সিলেটে মুসলিম-ইসকনি হিন্দু বিরোধঃ দেশের আকাশে কালো মেঘ
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:১৯:৩১ রাত
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব জ্ঞান শাখার আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। খ্রিস্টিয়ানিটি এবং ইহুদি ধর্মের পরে হিন্দুইজম আমার প্রিয় টপিক। হিন্দুইজমের একটি প্রধান বৈশিষ্ট হল বৈচিত্র্যতা। বাঙালি হিন্দুদের প্রধান উৎসব দুর্গা পুজা। তামিলনাড়ু গণেশ পুজা। অন্যদিকে যাবেন কালীপুজা। হিন্দুইজম বিভিন্ন দেবতা আছে যেমন ইঁদুর, হনুমান, সাপ ইত্যাদি। এবং মন্দিরগুলো এগুলোর নাম অনুসারে হয়। হিন্দুইজম নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করেছি। কাল ইসকন মন্দির নাম দেখে কিছুটা খটকা লেগেছে। ইসকন নামে কোন দেবতার নাম আগে শুনিনি। বসে গেলাম ঘটাঘাটিতে। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা। ইসকন একটি সংগঠনের নাম কোন দেবতার না! ইসকনের জন্ম ম্লেচ্ছের রাজধানী নিউইয়র্কে, হিন্দুইজম অনুযায়ী যেখানে যাওয়াই নিষিদ্ধ [কালাপানি মানে আন্দামান পার হওয়া যাবে না]। International Society for Krishna Consciousness (ISKCON)। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ লেখাপড়া করেছে খ্রিস্টান মিশনারীতে। পেশায় ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী। সে যখন ইসকন প্রতিষ্ঠা করে তখন মেইনস্ট্রিম হিন্দুরা এর প্রতিবাদ করে। তার পাশে তখন এসে দাঁড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স প্রমুখ জিউ ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ। তখন থেকেই মেইনস্ট্রিম হিন্দুদের সাথে ইসকনের সমস্যা রয়েছে। গুগলে ইসকন ভার্সাস হিন্দুইজম লিখে সার্চ দিলাম। ৩ লক্ষ ৯ হাজার লিংক আসছে। “ইসকনরা আসলেই হিন্দু কিনা? হিন্দুরা ইসকন হতে পারবে কি? ইসকন-হিন্দু বিরোধ" ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। খোদ আমাদের বাংলাদেশে ২০১২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে মন্দির দখল করে নেওয়ায় প্রতিবাদে স্থানীয় হিন্দুরা ইসকনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। [সুত্রঃ http://archive.is/JbP92]
ইসকনের একটি মৌলিক থিওরি মধ্যযুগের চৈতন্য’র থেকে নেওয়া। চৈতন্য’র অনতম মৌলিক থিওরি ছিল - “নির্যবন করো আজি সকল ভুবন”। যার অর্থ- সারা পৃথিবীকে যবন মানে মুসলমান মুক্ত করো। বলা বাহুল্য মেইনস্ট্রিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা এই থিওরি বিশ্বাস করে না। এরা সমকামীতায় বিশ্বাস করে যা হিন্দুইজম অনুযায়ী একটা বড় পাপ।
ইসকন নিম্নবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে বেশি কাজ করে। এ কারণে তাদের মন্দিরগুলো হয় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের বসতির আশে-পাশে। যেমন ঢাকা শহরে স্বামীবাগে ইসকন মন্দির হওয়ার কারণ, স্বামীবাগে রয়েছে বিশাল মেথর পট্টি। এই মেথর পট্টিতে বিপুল সংখ্যক নিচুবর্ণের হিন্দুরা বাস করে। সিলেটেও ইসকনদের প্রভাব বেশি। কারণ চা শ্রমিকদের একটি বিরাট অংশ নিচু বর্ণের হিন্দু। স্বাভাবিক ভাবে শিক্ষা বঞ্চিত নিচু বর্ণের হিন্দুদের দলে নেওয়া যায় সহজে।
আর একটি অসাধারন ব্যাপার হল ইসকনের সাথে ইহুদিদের সম্পর্ক। এই সংগঠনটি চালায় ইসকন এবং ইহুদিরা। এটা ইসকনের নেতারা সরাসরি স্বীকার করে। [সুত্রঃ http://goo.gl/xS3sfH] । অনলাইনে সার্চ দিলেই পাবেন ইজরাইলের রাস্তায় গেরুয়া পোশাক পরে হিন্দুরা উৎসব করছে, দখলকৃত জেরুজালেমে একেশ্বরবাদী ইহুদিদের উইলিং ওয়ালে মাথা ঠোকাচ্ছে!
আবু রুশদের “বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’” বইয়ের ১৭১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
“‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।”.
এই হল ইসকন। এখানে ফ্লাশব্যাক দিয়ে রাখা ভাল। ইহুদিরা যে আমাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগেই বলেছেন।
এখন আসি গতকালের ঘটনায়,
সিলেট ইসকন মন্দিরের ইয়ুথ ফোরামের সমন্বয়ক দেবর্ষি শ্রীবাস জানান, মন্দিরে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও কীর্তন চলছিল। হঠাৎ বাইরে থেকে ঢিল ছোড়া হলে তাঁরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নামাজের সময় অনুষ্ঠান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অভিযোগে তুলে মন্দির লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
কয়েকজন এলাকাবাসী দাবি করেন, নামাজের সময় গান বা কীর্তন বন্ধ রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও মন্দির কর্তৃপক্ষ সে অনুরোধ শোনেনি। আজও নামাজ শেষে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে মন্দিরের লোকজন মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। [সুত্রঃ http://goo.gl/9k2s9e ]
যেহেতু মন্দিরের লোক নিজেই বলেছে, তারা কীর্তন গাচ্ছিল সেহেতু মুসলিমদের অভিযোগ সত্য। হতে পারে পরে মুসলিমদের কেউ কেউ বাড়াবাড়ি করেছে।
আমাদের গ্রামে প্রচুর হিন্দুর বাস। আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকশ গজ দূরেই দুর্গার মণ্ডপ হয়। তাদের কখনো বলতে হয় না। তারা নিজে নিজেই আজান হওয়ার পর থেকে ৩০-৪০ মিনিট সাউন্ড বক্স, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি বন্ধ রাখে। আমি আমার নানী-দাদিদের মুখেও শুনিনি আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সমস্যা হয়েছে কোনদিন। আমাদের বাড়ীর ঠিক পাশের বাড়িই হিন্দু। আমাদের সাথে অসাধারন সম্পর্ক। তারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন এটা চিন্তা করার চিন্তাও মাথায় কখনো আসেনি। কিংবা তারাও ভিন্ন কিছু ভাবে বলে মনে হয়নি কিছু। বাংলাদেশের হিন্দুরা এমনি। নামাজের সময় তারা অনুষ্ঠান ও বাদ্যযন্ত্র বাজানা বাজিয়েছে এমন ঘটনা এর আগে কোথাও ঘটছে কিনা আমি জানি না।
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলে হিন্দু ধর্ম বলতে কিছুই নেই, আবার হিন্দু ধর্ম বলতে আমরা যা বুঝি ইসকন সেটাও না, হিন্দুরা মনে করে ইসকন এর কাজ হলো হিন্দু ধর্মটাকেই বিভ্রান্ত করা, এদিকে আমরা যারা বিষয়টা জানিনা তারা ইসকনকে হিন্দু বলে ধরে নিয়ে হিন্দু মুসলিম সমস্যা ভেবে এটা আরো জটিল করে তুলতে পারি, আর যে হিন্দুরা এটা জানে তারাও চুপ মেরে থেকে এবং হিন্দু মুসলিম সমস্যা বলে চালিয়ে দিয়ে একটা নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টির ইন্দন দিতে পারে। ইসকন এর ব্যাপারটা আরো প্রচার হওয়া প্রয়োজন যাতে করে কেই এটাকে হিন্দুম মনে না করেন
তবে যে হারে দেশে ইসলাম ও মুসলমানকে টাইটে রাখা হয়েছে তাতে ইসকনের মত প্রতিস্টানের কিছু একটা করা প্রয়োজন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন