বল বীর
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ২৫ মে, ২০১৪, ০৬:৪২:০৯ সন্ধ্যা
কবি কাজী নজরুল
আমার প্রিয় কবির মধ্যে অন্যতম। কবির কবিতাই আমার ভালো লাগে, তবে বেশী একটা পড়া হয় না। সত্যি বলতে কি, আমি কবিতা - পাঠক না। তবে কোথায় যেনো পড়েছিলাম কবিতা পড়লে না-কি ব্রেইন সচল থাকে।
ভুল বুঝবেন না। এ কারনেও আমি কবিতা পড়ি না। কবিতা পড়ি কবিতা পড়ার জন্য। কবিতা পড়ি কবিকে বোঝার জন্য না, নিজেকে জন্য না, দেশকে বোঝার জন্য না, শুধুই কবিতার জন্য।
আপনি যদি কবিতা প্রেমিক হয়ে থাকেন, আপনি অনুধাবন করবেন যে, কবিতার সঙ্গে কিভাবে মিশে আছে
কবি
নিজের ভাবনা
রুচি
প্রেষণা
দেশ
সমাজ
ইত্যাদি। আবার বলা যেতে পারে সব কিছুই আছে। একটি কবিকে যদি জাতির চিন্তা চেতনার উৎস ধরা হয়, কথাটা শতভাগ সঠিক বই ভুল হবে না।
আজ একজন কবি আর তার কবিতা নিয়েই আলোচনা হোক। কবিকে কি আমাদের কল্পনা করা প্রয়োজন আছে?
অবশ্যই না।
তবুও আজ কল্পনা করবো। কেনো করব?
আমরা কবিকে অত্যন্ত পছন্দ করি।
কাজী নজরুল ইসলাম। বিটিভি - র মতো আমি তার জীবন বৃত্তান্ত করব না। তার কিছু কবিতা পড়াব ।
লজ্জার বিষয় হলেও বলতে হয়। আমাদের অনেক ভাই বোন কবিতা পছন্দ করেন না। কেনো করেন না, সেটা পরে বলছি তবে এর ফল যে, অতি জঘন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কবিতা না পড়ার বা অপছন্দের কারন, কেউ কখনো কবিতার বই-ই হাতে দেয় নি। কারা দেবে?
স্বাভাবিক ভাবে বাবা-মা। কিন্তু তারা দিচ্ছে না।
কেনো দিচ্ছে না?
কারন, ছেলেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হলে এসব ফালতু কবিতা পাঠ করানো যাবে না।
ভুল বুঝবেন না। আমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে নিষেধ করি না।
আমার বাবাও আমাকে কোনো দিন একটি বাড়তি বই কিনে দেন নাই। মাঝে মাঝে চুরি করেছি ( বাবার কাছ থেকেই ভুল বুঝবেন না, আমি ওরকম চোর নই) পকেট থেকে, কখনো টিফিনের টাকা জমিয়ে, কখনো, দুদিন না খেয়ে রাগ করে। ওসব মজার কাহিনীতে এখন না গেলেও হবে। তবে একটি গল্প ইয়াদ পড়ে গেলো।
তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমাদের ক্লাসের। ফাস্ট বয় আরিফুল নাম। সে পুরোষ্কার পেয়েছি, নাসিরুদ্দিন এর গল্পের বই। বছর খানেক পড়ে আমাকে বলল বইটা বিক্রি করবে। ত্রিশ টাকা মাত্র। আমি তো খুশী, এরকম খুশী রাখি কোথায়!
প্রতিদিন দশ টাকা দিতো বাবা। সেখান থেকে পরপর তিনদিন টাকা শোধ করে বই পেয়েছিলাম।
আহ! কি যে আনন্দ!
যাই হোক, এই যে আনন্দ। এগুলো কিন্তু খুবই উপকারী। জীবনের সব সময় পরোক্ষ ভাবে আপনি এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন। তাই অনুরোধ বন্ধুরা। আমার মতো নিজেরা নিজের উদ্যোগে বই পড়ুন। বাবা-মা যাই বলুক।
অনেক কথা বলে ফেলেছি।
এবার কবির কথা বলা যেতে পারে। কবির জীবনী আমরা সবাই কম বেশী যানি। জাতীয় কবি!
চিন্তা করেছেন? জাতীর কবি!
জাতীর জন্য যে উৎসর্গকারী সে ই তো জাতীয় কবি।
তবে লজ্জাজনক সত্য যে। এই লোকটি জাতীয় কবি ঠিকই হয়েছেন, কিন্তু জাতীর কবি হতে পারেন নি।
অনেকে বলতে পারেন এ আবার কেমন কথা! জাতীয় কবি অথচ জাতির কবি না!
হ্যা ভাই।কবিকে জাতীয় করেছি, কিন্তু তার এখন মূল্য কই?
কেউ ভুলেও এর কবিতা পড়িনা ।
পক্ষান্তরে বেসরম গান শুনে বেরাচ্ছি।
আমার পোষ্টের উদ্দেশ্য শেষ করব। এই মহান কবির, কিছু কবিতার অংশ অংশ তুলে ধরব, যে গুলো আমার ভালো লাগে। কারো পড়তে ইচ্ছা না হলে চলে যাবেন।
* বিদ্রোহী কবিতার যে অংশ ভালো লাগে :::
আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন,
আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো,
আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-
বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-
বিধাতৃর!
বল বীর - চির-উন্নত মম শির!
* আমার এই কবিতাটা ভালো লাগে। কবিতাটা অনেক বড়, নাম" আনোয়ার "
আনোয়ার! আনোয়ার!
দিলাওয়ার তুমি, জোর তলওয়ার হানো, আর
নেস্ত-ও-নাবুদ করো, মারো যত জানোয়ার!
আনোয়ার! আফসোস্!
বখতেরই সাফ্ দোষ,
রক্তেরও নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ,
ভেঙে গেছে শম্শের–পড়ে আছে খাপ কোষ!
আনোয়ার! আফসোস্!
আনোয়ার! আনোয়ার!
সব যদি সুম্সাম, তুমি কেন কাঁদো আর?
দুনিয়াতে মুসলিম আজ পোষা জানোয়ার!
আনোয়ার! আর না!–
দিল্ কাঁপে কার না?
তল্ওয়ারে তেজ নাই! –তুচ্ছ স্মার্ণা,
ঐ কাঁপে থরথর মদিনার দ্বার না?
আনোয়ার! আর না!
আনোয়ার! আনোয়ার!
বুক ফেড়ে আমাদের কলিজাটা টানো, আর
খুন করো –খুন করো ভীরু যত জানোয়ার!
আলোয়ার! জিঞ্জির–
পরা মোরা খিঞ্জির!
শৃঙ্খলে বাজে শোনো রোণা রিণ-ঝিণ্ কির,–
নিবু নিবু ফোয়ারা বহ্নির ফিন্কির!
গর্দানে জিঞ্জির!
আনোয়ার! আনোয়ার!
দুর্বল্ এ গিদ্ধড়ে কেন তড়্পানো আর?
জোরওয়ার শের কই? জের্বার জানোয়ার!
আনোয়ার! মুশ্কিল
জাগা কঞ্জুশ্-দিল,
ঘিরে আসে দাবানল তবু নাই হুঁশ তিল!
ভাই আজ শয়তান ভাই-এ মারে ঘুষ কিল!
আনোয়ার! মুশ্কিল!
আনোয়ার! আনোয়ার!
বেইমান মোরা, নাই জান আধ-খানও আর।
কোথা খোঁজো মুস্লিম? –শুধু বুনো জানোয়ার!
আনোয়ার! সব শেষ!–
দেহে খুন অবশেষ!–
ঝুটা তেরি তলওয়ার ছিন্ লিয়া যব্ দেশ !
আওরত সম ছি ছি ক্রদন রব পেশ ! !
আনোয়ার ! সব শেষ !.......
* এবার সাম্যের কবির সাম্যের কবিতা পড়ব ::::
সাম্যের গান গাই - আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেকতার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপবেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
* গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কন্ফুসিয়াস্? চার্বাক চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-
কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি? -পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃষয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।
কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!
------------------------------------------
বেশী বড় হয়ে যাচ্ছে বলে আর দিলাম না।
কবির ২০ টা বই ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।
লিংকঃ http://www.downloadbanglabooks.blogspot.nl/2010/05/download-kazi-nazrul-islam-books.html?m=1
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
..
ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন