ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নামে আর কত অপচয়: হাতুড়ে ডিজিটাল দেশ!!

লিখেছেন লিখেছেন আইন যতো আইন ২৫ মে, ২০১৪, ১০:১০:৫২ রাত



রাজধানীর যানজট নিরসনে কত যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা হিসেব করে বের করা কঠিন। তবে অসংখ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে এবং এখনও চলছে। আর এর পেছনে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাননি নগরবাসী। বরং তাদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।

উন্নত বিশ্বের মতই রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে ট্রাফিক সিগনাল লাল, হলুদ আর সবুজ বাতি। সেই বাতি অনুসরণ করে যানবাহন চলার কথা। শুরুতে রাজধানীর গাড়ি চালকরা এই নিয়ম অনুসরণ করেছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এই নিয়ম অনিয়মে পরিণত হয়। ফলে চালকরা বাতি অনুসরণ করছেন কিনা তা পাহারা দেয়ার জন্য মোতায়েন করতে হয় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের এই উপস্থিতির কারণে চালকরাও বাতি অনুসরণ করা ভুলে যান এবং অনুসরণ করতে থাকেন পুলিশের হাতের ইশারা আর হুইসেলের শব্দ। এক সময় পুলিশও সড়কের ওপর গাড়ির চাপ বুঝে হাত আর হুইসেল দিয়ে সংকেত দিতে থাকেন, যার সাথে সংকেত বাতির কোন সম্পর্ক থাকে না।

এ অবস্থায় একদিকে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করে অর্থ ব্যয় হতে থাকে অন্যদিকে সংকেত বাতি জ্বালিয়েও বিদ্যুতের অপচয় হতে থাকে। পথচারি পারাপারের জন্যও সংকেত বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছিল ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ। এ বাতিগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে কি না তা পাহারা দেয়ার জন্যও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে সড়কে। কিন্তু বাস্তবে এর কোন ব্যবহার হয়নি। এখনও নগরীর কয়েকটি সড়কে পথচারি পারাপারের সংকেত বাতি দেখা যায় যেগুলো কেউই অনুসরণ করেন না।

বর্তমান সরকার পাঁচ বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় নয়, সংকেত বাতি দেখে যানবাহন চলাচলের জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই নির্দেশ দেয়ার পরও গাড়ির চালকরা তা অনুসরণ করছেন কিনা তা দেখার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে পাহারা দিতে হয়েছে। তবে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে কিনা তা কারো জানা না থাকলেও সংকেত বাতি কিন্তু এখন আর অনুসরণ করা হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায়ই রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে শুরু করা হয়েছিল লেন অনুসরণের ব্যবস্থা। বলা হয়েছিল, কেউ লেন পরিবর্তন করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। কোন চালক লেন পরিবর্তন করছেন কিনা তা দেখার জন্যও বহু ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ছিলেন টহল পুলিশ। সেই ব্যবস্থাও আর বেশি দিন টিকেনি।

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক পদক্ষেপই নেয়া হয়েছে এগুলোর কার্যকারিতা যাচাই বাছাই না করেই। পরবর্তিতে তা বাতিল করতে হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সংকেত বাতির সাথে যুক্ত হয়েছে কাউন্ট ডাউন পদ্ধতি। কিন্তু এই কাউন্ট ডাউন পদ্ধতি সম্পর্কে রাজধানীর চালকরা যেমন অবগত নন তেমনই ওইসব পয়েন্টে কর্তব্যরত খোদ ট্রাফিক পুলিশও তা অনুসরণ করছেন না। অর্থাৎ কাউন্ট ডাউন পদ্ধতিটিও কার্যকর হয়নি।

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ‘প্রতিরোধ ডিভাইস’; উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু শুক্রবার (২৩ মে) পরীক্ষামূলকভাবে একটি প্রতিরোধ ডিভাইস স্থাপনের পরদিনই তা প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। উল্টো পথে চলা গাড়ির চাকা এই ডিভাইসের মাধ্যমে ফুটো হওয়ার কথা থাকলেও সঠিক পথে চলা গাড়ির ডিভাইসও নষ্ট হয়েছে। আর এই ডিভাইস পাহারা দিচ্ছেন একজন সার্জেন্টসহ পাঁচ জন ট্রাফিক পুলিশ।

রাজধানীর হেয়ার রোডে স্থাপিত ডিভাইসটির অনেকগুলো কাঁটা এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। বাঁকা হয়ে গেছে আরও অনেকগুলো কাঁটা। ট্রাফিক পুলিশ বলছেন, এই ডিভাইসের ওপর দিয়ে গাড়ি সঠিক পথে চালালেও দ্রুত চালাতে হবে। ধীর গতিতে কিংবা গাড়ি থেমে থাকলে চাকা ফুটো হতে পারে।


এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর আগেই কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেনি যে, যানজটের নগরী ঢাকার কোন সড়ক দিয়ে সব সময়ই দ্রুত গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে সঠিক পথে যান চলাচল করতে গিয়েও যানজটের কারণে থেমে গিয়ে চাকা খোয়াতে হতে পারে।

রাজধানীতে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার নামে এমনই হাজারো পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এর পেছনে শুধু কোটি কোটি টাকা অপচয়ই হচ্ছে না; মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ অপচয় এবং মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার অনুমতি এদেশের জনগণ কাউকেই দেয়নি।

হাতুড়ে ডাক্তার-কবিরাজ যেমন রোগ হাতড়িয়ে মরে, তেমনি আমাদের ডিজিটাল হচ্ছে-ট্রাফিক পুলিশের হাতে এবং দুইহাতে হাতড়িয়ে মরাতেই বিদ্যমান? পৃথিবীর কোথাও এমন সিস্টেম নেই অটো সিগন্যাল পদ্ধতি ব্যতীত।

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১২৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

226216
২৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৪৪
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : সমস্যার গভীরে না গিয়ে এনারা ঠুনকো কাজে মাথা খাটাচ্ছে। আসলে মাথামোটা সরকার হলে যায় হয়।
২৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৪৯
173190
আইন যতো আইন লিখেছেন : সহমত। পিলাচ |
226234
২৫ মে ২০১৪ রাত ১১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেকগুলি ট্রাফিক লাইট ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করে মানুষকে ঠেকিয়ে টাকা আদায় করাও ট্রাফিকপুলিশ এর অন্যতম ব্যবসা!!!
রাস্তায় কাঁটা বসানও বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এই কাঁটাকে কিভাবে ফাঁকি দেওয়া যায় তা জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ম্যাকগাইভার এর এক পর্বে দেখান হয়েছিল।
২৫ মে ২০১৪ রাত ১১:৪০
173205
আইন যতো আইন লিখেছেন : আমার মনের কথাই লিখেছেন!
226296
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৪:১৯
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাটপার, মন্ত্রী চোর সে দেশে হিসেব দেবে বা নেবে কে। ধন্যবাদ।
২৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৭
173440
আইন যতো আইন লিখেছেন : হায় হায় গাকাগাল ভালো নয়

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File