অপ্রত্যাশা -শুভ্র আহমেদ
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র আহমেদ ২১ মার্চ, ২০১৪, ০২:০৫:১৬ দুপুর
দুনিয়ার নিয়ম আমার খুবই অদ্ভুত লাগে, কেনো লাগে আমি তার কিছুই জানিনা।।
আমার কাছে এখন আর হাসি কে হাসি মনে হয় না। মনে হয় না হাসিতে কোনো অনুভূতি আছে। এক সময় ছিলো, তখন আমার মাঝে আশা ছিলো। আমার এখন কোনো অনুভূতি হয় না।
রূপা কে না বলে দিয়েছি, মিথ্যা বলেছি। বলেছি তোমাকে আর ভালোবাসি না। আমি অন্য এক মেয়েকে ভালোবাসি। সে তোমার চেয়ে সুন্দরী, আমরা সিঘ্রই বিয়ে করছি। ওর বাবা বিরাট ধনী লোক। ভদ্রলোকও আমাকে মেনে নিয়েছেন। বলেছেন আমাদের ফ্রান্সে থাকতে দেবেন। তুমি অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়। আমাকে আর পাবে না, বিদেশে চলে যাবো।
রূপার চোখ পানিতে ছলছল করছিলো। আমি সে চোখের ভাষা পড়তে পারছিলাম। চোখের পানি বলে দিচ্ছে, আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। আমি চোখ সড়িয়ে নিলাম। কারও অস্রু ভরা চোখ দুনিয়ার সবচেয়ে নির্মম দৃশ্য। সে দৃশ্য দেখার ক্ষমতা আমার কাছে নেই। অনেক বোঝানোর পর রূপা কান্না করতে করতে চলে গিয়েছিলো।
আমি সেখানে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম। ওর দিকে ঘুরে তাকানোর মতো ভুল আমি করতে চাই না।
আগে রূপার চোখে পানি এলে আমার খারাপ লাগত , কিন্তু অনুভূতি বলে আমার কোনো জিনিস আমার কাছে নেই। নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
আমার কাছে দুনিয়ার কোনো রং নেই। সবই সাদা কালো। স্বপ্নের মতো।
রূপাকে একটি ডায়েরী ভরে গাদা গাদা লিখে গিয়েছি। রূপা সাড়া জীবনই আমার জন্য অপেক্ষা করবে, আমি তা চাই না। আমি চাই ওর জীবন অনেক সুন্দর হোক।
অনেকদিন ধরেই এই কাজ গুলো করতে চাচ্ছিলাম। আর বেশী সময় না থাকায় বলে দিয়েছি। মেয়েটি খুব ভালো।
ডাক্তার বলে দিয়েছেন আর এক সপ্তাহ আমি বাচব। তিনদিন হাটা চলার সময় পাবো। বাকী চার দিন বিছানায়।
ম্যাসে থাকি। বন্ধুরা আমায় খুব ভালোবাসে বলে ওদের কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলি নি। চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ আমার কাছে নেই। বন্ধুরা জানলে এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে সাহায্য চাইতো । আমার তা প্রয়োজন নেই।
আজ সকালে জসীম এসে বললঃ আপনে সাক্ষাত ফেরেস্তা। আপনের মতো মানুষ এই জীবনে আমি দেখি নাই।
তার মুখ ভরা হাসি। জসীম ম্যাসে থাকে। আমার মতোই দরিদ্র।
এমন অনেকেই আছে যারা চায় আমি কখনও ওদের ছেড়ে না যাই। কিন্তু একজন চান না। তার চাওয়া পাওয়াই চূড়ান্ত।
আমার শরীরে বেড়ে উঠেছে বিরাট ভয়ানক রোগ। আমার কোনো দুঃক্ষ নেই। এক সময় ছিল। এওখন নেই। কেনো নেই জানি না। সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। ক্যান্সার হয়েছে আমার। টিউমার ক্যান্সার। আর দুদিন ঘুরে বেড়ানোর সময় আছে। খুবই অল্প সময়। আমি ঠিক করেছি, দুদিন না আমি পুরো ৫ দিনই এই সুন্দর পৃথিবী দেখব। আকাশ দেখব, নদী দেখব, গাছ দেখব, পাহার দেখব, বাবা-মায়ের কবর দেখব, জোৎস্না দেখব, নিঝুম পুর গা দেখব। আরও কতো কি দেখব! আমার দেখায় অবশ্যই কারো কম পরবে না।
সাদা কালো জীবনে কিন্তু একটি আনন্দ আছে। সেটা হল খুব সহজে স্বপ্ন দেখা যায়। আমি সব সময় স্বপ্ন দেখি।স্বপ্ন দেখি আমি অন্ধকারে আছি। আমার মাঝে কোনো ভয় নেই, অনুভূতি নেই। আমি চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখি। হঠাৎ আলো জ্বলে উঠে। আমি সেদিকে তাকাই। কেউ একজন অদৃশ্য আলো আগলে দাড়ায়।
কর্কশ কন্ঠে বলে " আমাদের খুব সিগগিড়ি দেখা হচ্ছে।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। তার দেখা মিলিয়ে যায়, সে চলে যায়। আমার চার পাশ আলোয় ভরে ওঠে। তবে আমার মাঝে কোনো অনুভূতি নেই।
বিষয়: বিবিধ
১১১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একদম সঠিক কথাটাই বলেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন