সততার কাঠগড়ায় আকাশ মালিকঃ আবু লাহাব সম্পর্কে যে মিথ্যা বলা হয় নি
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ১৬ মে, ২০১৫, ১২:২৬:১২ দুপুর
আকাশ মালিকের বই পড়ে আমি হতবাক হয়ে যাই। একজন মুক্তমনা লেখক দাবীদার কিভাবে এতোটা মিথ্যাচার বানোয়াট কিছু রচনা করে পাঠককে ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা করতে পারে! হয়তো তিনি জানতেন তার পাঠকরা সবাই মুক্তমনা - সে যা লিখেছে তা যাচাই না করেই গলগল করে গিলে যাবে। মুক্তমনারা কেউ এ ব্যাপারে হাতও তুলে নাই। তারা বোকার মতোই গিলেছে। একটা আয়াত নিয়ে যে আকাশ মালিক কি কি বলল - তা আদৌ কোরআন এর কিনা তাও জানার ইচ্ছা রাখে না। আমাকে যখন কেউ বলে ভাই আপনি মুসলিম কেনো? আমি বলি নাস্তিক এতো বোকা কেনো? - কথাটা মাঝে মাঝেই মনে আসে।
যাই হোক, আকাশ মালিকের বই যে সত্য বলা হয় নি বইয়ের বোকার স্বর্গ খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৩ - এর স্ক্রিনশট তুলে ধরলাম। আপনারা এটা ডাউনলোড করে আগে মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। কারন, এই দুই পৃষ্ঠায় (৫৩-৫৪) অনেক অসত্য বলা আছে। সেগুলো জানার পরে আপনার মনে হবে- বইয়ের নাম দেওয়া উচিত "যে মিথ্যা বলা হয় নি"
ক
স্ক্রিনশট পড়ার পরে, যারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত মোটামুটি ধারণা রাখেন তারাও চমকে যাবেন, আতকে উঠবেন।
আকাশ মালিক এর লেখা আমি কোটেশন করব না। কারন, লেখাটা টাইপ করতে সময় লাগবে , তার বইয়ে কপিরাইট দেওয়া তাই কপি পেস্ট করা যায় না।
আকাশ মালিক আবু লাহাবের পরিচয় তুলে ধরেছেন। এরপরে বলেছেন, নবীজির দুই কন্যার সাথে আবু লাহাবের দুই পুত্রের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু , নবীজি যখন নিজেকে নবী দাবী করলেন, তখন আবু লাহাবের পুত্রগণ নবীজির কন্যাদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। নবীজি তখন মানসিক কষ্ট পান।.............. এরপরে নবীজি অন্যান্য গোত্রদের সাথে ইসলামিক ইমানদারি কথা বলছিলেন তখন আবু লাহাব এসে বাধা দেয় আর এই সূরা নাজিল হয়। নবীজি তার পারিবারিক ব্যাপার গুলোতেও কোরআন নাজিল করেছেন -এটা নবীজি ঝগড়াঝাঁটি হিসেবে বলেন। কিন্তু এটাকে সুরা হয়ে যায়। মুসলিমরা নামাজে এই সূরা পাঠ করে। "
কথাগুলোর কোনো প্রমাণ দেন নাই। নিজের মন মোতাবেক ব্যাখ্যা করেছেন, তথ্য প্রমাণ দেখলে সে নিজেই লজ্জায় কি বোর্ড থেকে হাত তুলে নেবে। এই সূরা নাজিলের ঘটনা জানেনা এমন মানুষ খুবই কম। আমি নিচে সহিহ বুখারী শরীফের হাদিস তুলে ধরছি। এখানে এই সূরা সম্পর্কে যা যা লেখা আছে তা ই দেখালাম।
উনি বললেন, এটা কোরআন এর আয়াত নাকি নবীর বাণী এটা নিয়ে মতভেদ আছে। আমি চারটা তাফসীর দেখলাম তার একটাও পেলাম না যেটায় এই হাদিস আর আনুষঙ্গিক কথা ছাড়া উপস্থাপিত কিছু লেখা ছিল। সে কোথা থেকে এরকম উদ্ভট জিনিস প্রচারণা করছে সেটাই আমার মাথায় আসছে না। তাফসীর এর লেখা অনেক বড় তাই উল্লেখ করলাম না। আপনারা যারা মুক্তমনা তারা তথ্য গুলো যাচাই করে নিবেন।
কতো খানি পরিবর্তন করেছে - সেটা কল্পনা করা যাচ্ছে? তার বই যারা পড়েছে, তারা কি এই নিয়ে কখনো প্রশ্ন করেছে? করে নাই। তারা কি রকমের মুক্তমনা সেটা ভালো মতোই বোঝা যাচ্ছে।
এরপরে বলল - যে আবু লাহাব নামটা নাকি নবীজি দিয়েছে। নবীজি বলেছেন "ধ্বংস হও, অনির্বাণ অগ্নিশিখায় জ্বলতে থাকো'"। এরপরেই নাকি আব্দুল উজ্জার নাম হয়ে গেলো আবু লাহাব - অগ্নিশিখার পিতা।
এর আগে তিনি বললেন , আয়াত টা নবীজি বলেছে। এখন বলছে যে, নবীজি বলেছে ধ্বংস হও, অনির্বাণ অগ্নিশিখায় জ্বলতে থাকো'"। কোনটা সঠিক? নিজের কথায় কথায় বিরোধিতা এসে যাচ্ছে। ইবনে কাসির এর তাফসীর এ লেখা আছে ভিন্ন কথা। আবু লাহাবের গায়ের রঙ আর শ্রী এরকম ছিলো তাই এই নাম দেওয়া হয়েছিলো। স্ক্রিনশট দিচ্ছি। দেখলেই বুঝতে পারবেন, আবু লাহাব নাম টা নবীজি দেন নাই।
এরপরে তিনি জেনে গেলেন, সচেতন পাঠকের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, কেনো নবীজি আবু লাহাবের পুত্রদের সাথে কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। এর উত্তরও তিনিই দিয়ে দিলেন। এটা নিয়েও কোনো সচেতন পাঠক প্রশ্ন তুলে নাই। নবীজি নাকি ধনী শক্ত সমর্থন পাওয়ার জন্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন। "
নবীজি ছিলেন উচ্চ বংশের ব্যক্তি। তার মেয়েরাও উচ্চ বংশেরই সন্তান। সাধারণত, উচ্চ বংশের মেয়ের সাথে উচ্চ বংশীয় পুত্রদেরই বিবাহ হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে আবু লাহাবের পুত্ররাই অধিক যৌগ্য। আর মেয়েদের বিয়ে দিয়ে কোনো দিন জামাইয়ের সম্পদ সমর্থন পাওয়া যায়? কোনো মেয়ে কি ধনী জামাইয়ের সম্পত্তি বা ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? পারে না। নবীজি কি পেরেছেন? পারেন নি। নবীজির মেয়েদের তো তালাক দিয়েই দিলো। নবীজির প্লান ফেইল হলো - কিন্তু ইসলাম প্রচার কি বন্ধ ছিলো? অবশ্যই না। আবু লাহাব ছাড়াই সাচ্ছন্দে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। এটা নবীজির প্লান বলে যে অভিযোগ তিনি তুলেছেন - তা কতোটা ভিত্তি হীন অমূলক তা কিছু হলেও ধারণা পাঠক পেয়েছেন।
এরপরে সূরা লাহাবের প্রথম আয়াত নিয়ে হাস্যকর প্রশ্ন তুলেছেন। সূরা লাহাবের প্রথম আয়াত :
ধ্বংস হোক আবু লাহাব। " আয়াত তুলে ধরে বলেছেন, আল্লাহ্ যে বলেছেন : আমার যখন কিছু করতে ইচ্ছা করে তখন শুধু বলি হয়ে যাও ' আর হয়ে যায়। তাহলে আয়াতে বলছে ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্ত। ধ্বংস তো হল না! এর মানে এটা নবীজি বলেছে।
বুখারী শরীফের হাদিসেই এর ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। ধ্বংস অর্থ ক্ষতি, বিদ্ধস্ত। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য
এরপরেও অর্থের কথা বাদ ই দিলাম। এক জায়গায় আল্লাহ্ বলছেন, আমার যখন যা "ইচ্ছা" হয় আমি শুধু বলি হও আর হয়ে যায়। এখানে ইচ্ছা " শব্দটিতে গুরুত্ব দিন। আর আবু লাহাব সূরায় আল্লাহ্ আবু লাহাবকে অভিশাপ দিচ্ছেন। তাকে জানাচ্ছেন সে ধ্বংস হোক। তার হাত ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক সে যা উপার্জন করে।
এর ভাবার্থ হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হোক সে। তার হাত ( উপার্জন এর হাতিয়ার) ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক সে যা উপার্জন করে।
তার উপার্জন পরোকালে কোনো কাজেই আসবে না। এটাই বলা হয়েছে। এবং আবু সুফিয়ান রাঃ এর বোন আর আবু লাহাবের স্ত্রী যে কিনা কাটাযুক্ত গাছ নবীজির পথে বিছিয়ে রাখতো তাকে বলছেন, তার গলায় আগুনের দড়ি পড়ানো হবে। এটুকুই কাহিনী, সেটাকে টেনে এত্তো বড় করেছেন।
তার পাঠকরা যে কতো উন্নত মনস্ক তা আমরা ইতিপূর্বে অবগত হয়েছি। এখনো এই পোষ্টে প্রত্যক্ষ করলাম। আশা করি না তবুও আকাশ মালিল তার বইয়ের এই ভুল সংশোধন করবেন। তার পুরো বই পড়ে আমার কোনো অনুভূতি হয় নি। কারন, এগুলোর প্রত্যেকটাই মিথ্যা আর অজ্ঞতায় ঠাসা। ব্যাপার গুলো জানাতে সময় লাগে, তাই লিখতে পারছি না। যদি সময় পেতাম তাহলে পুরো বইয়েরই একটা রিভিউ জবাব দেওয়া যেতো। তবুও আমি মাঝে এটা অব্যাহত রাখব। ইনশাআল্লাহ
আকাশ মালিকের বইয়ের আরো কিছু জবাবসূচক লেখার সংকলন
আকাশ মালিক সম্পর্কে যে সত্য বলা হয় নি
সততার কাঠগড়ায় আকাশ মালিকঃ ইসলাম কি পৌত্তলিকতা মুক্ত?
সততার কাঠগড়ায় আকাশ মালিক: পৌত্তলিকতার মিথ্যা অভিযোগ
সততার কাঠগড়ায় মুক্তমনা(!) আকাশ মালিক: নবীজির(সা.) বিরুদ্ধে নীতিহীনতার অভিযোগ সততার কাঠগড়ায় আকাশ মালিক: ইসলামে কি নারীকে উটের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
আকাশ মালিকের যে সত্য বলা হয় নি - বইয়ের জবাবে সাদাত ভাই লিখে যাচ্ছিলেন। আমিও তার পাশাপাশি লিখে যাচ্ছি।
শুভ্র আহমেদ
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজেকে যতটা জ্ঞানি আকাশ মালিক দাবি করেন সেটার কনামাত্র তিনি নন এই বইটি পড়লেই বুঝা যায়। গোজামিল এবং বিভিন্ন ইউরোপিয় লেখক এর লিখা ইতিহাস যার অনেকগুলি হিট্টি বা মুয়র এর মত ঐতিহাসিক রা প্রত্যাখ্যান করেছেন তা দিয়ে তিনি ইসলামের ইতিহাস রচনার চেস্টা করেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন