সততার কাঠগড়ায় আকাশ মালিক : ইসলাম কি পৌত্তলিকতা মুক্ত?
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪৭:৪৪ দুপুর
আকাশ মালিক তার বই "যে সত্য বলা হয় নি" এর "বোকার স্বর্গ" অধ্যায়ে ৭ পৃষ্ঠা জুড়ে ইসলামকে পৌত্তলিক ধর্ম প্রমান করতে চেয়েছেন। সেখানে আমি বেশ কিছু অযৌক্তিক, ভুল তথ্য পেয়েছি। আমি তা দেখে তা না জানিয়ে পারলাম না। আশা রাখা যায়, পোষ্ট সম্পর্কেই আলোচনা হবে। আপাতত এটাকে অভিযোগ বলা যেতে পারে। আপনাদের দ্বারা প্রমানিত হওয়ার আগে পর্যন্ত। তাই আকাশ মালিক বা তার ভক্তমহাদয়েরা আমার চোখে আঙুল দিয়ে আমার ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন।
-আমি তার লেখার খন্ডাংশ হুবুহু তুলে ধরলাম।
আকাশ মালিক লিখেছেনঃ
ইসলামের অনুসারীরা সোচ্চারে দাবি করেন যে, তাদের ধর্ম পৌত্তলিক রীতিনীতি থেকে পুরোপুরি মুক্ত। অথচ একটু চোখ মেলে তাকালেই বোঝা যায় এ দাবি আসলে একেবারেই মিথ্যা। আল্লাহ্ নিজেই কোরআনের বিভিন্ন সুরায় চন্দ্র, সূর্য, গোধুলী, আর নক্ষত্রের নামে শপথ করেছেন। ( দেখুন ১১৩:১, ৮৪:১৬-১৯ ইত্যাদি) বেশ কিছু সুরাতে দেখতে পাই ডুমুর, জলপাই, সিনাই পর্বত, নিরাপদ নগরী ( ৯৫:৩), বাতাসের (৭৭:১) দ্রুতগামী ঘোড়ার (১০০:১-৫) শপথ নেওয়া হয়েছে। জড় পদার্থ এবং নানা জীব জন্তুর নামে শপথ করার ব্যাপারটা পুরোটাই আসলে প্যাগান রীতি থেকে ধার করা। ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হবার অনেক আগে থেকেই প্যাগানরা সূর্য, চন্দ্র, কিংবা নক্ষত্রের নামে শপথ করতো কিংবা কালো পাথরের চারদিকে সাতবার ঘুরতো প্যাগানদের এই পৌত্তলিকতার রীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ আল্লাহ্ই দিয়েছেন কোরানে (২:১৫৮) :
নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া ( মক্কার দুই পর্বত) আল্লাহ তাআলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই।
( যে সত্য বলা হয় নি, আকাশ মালিক, পৃঃ ৭)
আকাশ মালিকের মতে প্যাগানরা সূর্য চন্দ্রের শপথ করত । কোরানেও তা-ই দেখা যায়, আল্লাহ্ শপথ করছেন । "
তার দেওয়া আয়াত গুলো এক নজড়ে দেখে নেওয়া যাক। তিনি বলেছেন, ( দেখুন ১১৩:১, ৮৪:১৬-১৯ ইত্যাদি)
আমরা ১১৩:১ দেখব
বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে,
আয়াতে কি আপনারা কোথাও কসম বা শপথের নির্দেশনা পাচ্ছেন? এখানে আল্লাহ্ মুসলিমদের বলছেন, আশ্রয় প্রার্থনা করো সকালের মালিকের । এটা কি কোনো শপথের মধ্যে পড়ে? আমার তো মনে হয় না এরকম কিছু আয়াতে আছে । এখানে কোনো শপথের কথা বলাই হয় নাই। আর এখানে কিন্তু, আল্লাহ্ শপথ করেন নাই, যেমনটা তিনি দাবি করেছেন।
এরপরে, দেখব (৮৪:১৬-১৯ )
আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার। এবং রাত্রির, এবং তাতে যার সমাবেশ ঘটে। এবং চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে, নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে।
এখানে লাল আভা, চন্দ্রের শপথ করেছেন "আল্লাহ্"। কিন্তু আয়াত ১৯ এ কোনো শপথের কথা উল্লেখিত নাই।
" নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে।" (৮৪:১৯)
এখানে কিন্তু কোনো শপথের কথা বলা হয় নাই। "নিশ্চয়" বলে শপথ রোহিত হয়েছে। এখানেও তিনি ২ নাম্বারি করেছে ।
এরপরে দেখব, ৯৫:৩
এবং এই নিরাপদ নগরীর।
এই আয়াত গুলোর ( অর্থাৎ ৯৫ এর ১-২-৩) এ ডুমুর যায়তুন, সিনাই, তুর পর্বতের শপথ "আল্লাহ্" করেছেন।
এরপরে দেখব ৭৭:১
- কল্যাণের জন্যে প্রেরিত বায়ুর শপথ।
এখানেও আল্লাহ্ শপথ করেছেন।
এখন আকাশ মালিক কি প্রমান করতে চাচ্ছেন "আল্লাহ্ " পৌত্তলিক? ( নাউজুবিল্লা)
কোরানের কিছু আয়াতে প্যাগানের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। যেমনঃ (২৩:৯১, ১৭:৪২, ২১:২২, ২৩:৭১) লেখার আয়তন ছোট রাখার জন্য একটি মাত্র তুলে ধরলাম
-
যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।(২১:২২)
আয়াতে বহু ঈশ্বর তত্ত্বকে যৌক্তিক ভাবে গুড়িয়ে দিয়েছে আল্লাহ্ ।
তিনি একটা মিস্টেক করেছেন সেটা হল, তিনি প্রথমেই বলে ফেলেছেন, "ইসলামের অনুসারীরা সোচ্চারে দাবি করেন যে, তাদের ধর্ম পৌত্তলিক রীতিনীতি থেকে পুরোপুরি মুক্ত। "
প্রথমত, কোন মুসলিম এরকম মনে করে তার কোনো রেফারেন্স তিনি দেন নাই । তবে যাই হোক, কেউ যদি বলে থাকে তাহলেও তার বোঝায় ভুল হতে পারে।
হ্যা, আমরা পৌত্তলিকতার অনেক কিছুই মানি। যেমন, বিয়ে করতো , আমরাও বিয়ে করি ( এটা ধর্মিও নীতি) । তারা কুরবানি করতো , আমরাও করি । আমরা পৌত্তলিকতা মুক্ত না, এমনকি আপনিও মুক্ত নন। ঘুমানো, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটাও রীতিনীতিরই একটা অংশ ।
আমরা পৌত্তলিকদের খারাপ জিনিস গুলোকে মানি না। যেগুলো তারা নিজেরা সৃষ্টি করেছে, আল্লাহ্র দেওয়া রীতিনীতি ছিল না। তাদের মধ্যে কিছু কিছু নীতি রীতি আল্লাহ্ প্রদত্ত ছিল, বিকৃত অবস্থায় যেমন, হজ্ব, কোরবানি ইত্যাদি । কিন্তু তাদের অনেক কিছুই আল্লাহ্ প্রদত্ত রীতিনীতি ছিল না। লটারির মাধ্যমে নারীদের ভাগাভাগি করতো, যা নারী জাতির অন্ধকার অধ্যায় রচনা করেছিল । এটা আল্লাহ্ প্রদত্ত কোনো আইন না। তাই আমরা মানি নাই। তারা মূর্তিপূজা করত যা আমরা করি না। তারা সূর্য, চন্দ্রের পূজা করতো যা আমরা পূজা করি না। আরও অনেক খারাপ জিনিস করত যা আমরা করি না।
(Quran 57:1-4, 52:1-6, 53:1, 56:75, 70:40,
74:31-34, 84:16-18, 89:1-4, 92:1-3, 95:1-3 … ইত্যাদি যায়গায় আল্লাহ্ শপথ করেছেন )
আল্লাহ্ যদি শপথ করে তাহলে তিনি পৌত্তলিক হচ্ছেন। ( নাউজুবিল্লা) এতে মুসলিম রীতিনীতি ট্যাগ করাটা একটা অনুচিত আপত্তিকর ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না। অনেকে বলে থাকে আরবী "ওয়া" শব্দের অর্থ 'কসম', 'মনে করা', 'তারপর' । অনুবাদকেরা যেখানে যেটা ইচ্ছা ব্যবহার করেছেন।
যদি ধরেও নিই, আল্লাহ্ শপথ করেছেন ( আমি একমত যে শপথ করেছেন ) তবুও আল্লাহ্র শপথ করার মানে এই হয় না যে, আমরা শপথ করব। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর প্রতি শপথ করা নিষিদ্ধ এমনকি গুরুতর পাপ। আসলে আল্লাহ কসম করে তার প্রতি আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। যেমন, আয়াতের ঘোড়া নিয়ে যে শপথ আল্লাহ্ করেছেন, সেটা দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন ঘোড়ারা তাদের মালিকের কতো মান্য করে। অথচ, মানুষ তা করে না। মানুষ অকৃতজ্ঞ। এখানে আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন । আল্লাহ্ শপথ করে পৌত্তলিকতা পদর্শন করেছেন - এটা একেবারেই খোড়া যুক্তি।
এরপরে আকাশ মালিক বলেছেন, হজ্জের কথা আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন। হ্যা দিয়েছেন। তখন পৌত্তলিকরা শুধু মাত্র মক্কার মধ্যেই অসংখ্য মূর্তি-মাজার তৈরি করেছিল, যাদের ঘিরে ওরা পূজা করত । কিন্তু আমরা তা করি না। আমরা কাবার পূজা করি না। আমরা কিন্তু শাহবাগে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলাম। তার মানে কি আমরা প্যাগান? অবশ্যই না। আমাদের উদ্দেশ্য তা ছিল না। আমরা কোনো ঈশ্বরের পূজা করি নাই, প্যাগানরা যেমটা করে থাকে। কাবার ব্যাপারটা এরকমই।
এখানে একটা কথা আকাশ মালিককে মনে রাখতে হবে যে, কাবা ঘর কোনো প্যাগান ধর্মের অংশ না। কাবা প্যাগানদের তৈরি কোনো ঐশ্বরিক ঈশ্বরের পূজাখানা না। এটা ইব্রাহীম আঃ, ইসমাইল আঃ বানিয়েছিলেন।
আল্লাহ্ বলেছেন, ( সূরা আল বাক্বারাহ:১২৭) -
স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিলঃ পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
কাবা কোনো প্যাগানদের উপাসনালয় ছিল না। এটা স্থাপিত হয়েছিল ইব্রাহীম আঃ - এর সময়ে। যেমটি বাইবেলে উল্লেখ আছে,
য্যাকব আঃ কাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আল্লাহ্র ঘর "
(দেখুন জেনেসিস ২৮:১৮) একই রকম কথা আছে, (জেনেসিস ৩৫:১, ১৪, ১৫ )
তিনি বললেন, কালো পাথরের চারদিকে সাতবার ঘুরতো প্যাগানদের এই পৌত্তলিকতার রীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ আল্লাহ্ই দিয়েছেন কোরানে। "
এটা সঠিক না। আল্লাহ্ এটা প্যাগানদের দেন নাই। এটা ইব্রাহীম আঃ এর ধর্মানুসারীদের দিয়েছিলেন। এবং কোরআন এ তার পরিসীমা বৃদ্ধি করে পুরো মানবজাতির মধ্যে দিয়েছেন। যেহেতু, এটা আল্লাহ্র ঘর তাই এটা প্রদক্ষিণ করা যেতেই পারে। যদি কাবাকে আমরা পূজা করতাম তাহলে দাবির একটা যৌক্তিকতা ছিল। নবীজিকে সাতবার কাবা প্রদক্ষিণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ইব্রাহীম আঃ করেছে তাই তিনি করেন। সুতরাং আকাশ মালিক একচেটিয়া ভাব প্রকাশ করে তার পাঠকদের বড় রকমের বোকা বানিয়েছেন।
আকাশ মালিক একটি অযৌক্তিক তথ্য নিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, মুসলিমরা যদিও দাবী করে তাদের ধর্ম পৌত্তলিকতা মুক্ত তথাপি তা সত্য নয়। কোরানের অনেক সুরাতেই প্যাগান দেব-দেবীর নাম খুঁজে পাওয়া যায়।
উদাহরণ সরূপ তিনি ৫৩ :১৯-২০ তুলে ধরেছেন :
সূরা আন-নাজম:১৯-২০
-
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে। এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
এখন প্রশ্ন হল, কোরানে প্যাগান দেব দেবীদের নাম থাকলেই কি ইসলাম পৌত্তলিক ধর্ম হয়ে যাবে? আকাশ মালিক তার বইয়ে বিভিন্ন প্যাগান ঈশ্বরের নাম নিয়েছেন
তাহলে তিনি কি প্যাগান ধর্ম প্রচার করছেন? আশা করি 'হ্যা' উত্তর পাব না।
আসলে এই আয়াত ১৯-২০ থেকে আমরা কি শিখছি?
এই আয়াতে উল্টো প্যাগান বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
লাত ছিল সাদা পাথরে তৈরি করা মূর্তি । সেটার
উপড় গম্বুজ তৈরি করা হয়েছিল । গেলাফ পড়ানো হয়েছিল। ঝাড়ুদার, খেদমতগার, রাখা হয়েছিল। এটা ছিল তায়েফবাসীদের মন্দির । সাকীফ গোত্র এটার উপাসনা করত, পূজা করত । ইমাম ইবনে জারির রাঃ বলেন," লাত
নামটা তারা আল্লাহর নাম বিকৃত করে নিয়েছিল।" মক্কা বিজয়ের পরে নবীজি এটাকে ধ্বংস করে দেন। অর্থাৎ এই প্যাগান মন্দিরকে ধ্বংস করে দেন। মুগীরা ইবনে শু'বা রাঃ এবং আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব রাঃ কে নবীজি মূর্তিটা ধ্বংস করতে পাঠান ।
ওযযা ছিল একজন সৎ লোক। যিনি হজ্জে আসা লোকদের পানি দিয়ে ছাতু পান করাতেন। তিনি অনেক ভালো
ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে, লোকজন তার খেদমত করা শুরু করে। এরপরে কালের বিবর্তনে এক সময় মানুষ তার ইবাদত করা শুরু করে। কুরায়েশরা তার উপাসনা করত।
আবু সুফিয়ান রাঃ উহুদের যুদ্ধে বলেছিলেন, আমাদের উযযা আছে, তোমাদের ( মুসলমানদের) ওযযা নেই।
-নবীজি জবাবে বলেছিলেন, আমাদের ( মুসলমানদের) মাওলা আছে তোমাদের মাওলা নেই।
মক্কা মদিনার মাঝে "নাখলা" নামে স্থানে তিনটা গাছ ছিল। সেই গাছের উপড় গম্বুজ তৈরি করে, গেলাফ দিয়ে রাখা হয়েছিল। এই মূর্তিটাও নবীজি ভাঙান। এটা ভাঙে খালিদ
ইবনে ওয়ালিদ রাঃ। এটা তিনটা গাছের উপড়ে ছিল, গাছ গুলো কাটে ফেলা হয়। গম্বুজটাও ভেঙে ফেলা হয়।
মক্কা ও মদিনার মাঝখানে কাদীদ এর পাশে মুসাল্লাল নামক যায়গায় মানাত নামের মূর্তি ছিল। খুযা'আহ, আউস ও খায়রাজ গোত্র এর পুজা করত। এখান থেকে ইহরাম
বেধে তারা হজ্বে যেতো। এখানে কোরবানির পশু এনে জবেহ করত। এই মুর্তিও আবু সুফিয়ান রাঃ ভাঙে। তবে কেউ কেউ মনে করে, হযরত আলি রাঃ এর হাতেই এই
মূর্তি ভাঙা হয়। এছাড়াও অনেক মূর্তিরই পুজা তারা করত। কিন্তু, এই তিনটা ছিল, উল্লেখ যোগ্য।।
এখন দেখা যাচ্ছে আকাশ মালিক ইসলামকে পৌত্তলিকতা যুক্ত ধর্ম প্রমান করতে গিয়ে, উল্টো ইসলামকে পৌত্তলিকতা মুক্ত ধর্মেই প্রমান করেছেন। নবীজি যদি কোনো মূর্তির
পূজা করতেন, তাহলে আমরা পৌত্তলিক ধর্ম পেতাম। কিন্তু, নবীজি পৌত্তলিকতা মুক্ত করেছেন । এবং এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিলিয়ন বিলিয়ন ( হিন্দু, বৌদ্ধ ) কোটি মানুষ অসভ্য প্যাগান ধর্ম পালন করে, মুসলিমরা যা করে না।
আকাশ মালিক। আয়াতটি দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন এটাও রহস্যজনক। আয়াত দুটি প্যাগান প্রচার তো না-ই বরং প্যাগান মুক্তির কথা বলছে। আমি অক্সফোর্ড ডিকশনারি দেখলাম। সেখানে লেখা, ইসলাম, ইহুদী, খ্রিস্টানদের ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্মিও রীতিনীতিকে প্যাগান ( শব্দের) এর অর্থ করা হয়েছে।
এরপরে আকাশ মালিক বলেছেন, একেশ্বর বাদী ধর্ম গুলো সংগঠিত হওয়ার আগে সেখানকার মানুষ টোটেম-প্রথা অনুসরণ করত। যেমন, হিন্দুদের শিব পূজা । আকাশ মালিক ঠিকই বলছেন, কোরানও তাই বলে । কিন্তু, তিনি এরপরে বললেন যে, কোরানে আমরা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাই, আল্লাহ্ বলেছেন, আল্লাহ্ সাইরিয়াসের প্রভু। ( নাজম ৫৩:৪৯)
আয়াতটি হল - তিনি শিরা নক্ষত্রের মালিক। ( ইসলাম পূর্ব কিছু আরবরা এর পূজা করত)
এখানে আকাশ মালিক ইসলামকে পৌত্তলিক ধর্ম প্রমান করতে চাচ্ছে, কিন্তু আল্লাহ্ যদি কোনো নক্ষত্রের মালিকত্ব দাবি করেন তাহলে কিভাবে ইসলাম পৌত্তলিক হয়? আমার ছোট মাথায় ব্যাপারটা বুঝে আসে না। এখানে বরং আল্লাহ্ বলছেন, তোমরা যে শিরা নক্ষত্রের পূজা কর, আল্লাহ্ই তো তার মালিক। নক্ষত্রের পূজা বাদ দিয়ে আল্লাহ্র পূজা করো। এখানে উল্টো আকাশ মালিকের দেওয়া সংজ্ঞার বিপরীত পরিনত হল। Paganism - বিপর্যস্ত হল।
এরপরে বললেন, কোরানের অনেক সূরাই প্যাগান দেব দেবীর নামে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি সূরা তারিকা, নসর সূরার নাম দিয়েছেন।
তার বইয়ে কিন্তু তিনি এসবের নাম নিয়েছেন। তার মানে কি তিনি পৌত্তলিক অসভ্যতা পূজা করতে বলছেন? যাই হোক,
সূরা নাসর এর অর্থ খুঁজে পেলাম, The Help "সাহায্য" এর আরেকটা নাম হল, বিদায়।
এই সূরার প্রথম আয়াত থেকেই এর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে। আয়াতটি হল,
-
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।(১১০-১)
এই সূরাটিই কোরানের সর্বশেষ সূরা। এরপরে আর কোনো সূরা নাজিল হয় নি। তাই একে বিদায় সূরাও বলা হয়। এখানে প্রাচীন আরবের হিমিয়ারদের নামানুসারে নামকরণ করা হয় নাই।
সূর্যের নামে যদি সূরার নামকরণ করা হয়, তাহলে পুরো ইসলাম প্যাগান ধর্মে রুপান্তর হয়ে যাবে। কিন্তু, স্টিফেন হকিং বৈজ্ঞানিক তত্ব প্রস্তাব করার সময় সূর্য উচ্চারণ করলে সমস্যা নাই। ( make sense!)
সূরা তারিক ৮৬ এর প্রথম তিনটি আয়াত যথাক্রমে,
শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে আগমনকারীর। আপনি জানেন, যে রাত্রিতে আসে সেটা কি? সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
এখানে উজ্জল নক্ষত্র বলতে কারো কারো মতে সুরাইয়্যা নামক তারার কথা বলা হয়েছে, কারো কারো মতে সমগ্র তারাদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে। (ইবনে কাসির)
আল্লাহ্ বুরুজ নামেও সূরা নাজিল করেছেন, যার অর্থ The Big sTar . (সুরা ৮৫) এর মানে কি এই যে সূর্য চন্দ্রের নামে সূরা নাজিল করা পৌত্তলিক টোটেম প্রথা? তাহলে বলতে হচ্ছে, হুমায়ূন আহমেদও একজন পৌত্তলিক ছিলেন। তিনি "চন্দ্রকথা" নামে একটা বই লিখেছিলেন। কি সব যুক্তি যে ইনি তুলে নিয়ে এসেছেন!
এরপরে তিনি যেসব আলোচনা করেছেন তার জবাব দেওয়ার মতো কিছু দেখছি না। টোটেম প্রথা আর ইসলামিক প্রথার মধ্যে যে বিস্তার ফারাক রয়ে গিয়েছে তা তিনি ভালো করেই জানেন। আর এটা সামান্য জ্ঞান সম্পূর্ণ ব্যক্তিমাত্রই জানার কথা।
আমরা দৌড়াদৌড়ি করি, পাথর মাড়ি, এটা সেই ( ইব্রাহীম আঃ) থেকেই চলে আসছে। যদি ইসলামকে সেই দৌড়ে ফেলতে চান, তাহলে টোটেম-প্রথার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
২২৩৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন