আমি কে?? লেখকঃ আবু তাহের মিছবাহ্' পর্ব (২)

লিখেছেন লিখেছেন মারইয়াম উম্মে মাবরুরা ১৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:২২:১৪ বিকাল

যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে তারা মৃত্যুর পর কবরে শান্তি পায়। আর যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে মৃত্যুর পর কবরে তাদের কঠিন শাস্তি হয়। তারপর আল্লাহ সবাইকে কবর থেকে বের করে হাশরের মাঠে জমা করবেন এবং সবার বিচার করবেন। যারা ভালো তাদেরকে জান্নাত দেবেন। সেখানে তারা চিরকাল শান্তিতে থাকবে। আর যারা মন্দ তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে তারা অনন্তকাল কঠিন আযাব ভোগ করবে।

আমি বললাম, আমাকে সব কথা বলে দিয়ে ভালোই করেছো। আমি যখন দুনিয়াতে যাবো তখন আল্লাহর হুকুম মেনে চলবো, কখনো আল্লাহর নাফরমানি করবো না। কারণ আমি জান্নাতে যেতে চাই, জাহান্নামে যেতে চাই না।

***

আমার কোন কষ্ট নেই। ফিরেশতাদের সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগে, আমি অনেক কিছু জানতে পারি। আমাকে গর্ভে ধারণ করে আমার মা কত কষ্ট করছেন এখন আমি তা বুঝতে পারি। আমাকে গর্ভে নিয়েই আমার মাকে উঠতে হয়, বসতে হয়, চলতে হয়, সব কাজ করতে হয়। কত কষ্ট! আমার মা কেন এত কষ্ট করছেন!

ফিরেশতারা বলছে, আমি নিজেও বুঝতে পারি, আগের চেয়ে আমি কিছুটা বড় হয়েছি। আমি যত বড় হচ্ছি, আমার মায়ের কষ্ট তত বেশী হচ্ছে। মায়ের কষ্ট হয় ভেবে আমারও কষ্ট হয়। আমার অনেক নড়াচড়া করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু করি না। মায়ের যে কষ্ট হয়! কিন্তু সবসময় মনে থাকে না তো! একদিন হাতপাগুলো একটু জোরে নেড়ে ফেলেছি, আর আমার মা‘উফ’করে উঠেছেন। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম। তখন নিজের উপরই আমার খুব রাগ হলো। কেন মাকে কষ্ট দিলাম!

আরো কিছু দিন পর আমি আরেকটু বড় হয়েছি। এখন আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। আগে বুঝতাম না; এখন বুঝতে পারি, কখন আমার মা ঘুমিয়ে আছেন, কখন জেগে আছেন।

একদিন ফিরেশতা বললেন, এই যে, এখন তোমার মা নামায পড়ছেন! তারপর থেকে আমি বুঝতে পারি, কখন আমার মা নামায পড়েন।

এখন তার নামায পড়তে, সিজদা দিতে অনেক কষ্ট হয়। তবু তিনি নামায পড়েন। নামায পড়া যে আল্লাহর হুকুম!

একদিন খুব জোরে শব্দ হলো। আমি ভয় পেয়ে খুব জোরে নড়ে উঠলাম। আমার মা‘আহ’করে উঠলেন, তারপর চুপ হয়ে গেলেন। ধুক, ধুক শব্দটাও খুব কমে গেলো। আমার খুব কান্না পেলো। ফিরেশতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার মায়ের কী হলো, ফিরেশতা?

ফিরেশতা বললো, তোমার মা এখন অনেক দুর্বল তো! তাই তোমাকে বহন করে হাঁটতে তার অনেক কষ্ট হয়। তবু তাঁকে হাঁটতে হয়, কাজ করতে হয়। এখন হাঁটতে গিয়ে তোমার মা পড়ে গিয়েছেন। পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন।

ইস্! আমারই জন্য আমার মায়ের এত কষ্ট! আমাকে বলে দাও না ফিরেশতা! কী করলে আমার মায়ের কষ্ট দূর হবে?

ফিরেশতা বললেন, তুমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করো।

সেদিন থেকে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করি; হে আল্লাহ, রূহের জলসায় তোমাকে রবব বলেছি। এখন তুমি আমার মাকে শক্তি দাও, তার কষ্ট দূর করে দাও।

ফিরেশতারা আমার দু‘আ শোনে, আর বলে, তুমি খুব ভালো ছেলে। আল্লাহ তোমার দু‘আ কবুল করবেন।

ছেলে! এটা তো নতুন শব্দ! ছেলে মানে কি ফিরেশতা!

আমার প্রশ্ন শুনে ফিরেশতাদের কী যে হাসি! ফিরেশতা আমাকে ছেলে আর মেয়ে বুঝিয়ে দিলো। ফিরেশতা বললো, তুমি যেমন তোমার মায়ের গর্ভে এসেছো, তেমনি আরো অনেক রূহ আরো অনেক মায়ের গর্ভে এসেছে। কেউ হয় ছেলে, কেউ হয় মেয়ে।

এখন আমি বুঝতে পেরেছি, রূহের জগতে প্রতিদিন কিছু রূহ কেন কমে যেতো। আসলে তাদের শরীর তৈরী হতো, আর তারা মায়ের গর্ভে চলে আসতো।

একদিন শুনি আমার মা কোরআন তিলাওয়াত করছেন। আমি বুঝতাম না, এখন বুঝি। মা যখন তিলাওয়াত করেন আমার কী যে ভালো লাগে! তখন আমি একদম নড়ি না। চুপচাপ শুনতে থাকি মায়ের তিলাওয়াত।

তিলাওয়াত শেষ করে আমার মা মুনাজাত করছেন, আমি শুনতে পাচ্ছি। মা কাঁদছেন; কান্নাও শুনতে পাচ্ছি। কেঁদে কেদেঁ মা বললেছন, আয় আল্লাহ! আমার সন্তানকে তুমি রক্ষা করো; সুস্থ রাখো। হে আল্লাহ সন্তানকে তুমি নেক বানিও। হাফেয আলেম বানিও।

আমি খুব অবাক হলাম। মা তো আমাকে দেখেননি। আমি তো এখনো দুনিয়াতে যাইনি। তবু আমার জন্য মায়ের কত চিন্তা! মা তো আল্লাহর কাছে নিজের জন্য কিছু বলেননি, শুধু আমার জন্য দু‘আ করেছেন।

ফিরেশতা বললেন, এখন তুমিই তোমার মায়ের সব। তাই মা শুধু তোমার কথা ভাবেন। শুধু তোমার জন্য দু‘আ করেন।

আমার মা খুব ভালো, না ফিরেশতা?!

ফিরেশতা হেসে বললেন, সব মা-ই তার সন্তানের জন্য ভালো। সব মা-ই তার সন্তানের জন্য একই রকম কষ্ট করেন।

আরো কিছু দিন পর ফিরেশতা বললেন, আমার নাকি দুনিয়ায় যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আর বেশী দেরী নেই। তখন ফিরেশতা বললেন, তোমাকে একটা কথা বলি, মন দিয়ে শোনো।

তুমি যখন দুনিয়াতে যাবে এবং একসময় বড় হবে তখন কিন্তু তোমার মাকে কষ্ট দিও না। যারা মাকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না। তারা জান্নাতে যেতে পারে না। তারা জাহান্নামে যায়।

আমি অবাক হয়ে বললাম, যাহ!মাকে কষ্ট দেবো কেন? তিনি তো এখনই আমার জন্য কত কষ্ট করছেন!

ফিরেশতা হেসে বললেন, কিন্তু দুনিয়াতে গিয়ে অনেকে এ কথা ভুলে যায়। সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে মা কত কষ্ট করেছেন তা ভুলে যায়। ভুলে গিয়ে মাকে কষ্ট দেয়।

আমি বললাম, তুমি দেখে নিও ফিরেশতা, আমি তাদের মত হবো না। আমি আমার মাকে কখনো কষ্ট দেবো না।

***

কত ছোট ছিলাম আমি! কত ছোট ছিলো আমার শরীর! এখন আমি আর সেই ছোট্টটি নই। ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়েছি। ফিরেশতা আমাকে বলেছেন। দুনিয়াতে বাতাস আছে। মানুষ নাক দিয়ে বাতাস গ্রহণ করে, আবার নাক দিয়ে বাতাস ত্যাগ করে। এটাকে বলে শ্বাস-নিঃশ্বাস।শ্বাস-নিঃশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকে। আমার মা তো দুনিয়াতে আছেন। সেখানে তিনি শ্বাস গ্রহণ করছেন, আবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। আমার মায়ের শ্বাস-নিঃশ্বাসের মাধ্যমেই আমি বেঁচে আছি। আমি যে, আমার মায়েরই অংশ!

ফিরেশতা একবার আমাকে আববার কথা বললেন। আমি অবাক হয়ে বললাম, আববা! আববা আবার কে? আম্মাকে তো চিনতে পেরেছি। আম্মার বুকের ধুক ধুক শব্দ আমি শুনতে পাই। কিন্তু আববা! কই তাকে তো চিনি না।

ফিরেশতা হেসে বললেন, আম্মাকে যেমন করে চিনেছো, আববাকে এখন তেমন করে চিনতে পারবে না। যখন তুমি দুনিয়াতে যাবে তখন তোমার আম্মা তোমাকে চিনিয়ে দেবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৩০১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

210091
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
অপ্রিয় সত্য কথা লিখেছেন : শুকরিয়া,পুরা পড়তে পারি নাই।পরে পড়বো।ইনশাআল্লাহ।
210116
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
নীল জোছনা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো আপনার আব্বাকে নিয়ে লেখাটা পড়ে। পৃথিবীর সব আব্বাই মনে হয় এমনই হয়।
210127
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:১৬
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে ... চালিয়ে যান। আরো বেশী বেশী লিখুন
210206
১৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
ফেরারী মন লিখেছেন : পগড়ে ভালো লাগলো বেশ।
210238
১৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
217228
০৪ মে ২০১৪ দুপুর ০১:০১
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : খুব সুন্দর লেখাটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দেন। আর এই লেখাটা হুজুরের কোন বইতে আছে, নাম দিলে উপকৃত হবো। সংগ্রহ করতে ইচ্ছে করতেছে।

আপনাকে প্রিয় ব্লগারের তালিকায় এড করে নিলাম। Rose Rose Good Luck Good Luck Rose Rose অন্নেক ভালো লাগলো Good Luck Good Luck যাজাকাল্লাহু খাইর।
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
170274
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : লেখাটি কোনো বইয়ের নয়। আল কাউসার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
222881
১৮ মে ২০১৪ সকাল ০৬:৩৯
কাজী যুবাইর মাহমুদ লিখেছেন : শেখার আছে অনেক কিছু... ভালো লাগলো
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
170272
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার মত নগন্যের ব্লগে মন্তব্য করার জন্য।
256823
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : অসংখ্য ধন্যবাদ শুকরিয়া ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File