কেন মুসলিম তরুণরদের একটি অংশ চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে?
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:১৮:৪৬ রাত
প্রথমেই আমার অব্যস্থান পরিষ্কার করে নেই। আমি মনে করি অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী এবং সন্ত্রাস এর জন্মদাতা। তারা ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে সারা দুনিয়া থেকে ইহুদিদের আমদানি করে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইজরাইলের জন্ম দিয়েছে। যারা গত ৬৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের মানুষের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে। পারমানবিক অস্ত্র আছে এই নির্জলা মিথ্যাকে বার বার প্রচার করে তারা ইরাক হামলা করে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা অজুহাতে আফগানিস্তান হামলা করে দেশটাকে ধংস করে দিয়েছে। এদেরকে ধরে আন্তরজাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করা উচিত।
এবার আমার মূল আলোচনায় আসি।
কেন মুসলিম তরুণরা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে?
পূর্বে একটি থিওরি দেওয়া হত যে যারা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে তারা নির্যাতন এর স্বীকার। তাদের মধ্যে রয়েছে চরম দারিদ্রতা। কর্মসংস্থান নেই। নেই শিক্ষা। এজন্য তারা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে। কথাটি অবশ্যই সত্য। এটা দিয়ে জেএমবি, হুজি, ভারতের গুজরাট বা কাশ্মীর এর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু ISIL বা হিজবুত তাহরির এর মত সংগঠন এর ব্যাপারে কি ঘটছে। আমাদের দেশে হিজবুত তাহরির যে সকল সদস্য ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে অনেকে উচ্চবিও পরিবারের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সন্তানও রয়েছে। ISIL এ ৯০ টিরও বেশি দেশের সদস্য রয়েছে যারা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। এদের মধ্যে রয়েছে ইউরোপ-অ্যামেরিকার উচ্চশিক্ষিত এবং ধনী তরুণেরাও।
একটি লক্ষ্য করার মত বিষয় বলতে গেলে সউদি আরব, মিশর বা আমাদের বাংলাদেশ এরও সকল ইসলামি বিশেষজ্ঞ চরমপন্থার বিপক্ষে। তারা বলছেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের নানাদিক নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। এগুলো বর্ণনা করে বইও লিখেছেন প্রচুর। এছাড়া মূল ধারার সব ইসলামি দলই চরমপন্থার বিপক্ষে। তারপরও এদের বাদ দিয়ে কেন তরুণ সমাজের একটা অংশ ইসলাম সম্পর্কে ওসামা বিন লাদেন এর ব্যাখ্যাকেই বেশি গ্রহণ করছেন যিনি কিনা পেশায় একজন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ড ছিলেন।
আমাদের বেশির ভাগ ইসলামি বিশেষজ্ঞগনই তাদের বিপথগামী, তাকফিরি, খারেজী নানা সর্বনামে ডেকেই নিজেদের কাজ শেষ মনে করে বেশ আত্মতুষ্ট মনে হয়। ইসলামি দল গুলো পশ্চিমা কন্সপিরাসি থিওরি দিয়েই খালাস। পশ্চিমারা তাদের দমিয়ে রাখতেই এসব দলের জন্ম দিচ্ছে, এটা তাদের খুব সুন্দর একটি বিশ্লেষণ। আর সরকারগুলো এদের নিয়ে কঠিন ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। গোয়েন্দাদের দিন রাত গলদঘর্ম হতে হচ্ছে এদের ধরতে। তাদের ধরে চরম শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরও সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না। ইসলামি বিশেষজ্ঞগনদের নানা অভিধা, ইসলামি দল গুলোর পশ্চিমা কন্সপিরাসি থিওরি, বা সরকারগুলোর জেল এর ভয় সবকিছুকে কাঁচ কলা দেখিয়ে একের পর এক নতুন নতুন চরমপন্থি দলের জন্ম হচ্ছে। এতে মুসলিম তরুণরাও যোগ দিচ্ছে।
কিন্তু কেন?
এই প্রশ্ন নিয়ে খোঁজা খুঁজি করে যা বুঝলাম আমাদের মধ্যে যারা এর বিরোধী তাদের মতামত মোটামুটি একই। অ্যামেরিকা থেকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকা। বেশির ভাগই ইসলামি বিশেষজ্ঞগনদের, ইসলামি দল গুলোর সুরে বলেছেন। কেউ বলেছন তাদের মধ্যে হতাশা আছে, তারা ইসলাম সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু জানে না। তবে কয়েকজন একটু ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেন UK এর একজন বলেছেন তাদের সহজেই মিস গাইড করা সম্ভব হয়েছে। USA এর একজন বলেছেন তারা সহজেই বিখ্যাত হতে চায় তাই একটু রোমানটিসাইজ হয়ে এগুলো করছে। কোনটা কতটা ঠিক আল্লাহই ভালো জানেন।
তবে ইসলামি বিশেষজ্ঞগনদের মত এবং ইসলামি দল গুলোর মন্তব্য আমার কাছে নিজের অযোগ্যতা ঢাকার একটি চমৎকার চেষ্টা বলেই মনে হয়।
ড তারিক রামাদান এর বিশ্লেষণ সবচেয়ে যোক্তিক মনে হয়। তার বিশ্লেষণকে সামনে রেখে আমি ব্যাপারটার এমন ভাবেই ব্যাখ্যা করি। কতটা সঠিক আল্লাহই ভালো জানেন।
মুসলিম তরুণদের চরমপন্থার দিকে ঝোঁকার কারন গুলো হল
১। মুসলিমদেশ গুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ বেশির ভাগ মুসলিমদেশই সামরিক শাসন বা পোশাকি গনতন্ত্র চলছে। দেশগুলোতে স্বাধীনতা নেই। নেই মত প্রকাশের সুযোগ। সরকারগুলো ইসলামের বিরোধী অনেক কাজ করছে। ইসলামপন্থীরা তোপের মুখে (মধ্য প্রাচ্যের অধিকাংশ দেশেই এই সমস্যায় জর্জরিত)। অনেক ক্ষেএে সরকার ইসলামবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
২। সন্ত্রাসবাদী ইজরাইলঃ ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উচ্ছেদ করে ইজরাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মুসলিমরা গত ৬০-৭০ বছর ধরে তাদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসার অবস্থা দেখছে। প্রতি বছর যায়নবাদী ইজরাইল ফিলিস্তিনে গনহত্যা দেখছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। না মুসলিম দেশগুলো না জাতিসংঘ। কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
৩। নির্যাতনঃ সারাবিশ্বেই মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন এর স্বীকার। কাশ্মীর, গুজরাট, আরাকান, আফগান, ইরাক, চেচনিয়া, চীন সহ সারাবিশ্বেই মুসলিমদের উপর অন্যায় অত্যাচার চলছে।
৪। ইসলামি বিশেষজ্ঞগনঃ আমার মনে হয় মুসলিম তরুণদের চরমপন্থার দিকে ঝোঁকার কারন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারন বর্তমান আলেমদের অবস্থান। তারা একদিকে বলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে অত্যাচার নির্যাতন নিষিদ্ধ। সত্য কথা বলতে হবে। অথচ তারা উপরের বর্ণিত তিনটি ব্যাপারে বলতে গেলে একদম নিরব। মাঝে মাঝে একটু বিবৃতি দিয়েই নিজেদের হেফাজত করছেন। তারা এই সব সামরিক শাসক এবং রাজতন্ত্র এর ব্যাপারে নিরব। তাদের কোন সমালোচনা তো করেনই না উল্টো তোষামোদে করেন কেউ কেউ। জাজিরাতুল আরব(সইদি আরব) বা মিশরের বিখ্যাত বিখ্যাত ইসলামি বিশেষজ্ঞগন এর প্রমান। তাই এদের প্রতি তরুণ সমাজের একটা বড় অংশের শ্রদ্ধা নেই। তারা ইসলামকে জানতে অন্য কাউকে খুঁজেছ এবং পেয়ে যাচ্ছে একজন ওসামা বিন লাদেন বা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে যারা মুসলিমদের উপর হওয়া সব অবিচার এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন বলে দাবি করেন। এবং এমন বৈপ্লবিক মতবাদ পেয়ে তারা সহজেই চরমপন্থার দিকে যাচ্ছে।
৫। ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর দৈন্যদশাঃ এটি দ্বিতীয় প্রধান কারন। উপমহাদেশে বা পূর্ব এশিয়ায় এটি বড় কারন। এই অঞ্চলের ইসলামি দলগুলো ইসলাম এর নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করলেই শেষ পর্যন্ত ইসলামে না থেকে প্রচলিত ক্ষমতার রাজনিতির পথেই হাঁটছেন। অনেক ক্ষেএে ইসলামকে নিজের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা বা ব্যবহার করছেন ক্ষমতার রাজনিতির জন্য। তাই এদের পরিত্যাগ করে চরমপন্থার দিকে যাচ্ছে তরুণদের একটা অংশ। কিছুদিন আগে সময় টিভিতে একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয় বর্তমান এ বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গিদল এর যারা ধরা পড়েছে তারা একসময় জামাত-শিবির বা অন্য ইসলামি রাজনৈতিক দল এর সদস্য ছিল। একই অবস্থা ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানে। একটি মজার বিষয় হল যে সকল দেশে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক অবস্তান ধরে রেখেছে সে সব দেশে ইসলামি জঙ্গি দল কম। যেমন মিশর, তুরুস্ক, ইরান এবং তিউনেশিয়া। এসব দেশে ইসলামি দলগুলো শত প্রতিকূলতার পরও ইসলামি চরিএ ধরে রেখেছে। তিউনেশিয়া থেকে অনেকে ISIL এ যোগ দিয়েছে তবে তার প্রধান কারন বাশার আল আসাদ এর অপশাসন, ইজরাইল এবং ইরাক হামলা।
সর্বশেষ কন্সপিরাসি থিওরি এবং ISIL
যদিও আমি কন্সপিরাসি থিওরি দিতে পছন্দ করি না। নিজের অযোগ্যতা ঢাকার কৌশল মনে হয়। তারপরও ISIL এর নাটকীয় উত্থান। অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার। তেল এর খনি দখল এবং সেই তেল কালো বাজারে বিক্রি। এমনকি অতি দ্রুত মুদ্রা প্রচলন দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে অবশ্যই কিছু আছে। আরও একটি মজার ব্যাপার প্রথমে অ্যামেরিকার জনগণ নতুন যুদ্ধে জরানোর পক্ষে ছিল না। ওবামা সাহেব সমর্থন পাচ্ছিলেন না ISIL এর উপর বিমান হামলা করার। ঠিক তখনই ISIL মুণ্ড কাঁটা শুরু করলো এবং অ্যামেরিকার জনমত ঘুরে গেল যুদ্ধের পক্ষে। (সর্প হইয়া দংশন কর, ওঝা হইয়া ঝারও)
ড রামাদান এক্ষেএে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের পাশা পাশি ভারত এবং চীনও যাচ্ছে তেল ব্যবসায়। তাদের আগমন ঠেকাতে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা এর অব্যস্থানকে জায়েজ করে আরব রাজ রাজা এবং ইজারাইল এর নিরাপওা নিশ্চিত করতে এই ISIL এর জন্ম।
বিষয়: বিবিধ
১১২৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
আল্লায় তমুক যুগে অমুক কাফের জাতি ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করিলেন...,
কিন্তু মোহাম্মদের জন্মের পর আল্লায় কাফের জাতি ধ্বংসে পুরা অক্ষম হইলেন কেন?
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : আল্লার গালগল্প আর কত?আপনার সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ জানাই!
'জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।' এই হাদীসের ব্যাখ্যা কী??
জিহাদের অধ্যায় কি শেষ হয়ে গেছে!কারা সমাপ্তি ঘোষনা করল?
মুসলিম সমাজ ইসলামের ব্যাখ্যা দুনিয়াবী স্বার্থে দেয়া শুরু করেছে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন