থানায় মামলাগ্রহণে অস্বীকৃতিঃ ওসি'র ক্ষমতা !!
লিখেছেন লিখেছেন আইন যতো আইন ০২ মে, ২০১৪, ০৫:০২:১৮ বিকাল
ফৌজদারি অপরাধের খবরসংগ্রহ, মামলারুজু, তদন্ত ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেশের আইন থানার অফিসার-ইন-চার্জ/ওসিকে প্রভূত ক্ষমতাদান করেছে। কোন অপরাধের খবরের ভিত্তিতে থানার অফিসার-ইন-চার্জ মামলা রুজু করবেন, কোনটা অবহেলা করবেন বা উপেক্ষা করবে ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার সুবিবেচনা প্রয়োগের সুযোগ আপাতত সীমিত মনে হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তা সীমাহীন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারা অনুসারে কোন ধর্তব্য অপরাধের মৌখিক খবর থানায় এলেও থানার অফিসার-ইন-চার্জ তা মামলা আকারে রেকর্ড করতে বাধ্য। [১] জনশ্রুতি, গুজব ইত্যাদির পার্থক্য নির্ধারণে তিনি কিছুটা সময় ব্যয় করতে পারেন, কিন্তু তাই বলে তিনি মামলাগ্রহণে অস্বীকার করতে পারেন না।
কোন মামলারুজুর পর অফিসার-ইন-চার্জ সেই মামলার তদন্ত নাও করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৭(বি) ধারা এবং পিআরবি (পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল) এর ২৫৭ নম্বর প্রবিধান[2] [৩] থানার অফিসার-ইন-চার্জকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু ধর্তব্য অপরাধের খবর পেলে তার প্রেক্ষিতে নিয়মিত একটি মামলা রেকর্ড করা তার জন্য বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে মামলারেকর্ড অস্বীকার করলে তিনি আইনের সুস্পষ্ট ধারালঙ্ঘণ করে বিভাগীয় এমন কি ফৌজদারি মামলাতেও জড়িয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু মামলা তদন্ত অস্বীকার করে তা রেকর্ড করাটাও তার আইনগত প্রাধিকার।
বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে থানার বাইরে কোন ফৌজদারি জিআর মামলা রুজু হয় না। তবে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে পিটিশন মামলা করা যায়। আদালত সেই মামলা সরাসরি আমলে নিয়ে প্রসেস ইসু করতে পারেন। কিংবা তিনি তা নিয়মিত মামলা রুজুর জন্য থানায় পাঠাতে পারেন। পিআরবি এর ২৫৪(এ) প্রবিধান অনুসারে আদালত কর্তৃক প্রেরিত পিটিশনকে অফিসার-ইন-চার্জ সরাসরি এজাহার হিসেবেই গণ্য করবেন[৪]।
তবে ধর্তব্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতে সরাসরি আমলে নেওয়া মামলার সংখ্যা অতি নগণ্য। ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের প্রতিবেদনের বাইরে বিচারকার্য চালিয়ে যেতে আদালতের তেমন কোন অসুবিধা নাও হতে পারে। তিনি পুলিশের কাছে তদন্তের পরিবর্তে কোন অভিযোগের অনুসন্ধান নিজে বা তার অধিনস্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এমন কি অন্য কোন ব্যক্তিকে দিয়েও করাতে পারেন। কিন্তু জঘন্য প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত পুলিশের প্রতিবেদনকে গুরুত্ব না দিয়ে পারেন না।
অন্যদিকে থানাপুলিশ মানুষের যত কাছে থাকে, আদালত ততোটা কাছে নয়। পুলিশের কাছে সরাসরি যাওয়া যায়, কিংবা পুলিশ ভুক্তভোগীদের কাছে চলে আসে। কিন্তু আদালতে একা একা যাবার উপায় নেই।কিংবা আদালতে নির্দিষ্ট স্থানের বাইরেও কার্য পরিচালনা করে না। ফলে আদালতের সেবা পেতে গেলে উকিল ধরতে হয়, মুহুরিদের কাছে ধর্ণা দিতে হয়। একটি ফৌজদারি মামলা রুজুর ক্ষেত্রে তাই নিঃসন্দেহে আদালতের চেয়ে থানাপুলিশ নাগরিকদের কাছে অনেক বেশি সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয়ী।
মূলতঃ থানা ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার প্রবেশদ্বার। থানার মাধ্যমেই ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার অন্যান্য অঙ্গসমূহ কার্যকর হয়। কোন অপরাধের প্রেক্ষিতে থানায় মামলারুজু হলে আদালত অপরাধ সম্পর্কে অবগত হয়। আদালতের বিচার্যবিষয় তাই ঠিক করে দেয় থানা পুলিশই। কোন বিচারপ্রক্রিয়ায় বাদী, আসামী, সাক্ষী, আলামত, সাক্ষ্যপ্রমাণ সবকিছুই শনাক্ত করে দেয় থানাপুলিশই। আদালতের নির্দেশ তা সমন, ওয়ারেন্ট বা অন্য কোন প্রকারেরই হোকনা কেন, থানাপুলিশের মাধ্যমেই কার্যকর হয়।
কিন্তু থানাপুলিশ, বিশেষ করে থানার অফিসার-ইন-চার্জ যখন ইচ্ছে করে ভুক্তভোগীকে উপেক্ষা করেন, কিংবা অন্য কোন কারণে অপরাধের খবর গোপন রাখেন, তখন ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় মানুষের প্রবেশ অত্যন্ত সীমীত হয়ে পড়ে। মানুষের বিচারের পথকে রুদ্ধ করা বা সংকীর্ণ করার একটি অন্যতম সহজ পথ হচ্ছে অফিসার-ইন-চার্জ কর্তৃক মামলা রুজু করতে গড়িমসি করা বা মামলা রুজু করতে অস্বীকার করা।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলায় একজন কিশোরী মেয়ে একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পাশের বাসার এক যুবকের লালসার শিকার হয়। যুবকটি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে দৈহিক মিলনে লিপ্ত হওয়ায় মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু যুবকটি পরে সেই গৃহকর্মী কিশোরীকে বিবাহ করতে অস্বীকার করে। মেয়েটি থানার স্মরণাপন্ন হয় কিন্তু থানা মেয়েটির মামলা নিতে অস্বীকার করে।
পরবর্তীতে মেয়েটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যূনালে যায়। ট্রাইব্যূনাল তার অভিযোগ গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য থানার অফিসার-ইন-চার্জ এর কাছে পাঠান। থানা ট্রাইব্যূনালের অভিযোগটি গ্রহণ করে ২০১২ সালের জুন মাসে। কিন্তু থানার অফিসার-ইন-চার্জ সেই পিটিশন অজ্ঞাত কারণে ফেলে রাখেন। অভিযোগকারী নিতান্তই দরিদ্র মানুষ মেয়েলোক্, তাই হয়তো থানার ওসি গায়ে লাগায়নি। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যূনালেরও কোন খবর ছিলনা। কেননা, বিচারপ্রার্থী দরিদ্র হলে সে ট্রাইব্যূনালের কৃপালাভের যোগ্য হয়না। দিনের পর দিন পড়ে থাকে থানায় এই পিটিশন, ভুক্তভোগী নানাজনের দ্বারে ধর্ণা দেয় কিন্তু কোন কাজ হয় না।
ইতোমধ্যে ভিকটিম একটি সন্তানের জন্ম দেয় এবং কয়েক মাস জীবিত থেকে সেই শিশুটি মারাও যায়। ভিকটিম থানায় দৌড়াদৌড়ির একপর্যায়ে থানার অফিসার-ইন-চার্জ এর মনে করুণার উদ্রেক হলে তিনি অবশেষে একবছর পরে ট্রাইব্যূনালের পিটিশনের প্রেক্ষিতে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করেন। কিন্তু ততোদিনে মামলার সবচেয়ে বড় আলামতটি নষ্ট হয়ে গেছে। কেননা গর্ভের সন্তানটির সাথে আসামীর ডিএনএ'র নমুনার তুলনা করলেই প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত হতো যে আসামীই প্রকৃতপক্ষে গর্ভসঞ্চারণের জন্য দায়ী কিনা। যাহোক, এখনও সেই সম্ভাবনা সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়নি। কেননা, মৃত সন্তানের শরীরের হাড়গোড়ের নমুনাসংগ্রহ করা সম্ভব হলে তাও ডিএনএ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। তবে সেই শিশুর মৃতদেহটি কবরে আছে কিনা তাই বা কে জানে?
২০০৭ সালে মাগুরা জেলার শালিখা থানায় এই জাতীয় একটি মামলার আমি তদন্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলাম। গর্ভবতী ভিকটিমের সন্তানপ্রসবের কিছুদিন পর মারা গেলে তা কবরস্থ করা হয়। পরে আদালত কর্তৃক ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি সংগ্রহ করা হলে লাশের ডিএনএ নমুনাসংগ্রহের প্রচেষ্টাকালে দেখা গেল যে, সেই কবরে শিশুর লাশটি আর নেই। আসামী লাশটি অন্যত্র সরিয়ে আলামত ধ্বংস করেছে। এক্ষেত্রেও যে এমনটি ঘটবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়?
এখন প্রশ্ন হলো, আদালত থেকে কোন পিটিশন যদি ২০১২ সালের জুন মাসে থানায় আসে আর সেই পিটিশনের প্রেক্ষিতে নিয়মিত মামলা রুজু করা ২০১৩ সালের জুলাই মাসে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বিচার পাবেন কিভাবে? থানাপুলিশের এই ইচ্ছাকৃত অবহেলার কোন সুরাহা আমরা করতে পারি কিনা বা আইনে বা পিআরবিতে আছে কিনা?।
মূল সমস্যা মূলতঃ এখানেই যে, মামলা রুজুর ক্ষেত্রে থানার অফিসার-ইন-চার্জকে যে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার মনিটরিং বা তত্ত্বাধানের প্রক্রিয়াটি কাঙ্খিত মাত্রায় শক্তিশালী নয় এবং মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। কেননা থানায় কতটি মামলা রুজু হচ্ছে, কতটি মামলার তদন্ত করা হচ্ছে বা সম্পন্ন হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় নিয়মিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতে পারলেও থানায় কোন মামলাটি গ্রহণ করা হয়নি, বা কোন লোকটি প্রয়োজনীয় সেবা পাননি এবং কেন পাননি, তার নিয়মিত রিপোর্টিং এর কোন ব্যবস্থাই নেই। কী সাংঘাতিক কথা তাইনা! যুগ যুগ ধরে এমন অপনিয়মের মাধ্যমে ওসি'র স্বেচ্ছাচারিতা বা থানায় সেবাবঞ্চিতদের রিপোর্ট ঊর্ধ্বতনদের কাছে না পৌছানোটা কি অস্বাভাবিক নয়? তবে এক্ষেত্রে কোন ভুক্তভোগী যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দারস্থ হয়ে তার বঞ্চনার কথা বলতে পারেন, তবে থানার অফিসার-ইন-চার্জকে কিছুটা চাপের মধ্যে রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু কেউ সার্কেল এএসপি বা পুলিশ সুপারের কাছে না এলে তাদের কিছু করার থাকে না।
অবশ্য বিকল্প হিসেবে থানাপুলিশের কাছ থেকে বঞ্চিত হয়ে ভুক্তভোগীরা আদালতের শরণাপন্ন হতেপারেন। সেখানে গিয়ে তারা থানাপুলিশ কর্তৃক মামলা না নেয়ার অভিযোগও করেন। কিন্তু আদালত বা ট্রাইব্যূনাল এর প্রেক্ষিতে থানাপুলিশের প্রতি কোন প্রসেস বা শাস্তমূলক পদক্ষেপ জারি করেছেন বলে শোনা যায়না। বরং আদালত কর্তৃক থানায় প্রেরিত মামলাগুলোর ভাগ্যে কী ঘটল আদালতের সেই বিষয়টির খোঁজ নেওয়ার মতোও সময় সুযোগ হয়না যদি না বাদী থানায় তাগাদাপত্র দেয়ার আবেদন করে। এক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতার চেয়ে আদালতের উদাসীনতার মাত্রাও কোন অংশেই কম নয়।
আমাদের বিচারব্যবস্থা কিভাবে চলছে আর কোন গতিতে চলছে এই ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। থানাপুলিশ, থানার ঊর্ধ্বতন তত্ত্বাবধানকারী অফিসসমূহ এবং আদালত বা ট্রাইব্যূনাল প্রত্যেকেই সমভাবে উদ্যোগী না হলে আমাদের অসহায় মানুষগুলো বিশেষ করে নারী ও দরিদ্রগণ বিচারব্যবস্থার কোন কার্যকর সেবাই পাবেন না, যাদের থানায় তদবীর করা বা ঘুষ দেয়ার আবার থানায় মামলার তাগাদাপত্র দেয়াসহ উকিল-মুহরীর খরচ চালানোর সামর্থ্যই নেই?
সমাধানঃ
থানার অফিসার-ইন-চার্জের খামখেয়ালীপূর্ণ আচরণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বর্তমানে দুইটি পথ চালু আছে। (১) এদের প্রথমটি হল, মামলা নিতে অস্বীকার করার দায়ে আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা বা ফৌজদারি ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশ করা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক স্বতঃপ্রণোদিত রুল ইসু করা। কিন্তু দুঃখজনক যে, আদালত এই বিষয়টি কেন যে ভুলে যান?
(২) অন্য ব্যবস্থাটি হল, থানাপুলিশের ওপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধান আরো নিবিড় করা। এক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা, ওপেন হাউজ ডে'র মতো মতবিনিময় সভার আয়োজন করা যেতে পারে। পুলিশের নিজস্ব শৃঙ্খলারক্ষা কার্যক্রম যেমন, ডিসিপ্লিন বিভাগ, পুলিশ ইন্টারন্যাল অভার সাইট ইত্যাদির কার্যক্রম নিবিড়তর করে অন্যান্য বিভাগীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের সাথে সাথে থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করার খবরও সংগ্রহ করা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে পুলিশ সুপারগণ তার ডিএসবি স্টাফদের মাধ্যমে থানার মামলাগ্রহণে অস্বীকৃতির খবরগুলো সংগ্রহ করতে পারেন এমনকি নিজেও ঝটিকা সফর করে পুলিশের মামলার রেজিষ্ট্রার চেক করতেও পারেন। অথবা থানায় আগতদের কাছে গণশুনানীও নিতে পারেন এবং থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ বক্স স্থাপন করেও সহজেই এর সমাধান করতে পারেন।
অধিকন্তু ভুক্তভোগীদের কষ্টলাঘবের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে থানার বাইরে সার্কেল অফিস বা পুলিশ সুপারের অফিসে এমন একটি বিধান চালু করা উচিত যাতে ভুক্তভোগীরা থানার বাইরেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন অফিসে মামলা রুজুর আবেদন করতে পারেন এবং সেই আবেদন থানায় পাঠানো হলে তার প্রেক্ষিতে নিয়মিত মামলা রুজু করা যেন অফিসার-ইন-চার্জ এর উপর বাধ্যতামূলক হয়। ( কৃতজ্ঞতাঃ জনাব মোঃ আব্দুর রাজ্জাক)
আরো আইন জানুন
বিষয়: বিবিধ
১১৮৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই ছবিগুলো মনে হয় বাংলাদেশের না ।
বাংলাদেশের পুলিশ নিয়ে পোস্টে এদের ছবি দেবার মাজেজা কি ?
বাংলাদেশের পুলিশেরা অনেক কষ্টে পশ জায়গায় পোস্টিং নেয় । এটা টিকিয়ে রাখতেও তাদের অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন