R4BIA এর এক বছর। ভুলি নাই, ভুলবো না।

লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ১১:২৬:৫৬ রাত



১৪ ই অগাস্ট। রাবিয়া ডে। আজকের দিনেই এ শতাব্দীর জঘন্যতম গনহত্যা হয়েছিল।

ফিরে দেখা

আরব বিশ্বে মোবারকই ছিলো পশ্চিমাবিশ্বের পাশার প্রধান গুটি। মোবারকের পতনে প্রথমে হতভম্ব হলেও দ্রুতই তারা তা সামলে নেয়। মোবারকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিককে প্রেসিডেন্ট বানানোর চেষ্টা করে। এজন্য তারা সামরিক সরকারকে দিয়ে মিশরের সবচেয়ে বড় দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সব নেতাদের নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে। তবে ষড়যন্ত্র এবারও ব্যর্থ। ব্রাদারহুড ব্যাপারটি আগে থেকেই বুঝতে পারে বিকল্পপ্রার্থী দিয়ে রেখেছিল। নির্বাচনে ব্রাদারহুড এর বিকল্প প্রার্থী মুহাম্মাদ মুরসি জয় লাভ করে। কিন্তু সামরিক সরকার ফলাফল ঘোষণা নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। আবার জ্বলে উঠে তাহরীর স্কয়ার। সামরিক সরকার ফল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ড. মুহাম্মাদ মুরসি হন মিশরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। পর্দার অন্তরালে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র।

ব্রাদারহুড ও মুরসির ক্ষমতা লাভের কারনে শঙ্কিত হয় পশ্চিমা বিশ্ব তাদের তৈরি বিষফোঁড়া ইসরাইলের নিরাপত্তার। শঙ্কিত হয় সামরিক বাহিনী পশ্চিমাদের সাহায্য বন্ধের আশঙ্কায়। এজন্য তারা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের সাথে যোগাযোগ করে এবং হোয়াইট হাউসের পাশে থাকার আশ্বাস দেয়। আরব বিশ্বে জেঁকে বসা প্রতিটি রাজপরিবার তাদের রাজত্ব হারানোর শঙ্কায় এখন। অর্থাৎ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই ব্রাদারহুড ও মুরসি দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতাদের রোষানলে পড়ে। দায়িত্ব গ্রহণের পরে তারা আরো বেকায়দয় পড়ে কারন বিচারবিভাগ, সামরিক বাহিনী, প্রশাসনের ছোট-বড় সব পদেই মোবারকের আত্নীয়-স্বজন আর চরম অনুগতরা বসে আছেন। তারা মুরসিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। মুরসি প্রশাসনে কিছু পরির্বতন আনেন। অসামান্য দক্ষতায় সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত পাঠান। একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সামলে নেন। ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনা। আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদিআরব, সিরিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা শুরু করে মুরসির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের সমস্যা কে বড় করে দেখিয়ে তারা তাদের অনুগত লোকদের রাস্তায় নামায়। শুরু হয় সহিংস বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা ব্রাদারহুড কার্যালয়ে হামলা করে। সেখনে নিহত হয় ব্রাদারহুড এর বেশ কয়েকজন কর্মী। এরপরও মুরসি শান্ত থাকেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর ব্যাবস্থা নেন না। দেশের মানুষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন। তার পক্ষে বিরোধিতাকারীর চেয়ে কয়েক গুণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পশ্চিমাদের সবুজ সংকেত পেয়ে সামরিক বাহিনী মুরসিকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করেন। সংবিধান রহিত করেন। বন্ধ করে দেয় টিভি ষ্টেশন ও সংবাদপত্র। পৃথিবীর ইতিহাসের এই জঘন্য ক্যুকে পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের জাতিসংঘ ক্যুই বলে না উল্টো অভিনন্দন জানায় সামরিক সরকারকে। সবার আগে জানায় সৌদিআরব। শুধু ইরান ও তুরস্ক এর প্রতিবাদ জানায়। আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশরের সদস্য পদ স্থগিত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সাধারণ মিশরীয়রা। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মিশরীয় কায়রো, আলেকজেন্দ্রিয়ার রাস্তায় নেমে পড়ে। টানা দেড় মাস কায়রোর রাবিয়া স্কয়ার ও নাসের সিটিতে বিক্ষোভ করে। তাদের দাবি একটাই গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট এর মুক্তি।



রাবিয়া স্কয়ার ট্রাজেডি

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে। ২০১৩ সালের ১৪ অগাস্ট সেদিনের সকালটা ছিলো একটু অন্যরকম। ফজরের নামাজ শেষে সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা। সামরিক বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের খবর শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার সত্যতা মিললো। রাবিয়া স্কায়ার চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে সামরিকবাহীনির ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান। ভবনের ছাদে বন্দুকধারী। শুরু হয় ইতিহাসের বর্বরতম ক্রাকডাউন। প্রথমে রাবিয়া স্কায়ার এরপর নাসের সিটি। সরকারই স্বীকার করে ৮০০ নিহত ও ৩০০০ আহত। তবে বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে নিহত মোট ৪০০০ আহত ১০০০০ এরও অধিক। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে লাশ। সামরিক বাহীনি ৩-৪ দিন ধরে এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। ব্রাদারহুড প্রধানের ছেলে, ব্রাদারহুড তৃতীয় নেতার মেয়েসহ ব্রাদারহুডের সব ছোট-বড় নেতার পরিবারের সদস্য মারা যায় এ অভিযানে। গ্রেফতার করা হয় ব্রাদারহুড প্রধান মুহাম্মাদ বদিইসহ প্রায় সব বড় ও মাঝারি সারির নেতা। এ ছাড়া সরকার ২২ জন সেনাহত্যা ও কিছু গীর্জায় হামলা হয়েছে বলে দবি করে। এমন বর্বর গণহত্যার পরও পশ্চিমাবিশ্ব এর তেমন নিন্দা জানায় না। সৌদি আরব উল্টো সমর্থন জানায় সামরিক সরকারকে। শুধু তুরস্ক এ গণহত্যার জন্য সামরিক সরকারের বিচার দাবি করে। জনগণের চাপের মুখে ওবামা প্রসাশন মিশরের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে সৌদিআরব তা পূরণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এতকিছুর পরও ব্রাদারহুড এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান মোহাম্মদ ইজ্জত গার্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন পরিণতি যাই হোক আমরা কখনোই সহিংস আন্দোলনে যাবো না। সেনা হত্যা ও কিছু গীর্জায় হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন সরকার আমাদের উপর হামলা জায়েজ করতে নিজেরাই এটা করেছে। তারা আমাদের সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ দিতে পারবে না।

ভুলি নাই আমাদের শহীদদের।

ভুলবো না।

বিষয়: বিবিধ

১৬৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254078
১৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:১১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:৪৭
197875
চিলেকোঠার সেপাই লিখেছেন : ধন্যবাদ
254099
১৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৯
গ্রামের পথে পথে লিখেছেন : দিনটি ঠিক ৫ই মে, ২০১৩'র মত। মোহাম্মদ পেরমিক মুমিনদের মতিঝিল স্কোয়ার থেকে ঠ্যাংগানি দিয়ে উচ্ছেদের মতই। পুলিশের গুতা খেয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে ছত্রভংগ শাহাদাতী মুমিনের দল জীবন নিয়ে বেঁচে গেলেন।

মোট শহীদের সংখ্যা ৩০ হাজার, তারপর ৩ হাজার এবং তারপর ৩ জন। অতপর সব ঠান্ডা। সবই আল্যার কুদরতী।
254114
১৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:০৬
কাহাফ লিখেছেন : বেদনাময় একটি দিন............।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File