এপ্রিল ফুল ভুলে যান, মুসলিম স্পেনকে না

লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০১ এপ্রিল, ২০১৭, ০৯:৪০:৩৩ সকাল



একদম ছোট বেলায়ই এপ্রিল ফুলের গল্প শুনেছিলাম [কম-বেশি সবাই এটা শুনেছে]। গল্পটা এমন খ্রিস্টান সেনাবাহিনি স্পেন জয় করে মুসলিমদের বলে তোমরা মসজিদ গিয়ে আত্নসমর্পণ তাহলে তোমাদের মাফ করে দেবো। সবাই তাই করে। তখন তাদের আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। দিনটা ছিল এপ্রিলের ১ তারিখ। এখান থেকেই এপ্রিল ফুল পালন শুরু হয়।

গল্প পুরাটাই মিথ্যা। এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই। এটা ইউরোপের সাধারণ একটি উৎসব দিন [https://goo.gl/LzyvAX]।

তবে, স্পেনে এক সময় স্পেন ছিল মুসলিম দেশ। ৭১১ সালে তারিক বিন যিয়াদ মাত্র ৭০০ সদস্যের একটি বাহিনি নিয়ে গথিক রাজা রাডারিককে পরাজিত করে মুসলিম খিলাফাতের সূচনা করেন। এরপর যা হয় ইতিহাস। মুসলিমরা স্পেনের বুকে ইউরোপ তথা পৃথিবির ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধতম সভ্যতার একটি গড়ে তোলে। যখন পুরা ইউরোপ নানা অন্ধকারে ডুবে ছিলো। তখন স্পেন ছিল কমপক্ষে ১৫০০ বছর এগিয়ে। কর্ডোভা হয়ে উঠে ইউরোপের সবচাইতে সমৃদ্ধতম শহর। প্রায় ৫০০০ ফ্যাক্টারি ছিল শুধু কর্ডোভাতেই, যেখানে বাকি গোটা ইউরোপে একটিও ছিল না। ইউরোপের ৯৯ ভাগ লোক ছিল নিরক্ষর, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা ছিল নিষিদ্ধ, গ্যালিলিও সহ শত শত বিজ্ঞানিকে বিজ্ঞান চর্চার অপরাধে হত্যা করা হচ্ছিলো [https://goo.gl/qF3pxy]। চার্চ লক্ষ লক্ষ মেয়েদের ডাইনি বলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো [https://goo.gl/qF3pxy]। সেই সময়ে শুধুমাত্র কর্ডোভাতে ছিল ৮০০ সরকারি স্কুল, কয়েকশত বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে দর্শন, বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় নিয়ে পড়ানো হত। ইউরোপে গোসলকে ঘৃণা করা হতো, আর কর্ডোভাতে ছিল ৯০০ পাবলিক বাথ। দশম শতকে কর্ডোভাতে ছিল ৭০০ মসজিদ, ৬০,০০০ প্রাসাদ, ৭০ টি লাইব্রেরী যার সবচেয়ে বড়টিতে ছিল ৬ লক্ষ বই। অন্যদিকে সে সময়কার ইউরোপে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরীতে ৪০০ এর বেশী ম্যানুস্ক্রিপ্ট ছিল না। ১৪০০ শতকের শেষে ইউরোপের সবচেয়ে বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে ছিল মাত্র ২০০০ টি বই। তৎকালিন আন্দালুসিয়ায় প্রতি বছর ৬০ হাজার পুস্তিকা, কবিতা, সংকলন ইত্যাদি প্রকাশিত হত, যেখানে স্পেন এখন প্রতি বছর ৪৬,৩৩০ বই প্রকাশ করে থাকে (১৯৯৬ সাল পর্যন্ত) [https://goo.gl/7iySmK] ।

এরপর ১৪৯২ সাল,

পর্তুগালের রানি ইসাবেলা এবং অস্ট্রিয়ার রাজা ফারডিন্যান্ডের সেনাবাহিনির হাতে মুসলিম স্পেনর ঘটে। মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল সবই ধ্বংস করা হয়। তারা ১৫২৩ সালে কর্ডোভার কেন্দ্রীয় মসজিদে চার্চের ক্যাথোড্রল স্থাপন করে। এরপর রাজা পঞ্চম কিয়ারস বলে, "We have built what other might have built everywhere, but we have destroyed something that was unique to the world" [https://goo.gl/Zf4hUD]। হত্যাজজ্ঞ চলে মুসলিমদের উপর প্রথম ক্রুসেডের পর জেরুজালেমে যেভাবে চালানো হয়েছিলো সেভাবে। এর পর যেসব মুসলিম হত্যাজজ্ঞ থেকে বেঁচে যায় তাদের স্পেন থেকে বহিষ্কার করা হয়। জাহাজে উঠিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তবে সব শিশুদেরকে মা মেরির সন্তান বলে রেখে দেওয়া হয়। দাস বানানো হয়। জোর করে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তারিত করানো হয়। এখানেই শেষ না, কিছুদিন পর তারা খ্রিষ্টান বানানো শিশুদের করা হয় দ্বিতিয় শ্রেণির নাগরিক। নাম দেওয়া হয় মরিসকো। যাদের কোনরূপ নাগরিক বা আইনি অধিকার ছিল না। পরে এদের বেশিরভাগ অটোম্যান খিলাফাতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

এভাবেই পৃথিবির ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধতম একটা সভ্যতার নির্মাতাদের নিশ্চিহ করে ফেলা হয়।

তাই এপ্রিলফুল ভুলে গেলেও মুসলিম স্পেনকে ভুলে যাবেন না......।।।

বিষয়: বিবিধ

৮৯৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382487
০১ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১০:৫৯
হতভাগা লিখেছেন : শিক্ষা দীক্ষা, শিল্পায়নের এগিয়ে যাওয়া বড় কথা নয় । অস্ত্রসস্ত্র ও মারামারিতে দক্ষ হলে দুনিয়া চলে আসবে হাতের মুঠোয়।
382503
০১ এপ্রিল ২০১৭ রাত ০৯:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এটা ভুল নয় যে গ্রানাডায় প্রতারনা করে অনেক মুসলিম কে হত্যা করা হয়েছিল।
০২ এপ্রিল ২০১৭ রাত ১০:১০
316111
চিলেকোঠার সেপাই লিখেছেন : সাইমুম ১২ থেকে ১৫ পড়ুন।
382505
০১ এপ্রিল ২০১৭ রাত ১১:২০
রওশন জমির লিখেছেন :
এবিষয়ে সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ।
382526
০৩ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১১:০৬
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম,

ইতিহাস যাই হোক,
কাউকে বোকা বানানোর খেলা যদি উৎসব এ পরিণত হয়, তবে অবশ্য ই তা বর্জনীয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File