সানাউল্লাহ

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৫৫:৩৫ রাত

সানাউল্লাহ

সানাউল্লাহ ওর সার্ট গায়ে ঘর থেকে বের হল।এতো সকালে বের হয়ে সানাউল্লাহর দিমাগ খারাপ হয়ে, অবস্থা নিরব। আজ নাকী নববর্ষ!

রাস্তা ঘাটে তো কুকুর বিড়াল পর্যন্ত নেই । ঢাকা শহরের মানুষ গুলো এখন, একদিন ছুটি পাওয়া মানে চাঁদ হাতে পেয়েছে মনে করে।

রাস্তাঘাট ফাকা থাকায় সানাউল্লাহর কেমন যেন অচেনা অজানা শহরে পরিনত হয়েছে, তার চারপাশ। ঢাকা শহর ভির ভর্তি হলেই মানায়। সবাই হয়তো ছুটি পেয়ে নাক লুকিয়ে ঘুমাচ্ছে। দু'একজন ছাড়া কাউকে চোখে পড়ছে না।

সানাউল্লাহর খালি পা' জুতা নেই। জুতার প্রয়োজনও নেই। গরীবের জুতার প্রয়োজন পড়েনা, গরীবরা স্বয়ং সম্পূর্ণ। তারা খালি পায়ে যেমন হাটতে পারে, জুতো পায়েও হাটতে পারে। পারা, পারির দিক দিয়ে গরীবরা এগিয়ে আছে, ধনীরা খালি পায়ে হাটতে পারেনা।

এখন লোক নেই, কিন্তু একটু পড়েই বাচ্চা ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় গায়ে মাঠে নামবে।

সানাউল্লাহ মাঠের দিকে যাচ্ছে। মাঠে মেলা হবে।

মেলার দোকানদারেরা বোকা প্রতৃতির, সহজেই খেলনা চুরি করা যায়। সানাউল্লাহ একবার ধরা খেয়েছিলো, এমন এক থাপ্পড় খেল, যে আধা ঘন্টা কানের চারপাশে ভো ভো করে শব্দ হচ্ছিল।

এরপর থেকে একটু সাবধানে কাজ করা চেষ্টা করে, মাঝে মাঝে করে, বেশীর ভাগ সময়ই পারে না।

সানাউল্লাহর গায়ের সার্টে প্রথম তিনটা বোতাম নেই। আসলে একটাও ছিলো না, একেক সার্টের থেকে জোগাড় করে, লাগিয়েছে। বড় লোকের ছেলেরা নতুন একটি স্টাইল ধরেছে, সার্টের বোতাম খুলে বুক দেখানো স্টাইল। এই স্টাইলের কারনে সানাউল্লাহর উপকার হয়েছে।

সানাউল্লাহ মাঠে এসে দাঁড়াল। এক ফাকে দেখে নিল, ওর কোনো পরিচিত বন্ধু আছে কিনা।

কেউ নেই। কিছু দোকান খুলেছে। একটি খেলনা ঘরে ঢুকল সানাউল্লাহ।

ভাই, আমি কাম করবো। মাল দেইখা রাখবো, আমারে রাখবেন?

না। আমার লোক আছে।

কৈ, মিছা কতা বলেন কেন?

মাদারচোদ একবার কইছি না যা


সানাউল্লাহ এক থাবা দিয়ে একটি খেলনায়, জোরে থাপ্পড় মারল। মেরেই দৌড়...

একেবারেই মাঠ ছেড়ে পালাল।

পেছন থেকে দোকানী বলল, ঐ সালা দাড়া, শুয়ারের বাচ্চা, দাড়া

দৌড়ে সানাউল্লাহ চ্যাম্পিয়ন। কে ধরবে তাকে! মাঠের বাহিরে দাঁড়াল, একটি গল্লির সামনে এসে ।

এখন কোথায় যাবে!

হাটা ধরল, ইএক্স স্কুলে আজ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে গেলে সকালের নাস্তা জুটে যাবে। রাস্তায় এখন কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েকে সেজে মাঠের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে। কেউ পাঞ্জাবী, কেউ ফতুয়া, কেউ জিন্স প্যান্ট। এসবের মধ্যে সানাউল্লাহর মন চাচ্ছে, পাঞ্জাবী পড়তে। বলেছিল বসবাকে , ওর বাবা এমন গালি দিয়েছেন, যে আত্মা কেঁপে ফেটে যাবার উপক্রম।

সানাউল্লাহ ইএক্স স্কুল এসে পৌছুলো, স্কুল তো ফাকা!

এই খানেনা অনুষ্ঠান হবার কথা!

বাসা থেকে খেলেই ভাল হত। অতি লোভে তাতি নষ্ট। লোভে পাপ পাপে দুক্ষ।

আমও গেলো, ছালাও গেলো। এখন কোথায় যাবে!

সৃতি সৌধে আসলো সানা । অনেক মানুষ, ঘন্টা খানেক ঘোরা ঘুরি করল।

দুজন ছেলে মেয়েকে দেখা যাচ্ছে, সুযোগের স্বদ ব্যবহার। কাছে গিয়ে বলল, ভাই কিছু দেন ভাই কিছু খাবো ভাই দেন না ভাই কয়টা টাকা দেন না ভাই

ছেলেটি বোধ হয় বিরক্ত হল, বলল,আমার কাছে ভাংটা নাই। পাঁচশ টাকার নোট

ভাই দেন না, ভাই খিদা লাগছে ভাই


পাশের মেয়েটি বলল, আমি দিচ্ছি, এই নাও দশ টাকা। কি করবা টাকা দিয়ে?

খাবো।

দশ টাকায় কি খাবা?

ঝালমুড়ি


সানাউল্লাহ দুটাকা দামের পাচটি মাটির পুতুল কিনলো, ওর ছোট বোনের জন্য। ওর ছোট বোনের বয়স চার বছর।

সানাউল্লাহর কাজ শেষ, বোনকে নববর্ষে কাপড় কিনে দেওয়া হয়নি বলে গতকাল কান্না করছিলো, সানা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিলো, পাশের বাড়ির মেয়েকে ওর মা একটি পুতুল কিনে দিয়েছে। কান্না থামাতে সানা বলল, তোকে পাচটা আইনা দিবো, এখন চুপ। তোরে জাহাজ কিনা দিবো

আমার উদ্দেশ্য সুন্দর একটি গল্প দেওয়া ছিলো না, যদিও আমি কিছুই লিখতে পারি না। আমার ইচ্ছা ছিলো, আজ যে প্রানী গুলো চিল্লায় চিল্লায় বলছে, আমরা আজ এক হতে পেরেছি। আমরা ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এক হয়েছি। কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্যি যে এরা সবাই প্রতারক। কেউ নারী লোভী কেউ ভোজন রসিক কেউ বা আনন্দ প্রিয়ো। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে বলে, ধনী গরিবের মাঝে একটা প্রতিযোগীতা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সানাউল্লাহর মতোন রা, ভাই দুটা টাকা দেন, বলে ছোট হচ্ছে। ইমরান সরকার রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্দলোন ডেকেছিল, আমিও ডাকবো । আমার যেদিন সামর্থ হবে , আমিও আন্দলোন করবো। বছরে একটি দিন ছুটি চাই, মাত্র একদিন, যেদিন সানাউল্লাহর মতো মানুষের সাথে আমরা মানব প্রেমিকরা আনন্দ করবো। দুটাকা যেদিন তাদের চাইতে হবে না, আমরাই দিবো। আল্লাহ্‌ আমাকে যেন সেই ক্ষমতা দেন ।থামছিনা, এখন প্রতিজ্ঞা করেন, যে আজ থেকে কেউ হাত পাতলে অন্তত খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না। যদি সম্ভব হয় সাহায্য করবেন। প্লিজ জীবনে অন্তন কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াই, আসুন। মানববাদী হই

বিষয়: সাহিত্য

১১৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File