শুভ জন্মদিন প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ০১ জুলাই, ২০১৪, ০৫:৪৭:৫৯ বিকাল
এক সময়ের সম্পদে ঠাসা পূর্ব বাংলা ২০০ বছর ধরে চলা ডাকাতের লুটপাটে আজ দ্বীনহীন । এই পূর্ব বাংলার সম্পদে গড়ে উঠেছে লন্ডন আর কলকাতা শহর। স্যার সলিমুল্লাহ ১৯০৩ সালে বঙ্গ-ভঙ্গ এর দাবি তোলেন। পূর্ব বাংলার মানুষের অব্যাহত দাবির মুখে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে বঙ্গ-ভঙ্গ করেন। দ্বীনহীন বাংলায় কিছুটা আশার জন্ম হয়। শুরু হয় ব্যবসা বানিজ্য। ঘুরতে শুরু করে বাংলার মুসলিমদের ভাগ্যের চাকা। এটা দেখে কলকাতার দাদারা বসে থাকবে কেন? শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রতিদিন কলকাতার রাস্তায় হয় মিছিল, সভা। কলকাতার দাদাদের অব্যাহত চাপের মুখে ১৯১১ সাল এর ১২ ডিসেম্বর। বঙ্গ-ভঙ্গ রদ করা হল। মওলানা মোহাম্মদ আলী বঙ্গভঙ্গ রদ প্রসঙ্গে বলেনঃ এ যেন মুক্তিপ্রাপ্ত গোলামকে আবার গোলামীতে আবদ্ধ করা হল। ফুঁসে ওঠে বাংলার মুসলিম সমাজ। তাদের এই ক্ষোভ প্রশমিত করতে ব্রিটিশ সরকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেয়। এটাও সহ্য হয় না দাদাদের।কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাবু আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র সহ অনেকে প্রতিনিয়ত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা এবং জনমত তৈরীর কাজ চালিয়ে যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহেব আমাদের (বাংলাদেশী) চাষা, মূর্খ বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন না হয় এজন্য ব্রিটিশ সরকারকে স্মারকলিপি দেন। চলতে থাকে ষড়যন্ত্র।
কিন্তু নয়াব সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা এর অটল মত এবং পূর্ব বাংলার মানুষের ক্ষোভ ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।
অবশেষে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে চারটি নতুন প্রোফেসরের পদ তৈরী করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে সরকারী ফান্ডে থাকা পঞ্চাশ লক্ষ টাকা থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে বরাদ্দ দিয়ে দাদাদের মন রেখে ব্রিটিশ সরকার মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় একটি বিপ্লবের।
পৃথিবী শত নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপমা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই হতে পারে। অন্য কারো সাথে এর তুলনা হয় না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে এত অর্জন কখনো পৃথিবীর কোনো দেশের হয়নি। একমাএ বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম আসলে শিক্ষা গবেষণার সাথে সাথে সংগ্রাম, স্বাধীনতা, অর্জন এর কথাও চলে আসে। সাধারন মানুষের এত ত্যাগ ও সংগ্রাম দিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি। বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এদেশের মানুষকে দিয়েছে দুহাত ভরে। দিয়েছে ভাষা , স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, সন্মান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানী সত্যেন বোস, দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব এবং গণিতের তুখোড় শিক্ষক কাজী মোতাহার হোসেন, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ইতিহাসবেত্তা মোহর আলী, নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আব্দুর রাজ্জাক, হুমায়ন আহমেদ, তারেক মাসুদ, আলী আহসান, আহমেদ ছফা, মুনীর চৌধুরি, এফ আর খান, শেখ মুজিবুর রহমান সহ হাজার নক্ষএ। আরও দেবে। ড. আকা ফিরোজ স্যার বলেছিলেন,
বিশ্বের সব দেশের জন্য রাষ্ট্রের উপাদান ৪ টা. নির্দিষ্ট ভুখন্ড, জনগন, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। কিন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উপাদান 5 টি! ৫ম টি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!
আজ এই মহাবিপ্লব, বাংলাদেশ নামক বাগানের সুন্দরতম ফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর জন্মদিন। প্রিয় ঢাবি বেঁচে থাক অযুত কাল।শুভ জন্মদিন প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভুলি নাই আশুতোষ, ভুলি নাই রবিন্দ্রনাথ, ভুলি নাই কলকাতার বাবু সমাজ তোমাদের আচরণ মনে লেগে আছে আজও। ভুলি নাই একটুও । ।
বিষয়: বিবিধ
১১৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন