিপালক। গরু রক্ষার নামে সে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিলো।[https://goo.gl/HwDE85] ।
তবে আমাদের শিবাজিকে চিনতে কোন ইতিহাসের বই পড়ার দরকার নেই। বাংলাদেশের ৩-৪ বছরের বাচ্চাও শিবাজিকে চেনে। শিবাজি মারা যাবার সারে তিনশত বছর পর আজও বাংলার প্রতিটি ঘরে শিবাজির ভয় দেখিয়ে শিশুদের কান্না থামানো হয় বা ঘুম পারানো হয়। শিবাজির দলকে অভিহিত করা হয় বর্গী বলে।আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছোট বেলায় শোনা সেই ছড়া,
“খোকা ঘুমালো, পাড়া জুরালো
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিবো কিসে”
সেই শিবাজিকে নিয়ে মহান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন,
“মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক কন্ঠে বলো
'জয়তু শিবাজি'।
মারাঠির সাথে আজি, হে বাঙালি, এক সঙ্গে চলো
মহোৎসবে সাজি।
আজি এক সভাতলে ভারতের পশ্চিম-পুরব
দক্ষিণে ও বামে
একত্রে করুক ভোগ একসাথে একটি গৌরব
এক পুণ্য নামে।।
[শিবাজি উৎসব]
#ইতিহাস_পাঠ ৫
#রবীন্দ্রনাথ_পাঠ ১
#KnowYourHistory
বিষয়: বিবিধ
১১৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন