আমি কে?? লেখকঃ মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ' পর্ব (১)

লিখেছেন লিখেছেন মারইয়াম উম্মে মাবরুরা ১৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:১৭:২৩ রাত

আমার কোন নাম ছিলো না, আমার কোন শরীর ছিলো না। আমাকে তখন শুধু রূহ বলা হতো। তখনকার কথা আমার কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে, সমস্ত রূহকে আল্লাহ একত্র করেছিলেন। রূহের সেই জলসায় আমিও হাযির ছিলাম। নূর থেকে আওয়াজ শুনেছিলাম, তোমরা আমাকে চিনেছো? বলো তো আমি কে? আমি কি তোমাদের রব নই? সমস্ত রূহ একসঙ্গে বলেছিলো, আমিও বলেছিলাম, অবশ্যই আপনি আমাদের রব।

রূহদের সেই জলসার পর কত যুগ পার হলো, আমার কিছু মনে নেই, আমার কিছু জানা নেই।

কিছুদিন আগে হঠাৎ আমাকে বলা হলো, চলো, তোমার শরীর তৈরী হয়েছে। এখন তোমাকে রূহের জগত ছেড়ে প্রবেশ করতে হবে শরীরের জগতে। আমি অবাক হলাম, কারণ আমি জানি না, শরীর কী? শরীর কোথায়? শরীরের জগত কেমন? সেখানে গিয়ে আমি কী করবো?

হঠাৎ আমি নড়ে উঠলাম। আমি?! আমি কে? আমি কোত্থেকে এলাম? কোথায় এলাম? এখানে এত অন্ধকার কেন? হঠাৎ দেখি, চারদিকে অনেক নূর! মনে হয় আমার পরিচিত! কোথায় যেন দেখেছি! কোথায় যেন একসঙ্গে থেকেছি! তাতে আমার অজানা ভয়টা দূর হলো, অস্থিরতাটা শেষ হলো। তবু কিসের যেন একটুখানি অস্বস্তি! কী যেন ছিলো! কী যেন নেই! নূরগুলো আমাকে দেখে হাসে, যেন অভয় দিতে চায়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কে আমি? কে তোমরা? কোথায় যেন তোমাদের দেখেছি!

নূরগুলো খুব কোমল করে বললো, আমরা ফিরেশতা। তুমি ইনসান। যতদিন তুমি এখানে থাকবে, আল্লাহর হুকুমে আমরা তোমার দেখা-শোনা করবো এবং তোমাকে হেফাযত করবো।‘আল্লাহ’শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি খুশী হয়ে গেলাম।‘কী যেন ছিলো, কী যেন নেই’সেই অস্বস্তিটা একেবারে দূর হয়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো রূহের জলসা। সেই জলসায় আল্লাহ সমস্ত রূহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? সমস্ত রূহ বলেছিলো, আমিও বলেছিলাম, অবশ্যই আপনি আমাদের রব।

নূরের ফিরেশতাদের জিজ্ঞাসা করলাম, আমি এখানে কেন? এখানে এত অন্ধকার কেন? রূহের জগতে তো কোন অন্ধকার ছিলো না। শুধু নূর ছিলো, সবকিছু কত আলোকিত ছিলো!

ফিরেশতারা বললো, তুমি রূহের জগতে ছিলে। এখন তুমি তোমার শরীরে প্রবেশ করেছো। আল্লাহর হুকুমে এখানে তোমার শরীর তৈরী করা হয়েছে এবং তোমাকে তোমার শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে।

ফিরেশতাদের কথায় আমি খুব অবাক হলাম। নড়াচড়া করে আমার শরীরকে বোঝার চেষ্টা করলাম। ফিরেশতারা ব্যস্ত হয়ে আমার চারপাশে জড়ো হলো, আর আমাকে বললো, বেশী নড়াচড়া করো না, তাহলে তোমার মায়ের কষ্ট হবে। আমি আরো অবাক হলাম, মা! রূহের জগতে এ শব্দ তো কখনো শুনিনি! বড় মধুর তো শব্দটি! মা! কাকে বলে মা! কেমন তিনি দেখতে! কিছুই বুঝতে না পেরে আমি শুধু অবাক হই, আর ভাবি, মা! মা! কে আমার মা! কোথায় তিনি! কোথায় আমি! আমার মায়ের কাছে কীভাবে যাবো আমি!

ফিরেশতারা হেসে আমাকে বলে, তুমি তো এখন তোমার মায়ের গর্ভে, তোমার মায়ের উদরে। তাই তো এখানে এত অন্ধকার। তুমি এখন এখানে থাকবে। তারপর যখন সময় হবে তখন আল্লাহর হুকুমে তুমি মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়ে দুনিয়াতে যাবে। তখন তোমার মাকে তুমি দেখতে পাবে। তোমার মা তোমাকে অনেক আদর করবেন। এখন যেমন অনেক কষ্ট করে তোমাকে গর্ভে ধারণ করছেন, তেমনি তখন অনেক কষ্ট করে তোমাকে লালন পালন করবেন।

গর্ভ, উদর, দুনিয়া- এগুলো আমি বুঝি না, শুধু‘মা’শব্দটি আমার খুব ভালো লাগে। আমি ব্যাকুল হয়ে ফিরেশতাদের জিজ্ঞাসা করলাম, আমার জন্য আমার মায়ের খুব কষ্ট হয়? ফিরেশতা বললো, হাঁ, খুব কষ্ট হয়, তবে তোমার মা তোমার জন্য সব কষ্ট হাসিমুখে গ্রহণ করছেন। তিনি যে তোমাকে ভালোবাসেন! তিনি যে তোমাকে তার কোলে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন।

আমার তখন নড়াচড়া করতে খুব ইচ্ছে হলো। কিন্তু আমি চুপ করে থাকলাম। মনে পড়লো, ফিরেশতাদের কথা, নড়াচড়া করলে আমার মায়ের কষ্ট হবে। এমনিতেই তো তার কত কষ্ট হচ্ছে। মা! আমার মা! তুমি দেখতে কেমন মা? তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মা!

কিসের শব্দ হচ্ছে! ধুক ধুক ধুক! একটানা শব্দ, কিসের শব্দ! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এ শব্দটা তো রূহের জগতে ছিলো না! আমি অবাক হয়ে ফিরেশতাদের জিজ্ঞাসা করলাম। আমার অবাক হওয়া দেখে ফিরেশতারা হাসলো। হেসে বললো, এই যে দেখো, এটা হলো তোমার হৃদপিন্ড। মানুষ যতক্ষণ বেঁচে থাকে ততক্ষণ তার হৃদপিন্ড ধুক ধুক করে। যখন মৃত্যু হয় তখন ধুক ধুক করা বন্ধ হয়ে যায়। তোমার মায়ের হৃদপিন্ডটা ধুক ধুক করছে, তোমার হৃদপিন্ডেও সেই ধুক ধুক আওয়াযটা হচ্ছে। এই যে দেখো, তোমার নাড়ি তোমার মায়ের সঙ্গে লেগে আছে। তাই তো তুমি তোমার মায়ের প্রাণ থেকে প্রাণ পাচ্ছো! তোমার মায়ের শরীর থেকে এই নাড়ির মাধ্যমে তুমি তোমার খাবার আহরণ করছো। তুমি তো এখন তোমার মায়েরই অংশ।

হৃদপিন্ড, প্রাণ, মৃত্যু, খাদ্য, এগুলো সব নতুন শব্দ। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি ফিরেশতাকে শব্দগুলোর অর্থজিজ্ঞাসা করলাম। ফিরেশতা হেসে বললেন, রূহ যতক্ষণ শরীরে বাস করে ততক্ষণ মানুষ বেঁচে থাকে। যখন রূহ শরীর থেকে বের হয়ে যায় তখন মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় রূহ আবার আল্লাহর কাছে ফিরে যায়। আমি অস্থির হয়ে বললাম, আমাকে আমার শরীর থেকে এখনই বের করে নাও। আমার কিছু ভালো লাগছে না। আমি এখনই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে চাই।

ফিরেশতা হেসে বললো, সে তো হবে না। যত দিন আল্লাহর ইচ্ছা তত দিন রূহকে শরীরের জগতে বাস করতে হবে। যখন আল্লাহর হুকুম হবে শুধু তখন রূহ শরীর থেকে বের হবে এবং আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে।

আচ্ছা, আমি তো রূহ, আমি যখন শরীর থেকে বের হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো, তখন শরীরটার কী হবে?

ফিরেশতা হেসে বললো, তোমার সবকিছু জানার খুব ইচ্ছে, না! ভালো; শোনো, শরীরটাকে তখন কবর দেয়া হবে।

কবর! সে আবার কী!

কবর কি তা এখন তুমি বোঝবে না। যখন দুনিয়াতে যাবে তখন বুঝতে পারবে। এখন শুধু এতটুকু বুঝে রাখো, এই যে তোমার মায়ের গর্ভ, কবরও ঠিক এমন কিছু। মায়ের গর্ভ থেকে তুমি দুনিয়াতে যাবে, তারপর দুনিয়া থেকে কবরের ভিতরে যাবে।

ফিরেশতাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, দুনিয়াটা কী? সেখানে গিয়ে কী হবে?

ফিরেশতা বললেন, মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়ে তুমি যেখানে যাবে সেটাই হলো দুনিয়া। সেখানে গিয়ে তুমি ধীরে ধীরে বড়ো হবে। তখন তোমাকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

২০৫০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

209189
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৪৮
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম। কবরের কথা শুনলে বুকের ভিতর ধুকপুক করে। Crying
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৪
158600
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা হে আল্লাহ কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিন।
209193
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : অনেক সুন্দর লেখা। আসলে আমি কে? এ আমিকে চিনতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতকে বুঝতে সহজ হয় এবং কামিয়াব হওয়া যায়। অনেক ধন্যবাদ।
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৭
158605
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। আমি কে? কেন এলাম পৃথিবীতে, কেনইবা চলে যাবো তা নিয়ে আমরা যদি ভাবতাম,আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে জীবন কাটাতে পারতাম,তাহলে জীবন কামিয়াব হয়ে যেত! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
209207
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : হে পথিক দাঁড়াও হেথায়
ছিলাম তোমারি মত আজ আমি কোথায় Sad Sad
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৮
158606
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : কোথায় ছিলাম কোথায় এলাম? কোথায় আমি যাবো?
209208
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৯
বিন হারুন লিখেছেন : আচ্ছা আবূ তাহের মিসবাহ সাহেবের বাড়ি কি নোয়খালী? তিনি কি ২০০১ কিংবা ২০০২ সালে মৃত্যু বরণ করেছেন?
১৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩২
157989
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : তিনি এখনও জীবিত, আল্লাহ'র রহমতে। তবে বাড়ি কোথায় বলতে পারি না।
১৮ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
158018
বিন হারুন লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ,
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
158608
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ তিনি এখন ও জীবিত। আল্লাহ তাঁর নেক হায়াত কে বাড়িয়ে দিন।তাকে হারালে অনেক মূল্যবান কিছু হারাবো। তিনি ঢাকায় থাকেন।
২৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
172614
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : উনার আরও লেখা পড়তে চাইলে Click this link
২৪ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
172647
বিন হারুন লিখেছেন :

হারিকেন ভাইয়া
209211
১৭ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:২৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক গুরুত্বপূর্ণ লিখা শেয়ার করে ধন্যবাদ Good Luck Rose
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
158611
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : আপনি কষ্ট করে পড়েছেন তাই আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
209522
১৮ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
158614
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : ফুলগুলো আদীব হুজুরের কাছে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিবোHappy
১৯ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৩
158616
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Big Grin Big Grin Big Grin ভালো বুদ্ধি Give Up তয় আপনার জন্য কি দেবো? ব্লগে ডিমের উপকারিতা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ব একটা পোস্ট পড়লাম, ভাবছি সবাইকে এখনথেকে ফূলের পরিবর্তে ডিম দেয়া শুরুকরবো কিনা D'oh Whew! Nail Biting Cook Cook Cook Cook Cook
222882
১৮ মে ২০১৪ সকাল ০৬:৩৯
কাজী যুবাইর মাহমুদ লিখেছেন : অজস্র শব্দভান্ডার দেখি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File