রিপ্লাই টু হুমায়ুন আজাদের আমার অবিশ্বাস [২]
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:০৮:৪০ রাত
[পূর্বের লেখার পরে]
এরপর ড. আজাদ একটা ভুল তথ্য দিয়েছেন, [৮৬]
নাহ, বাইবেলের বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা এবং কুরআনের বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা এক নয়। তিনি রেফারেন্স দেন নাই। আমি রেফারেন্স দিচ্ছি, বাইবেলে বুক অব জেনেসিসের এক নম্বর অধ্যায়ের ১ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ থেকে ৩০ নম্বর ভার্স পর্যন্ত বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা আছে। আর কুরআনের আয়াতে আম্বিয়া- ২১, ৩৩ তারিক- ১১, ৩৬:৩৮, ৩১:৩৯, ২১:৩৩, ১৩:২, ৩৬:৪০, ৩৫:১৩, ৩১:২৯, ২১:৩৩, ৫৩:২৮, ৭১:১৬, ২৫:৬১ আয়াতে বিশ্বসৃষ্টির বর্ণনা আছে। দুইটা পড়ে মিলিয়ে দেখেন বর্ণনা এক কিনা।
এরপর ড. আজাদ কয়েক পেজ ধরে প্রাচীন সভ্যতাগুলো ধারণাগুলো বিশ্বাস করতো তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যেমনঃ ইহুদি [৮৯]
ইরান- [৮৭]
ভারত- [৮৭]
ইরাক- [৮৮]
তিনি এদের বিভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন সব সভ্যতাতেই স্বর্গ-নরকের মোটামুটি একই ধারনা ছিলো। এই পয়েন্ট বলে ড. আজাদ নিজের মতের বিপরীত পক্ষকে সুবিধা করে দিয়েছেন। এখন প্রাচীনকালে ভারত, মিশর, গ্রিস, ইরাক, ইরানে পৃথিবীর চার প্রান্তে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো তাদের মৌলিক জায়গা অর্থাৎ বিশ্বাসের জায়গায় এই মিলটা কিভাবে হল? এর উত্তর হতে পারে দুইটা। এক- তারা বিশ্বাস আদান-প্রাদান করেছে। এই উত্তরটা একাডেমিকালি দুর্বল। কারন প্রাচীন ভারতীয়, ইরানি, ব্যবলিয়নি বা মিশরের সভ্যতা ধর্মের ব্যাপারে বেশ রক্ষণশীল ছিল। সে সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভাল ছিল না। উত্তর দুই- তাদের বিশ্বাসের উৎস ছিল একই। এই উত্তরটা একাডেমিকালি বেশ সবল। বর্তমান জ্ঞান শাখার একটি প্রধান শাখা ভাষাবিজ্ঞান [হুমায়ুন আজাদের বিষয়]। এই ভাষাবিজ্ঞানের একটি প্রধান ভাগ হল ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান। ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের জন্ম এবং টিকেই আছে এই ধারনার উপর ভিত্তি করে। স্যার উইলিয়াম জোন্স কোলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, গ্রিক, ল্যাটিন এবং সংস্কৃত ভাষার শব্দগুলোর মধ্যে মিল পাওয়া যায়। কারন, সম্ভবত এই ভাষাগুলো একটি ভাষা থেকে উদ্ভূত। এরপরই ভাষাবিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন এবং উইলিয়াম জোন্সের মত মেনে নেন। উদ্ভব হয় ঐতিহাসিক এবং তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের। ঠিক একই ভাবে ভারতীয়, ইরানি, ব্যবলিয়নি বা মিশরের সভ্যতার স্বর্গ-নরকের ধারনা মিলে গেছে, উৎস এক। ইসলামি থিওলজি এটাকে ব্যখ্যাকরে এভাবে, আল্লাহ প্রতিটা জাতির কাছেই নবী/রাসূল পাঠিয়েছেন। কালক্রমে সেই শিক্ষায় বিকৃতি ঘটে। আমরা জানি একটা ধারনা যতই বিকৃত হোক, কিছু হলেও সে ধরনার অংশ টিকে থাকে। অর্থাৎ ইসলামের অবস্থান তাদের বিশ্বাসের উৎস ছিল এটি একাডেমিকালি বেশি সবল।
এই সভ্যতাগুলোর ভুল নিয়ে ড. আজাদ বিস্তর আলোচনা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সময় নষ্ট, কারন এই সভ্যতার কুসংস্কারগুলো এখন স্কুল পাশ করা বাচ্চারাও জানে।
এরপর তিনি খৃষ্টান ধর্মের সমস্যা নিয়ে বলেছেন। [৯১]
আমার মনে হয় খৃষ্টিয়ানিটির অসারতা বুঝতে আপনাকে একজন থিওলজিয়ান হতে হবে না। খৃষ্টিয়ানিটিতে কয়েকশ রকমের বাইবেল আছে। এক বাইবেল অন্যটির সাথে সাংঘ্যসিক। বাইবেলের কোথাও বাইবেল বা খৃষ্টান শব্দটি নেই। এছাড়া বাইবেলে প্রচুর বিজ্ঞান বিরোধী কথা, পরস্পর বিরোধী কথা, এমনকি গাণিতিক ভুল পর্যন্ত আছে।
হুমায়ুন আজাদ স্বভাব সুলভ ভাবে ধর্মকে আক্রমণ করেছেন মাঝে মাঝেই। যেমন- [৯৫]
এটা খুবই আপত্তিকর কথা। কুরআন জ্ঞানের বই, এতে ১০০০ এরও বেশি আয়াতে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এর উত্তর দিতে গেলে অনেক লিখতে হবে। আমি একটা বই রেফার করছি এই ব্যাপারে ড. মরিস বুকাইলির “বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান” বইটা পড়তে বলবো। বিগ ব্যাং, প্রজনন বিদ্যা, ভূ-তত্ব, পানি চক্র, মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে কুরআন ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছে এটা শুধু অলৌকিক না মহা-অলৌকিক।
এরপর ড হুমায়ুন আজাদ আমার থিওলজি অর্থাৎ ইসলামকে আক্রমণ করেছেন। এবং তা খুবই কাঁচা।
এরপর [৯৭]
এটা একটা ভুল তথ্য। এর সাপেক্ষে ড. আজাদ কোন রেফারেন্স দেন নাই। ইসলামপূর্ব আরবে একমাত্র খাদিজা রাঃ ছিলেন মহিলা ব্যবসায়ী। তাও তিনি সম্পদ পেয়েছিলেন তার মৃত স্বামীর কাছ থেকে। ইতিহাসে কখনো আরব মাতৃতান্ত্রিক ছিল না।
ড. হুমায়ুন আজাদ এরপরে বলেন [৯৭]
এটাও ভুল তথ্য। বাঁকা চাঁদের প্রতীক এসেছে অটোম্যানদের সময় থেকে। রাসুলুল্লাহ সাঃ, খোলাফায়ে রাশিদা, উমাইয়াত বা আব্বাসিয়াতরাও বাঁকা চাঁদের প্রতীক ব্যবহার করেনি। আর তার আগে আরব অন্ধকার ছিল না এটাও একটা ভুল তথ্য। ইসলামপূর্ব মক্কায় মাত্র ৪০ জন মানুষ পড়ালেখা জানতো। এর আগে আরবে কোন স্থাপনা বা বিল্ডিং ছিল না। কোনরূপ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা হতো না। ইসলামপূর্ব আরবে একজন দার্শনিক বা বিজ্ঞানী বা শিক্ষাবিদের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
এরপর ড. আজাদ মক্কার প্যাগানদের থেকে ইসলাম কি কি নিয়েছে তার লিস্ট দিয়েছেন। যেমন- আল্লাহের নাম [৯৭]
এরপর হজ্ব, কুরবানি- [৯৭]
এবং [৯৮]
আজাদ সাহেব এই প্যারার শেষ লাইনে বলেছেন হজ্ব এবং কুরবানির আলোচনা থেকে বিরত থাকছেন। আসলে কিন্তু তিনি তার আগের লাইনেই বলে ফেলেছেন [তীর্থযাত্রা এবং পশুবলি ই তো এবং কুরবানি]। পরে হজ্ব এবং কুরবানি কিভাবে মক্কার প্যাগানদ এবং ইহুদিদের কাছ থেকে ইসলাম নিয়েছে বলে মত দিয়েছেন।
আসলে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ড. আজাদ ইসলাম বা মক্কার ব্যপারটি বোঝেনই নাই। ইসলাম কখনোই নতুন ধর্ম দাবি করে নি। ইসলাম মতে মক্কার নবী ছিল ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ। হজ্ব, আল্লাহের নাম, কোরবানি তাদের সময় থেকেই প্রচলিত ছিল মক্কায়। কালক্রমে ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ এর শিক্ষাদেওয়া ধর্ম বিকৃত হয়ে প্যাগানিজম ঢুকে পরে। তবে মক্কার প্যাগানিজম হিন্দুদের মত প্যাগানিজম না। তারা আল্লাহকেই ঈশ্বর বলে স্বীকার করতো। তারা সাথে এটা বিশ্বাস করতো মূর্তিগুলো তাদেরকে আল্লাহের কাছে নিয়ে যাবে। কারন তারা এত অপবিত্র সরাসরি আল্লাহের কাছে যেতে পারেন না। মুহাম্মাদ সাঃ এসে ইব্রাহিম আঃ শিক্ষা দেওয়া ধর্মের বিকৃতি মুছে তার মূল রুপে নিয়ে গেছেন। যেমন আল্লাহ কুরআনে বলেন, [সূরা নাহল ১৬: ১২৩]
“এরপর আপনার প্রতি নাজিল করেছি যে সত্যাশ্রয়ী হয়ে ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরন করুন, এবং তিনি (ইব্রাহিম আঃ) তাদের মধ্যে ছিলেন না যারা আল্লাহের সাথে শিরক করতো”।
এখন আপনি বলতে পারেন ইব্রাহিম আঃ এর তত্ব আপনি মানেন না। ইসলামপূর্ব কাবাঘরে কিন্তু ইব্রাহিম আঃ এবং ইসমাইল আঃ এর মূর্তি ছিলো। এবং প্যাগান মক্কায় কিছু মানুষ ছিলেন যারা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। তারা প্যাগানিজমে বিশ্বাস করতেন না, এবং বলতেন তোমারা ইব্রাহিম আঃ এর ধর্ম বিকৃত করেছো। তাদেরকে বলা হতো হনুফা। বিখ্যাত হনুফারা হলেন যায়িদ বিন আমর বিন নুফাই, ওরাকা বিন নওফেল, উসমান বিন হুয়াইলিস, ওবাইদুল্লাহ বিন জাশ।
এবার ম্যাক্সিমাস টাইরিউসের কথায় আসি, এটা শুধু তিনি একা না। বেশিরভাগ পশ্চিমারা এটা মনে করে “Muslim pray a black box in the desert and kiss ground everyday” এবং অসাধারন ভাবে এর উত্তর আজাদ সাহেবই দিয়ে দিছেন এই বইতেই। অন্য প্রসঙ্গে, [৯৭]
মুসলিমরা কাবা বা কালো পাথরকে পুজা করে না। কাবার উপরে/ছাদে মানুষ উঠে। কাবা অতীতে বহুবার ভাঙ্গা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে সংস্কারের জন্য। কাবা হল আমাদের কিবলা বা নামাজের দিক, মুসলিম বিশ্বের একতা নিশ্চতের জন্য একটা কিবলা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
এরপর তিনি খৃষ্টিয়ানিটি এবং জুডাইজম থেকে ইসলাম কি কি গ্রহণ করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন।
যেমনঃ [৯৭]
খৃষ্টিয়ানিটি এবং জুডাইজমের সব নবির নাম, ঘটনা ইসলামে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে তিনি বলতে চেয়েছেন কুরআন ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্ট থেকে কপি করেছে। এখানে হুমায়ুন আজাদ তিনটি ঐতিহাসিক সত্যকে অবলীলায় এড়িয়ে গেছেন। এক- মুহাম্মাদ সাঃ ছিলেন নিরক্ষর। তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেন না। দুই- তখন মক্কায় কোন ইহুদি বাস করতো না। মাত্র একজন খৃষ্টান দাস ছিল তাও মক্কার বাইরে তার নাম আদ্দাস। আদ্দাসের সাথে মুহাম্মাদ সাঃ এর দেখা হয় নবুওয়াতের ১২ম বছরে, মুহাম্মাদ সাঃ যখন তায়েফ থেকে ফিরছিলেন তখন। আদ্দাস সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিন- বাইবেলের ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্টর কোন আরবি অনুবাদ ছিল না তখন। বাইবেল প্রথম আরবিতে অনুবাদ করা হয় মুহাম্মাদ সাঃ এর মারা যাবার ৩০০ বছর পরে। তিনি কোথা থেকে গল্পগুলো পাবেন বা লিপিবদ্ধ করবেন। আর তখন মক্কার মানুষ বাইবেল সম্পর্কে কিছু জানতোও না। কেউ মুহাম্মাদ সাঃ কে মক্কায় এই অভিযোগ দেয়নি যে “তুমি বাইবেল থেকে বলছো”। ড. আজাদের এই পয়েন্ট খুব একটা শক্তিশালী না। আসলে তিনি ইসলামকে বোঝেন নাই, এটা উনার সমস্যা। ইসলামি এর উত্তর দিয়ে দিয়েছে। ইসলাম নিজেই নিজেকে জুডাইজম এবং খৃষ্টিয়ানিটির পরের ধাপ হিসেবে বিবেচনা করে। ইসলাম বাইবেলের সব নবী রাসূলকে বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক। কেউ যদি সুলেমান আঃ বা জোসেফকে বিশ্বাস না করে, তাকে মুসলিম হিসেবেই বিবেচনা করা হয় না। একটা বিষয় উল্লেখ্য ইসলাম খৃষ্টিয়ানিটির সব নবীর নাম হুবহু কপি করেনি। ইসলামে যাকে ইয়াহিয়া আঃ বলা হয় খৃষ্টানরা তাকে বলে জন দ্যা ব্যাপটিস্ট।
এরপর ড. আজাদ কালোপাথর নিয়ে একটা হাইপোথিসিস দিয়েছেন। তারমতে এটি উক্কা বা কোন গ্রহানু। এটা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তবে কোন প্রমান নেই। ইসলামি থিওলজি মতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন এই পাথর আদম আঃ এর সময় থেকেই এটা দুনিয়াতে আছে। আল্লাহ এটা কিভাবে পাঠিয়েছেন, ইসলামি থিওলজিতে এটা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি। কারন ইসলামি থিওলজিতে তার গুরুত্ব নেই। উল্কার মত করে পাঠিয়েছেন? হতে পারে নাও হতে পারে।
এরপর তিনি বলেছেন হুবালের কথা। তিনি দাবি করেন হুবাল নাকি একটা লাল পাথর ছিলো।[৯৭]
আবার ভুল তথ্য। কোন রেফারেন্স নেই। আমর বিন লুসাই আল খুজায়ি সিরিয়ার আমাল কাইটের কাছ থেকে হুবাল নামক মূর্তিটি মক্কায় নিয়ে আসেন৫। এটি কোন পাথর ছিল না। মূর্তি ছিল।[ওল্ড টেস্টামেন্টেও আমাল কাইটদের বর্ণনা আছে]।
এরপর হুমায়ন আজাদ শাস্তি, নরক, কেয়ামত, এ সব নিয়ে কথা বলেছেন। এবং চমৎকার একটা প্রশ্ন তুলেছেন, [১০]
প্রশ্নটা চমৎকার হলেও বেশ পুরানো। বেশি না প্রায় ১৪০০ বছর। মক্কার প্যাগানরাও এই একই প্রশ্ন করেছিলো। এবং আল্লাহ এর উত্তর দিয়েছেন,
“তারা বলে মরার পরে হাড়, মাংস পচে গলে যাবে। কিভাবে আল্লাহ হাড়গুলোকে আবার একত্রিত করবেন।(তাদের বলে দাও) আমি শুধু হাড় না তাদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত একত্রিত করতে সক্ষম”
[আল- কুরআনঃ ৭৫, ৩-৪]
আঙ্গুলের অগ্রভাগের মাহাত্বটা কি? এটা বুঝতে আমাদের এই আয়াত যখন নাজিল হয় তখন থেকে ১৩০০ বছর সামনে আগাতে হবে। উইলিয়াম জেমস হারশালের সাহায্য নিতে হবে। তিনি ছিলেন ভারতে একজন ইংলিশ আইসিএস অফিসার। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের নেচার পত্রিকা তার একটি আর্টিকেল ছাপে। আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যে অপরাধী ধরা যেতে পারে এই আর্টিকেলে তিনিই প্রথম এই ধারনা দেন। এর কিছুদিন পরে ফ্রান্সেস গোল্ড আঙ্গুলের অগ্রভাগের ব্যাপারটি আবিস্কার করেন, প্রতিটা মানুষের আঙ্গুলের ছাপ আলাদা। কখনোই দুইজনের আঙ্গুলের ছাপ মিলবে না। এজন্যই আল্লাহ ১৪০০ বছর আগে বলে দিয়েছেন, “তাদের বলে দাও আমি তাদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত এক করতে সক্ষম”
তিনি স্বভাবসুলভ ধর্মের বিরুদ্ধে বিষেদগার করেছেন মাঝে মাঝেই। এগুলোর ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছি। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে মানবিক শাসন ছিল ধর্মীয় শাসন আর সবচেয়ে অত্যাচারী শাসকগন ছিল নাস্তিক। ইতিহাসে যত রক্তপাত হয়েছে বেশিরভাগের সাথে ধর্মের কোন যোগ নেই।
এরপর ড. আজাদ একটি অভিযোগ করেছে,
ইসলামে নৈতিকতার ভিত্তি ভয় না। ইসলামে নৈতিকতার ভিত্তি একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস। তিনি যে ইসলাম জানেন না এই মন্তব্যই তার প্রমান। তার এই কথা অসার প্রমানের জন্য বর্তমানে ইসলামের সবচেয়ে বিখ্যাত দা’য়ীদের দেখলেই হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত দা’য়ীদের তিনভাগের এক ভাগই কনভার্টেড মুসলিম। তারা প্রায় সবাই ছিল উচ্চ শিক্ষিত খৃষ্টান, কয়েকজন বৌদ্ধ [যেমন ইউসুফ ইসতেস, বিলাল ফিলিপস, হোসাইন ই, আব্দুর রহিম গ্রিন, ইউসুফ চেম্বারস প্রমুখ]। বর্তমানে ইউরোপে, অ্যামেরিকায় মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্ম ইসলাম। কেউই ভয় পেয়ে মুসলিম হচ্ছেন না; ইসলামের সৌন্দর্য দেখে মুসলিম হচ্ছেন।
১০১ নম্বর পাতায় তিনি ইসলামের কিছু বিধানের সমাচলোচনা করেছেন, যেমন শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ।
আবার বলত হচ্ছে ড. আজাদ এখানে ইসলামকে বা হিন্দুইজমকে বুঝতে পারেননি। হিন্দুদের বেদ বা উপনিষদ এমনকি মনুশ্রুতিতেও গরু খাওয়া নিষিদ্ধ এটা বলা হয়নি। হিন্দুরা কৃষ্ণের ছোটবেলার ঘটনা থেকে শ্রদ্ধাবশত গরু খায় না। আর ইসলামে কেন শুকর নিষিদ্ধ এটা বুঝতে আপনাকে শুকর প্রকৃতি বুঝতে হবে। শুকর সবচেয়ে নোংরা জিনিশপত্র খায়। শুকর নিজের মৃত বাচ্চাকে পর্যন্ত খায়। শুকর সব ধরণের মরা বা নোংরা প্রাণী খায়। এবং শুকরের পরিপাকতন্ত্র সবচেয়ে দ্রুত এবং দুর্বল। মাত্র চার ঘণ্টায় খাবার পরিপাক হয়ে যায়। এজন্য শুকর যা খায় তার সাথে যে রোগ-জীবাণু থাকে তা শুকরের মাংস, চর্বিতে জমে। অর্থাৎ শুকর একটা মরা কুকুর বা মানুষের ময়লা খেল। চার ঘণ্টায় তা পরিপাক সেগুলোর রোগ মাংসে জমলো। ৮ ঘণ্টাপর কসাই শুকরটি কেটে মাংস বানালো। এরপর সেটা আপনার খাবারের টেবিলে। কতটা বিপদজনক এবং অস্বাস্থ্যকর নিজেই চিন্তা করুন। ইসলাম এজন্যই শুকর নিষিদ্ধ করেছে। ড. আজাদ ইসলাম বোঝেন না এটা তার সমস্যা। ইসলাম যে সকল প্রাণীর মাংস খাবার অনুমতি দেয় সবগুলো সবুজ ঘাস খায়। পরিপাকতন্ত্র এবং হজম প্রণালী খুবই জটিল। যেমন গরু পরিষ্কার সবুজ ঘাস খায়। এর পরিপাকতন্ত্র তিনস্তর বিশিষ্ট। খাবার হজম হতে সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা।
ইলামের চুরি এবং ধর্ষণের শাস্তি অমানবিক বলে তিনি মত দিয়েছেন একই পৃষ্ঠায়
ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কয়েকদিন আগে পুজা নামে ৫ বছরের এক বাচ্চাকে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে। পুজার মা/বাবা/ভাইয়ের কাছে গিয়ে আপনার মতে যা মানবিক তার ছবক দিন আর প্রশ্ন করুন ধর্ষণের শাস্তি কি হওয়া উচিত। আর চুরির ব্যাপারে হাত কাটার বিধান নিয়ে তিনি আসলে বিস্তারিত জানেন না। এই বিধানটি আসলে কেমন সেটা পরিস্কার করতে ৩ টি ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি।
এক- একবার উমর রাঃ এর কাছে এক ব্যক্তি তার কর্মচারীকে ধরে নিয়ে আসেন। চুরি করার সময় হাতেনাতে কর্মচারীটি ধরা পরেছে। তখন কর্মচারী উমর রাঃ কে বলেন মালিক তাকে ঠিকমত বেতন দেয় না। উমর রাঃ তদন্ত করে দেখেন কর্মচারীর অভিযোগ সত্য। তখন তিনি কর্মচারীকে ছেড়ে দিয়ে ওই ব্যক্তিকে বলেন, যদি ঠিকমত বেতন না দাও তাহলে তোমার হাত কাটবো।
দুই- সিরিয়ার একটি শহরের নাম রাকা। সেখান থেকে খলিফা হারুনুর-রশিদের নিকট চিঠি আসলো। চিঠিতে লেখা ছিল: শহরের বিচারক এক মাস যাবত অসুস্থ,বিচার কাজ স্থবির হয়ে আছে । খলিফা যেন দ্রুত ব্যবস্থা করেন । খলিফা চিঠির জবাব পাঠালেন । আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক আসবেন । এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক এসে যোগ দিলেন ।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে । স্থানীয় প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে আসামী হিসেবে দরবারে হাজির করলেন । তার অপরাধ ছিল তিনি শহরের এক রেস্তারাঁ থেকে কিছু রুটি আর মধু চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পরেন ।
বিচারক: আপনি চুরি করেছেন?
- জ্বি ।
- আপনি কি জানেন চুরি করা কতো বড় অপরাধ ও পাপ ?
- জ্বি ।
- জেনেও কেন চুরি করলেন ?
- কারণ আমি গত এক সপ্তাহ যাবত অভুক্ত ছিলাম । আমার সাথে এতিম দু'নাতিও না খেয়ে ছিল । ওদের ক্ষুদারত চেহারা ও কান্না সহ্য করতে পারিনি তাই চুরি করেছি। আমার আর এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না হুজুর ।
বিচারক এবার পুরো দরবারে চোখ বুলালেন। বললেন কাল যেন নগর, খাদ্য,শরিয়া, পুলিশ প্রধান ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিগন সবাই উপস্থিত থাকেন । তখন এর রায় দেওয়া হবে ।
পরদিন সকালে সবাই হাজির হলেন । বিচারক ও যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রায় ঘোষণা করলেন-“ বৃদ্ধা মহিলার চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৫০টি চাবুক, ৫০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা আর অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া করা হলো। তবে অকপটে সত্য বলার কারণে হাত কাটা মাফ করা হলো। বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিচে নেমে ঐ বৃদ্ধা মহিলার পাশাপাশি দাঁড়ালেন ।
বিচারক বললেন যে নগরে একজন ক্ষুধার্তবৃদ্ধ মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয় সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলিফা। আর আমি এসেছি খলিফার প্রতিনিধি হয়ে । আমি যেহেতু তাঁর অধীনে চাকরি করি তাই ৫০টি চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারা হউক । আর এটাই হলো বিচারকের আদেশ । আদেশ যেন পালন করা হয় এবং বিচারক হিসাবে আমার উপর চাবুক মারতে যেন কোনো রকম করুণা বা দয়া দেখানো না হয়।
বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন । দুই হাতে পর পর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতের ফলে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে । ঐ অবস্থায় বিচারক পকেট থেকে একটি রুমাল বের করলেন । কেউ একজন বিচারকের হাত বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে বিচারক নিষেধ করেন। এরপর বিচারক বললেন “ যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্য গুদাম প্রধান ও অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাব গ্রস্হ মহিলার ভরন-পোষণ করতে পারেন না। সেই নগরে তারা ও অপরাধী। তাই বাকি ৩০টি চাবুক সমান ভাবে তাদেরকে মারা হোক ।“
এরপর বিচারক নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের উপর ৫০টি রৌপ্য মুদ্রা রাখলেন । তারপর বিচারপতি উপস্থিত সবাইকে বললেন “যে সমাজ একজন বৃদ্ধমহিলাকে চোর বানায়, যে সমাজে এতিম শিশুরা উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী । তাই উপস্থিত সবাইকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো।“
এবার মোট ৫০০দিনার রৌপ্য মুদ্রাথেকে ১০০ দিণার রৌপ্য মুদ্রা জরিমানাবাবদ রেখে বাকি ৪০০টি রৌপ্য মুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেওয়া হলো। বাকি ৩৮০টি রৌপ্য মুদ্রা বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বললেন “ এগুলো আপনার ভরণপোষণের জন্য ।
এটা হল ইসলামের বিধান। ধরলাম আর হাত কেটে দিলাম, ব্যাপারটা এমন না।
তিন- ২০১০ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ধস নামে।২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কিছু ব্যক্তি [ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির মতে ২০ হাজার কোটি]। এর প্রতিক্রিয়ায় অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে মারা যায়। কয়েকজন আত্নহত্যা করে। এখন ধরুন এই চোরকে ধরলেন। আপনার আইনে তার অপরাধের শাস্তি কি হবে?
এরপর তিনি কিছু সমস্যার কথা বলেছেন সেগুলা কিছুটা সঠিক। যেমন বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সমস্যা, ধর্মের মধ্যে উপদল তৈরি হওয়া, চার্চের অপশাসন ইত্যাদি। এবং পরিচ্ছেদের শেষ লাইনে তিনি বলেছেন ধর্মের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে হয়ে উঠতে হবে মানুষ। বাস্তবতা হল সব সমাজেই সব সময়েই কিছু অসৎ মানুষ থাকবে। তারা ভাষা, জাতীয়তা, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, এলাকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরিস্থির ঘোলাটে করে সুবিধা নিতে চাইবে। তবে এই সমস্যাগুলোর কথা হুমায়ুন আজাদের অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগন বলে আসছেন। এবং তারা কার্যকরভাবেই এগুলো সমাধানে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন এসব দেশের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সমস্যা নেই বললেই চলে। কারণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগনের কার্যকর প্রচেষ্টা। ধর্মহীন করার চেষ্টা করেছিলো স্টালিন, মুসেলিনি, হিটলার, মাও সেতুং, হালাকু খাঁ। তারাই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কসাই। ধর্ম প্রচার করে গেছেন মুহাম্মাদ সাঃ, ইব্রাহিম, মুসা, জিসাস, বুদ্ধ, অশোক, উমর, আলী, মাদার তেরেসা। সব সমালোচকের চোখেই ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর এবং আলোকিত মানুষ এরাই। আমাদের ধর্মের সঠিক শিক্ষা নিয়ে আলোকিত হতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনার লিখা পড়ে আমার মনে হয় বিজ্ঞান সম্পর্কে কোন বেসিক ধারনা আসলে উনার ছিলনা!
হু আজাদ বাংলা সাহিত্য চিবিয়ে খেয়েছেন বলে দাবী করেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানের ‘ব’ জানতেন না, তার প্রমান আছে যথেষ্ট। অন্যত্র আরও অনেক লেখা হয়েছে তার সম্পর্কে। কেউ একটা বিষয় জানে না – সেটা দোষের কিছু নয়। আমরাও অনেকে অনেক কিছুই জানি না। তবে, একটা বিষয়ে অজ্ঞ হয়েও ‘অন্যকে সে বিষয়ে জ্ঞান দিতে চাইলে –সমস্যার সৃষ্টি হয় সেখানেই । হু আজাদ প্রফেট হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তার ধর্মের নাম - আদি ও আসল নাস্তিকতা ! সমস্যা হল তার কাছে ‘ওহী আসে নাই । আর অহি ছাড়া প্রফেট হতে গেলে যা হয়- তাই হয়েছে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন