ঈদ-উল আযহাঃ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উৎসব?

লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:২৭:৪৩ দুপুর

গতকাল ছিল পবিত্র ঈদ-উল আযহা। যার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ রিতিমত উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ আমার কাছে মনে হয়, এই ঈদ-উল-আযহা-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উৎসব। [ সামাজিক উৎসব, ধর্মীয় নয়]। জানি অনেকেই এই মতকে প্রশ্ন করবেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোরবানির ঈদে প্রায় ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। প্রতিটি চামড়া যদি গড়ে ১০০০ টাকা করেও হয় তাহলে দাম হয় ৯০০,০০০,০০০। নয়শত কোটি টাকা। চামড়ার পুরো টাকাটাই দরিদ্রদের মাঝে দান করা হয়। বাংলাদেশ এ আর কোন দিন সন্মিলিত ভাবে এত্ত টাকা দান করা হয় না। এছাড়া ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ি যারা কুরবানি দেয় তারা বাধ্যতামূলক ভাবে মোট মাংসের তিন ভাগের একভাগ গরিবদের দান করেন। বাজার মূল্যের হিসাব করলে এর দাম হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও এ দিন কিছুটা অবস্থা সম্পন্ন সবার বাড়ির দরজা গরিবদের জন্য খোলা থাকে। মাংস এবং মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতে সবাই চেষ্টা করে।

আল জাজিরার একটি রিপোর্ট অনুযায়ি দেশের শতকরা ১৬.৩ ভাগ মানুষ ৩ বেলা খাবার পায় না অর্থাৎ দেড় কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র সীমায় বাস করে। যদি সরকার বা ইসলামি ফাউন্ডেশন এই চামড়ার সব টাকা সংগ্রহ করে গঠনমূলকভাবে এই দেড় কোটি মানুষের মাঝে বিতরণ করে তাহলে খুব বেশি দিন লাগবে না এদের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় কমাতে।

এইদিন মানুষ কুরবানির মাংসের একটা অংশ আত্নীয় স্বজনদেরকে এবং প্রতিবেশিকে দেয়। এতে সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। যে সব পরিবারে সবাই ব্যস্ত থাকে তারাও কোরবানির পশু নিয়ে আলোচনা করে। পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত হয়। ঈদ-উল আযহা ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবে আমার মনে হয় এর সামাজিক গুরুত্ব এতটাই বেশি যে আর যত ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব আছে সব গুলোকে এক করলেও তারা সামাজিক গুরুত্বের ক্ষেত্রে ঈদ-উল আযহার ধারের কাছেও আসবে না।

এর পরও পাঠ্য বই থেকে শুরু করে সকল মিডিয়া প্রমোট করছে বাংলাদেশের প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ। কর্পোরেট হাউজ এবং বহুজাতিক কোম্পানি গুলো কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে একে কেন্দ্র করে। সম্রাট আকবর এর ইরান থেকে একটা আমদানি করা উৎসবকে আমাদের জাতীয় উৎসব বানানো হচ্ছে! এদিন শহর গুলোতে কিছু মানুষ হুজুগে মাতাল হয়ে লাফাচ্ছে। যাদের সিংহ ভাগই বাংলা ১২ টি মাসের নামই জানে না। পত্রিকা গুলো বিশেষ সংখ্যা বের করে। টিভি স্টেশনগুলো অদ্ভুত কিছু অনুষ্ঠান প্রচার করে। সমাজে এই ধার করা উৎসব ইতিবাচক কী বয়ে আনে তারাই ভালো জানেন।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343361
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৪
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।
ফ্যাক্টচুয়ালী ভাল লিখেছেন। কোরবানীকে কেন্দ্র করে আপনি যে ইকোনোমিক ফিগার গুলো দেখিয়েছেন এর বাহিরে আরো বেশ কিছু ইকোনমি এর সাথে জড়িত।

ইসলাম নিয়ে কাজ করেন, ইসলামকে যারা ভালবাসেন - তারা যদি সামহাউ ইকোনোমিক এ সব ফিগারকে নিয়ে আরো গভীর ভাবে কাজ করতে পারতেন কিংবা করতেন - তবে উম্মাহর বিত্ত যেমন মর্যাদা পেত - দারিদ্রতা সুশোভিত হত।

দূর্ভাগ্যক্রমে আমরা আমদানী করা সংস্কৃতির মত আমদানী করা ইকোনোমি তথা দারিদ্র বিমোচন নামক প্রতারনার খপ্পরে পড়ে আছি।
343382
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫০
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : আসলেই চমৎকার একটি ইকোনোমিকাল থেওরী , বাস্তাবায়ন করতে পারলে ইহা হতে পারে দেশের অর্থনীতির জন্য বড় একটি ব্রেক থ্রো ।
১০০ একমত, কুরবানির ঈদ হোক জাতীয় উৎসব
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৩৮
284870
চিলেকোঠার সেপাই লিখেছেন : Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File