কথায় আছে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় ।

লিখেছেন লিখেছেন গরীবেরবন্ধু জুয়েলখান ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৪৬:২০ দুপুর

রানা আর বর্নির। এই অল্প দিনের পরিচয়েই দুজন দুজনার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। রানা একটি ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করে। কথায় আছে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিজে কাজের সুবাদে নিজের পরিচিত মহলে সে হিরো। বন্ধু বান্ধব সবাই ঈর্ষা করে। তবে কেউই কোনদিন তার কর্মস্থলে গিয়ে খোজ নেয়নি সে আসলে কি কাজ করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বলে মালিকের খুব কাছের মানুষ সে। মালিক তাকে ভালবাসে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলতে মুলত প্রযোজনা সংস্থাকেই বুঝানো হয়। আর প্রযোজনা সংস্থার মালিক মানে প্রযোজক। আর প্রযোজকের কাছের লোক মানেই এর সাথে ভাব রাখলে সিনেমাতে চান্স পাওয়া সহজ। তাই কেউ পারত পক্ষে রানাকে ক্ষ্যাপায়না। বরং সমিহ করেই চলে। বর্নির রানার সাথে এভাবেই পরিচয় ক্লাসের এক বন্ধুর মাধ্যমে। সেই বন্ধুই বর্নিকে রানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বর্নি এমনিতেও নজরকাড়া সুন্দরি। আর সুন্দরি মেয়েদের তারকা জগত হাতছানি দিয়ে ডাকে। কিন্তু শুধু চেহারা দিয়ে এই জগতে চান্স নাই। চেহারা, অভিনয় দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদির সব কিছু থাকলেই হবে না, চাই নিজের লোক।

নিজের লোক ছাড়া কোন যোগ্যতাই যোগ্যতা নয়। বর্নি রানাকে তাই উপরে ওঠার সিঁড়ি ভেবে বসেছে। আর রানা সেই সুযোগটাই নিচ্ছে পর্যায়ক্রমে। এফডিসিতে বেড়াতে নিয়ে যায় বর্নিকে। রানার পরিচিতি আছে এফডিসিতে। অনেক নায়িকারাও চেনে রানাকে। বর্নির সামনেই তারা রানার সাথে হেসে কথাও বলেছে। বর্নির বিশ্বাস জন্মে যে এই রানাই তাকে সুযোগ করে দিতে পারে। আরও ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মিশে বর্নি রানার সাথে। বন্ধুদের কাছে শুনেছে যে সিনেমা টিনেমাতে নাম লেখাতে হলে অনেক সময় এক আধটু ছাড় দিতেই হয়। নইলে নাকি তাদের মন গলেনা। বর্নি সে ব্যাপারেও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবু তার এই জগতে প্রবেশাধিকার চাই। রানাকে কয়েকদিন নিজেদের বাসাতেও নিয়ে গেছে। বর্নির বাবা মা বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। রানাকে তাদের কেমন যেন মনে হয়েছে। বর্নিকে অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে। বর্নি স্বপ্নে বিভোর তারকা জগত নিয়ে। রানা বলেছে বর্নিকে বিয়ে করবে। তাহলে আর কেউ বর্নির কাছে অযাচিত সুবিধা চাওয়ার সাহস করবেনা। বর্নি মহা খুশি। রানাকে তার ভালই লাগে। স্বামি হিসেবে খারাপ হবেনা।

তাই একদিন মার সাথে রাগারাগি করে কৌশলে মাকে দিয়ে ব্লান্ক চেকে সই করিয়ে নিয়ে চার লক্ষ টাকা নিয়ে বর্নি উধাও বাসা থেকে। প্রথমে গিয়ে একটি মহিলা হোস্টেলে উঠে। তিনদিন পরে বাসায় যোগাযোগ করে জানিয়ে দেয় দুশ্চিন্তা না করতে। টাকার জন্য নয়, মেয়ের জন্যই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বর্নির বাবা মা। মেয়ে যেহেতু নিজে থেকেই যোগাযোগ করেছে, তার মানে মেয়ে ভাল আছে। কোন হোস্টেলে আছে সেটা যদিও বলেনি, রাগ আর একটু পরলেই সেটাও জানা যাবে। আরও দুই তিন দিন পর বর্নি রানাকে জানিয়ে দেয় সব কিছু, টাকা পয়সা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে হোস্টেলে ওঠার কথা। রানা বলে, আমার উপর তোমার ভরসা নেই, তাই হোস্টেলে উঠেছ। ভরসা থাকলে আমার বাসাতেই উঠতে। জানোইতো আমি একা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। বর্নি ভাবে, তাইতো? হোস্টেলে ওঠা উচিৎ হয়নি। তারপর রানাকে নিয়ে গিয়ে নিজের সব কিছু আবার গুছিয়ে নিয়ে হোষ্টেল ছেড়ে গিয়ে রানার বাসায় গিয়ে ওঠে বর্নি। প্রথম দিন সারারাত গল্প গুজবেই কাটায় দুজন। দ্বিতীয় দিনেই রানা আপত্তি করে আলাদা বিছানায় শোয়া নিয়ে। বর্নি এইবার একটু ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু বুঝতে দেয়না।

রানা চাপ দেয় এক বিছানায় ঘুমানোর। বিয়েতো করবেই, অসুবিধা কোথায়। কেউ জিজ্ঞেস করলে স্বামি স্ত্রী পরিচয় দিব। বর্নি আর কোন যুক্তি খুজে পায়না। শুধু বলে বিয়েটা সেরে নিয়ে তার পরে..…।রানা কথা শেষ করতে দেয়না বর্নিকে। তারপর তারা বিয়ে না করেই মেতে উঠে প্রাগৈতিহাসিক আদিমতায়। সপ্তাহখানেক যাওয়ার পর বর্নি রানাকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাটা সেরে নিতে বলে। রানা এড়িয়ে যায়। বর্নিকে বলে নায়িকা হতে হলে বিয়েটা এখনই সম্পন্ন করা যাবেনা। তাহলে বর্নি নায়িকা হতে পারবেনা। এইবার বর্নির স্বপ্নগুলো কেমন ধুসর বিবর্নময় মনে হয়। আত্নউপলব্ধি হয় সে ভূল করেছে। মহাভূল। এবার সে রানাকে চাপ দেয় বিয়ে করতে। জানিয়ে দেয়, নায়িকা হতে চাইনা আমি। আমার সব কিছু তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। তার স্বিকৃতি দাও। আমাকে বিয়ে কর। রানা সাফ জানিয়ে দেয়, এই মুহুর্তে তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। তার চেয়ে বর্নিকে হোস্টেলে কিম্বা বাসায় ফিরে যেতে পরামর্শ দেয়। বর্নির দুছোখে অন্ধকার নেমে আসে। রানাকে বলে দেয় আমাকে বিয়ে না করলে আত্নহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবেনা।

পরদিন সকালেই প্রতিবেশি ফ্ল্যাটের লোকজন বিষের দুর্গন্ধ পায়। সাড়া সিঁড়িময় বিষের দুর্গন্ধ। রানার ফ্ল্যাট থেকেই গন্ধ আসছে। ফ্ল্যাটটি ভিতর থেকে বন্ধ। অথচ ফ্ল্যাটের মালিককে গতকাল বের হতে দেখেছে সবাই, ফিরতে দেখেনি কেউ। নববিবাহিত স্ত্রী বিষপান করেনিতো? পুলিশে খবর দেয়া হয়। ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকেই দেখে বর্নির মৃত নিথর দেহ পরে আছে মেঝেতে। বমি নোংরা দিয়ে চারদিকে সয়লাব। বিছানায় একটি চিরকুটে বিস্তারিত লেখা। দৈনিক পত্রিকা গুলোতে শিরোনাম হয়, বিয়ের প্রলোভোনে লিভটুগেদার, বিষপানে আত্নহত্যা তরুনির।সংগৃতীত

বিষয়: বিবিধ

১২৯৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

201269
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
ঘাড় তেড়া লিখেছেন : কি আর করা,
আন্ডা বাচ্চাসহ ধরা পড়া।

তার পরও কিছু মানুষের চোখ খুলবে না...
কারন, চেতনার পর্দা পড়েছে তাদের চোখে...

201272
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
ঘাড় তেড়া লিখেছেন : কি আর করা,
আন্ডা বাচ্চাসহ ধরা পড়া।

তার পরও কিছু মানুষের চোখ খুলবে না...
কারন, চেতনার পর্দা পড়েছে তাদের চোখে...
201277
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৫০
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : এগুলো স্বপ্ন নয়; দু:স্বপ্ন! এমন দু:স্বপ্নপুরণের পিছনে সময় কাটাতে গিয়েই জীবনটা হারাচ্ছি অহরহ।
201348
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
ফেরারী মন লিখেছেন : সেরাম হয়েছে ভাই সেরাম... লিখতে থাকুন
201367
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
নীল জোছনা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
235826
১৭ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৩
গরীবেরবন্ধু জুয়েলখান লিখেছেন : সবাইকে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File