রেশম বা তুঁত পোকা

লিখেছেন লিখেছেন এমদাদ ২০ জুন, ২০১৪, ০৮:২১:০২ রাত

তাহলে বল, তোমাদের প্রভুর কোনসে নেয়ামত তোমরা অস্বীকার করবে ? (সুরা আর রাহমান) আল্লাহ তাআলার অগণিত নেয়ামতের মধ্যে রেশম বা তুঁত পোকা এক উত্তম নেয়ামত। রেশম পোকা, তার নিজেরই দেহ নিঃসৃত আঠা দ্বারা কত মজবুত, মোলায়েম মসৃণ ও সুন্দর সোনালি রঙের সুতা তৈরি করে, যা চিন্তা করলে হয়রান হতে হয়। অথচ মানুষ ঐ সুতা লাভ করার জন্য কত নির্দয়ভাবে সেই পোকা হত্যা করে। সেই সুতা দিয়ে মূল্যবান কাপড় তৈরি করে ব্যবসা করে এবং অর্থ রোজগার করে। নিষ্পাপ এই ক্ষুদ্র কীটটি মানুষের জন্য মূল্যবান সুতা সরবরাহ করা ছাড়া জ্ঞান ও কৌশলগত কত শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরে, সচরাচর কেউ হিসাব করে না। সুতা বানাতে গিয়ে তাকে কোন্‌ কোন্‌ পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, আর সেই বুদ্ধি হিকমতের পিছনে কোন সে মহান কুশলীর অদৃশ্য হাত কাজ করে, তা অপরিণামদর্শী লঘুচেতা ও ভাসা ভাসা জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসাব করে না। যদি ঐ কীটের সূক্ষ্ম জ্ঞান ও বুদ্ধির কথা মানুষ চিন্তা করত, তাহলে সে তার মনযিলে মকসুদ, অর্থাৎ আখেরাতের জিন্দিগির রহস্য বুঝতে পারতো, অনুধাবন করতে পারতো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোরআন হাদিসের মাধ্যমে প্রদত্ত জীবন পদ্ধতির তাৎপর্য ও উপকারিতা। সর্বোপরি জানতে পারতো সবকিছুর পিছনে দয়াময় পরওয়ারদেগারের জ্ঞান, ইচ্ছা ও হিকমত প্রচ্ছন্ন থাকার কথা এবং এর ফলে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত তার ঈমান ও সত্যপথে টিকে থাকার অবিচলতা। এবার আমরা সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঐ ক্ষুদ্র কীটের মধ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ইলহামী জ্ঞানের দিকে। মহান রব্বুল ইজ্জতের অদৃশ্য ইশারাতে ঐ পোকা খায় আঠাযুক্ত পত্রপল্লব, যেমন কুল বা বরই পাতা, তুঁত-পাতা ইত্যাদি। এসব আঠাযুক্ত পাতা তার পেটের মধ্যে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থিত আরও কিছু উপাদানের সংমিশ্রণে এই মূল্যবান সুতা তৈরি হয় এবং তাকে জীবন সঞ্জীবনী নেয়ামতের অধিকারী বানায়। এইভাবে প্রকাশ পায় তার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের করুণারাশির ঝরনাধারা। রেশম-কীট জন্ম-লগ্নে ছোট একটি পিঁপড়ার মত ক্ষুদ্র থাকে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে, বসন্ত সমাগমের সাথে সাথে দিবালোকে বেরিয়ে আসে। এ সময়ে গাছে গাছে দেখা দেয় পত্রপল্লবের কুঁড়ি ও কচি-কচি মনোরম পাতা। রেশম কীটের এই বাচ্চাগুলি ঐ তুলতুলে পাতাগুলি খেতে খেতে দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে এবং শীঘ্রই পূর্ণ পোকায় পরিণত হয়। তারপর রাব্বুল আলামিনের অদৃশ্য ইশারায় নিরাপদ বাসস্থান লাভের আশায় ঘর তৈরির দিকে তারা পারপূর্ণ মনোযোগ দেয়। সে ঘর এমনই সুপরিকল্পিত ও সুগঠিত এবং এত সুন্দর যে, দেখলে মনে হয়-এ ঘরের পূর্ণ ছবি তার নিজের মধ্যে খোদিত ছিল এবং সেটাই এখন বাস্তবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এভাবে ঘরগুলি নজরে পড়তে থাকে। এসব ঘরের মধ্যে তারা আরামে শুয়ে পড়ে এবং মুখ নিঃসৃত আঠা দ্বারা প্রস্তুত সূক্ষ্ম সুতার বেষ্টনী দিয়ে ঘরের আচ্ছাদন বাড়াতে থাকে। ঘরের একটি অংশ হাওয়া বা অক্সিজেন প্রবেশের জন্য খোলা রাখে। কবুতরের ডিমের মত ঘরের প্রস্তুতিকাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে ক্লান্ত-শ্রান্ত কীটগুলি পরিপূর্ণ বিশ্রামের জন্য নিষ্ক্রিয় হয়ে শুয়ে পড়ে। এরপর শীত মৌসুমের আগমনে কীটগুলি নিজ নিজ ঘরের মধ্যেই অদৃশ্য জগতের উদ্দেশ্যে উধাও হয়ে যায়।

কী মজার ব্যাপার ! ফেব্রুয়ারি মাসের একুশ তারিখ পড়ার সাথে সাথে, হঠাৎ করে দেখা যায়, পোকাগুলি নিজ নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে এবং তাদের বাচ্চাদেরকে ডিম থেকে বের করে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে ছেড়ে দিচ্ছে। এখন একটু চিন্তা করে দেখুন, শীত আসছে-কে পূর্বাহ্নে তাদেরকে একথা জানিয়ে দেয় যে জন্য তারা শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে তড়িঘড়ি ঘর বানাতে শুরু করে। এবং এত চমৎকার ও মজবুত কেল্লার মত ঘর বানাতে তাদেরকে কে শেখায় ! কে তাদের কে তিনটি মাস ধরে অভুক্ত অবস্থায় বাইরের আলো বাতাস থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখে ! কে দেয় তাদেরকে এ জ্ঞান বুদ্ধি ও হিকমত ! আবার ফেব্রুয়ারি মাস আসার সাথে সাথে কে তাদেরকে ঐ গভীর নিদ্রা থেকে জাগিয়ে কর্মতৎপর করে তোলে ! আসুন, ঊর্ধ্বলোকে সফরের সাথি ভাইয়েরা, এই রেশম কীটদের প্রদত্ত গায়েবি জ্ঞান সম্পর্কে একবার চিন্তা করুন এবং ভাবুন, কে নিয়ন্ত্রণ করছে আপনাকে, আমাকে, সবাইকে এবং দুনিয়ার সকল সৃষ্টিসমূহকে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

236904
২০ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৪১
নোমান২৯ লিখেছেন : অনেক কিছু জানতে পারলাম ।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে ।
236934
২০ জুন ২০১৪ রাত ১০:০২
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : অশিক্ষিত লোক মুসলমান হতে নেই। কারণ, যে আল্লাহকে জানেনা, জানার আগ্রহ নেই, সে ইসলাম গ্রহন করে সংখ্যাধিক্য ছাড়া আর কোন লাভ নেই। দুনিয়াবি জ্ঞানে বিজ্ঞরাও ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ বলেই ভাল মুসলিম নয়। ইসলাম জানার ও বুঝার। আর সেই বুঝার লোকদের জন্যই এসব নিদর্শন। ধন্যবাদ শিক্ষণীয় পোস্টের জন্য।
239197
২৬ জুন ২০১৪ রাত ০৮:১০
এমদাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ সকলকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File