বাবার জন্য|| শুভ্র আহমেদ
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ২২ মার্চ, ২০১৪, ১০:৫৪:৪৯ রাত
বাবাকে নিয়ে লেখা হবে, আর সেটা পাঠকদের সুভিদার জন্য ছোট করে লেখার অনুরোধ আমার কাছে অক্সিজেন নিতে নাকের ব্যবহারের মতো মনে হচ্ছে। আমি আজ বাবাকে নিয়ে কোনো গল্প লিখবো না। আমি একটি সুন্দর সুযোগ পেয়েছি, নিজের বাবা সম্পর্কে সবাইকে জানানোর। আমি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। আমার লেখা সাহিত্যে জায়গা না পেলেও, আমার লেখনীয় শ্রেষ্ঠ কিছু হবে। আমার লেখা পড়ে কারো কারো হয়তো বিরক্তের সীমা থাকবে না। তবুও বাবার সঙ্গে কাটানো কিছু সৃত্মি লিখে ব্লগ প্রকাশ করলামঃ
_ __________ ________ ________ _______________
বাবার শরীর দিয়ে শুরু করা যাক। আমার বাবা কোনো মডেল বা হিরো না। অসুন্দর। শ্যাম বর্ণ, লম্বা, একটু মোটা। চোখ লাল, মনে হয় ভয় দেখাতে চায়। আসলে তা নয়। আমার বাবা খুবই ভালো। তবে রাগি, প্রচন্ড রাগি।
আমার বয়স তখন ৫। আমরা তখন গ্রামের বাড়ী বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেখানে মাটির চুলায় রান্না করা হয়। পাতিলও সেখানেই রাখা হয়। আমি খিচুড়ি খাবো, চুরি করে।
হল না। পা চুলার ভেতরে পড়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে চিল্লাপাল্লা। আমি ভয় পেলাম।
আম্মু এসে দিলো পানি ঢেলে, সঙ্গে সঙ্গে পা ফুলে গেলো। মলম লাগানো হল। আমি তো কান্না কাটি করতে করতে অস্থির। আমার কান্না কিছুতেই থামেনা। ঠান্ডা করার জন্য সবাই বলল কি চাও!
আমি বললামঃ আব্বু।
বাবাকে ফোন করা হলো। বাবা ঢাকা থেকে বিকেল বেলা চলে আসলেন । আমি খুশী, আমার জন্য অনেক রকম ফল, বিষ্কিট আনলেন । আমার খুশীর মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে। বাবা পায়ে বাতাশ করলেন, নিজেকে অনেক আহ্লাদী মনে হল।
এখন আমি চাইলে ভিন্ন দেশেও যেতে পারি। কিন্তু বাবা-মাকে ছাড়া একদিনও থাকতে পারি না।
আমি খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতাম, তাই আমাকে গ্রামের বাড়ী রেখে আসা হল। মাঝে মাঝে অনেক কষ্ট পেতাম, নিজে নিজে কল্পনা করতাম।
ভাবতাম আমার কাছে একটি যন্ত্র আছে, যেটা দিয়ে আমি পৃথিবীর সব কিছু দেখতে পারি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমি কল্পনায় আমার বাবাকে,মাকে দেখতাম। বেশী দিন থাকতে পারিনি, পরের বছর চলে এসেছিলাম।
বাবার কথা শুনি না,মানি না । খুবই দুঃক্ষ জনক ব্যাপার। দুপুরে বললেন,"দোকানে গিয়ে একটু বোস। আমি একটু ঘুমাবো।
শুনলাম না। বাদ্ধ্য করলেন না। না" বলি ঠিকই কিন্তু পরে অপরাধ বোধ করি।
অনেক কিছু ব্যাখ্যা জেনেছি, কিন্তু বাবা কেনো আমায় ভালোবাসেন তা আজও যানতে পারিনি। হয়তো জানতে পারবোও না। বাবার সাথে প্রান খুলে এখন আর কথা হয় না।
রাগ হয়। প্রচন্ড রাগ হয়। এমন রাগ যে মনে হয় আমিই সবচেয়ে দুর্ভাগা। কখনও কোনো যায়গায় ঘুড়তে নিয়ে যান নি। কখনো স্বপরিবারে বাজার করি নি। এই ব্যাপারটা আমার খুব জঘন্য লাগে।
বাজার না করার ব্যাপারে প্রায়ই যে ব্যাপার টি ঘটে সেটা হল, বাবা জন্য অনুমান করে জামা কাপড় কিনতে হয়। কিন্তু প্রতিবারই ছোট হয়ে যায়, তিন চার বার দোকানে যেতে হয়। কষ্টটা মায়ের উপড়েই বর্তায়।
একটা ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
আমি আর বাবা যাচ্ছি, কোনো এক জায়গায় (মনে নেই)। বাবাকে প্যান্ট পড়ে যেতে হবে। জিন্স প্যান্ট, ভুল বশত ব্যাল্ট কেনা হয়নি। মেয়েরা ছেলেদের জন্য সব কিনতে পারবে, কিন্তু ব্যাল্ট কিনতে ভুলে যাবে। আমার মাও তাই করলো।
গেলাম ব্যাল্ট ছাড়াই, বাবা এই প্রথম জিন্স প্যান্ট পড়েছেন। এর আগে জর্জেট কাপড়ের প্যান্ট আর লুঙ্গী পড়তেন।
পথে কিছু দূর গেলাম, বাবা জিজ্ঞেস করলাম, খোকা দেখতো ঠিক আছে কিনা !
আমি বাবার চারপাশে একবার ঘুর পাক করে নির্বিকার কন্ঠে বললামঃ চলে আর কি! চশমা থাকলে মানাতো।
যেমন কথা তেমন কাজ। যেতে যেতে এক চশমার দোকানের সামনে এলাম। বাবা কিনবে না, আমি জোর করে দোকানে ঢোকালাম।
দু একটা পড়ালাম।
নাহ, অন্ধ অন্ধ লাগে। নেয়ার দরকার নেই। চল বরং ব্যাল্ট কিনি।
বাবা বললঃ যাহ! বোকা পোলা।
কিছুক্ষন পরপর বাবার প্যান্ট উপড়ে টানার দৃশ্য দেখার মতো দর্ষন ।
অনেক মজা করি বাবার সঙ্গে। মাঝে মাঝে বাবার মেজাজ খারাপ থাকে ।
বাবাকে বলি তোমার শ্বাশুরিকে কি আমার সাথে বিয়ে দেয়া যাবে?
বাবা কথা বলে না।
বাবা আমার একটা জিনিস পছন্দ করেন। আমাকে হাত পা টিপে দিতে বলেন। ব্যাপার টা অবৈজ্ঞানিক কিন্তু আমরা সবাই এটা মানি। বাবা অসুস্থ হলে আমি দু তিনদিন কাছে যাই না। ভালোলাগে না।কোনো অসুস্থ মানুষ আমার ভালো লাগে না। তিনদিন পর যখন সুস্থ হবেন না, আমাকে বলবেনঃ খোকা , আমার হাত পা টা টিপে দে।
অনেক বিরক্ত নিয়ে হাত পা মালিশ করে দেই। একটা ওষুধ বানিয়েছেন বাবা। সরিষার তেলের ভেতর পানি দিয়ে ইচ্ছা মতো ঝাঁকুনি দিলে সেটা ডিমের কুসুমের মতো তৈরি হবে। সেটা মাথায়, হাতে পায়ে মাখলে চূড়ান্ত তৃপ্তি। বাবাকে পরের দিন সুস্থ হতে দেখা যায়। এখানেই আমার সাফল্য।
আমার বাবা মায়ের চেয়ে বেশী ভালো রান্না করতে পারেন। রান্না মুখে নিলে, আগে খাওয়া সব বাবুর্চির নাম ভুলে যাবেন।
অল্প বয়সে বাবাকে যে পরিমান কষ্ট দিয়েছি, তার ঋণ সোধ করতে চাই না। বাবা তো বাবাই তার ঋণ সোধ করার চেষ্টা করাই পাপ। চেষ্টা করবো তাকে আর কষ্ট না দিয়ে একটু আনন্দ দিতে। একটু আনন্দই তার সাড়া জীবনের কাম্যফল।
মাঝে মাঝে কল্পনা করি, বাবা যদি চলে যায়।
আমার এই নিয়মটা অনেক খারাপ লাগে। এতো অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসা, সবার মাঝে মায়া সৃষ্টি করে আবার চলে যাওয়া আর কোনো দিনও ফিরে না আসা। কেমন ঘুর পাক। ইচ্ছা করেই এই কল্পনা করি। আমার পুরো পরিবার আমার বাবার উপড় চলে। তখন খুব কান্না পায়। অনেক বার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
বাবা একটা ছাতার মতোন। যতোক্ষন মাথার উপড় তার কৃপা আছে, ততক্ষন জীবনে কোনো বাধাই পিছিয়ে দেবে না।
এই বাবা না খেয়ে আমাকে খাওয়াবে।নিজে আরাম না নিয়ে আমাকে আরাম দিবে।
সঙ্গত কারনে এখন অনেকে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। প্রত্যেক বাবার পেছনের গল্পটি একই রকম তবে সব বাবার পরিনতি এক রকম না। এটা মোটেও ভালো কথা না।
আর কিছু বলবো না। কেউ পড়েন নি এটা অনুভব করতে পারছি। কারো ভালো লাগবে বলে লিখিনি।
বাবাকে নিয়ে লিখে পুরষ্কার যেতা নয়। আমার বাবা আরও কিছুদিন বেচে থাকবে এটাই আমার চাওয়া।
যদি কখনও পারি, চামড়া কেটে শীতের পোষাক বানিয়ে দিতে চাইবো। কিন্তু পারবো না। বাবা তো ছেলের গায়ের চামড়া সে নিবে না।
"তুমি বাবা, সত্যিই দয়ালু। তোমার দয়ার সাথে তুলনা হয়না। তুমি থেকো বাবা আরও কিছু আমার সঙ্গে।"
[শুভ্র আহমেদ]
বিষয়: Contest_father
১৫১২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যি বাবাদের মত কেউ হয় না।
১।সুভিদার
২।সৃত্মি
৩।রাগি
৩।বিষ্কিট
৪।দুঃক্ষ বাদ্ধ্য যানতে প্রান ঘুড়তে ব্যাল্ট
৫।কিছুক্ষন দর্ষন
আপনার বাবার প্রতি এত ভালবাসা! সত্যি আপনি অনেক ভাল
মন্তব্য করতে লগইন করুন