অসংলগ্ন প্রেমকাহিনী

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ১৬ জুন, ২০১৪, ০৪:৩৬:১২ বিকাল

অসংলগ্ন প্রেমেরকাহিনী

নাইম বসে বসে পা দুলাচ্ছে। একটু সতর্কেও আছে, যে কোনো সময় মা ঘরে এসে পড়তে পারে। পাশে বইটা খুলে রেখেছে। যখনই মা আসবে, কম্পিউটার বন্ধ করে বইয়ের উপড় চোখ রাখবে। কি বুদ্ধি ওর মাথায়!

গত দুমাস থেকে এক মেয়ের সাথে প্রেম চলছে। নাইম - এর আগেও বেশ কিছু প্রেম করেছে। এই মেয়েটি একটু বেশিই এক্সপার্ট । প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি দেয়নি। নাইম মোবাইল নাম্বার চেয়েছিলো, দেয়নি। ছবি চেয়েছে দেয় নি। কিন্তু, দুজনের গভীর প্রেম। নতুন মেসেজ এসেছে.....

- হায় জান কি করছ?

- এই তো তোমার কথা ভাবছি।

- আচ্ছা, আমরা তো কালকে দেখা করবো। তোমার কেমন লাগছে ভাবতে?

- ভালো লাগছে।

- আমার কেনো যানি মনে হচ্ছে, খুব খারাপ কিছু হবে।

- কি হবে?

- যেমন ধরো আমি অসুস্থ হতে পারি।

- নাহ। হবে না

- তুমি কি গুনক নাকি?

- নাআ। তবে একটু একটু

- :-P

- ধরো আমরা কালকে দেখা করতে গেলাম। তোমাকে অন্নেক ভালো লেগে গেলো, আমি তখন কি করবো?

- জানি না।

- আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।

- এরপর?

- বিয়ে করব।

- এরপর?

- এরপর....

নাইম তাড়াতাড়ি কম্পিউটার বন্ধ করল। মোমেনা বেগব এসেছেন।

- নাইম।

- জ্বি। দরজা খোলা আসুন।

মোমেনা বেগমের চোখে মুখে সর্বদাই একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকে। দেখলে মনে হবে তিনি সব সময়ই ঘুমিয়ে থাকেন। ঘুমিয়েই কাজ করেন আবার ঘুমিয়েই ঘুমান। দুধের গ্লাস টেবিলের উপড় রেখে জিজ্ঞেস করলেন......

- কি পড়ছিস?

- বায়োলজি।

একটু থেমে নাইম বললঃ

- কোথায় যাচ্ছেন ?

- নীলুকে দুধ দিয়ে আসি। কিছু বলবি?

- মা। কাল আমি এক যায়গায় যাবো। কিছু টাকা লাগবে।

- কতো?

- হাজার দুই এর মতো।

- ঠিক আছে।

মোমেনা বেগম চলে গেলেন।

নতুন মেসেজ....

- আচ্ছা জান। আমি কাল কোন ড্রেসটা পড়বো। মানে কোন রংযের।

- সাদা।

- সাদা?

- হ্যা সাদা।

- সাদা কেনো?

- সাদা হল শান্তির প্রতিক।

- আমরা কি শান্তি দিবস পালন করবো?

- একটু একটু।

- ও। তুমি তো বললে না, আমি কোথায় আসবো।

- নিন্দিতা গার্ডেন।

- না না। কোনো গার্ডেনে যাওয়া ঠিক হবে না।

- তাহলে সিনেমা হল?

- না। আমি চাচ্ছি কোনো নিরাপদ, নির্জন যায়গায় যেতে।

- এক কাজ করো, সাইবার ক্যাফে এসো ।

- সেখানেও তো মানুষ আছে।

- না। সেখানে নিরাপদে কথা বলতে, তোমাকে ছুয়ে পারবো।

- ঠিক । তাহলে সেখানেই যাবো।

- আনিলি হাসপাতালের বা' পাশের মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটা ভি.আই.পি সাইবার ক্যাফে আছে।

- আচ্ছা।

- এই তুমি কি করছ?

- দুধ খাচ্ছি।

- আরে, আমিও তো দুধ খাচ্ছি। দেখেছো আমাদের কতো মিল?

- হুম।

--

দৃশ্য ২ ;

নীলুর মনটা আজ খুবই খুশী। আলমারি থেকে গোটা কয়েক জামাকাপড় বের করে ভাবতে শুরু করল, নীলু আকাশ নামের এক ছেলের সাথে প্রেম করছে । আজ প্রথম দেখা করতে যাচ্ছে। ওর নিজের ইচ্ছায়ই এতোদিন দুজন দেখা করে নি। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম। কিন্তু এখনো কেউ কাউকে দেখেনি। নীলু ঠিক করেছে, সামনা সামনি ছাড়া সে আকাশকে জীবনেও দেখবে না।

নীলুর বান্ধবী ফারজানা - অনেক বার ওকে সাবধান করেছে।

- এসব ছেলেরা ভালো হয় না। না জানি কয়টা প্রেম করেছে! আচ্ছা যদি ছেলেটা তোর থেকে খাটো হয়? কুৎসিত হয়?

- হবেই না। কারন, আমাকে বলেছে ও ৫. ৯" লম্বা।

- দেখিস তো নাই। ও যদি মিথ্যা বলে?

- ও মিথ্যা বলেছে কিনা জানি না তবে আমি মিথ্যা বলেছি।

- কি মিথ্যা বলেছিস?

- বলেছি আমার নাম , নাদিরা।

- এতে আর কি! এই শোন তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।

- ঝটফট করে ফেল। সময় নেই।

- তুই ওর কি দেখে প্রেমে পড়েছিস? কি এমন আছে ওর মাঝে? যে না দেখেই ফিদা হয়ে আছিস?

- ওর লেখা গুলো আমার ভালো লাগে।

- এই দাড়া দাড়া। কবি টবি না তো!

- ইচ্ছা আছে।

- দোস্ত। এই ছেলের থেকে সাবধান হওয়া খুবই আবশ্যিক। কারন, এই রকম ছেলেরাই এখন বেশী প্রতারক।

- ফারজানা।

- কি?

- কোনো মানুষ সম্পর্কে কোনো অন্তত ধারনা না থাকলে মন্তব্য করিস না।

- তার মানে তুই দেখা করতে যাচ্ছিস ই?

- অবশ্যই।

- কখন যাচ্ছিস?

- ভাইয়া বের হবার আগেই বের হতে হবে।

- আমি কি যেতে পারি?

- অবশ্যই না।

- যদি বিপদ হয় তাহলে আমাকে জানাবি না।

- বিপদ হবেই না।

- হুহ।

নীলু ফোন রেখে দিলো।

-------

দৃশ্য ৩ ::

নাইম নতুন একটা টি-সার্ট গায়ে দিয়ে মোমেনার কাছে গেলো। দু ' হাজার টাকা নিয়ে, মোটর সাইকেল চড়ল।

- হ্যালো নাইম?

- হ্যা, বল।

- আমি সাফি।

- বল।

- শুনলাম নিউ মাল পটাইছস?

- হুম।

- আমারে একটা ব্যবস্থা দিলি না?

- দিবো। এই রাউন্ড শেষ হোক।

- প্রমিস?

- আরে ব্যাটা রাখ।

------

চতুর্থ দৃশ্য ;

আনিলি হাসপাতালের সামনে সাইকেল থামিয়ে , নাইম তৃতীয় তলায় উঠে পড়ল। সাইবার ক্যাফের সামনে টেবিলে এক লোক বসা।

- নাদিরা নামের এক মেয়ের আসার কথা, এসেছে?

- জ্বি। ৫ নাম্বার কম্পিউটারে বসেছে।

- ধন্যবাদ।

নাইমের বুকে যেনো স্রোত ভেসে উঠল। বুক ধুক ধুক করছে। এতো গুলো প্রেমের পড়েও কেনো বুক ধুক ধুক করছে! নাইম বুকে ফু দিয়ে ৫ নাম্বার কম্পিউটারে রুমে ধাক্কা দিলো।

চেয়ারে সাদা জামা পড়া মেয়েটিকে দেখে নাইমের বুক কেঁপে উঠল। মুহূর্তে এতো লজ্জা পেলো, যে নিজেকে অপরাধী মনে হল।

সেখানে নীলু বসা ।

নীলু মুখে হাত দিয়ে বললঃ

- ভাইয়া তুই?

নাইম আর কিছুই বলল না। বলার মতো আর কিছুই ছিলো না। যাচাই না করে এতো দিন একজনের সাথে প্রেম করা কখনোই ঠিক না। নিজের বোনের কাছে এভাবে লজ্জিত হতে হবে, নাইম নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না। না পারবে নীলুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে।

-

-

-

-

(অসমাপ্ত)

পরিশিষ্টঃ আমেরিকার এক রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, তাদের ৮৭% - এরও বেশী অভিভাবক জানেন না তার সন্তান নেটে কি করছে। তাই এদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া পোষ্টের অন্যতম কারন।

মূল পরিকল্পনায়ঃ একটি ভিডিও দেখার পর মনের মাঝে ছাপ ফেলে যায়। সিদ্ধান্ত নেই এ ব্যাপারে একটা পোষ্ট ই দিই। দিয়ে ফেললাম। নাটকটি ভারতের কেউ বানিয়েছে। মাত্র ১৩ মিনিট। আমি যতোটা পেরেছি, ভিডিও টির চিত্র উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছি। । কতো টুকু পেরেছি সেটা পাঠকের মন্তব্যের উপড় ভিত্তিনির্ভর।

শুভ্র আহমেদ

বিষয়: সাহিত্য

১৭৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File