১৬ই ডিসেম্বর সারেন্ডার অনুষ্ঠানে জে. ওসমানী কেন উপস্থিত ছিলেন না? চাঞ্চল্যকর তথ্য
লিখেছেন লিখেছেন তথ্য অধিকার ২৫ মার্চ, ২০১৪, ১২:২৪:২৪ দুপুর
(ঐতিহাসিক এই লেখাটি সামুতে পোস্ট দেয়ার পর প্রথমপাতা থেকে কেন সরিয়ে দেয়া হলো, তা জানিনে। ২৬ মার্চ সম্পর্কিত ইতিহাস কেন তাড়া ধাকতে চায়, বুঝে এলো না।)
গত ৬ মার্চ ‘দৈনিক যুগান্তরে’ ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম, ‘গুন্ডে ছবির রাজনীতি’ লেখার এক স্থানে একটি সাব হেডিং রয়েছে। সেটি হলো, ‘পাকবাহিনী কার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে?’ এই সাব-হেডিংয়ের নিচে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিবাহিনী এবং সারাদেশের মুক্তিকামী মানুষের নিরন্তর আঘাতে যখন পাকবাহিনী সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত, তখনি ভারত তাতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গঠিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে ‘যৌথ কমান্ড’। ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ যুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করেছে এবং বিজয় নিশ্চিত করেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল আরোরাই যৌথ বাহিনীর প্রধান হয়েছেন। উপপ্রধান হয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর প্রধান জে. ওসমানী। ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল আরোরা পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেছেন কোন পরিচয়ে? ‘যৌথ বাহিনীর প্রধান’ হিসেবে, নাকি ভারতের ‘ইস্টার্ন কমান্ডে’র প্রধান হিসেবে? এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব আমার কাছে নেই (যৌথ বাহিনীর প্রধান হিসেবেই তার স্বাক্ষর করার কথা। যদি তা না হয় থাকে তাহলে তো বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়ার উপায় নেই)।’
॥ তিন ॥
এরপর লেখা হয়েছে, ‘ওসমানী তখন কোথায় ছিলেন?’ অতঃপর বলা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে আলাপচারিতার একটি দিনের কথা মনে পড়ে। ১৯৭৮ সালের একদিন তার সঙ্গে সিলেট থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। একটা জিপের সামনের আসনে দুজন পাশাপাশি বসা। জেনারেল খুব আলাপি মানুষ ছিলেন। সারা পথ তার জীবনের নানা ঘটনা সরস ভাষায় বলে যাচ্ছেন। আমি নিবিষ্ট মনে শুনছি।
জিপটা যখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে বলে উঠলাম : ‘স্যার, একটা বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করে, একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকবাহিনী রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে তখন আপনি সেখানে উপস্থিত থাকেননি কেন?’
জেনারেল সাহেব প্রশ্নটি শুনে একটু যেন চমকে উঠলেন। কথা থামিয়ে চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যখন বলতে শুরু করলেন তখন তার গলার স্বর পাল্টে গেছে। একটু ধীরে তার স্বভাবগত ভাবগম্ভীর স্বরে ঠোঁট চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে শুরু করলেন (প্রায় দু’বছর প্রায় সর্বক্ষণ তার কাছাকাছি থাকার সুবাদে ততদিন বুঝে নিয়েছি রেগে গেলে তিনি এভাবে কথা বলেন)। বললেন, ‘ইট ওয়াজ এ ডার্টি কনসপিরেসি। আই ওয়াজ গোয়িং টু অ্যাটেন্ড দ্যাট সারেন্ডার সেরিমনি। ইট ওয়াজ ইন দ্যা প্রোগ্রাম। মাইসেলফ অ্যান্ড জেনারেল রব। উই স্টারটেড ফ্রম দিস ভেরি প্লেস কুমিল্লা। বাট ইউ নো অন দ্য ওয়ে উই আয়ার সাডেনলি আস্কড নট টু প্রসিড। ব্যাটারা অয়্যারলেসে বলেছে, পথে নাকি অসুবিধা আছে। আমরা যেন সিলেটের দিকে চলে যাই। পাইলট হেলিকপ্টার ঘুরিয়ে দিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমরা পড়ে গেলাম গান ফায়ারে। আমার পাশে জেনারেল রব গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেলেন। আল্লাহর রহমতে শাহ জালালের দোয়ায় আমার গায়ে একটা গুলিও লাগেনি...।’ বলেই আবার চুপ হয়ে গেলেন (স্মৃতি থেকে যথা সম্ভব তার কথাগুলো তার বাচন ভঙ্গিতে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিছু ডট ডট আছে। সব কথা বলা যায় না)। লক্ষ্য করলাম, রাগে তিনি গর গর করছেন। আমি চুপ করে থেকে মনে মনে সেই হেলিকপ্টারের দৃশ্যটা কল্পনা করতে থাকলাম।
ফেরদৌস কোরেশী, জেনারেল ওসমানীর উদ্ধৃতিতে, তার (জেনারেলের) সারেন্ডার অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ বর্ণনা করেছেন। জেনারেলকে বহনকারী হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করা হয়। ওই হেলিকপ্টারের আরেকজন আরোহী জেনারেল আব্দুর রব আহত হন এবং রক্তাক্ত হন। সৌভাগ্যক্রমে ওসমানীর গায়ে কোন গুলি লাগেনি। এখানে কিছু ফাঁক রয়েছে। সেই ফাঁকগুলো ফেরদৌস কোরেশী পূরণ করেননি। যে হেলিকপ্টারটি ঢাকার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে উড্ডয়ন করেছিল সেটিকে সিলেটে যাওয়ার জন্য কে বা কারা নির্দেশ দেয়? নির্দেশ অনুযায়ী গতিপথ পরিবর্তন করে হেলিকপ্টারটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। তাহলে মাঝপথে কে বা কারা ওই হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করে? এই ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার আজ পর্যন্ত চেপে রেখেছে কেন? এই সব আমাদের কোন প্রশ্ন নয়। যারা পঞ্চাশোর্ধ্ব, তাদের সকলের মনকে এই প্রশ্নটি দারুণভাবে আলোড়িত করে এবং আগামী দিনগুলোতেও আলোড়িত করতেই থাকবে।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর আমি কপি মারলে আপনার কী---হি হি--
তথ্য অধিকার লিখেছেন : এভাবে প্রচার করলেই এদের দমন করা যাবে? দরকার সম্মিলিত প্রতিরোধ এবং মুখোশ উন্মোচন/
ভাই আমার মত আপনিও LAX সাবানের ADD দিতে থাকেন,
জনতার একদিন ঘুম ভাংবেই,
মন্তব্য করতে লগইন করুন