জিরো টু ইনফিনিটিঃ মুসলিম বিদ্ধেষী মনোভাব প্রকাশ
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ১৮ জুন, ২০১৪, ০৪:৪৬:৪০ বিকাল
(২০১৩) গত বছরের কথা। বাজারে গিয়েছিলাম কিছু বই কিনতে। বই কেনার পর কিছু টাকা বাড়তি বেচে গেলো। একটু এদিক ওদিক ঘুরে কিছু ম্যাগাজিন হাতালাম। তখনই মিলল "জিরো টু ইনফিনিটি " সাময়িকী ঈদ সংখ্যা। যেহেতু বিজ্ঞান সম্পর্কে লিখা, তাই কিনে নিলাম। এরপর ম্যাগাজিনের:
- সময়।
- প্যারালাল বায়োলজি।
- আলোর কোয়ান্টাম ভরবেগ এবং আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান।
- অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান চর্চা ।
- হ্যালো আমি মানুষ বলছি।
- সুপার ম্যান হতে চান?
- ইরিডেটেড খাবার।
শিরোনামের লেখা গুলো পড়ে অনেক অজানা জিনিস জানতে পারলাম। এরপর বইটা টেবিলের ড্রয়ারে রাখা ছিলো। গতকালকে নেট ব্রাউজ করার সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। কিছু করার ছিলো না, তাই বসে ছিলাম।
টেবিলের উপড় ম্যাগাজিনটা দেখে সেটা পড়তে শুরু করলাম।
- সেখানে " তারেক অণু " নিকে এক লেখক এর লেখা পেলাম "
ডারউনের তীর্থে । তাকে অনলাইনে প্রায় সকলেই চেনেন। অনেকে শ্রদ্ধাও করেন। "সচলায়তন" এবং "মুক্ত মনা" সাইটে লেখা লেখি করেন।
লেখাটি পড়লাম। ডারউইনের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই ভ্রমণ আর আবেগময় কাহিনী লিখেছেন। লেখা ভালো। যেহেতু, " জিরো টু ইনফিনিটি " একটি বিজ্ঞান সাময়িকী তাই সেখানে বিজ্ঞানীদের নিয়ে লেখা থাকবে স্বাভাবিক।
লেখাটি পড়তে পড়তে যখন, ৫৭ পৃষ্ঠায় এসে কিছু আক্রমণাত্মক এবং মুসলিম ও অসত্য কথা পেলাম তখন এক সেকেন্ডেই আগের পড়া :
- সময়।
- প্যারালাল বায়োলজি।
- আলোর কোয়ান্টাম ভরবেগ এবং আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান।
- অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান চর্চা ।
- হ্যালো আমি মানুষ বলছি।
- সুপার ম্যান হতে চান?
- ইরিডেটেড খাবার।
--
লেখা গুলোর প্রতি আস্থা হারিয়ে গেলো। কেননা, যে গাড়ী ৯৯% ভালো কিন্তু ব্রেকটা একটু কাজ করেনা সে গাড়ী সম্পূর্ণই বাতিল। মনে হল সেগুলোও তো অসত্য হতে পারে।
একটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে ( যে লেখা গুলো মুসলিমদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়) সেখানে যদি মুসলিম বা ইসলাম বিদ্ধেষী লেখা থাকে কোনো মুসলিমই সে ম্যাগাজিন পড়তে আগ্রহ দেখাবেন না। এটা " জিরো টু ইনফিনিটি" কর্তিপক্ষের ভাবা উচিত ছিলো।
তারেক অণু " ডারউইনের তীর্থে " (৫৭ পৃষ্ঠায়) লিখেছেন ::
"" একজায়গায় সেই বিচিত্র বইগুলোর সমাহার যেখানে না বুঝে, না বোঝানোর চেষ্টা করে, সম্পূর্ন অন্যায়, অন্যায্য, ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জীব বিজ্ঞানের শ্বাসত রহস্য বিবর্তনকে এবং আক্রমণের স্বীকার স্বংয়ং চার্লস ডারউইন। অরিজিন অফ স্পেসিস প্রকাশের পর থেকেই এমন মূর্খদের বিশেষ করে প্রচলিত ধর্মের ধ্বাজাধারীদের তোপের মুখে পড়ে তার তত্ব, এবং এখনো নিরন্তর চেষ্টা চলে বিবর্তনকে ভুল করার! কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়, তাই গায়ের জোরে একজন হারুন ইয়াহিয়া ঘোষনা করে বিবর্তন সঠিক এটি প্রমান করতে পারলেই সে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পুরষ্কার দেবে! একজন জাকির নায়েক বিবর্তন সম্বন্ধে বিন্ধু মাত্র ধারনা না নিয়ে কথার ফুলঝুরি দিয়ে তা মিথ্যা প্রমান গিয়ে উল্টো করে যায় মিথ্যের বেসাতি। আর মানুষ বানরের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা, যা ডারউইন তত্বের সাথে কোনো মতেই খাপ খায় না, সেগুলো কার্টুন আর এমন কিছু বস্তাপচা বই দেখে মনে হলো এগুলো তো ইতিহাসের অংশ নয়, এগুলো হচ্ছে আস্তা কুড়ের আবর্জনা, কিন্তু এগুলো রাখা হয়েছে মানুষেকে এটা শিক্ষা দেবার জন্য ---- তোমরা যা ইচ্ছা বিশ্বাস কর, সত্য সত্যই। একদিন তা প্রকাশ পাবেই,তোমরা মানো বা না মানো। """"
পাঠক, বিভ্রান্তে পড়েছেন নিশ্চয়? লেখাটির উদ্দেশ্য ছিলো, ডারউইনের বাড়ী ভ্রমণের কথা আমাদের জানানো। কিন্তু, এর ভিতরে কিছু বস্তাপচা আবেক দেখানো ( ইসলাম ধর্ম ; মুসলিম) বিদ্ধেষী লেখা কৌশলে তুলে দিয়েছে।
অরিজিন অফ স্পেসিস প্রকাশের পর থেকেই এমন মূর্খদের বিশেষ করে প্রচলিত ধর্মের ধ্বাজাধারীদের তোপের মুখে পড়ে তার তত্ব, এবং এখনো নিরন্তর চেষ্টা চলে বিবর্তনকে ভুল করার! কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়,
পাঠক, আপনি প্রথমে এটুকু পড়লে বুঝবেন যে, সে সকল ধর্ম ব্যবসায়ীদের নিন্দা করছে ( ডারউইনের দৃষ্টিকোণ থেকে) । সত্যি বলতে ইসলাম ধর্মে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা বলে কিছু নাই।
কিন্তু বক্তব্য, আংশিক এবং আংশিক অসত্য। হয়তো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা অথবা গুটিচালের জন্যই এটা করেছে। সত্য এটা যে অসংখ্য বিজ্ঞানীও এর বিরুদ্ধে লিখেছেন বা সমর্থন করেনি । ( জীব বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফলি , জিন মাইন্স, মাইকেল জে বেহে,
মাইকেল ডেন্টন, ওয়ার্নার
গিট, ফিলিপ
ই জনসন,আলবার্ট জর্জি, গ্রাশ, রবার্ট আলবার্ট Sir James Jeans, Robert Jastrow, Arno Penzias, Robert Shapiro, William A. Dembski )
তাহলে কেনো এই বিজ্ঞানীদের কথা বলা হল না? ( প্রশ্ন) নাকি তারিক অণু সংসয়ী ছিলেন, বিজ্ঞানীদের নাম নিলে হয়তো তার নিজের গায়েই কাদা ছিটবে। যাই হোক, তিনি শুধু ধর্ম ব্যবসায়ীদের কথাই বললেন। এমন ভাবে বললেন যেনো কোনো বিজ্ঞানীই এর বিরুদ্ধে লিখেন নাই। ধর্মের
প্রতি তার মনোভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
আবার আমরা যদি এটুকু দেখি :
গায়ের জোরে একজন হারুন ইয়াহিয়া ঘোষনা করে বিবর্তন সঠিক এটি প্রমান করতে পারলেই সে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার পুরষ্কার দেবে! একজন জাকির নায়েক বিবর্তন সম্বন্ধে বিন্ধু মাত্র ধারনা না নিয়ে কথার ফুলঝুরি দিয়ে তা মিথ্যা প্রমান গিয়ে উল্টো করে যায় মিথ্যের বেসাতি। আর মানুষ বানরের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা, যা ডারউইন তত্বের সাথে কোনো মতেই খাপ খায় না, সেগুলো কার্টুন আর এমন কিছু বস্তাপচা বই দেখে মনে হলো এগুলো তো ইতিহাসের অংশ নয়, এগুলো হচ্ছে আস্তা কুড়ের আবর্জনা, কিন্তু এগুলো রাখা হয়েছে মানুষেকে এটা শিক্ষা দেবার জন্য
যেসব মুসলিম ভাই লেখাটা পড়লেন, অবশ্যই মুখে মৃদু হাসি ফুটেছে? আমারও তাই হয়েছিলো । পাঠক এ দুনিয়ায় মাত্র দুজনকেই দেখা যায় যারা বিবর্তনের বিরুদ্ধে গায়ের জোরে কথা বলে ( আমার কথা না, এটা তারেক অণুর কথা মতে) । কিন্তু, উল্লেখ্য যে হারুন ইয়াহিয়ার বইয়ের বিরুদ্ধে বা সেই বইয়ের ভুল গুলো তুলে ধরে কখনোই কিছু লিখেন নাই ' তারেক অণু। তাহলে কে গায়ের জোরে কথা বলছে সেটা স্পষ্ট! জাকির নায়েকের জন্য কিছু বলতে হবে না। কারণ, এর আগেই এটা সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। খ্রিষ্টানরা বিবর্তনের বিরুদ্ধে বই লেখে নাই ( তারেক অণুর মতে)। যা আমার কাছে হাস্যকর, মিথ্যা।
জিরো টু ইইনফিনিটি কে বলতে চাইঃ এমন ইসলাম বিদ্ধেষপূর্ণ লেখা কিভাবে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে লেখা হয়? ( প্রশ্নঃ " জিরো টু ইনফিনিটি ; কর্তিপক্ষ )
ম্যাগাজিনের ২৭ পৃষ্ঠায় " ইফতারে খেজুরের ৫ টি গুন " শিরোনামে একটি লেখা দেখে ধারণা পাই " জিরো টু ইনফিনিটি " কর্তিপক্ষ ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা শীল । তাহলে কেনো এই রকমভাবে কলমের জোরে আধাপৃষ্ঠা নষ্ট করে লেখা মুসলিম বিদ্ধেষপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করলেন?
পরিশিষ্টঃ তোমরা ( তারেক অণু) যা ইচ্ছা বিশ্বাস কর, সত্য সত্যই। একদিন তা প্রকাশ পাবেই,তোমরা মানো বা না মানো।
শুভ্র আহমেদ
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সর্বোপরি, যারা ইসলামের মধ্যে থেকে অর্থাৎ ইসলামী/ মুৃসলমান নাম নিয়ে ইসলামের সর্বনাশ করার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছে বিনিময়ে কোনো নোংরা উচ্ছিষ্ট পাবার আশায় এ ধরণের বিভিষণ থেকে আমাদের সকলকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিজেরা জানা মাত্র অন্যদেরকেও সতর্ক করতে হবে।
অবশ্য এর মধ্যে আমার এক সাংবাদিক ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি খুবই আগ্রহী। বললেন, আপনি লেখা শেষ করেন। আমি ছাপানোর ব্যবস্থা করে দিব। কাজেই সাহস পাচ্ছি। হয়ত অফিসের ঝামেলা শেষ করে এরমধ্যেই আবার শুরু করব ইনশাআল্লাহ।
আমার ই-মেইল আইডি
বেশ ভালো দিয়েছেন। ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ শাব্বির হোসাইন লিখেছেন : তারেক অণু'র মতো বস্তা পচা আবালরা মাল খেয়ে টাল হয়ে এ ধরণের ইসলাম বিদ্বেষী প্যাচাল পারে। জাকির নায়েক সম্পর্কে যতই বিরোধীতা থাক, এটা তো ঠিক যে তিনি একজন ডাক্তার। মেডিক্যাল সায়েন্স সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান অামাদের বা তারেক অণুর চেয়ে য়ে বেশি এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয় না। কাজেই তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ভুল জানবেন এটা হতেই পারে না। তাছাড়া হারুন ইয়াহিয়া একজন প্রসিদ্ধ লেখক। তাঁর লেখা অসংখ্য বই আছে (সুখের কথা যে, জনাব হারুন ইয়াহিয়া তাঁর লেখা সবগুলি বই বাংলায় অনুবাদ করার জন্য একমাত্র আমাকে লিখিত অনুমতি দিয়েছেন)। তারেক অণু হারুন ইয়াহিয়ার নামে গীবত করেছেন কিন্তু তিনি কী ভুল করেছেন সেটা উল্লেখ করলে আমাদের জন্যে বিশেষ করে আমি যেহেতু অনুবাদ করছি, আমার ভিষণ কাজে দিত।
সর্বোপরি, যারা ইসলামের মধ্যে থেকে অর্থাৎ ইসলামী/ মুৃসলমান নাম নিয়ে ইসলামের সর্বনাশ করার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছে বিনিময়ে কোনো নোংরা উচ্ছিষ্ট পাবার আশায় এ ধরণের বিভিষণ থেকে আমাদের সকলকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিজেরা জানা মাত্র অন্যদেরকেও সতর্ক করতে হবে।
পিলাচ
পিলাচ
পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন