মুন্সিগঞ্জ লৌহজংয়ের এএসআই এখন ক্ষমা চাইতে ঘুরছেন মন্ত্রণালয়ে

লিখেছেন লিখেছেন রৌদ্র ইকতিয়ার ০২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:১৯:২৮ দুপুর

রৌদ্র ইকতিয়ার, Thumbs Up

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এএসআইয়ের হাতে ইউএনও মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউএনও মামলা করতে চাইলেও পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তাঁরা এ ঘটনায় দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। অন্যদিকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এএসআই এমদাদ ক্ষমা চাইতে মন্ত্রণালয়ে ঘুরছেন বলে তথ্য মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গজারিয়ার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সেটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরে আসে। এর পর নীতি নির্ধারণী মহল তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ীই সোমবার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এম এম জিয়াউল আলমকে। কমিটির সদস্য রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আসাদুজ্জামান মিয়া। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আইজিপিকেও অবহিত করা হয়েছে।গত ২২ মার্চ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনের আগের দিন গজারিয়া উপজেলার ইউএনও এ টি এম মাহবুব-উল করিমকে লৌহজং থানার এএসআই এমদাদ মারধর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গজারিয়া থানায় ইউএনও মামলা করতে চাইলে থানা পুলিশ আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা নেয়নি।জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত ফরিদ উদ্দিন আজ সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ঘটনায় এইএনও ও এএসআই দুজনই মামলা দায়েরের জন্য এজাহার দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো মামলাই রুজু হয়নি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উপরের নির্দেশ যা পাবো তাই করা হবে।’জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে গত ২২ মার্চ বিকেলে ইউএনওর তত্ত্বাবধানে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছিল বিভিন্ন কেন্দ্রে। এ সময় হিউম্যান হলারের স্টিকার ছেড়াকে কেন্দ্র করে ইউনও ও এএসআইয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এরই একপর্যায়ে ইউএনও নিজের পরিচয় দিলে এএসআই এমদাদ বলে, ‘আমি ইউএনওর বাপ’। শুধু তাই নয় ইউএনওর কলার চেপে ধরে এএসআই মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবতী সময়ে ইউএনও এএসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য গজারিয়া থানায় অভিযোগ পাঠান। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি।এ ঘটনা জানার পর স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে মামলা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানকে নির্দেশ দেন। এতেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরের দিন ২৪ মার্চ স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বিকেলের মধ্যে মামলা করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতেও কাজ হয়নি। অবশেষে ২৫ মার্চ দুপুরে স্বরাষ্ট্রসচিবের একান্তসচিব ফিরোজ সরকার মামলা গ্রহণের বিষয়ে পুনরায় কথা বলেন। ২৭ মার্চ মন্ত্রণালয় আবার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয় মামলা নিতে। কিন্তু এসপির তরফ থেকে মামলা রুজুর ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি। এ কারণে গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুন্সীগঞ্জের এসপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। সাত কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল এসপির মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।অন্যদিকে এ ঘটনার পর থেকে এএসআই এমদাদ নিজেকে মুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দৌড়াচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার এমদাদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এসেছিলেন ক্ষমা চাইতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই এমদাদ আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। আপনাদের প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিধি অনুযায়ী এখন এসপিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন এবং কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবও না দেন তা হলে পরবর্তী সময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা আজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ কী ধরনের আচরণ করে তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে ফেনীতে এক এসিল্যান্ড দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে ওসি মারধর করেছিলেন এসিল্যান্ডকে। ওই ঘটনায়ও থানা জিডি ও মামলা নেওয়া হয়নি। উল্টো পুলিশ সেই এসিল্যান্ডকে জামায়াত-শিবির কর্মী বলে প্রচার করতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ওই ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাকে ভালো পোস্টিং দেওয়া হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসিল্যান্ডের গায়ে হাত তোলে পার পেয়ে যাওয়ার কারনে এখন ইউএনওর গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে পুলিশ।’ তিনি দুঃখ করে বলেন,

‘গজারিয়ায় ইউএনওর ওপর শুধু হাতই তোলা নয়, পরিচয় পেয়ে সে ইউএনওর বাপ বলে হুমকি দেয়। কত বড় দুঃসাহস হলে একজন এএসআই ইউএনওকে এ কথা বলতে পারে।’ এই কর্মকর্তার মতো আরো অনেক কর্মকর্তাকে গজারিয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

201644
০২ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : ল্যাও ঠ্যালা এবার Big Grin Big Grin Big Grin
201678
০২ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : আজকাল কিছু কিছু এসআইয়ের স্পর্ধা বেড়ে গেছে। যাকে কথায় বলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়ো। এদেরকে ছেটে ফেলে পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
201746
০২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৪
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : At Wits' End এবার ঠ্যালা সামলাও! Rolling on the Floor Rolling on the Floor
201779
০২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
আনিস১৩ লিখেছেন : Where is chain of command!!!!!!!!
This is the case of a government official,
Now we can think of what can it be regarding common people.

Thanks for sharing.
201801
০২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দেশের কি অবস্থা এই একটি ঘটনা থেকেই বুঝা যায়। ইউএনও থেকে একজন তৃত্বিয় শ্রেনির এএসআই এর গুরুত্ব এই সরকারের কাছে বেশি। কারন পুলিশি নির্যাতনকে কেন্দ্র করেই এই সরকার টিকে আছে।
201827
০২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১২
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :
এর আগে ফেনীতে এক এসিল্যান্ড দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে ওসি মারধর করেছিলেন এসিল্যান্ডকে। ওই ঘটনায়ও থানা জিডি ও মামলা নেওয়া হয়নি। উল্টো পুলিশ সেই এসিল্যান্ডকে জামায়াত-শিবির কর্মী বলে প্রচার করতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ওই ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাকে ভালো পোস্টিং দেওয়া হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসিল্যান্ডের গায়ে হাত তোলে পার পেয়ে যাওয়ার কারনে এখন ইউএনওর গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে পুলিশ

201931
০৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:২১
সাদাচোখে লিখেছেন : এ সরকার যে পুরোটাই উল্টো পথে হাঁটছে, তথা 'মাথা (বিবেক ও যুক্তিবোধ) নীচু করে' 'পা (গোয়ার্তুমী ও পেশী শক্তি) উপরে তুলে' দেশ শাসন করছে - এসব ঘটনা তার প্রতিফলন কিংবা উপসর্গ স্বরূপ। আশা করছি অচিরেই আমরা এর প্রতিফলন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও দেখবো ইনশাল্লাহ্‌।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File