মাদকঃ আইন রক্ষাকারী বাহিনী কি তা রুখতে সক্ষম?

লিখেছেন লিখেছেন ইব্রাহিম খলিল আমিদ উরফে মশি ১৪ মার্চ, ২০১৪, ০৯:১৪:৩৮ সকাল

প্রথমেই দুটি ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করি।

প্রথম ঘটনাটি আজ থেকে ২ বছর আগের। গেন্ডারিয়া রেল স্টেষনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হটাৎ চোখে পরল একটি বস্তি গলির মাঝ খানে একটা নোংরা শরীর সম্পন্ন ব্যাক্তি বসে আছে। ট্রেন আসতে অনেক দেরি। তাই কৌতুহল বসত লোকটির কাছে যাই। ওমা! গিয়ে দেখি লোকটি ড্রাকস নিচ্ছে। ব্যাপারটি দেখার সাথে সাথে আমি রেল ওয়ে পুলিশকে জানাই। এতে উপস্থিত পুলিশ নিরব ভুমিকা পালন করে। তার কথা হল, ''ব্যাক্তিটি ধ্বংস হয়ে গেছে এমনিতেই। আর ঐ লোকটি ধ্বংস হলে কিছুই আসে যায় না!!'' অনেক ক্ষন কর্তব্যবরত পুলিশটিকে বুঝিয়ে সক্ষম হই যে, ''মাদক আসক্তরা দেশকে অনেক আংশে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ধ্বং হচ্ছে তো পরিবেশ এবং সমাজকেও ধ্বংস করছে। তাই আপনার পদক্ষেপ নেয়া উচিত।'' এভাবে বুঝানোর পর পুলিশ লোকটি আমাকে বলে তোমার ট্রেন চলে আসছে তুমি যাও। আমি ব্যাপারটা দেখছি। এই বলে তিনি ''রৌদ্রে শুকাতে দেয়া ধান খাওয়া কাক লড়াতে!'' স্টাইলে মাদকাশক্তটিকে দৌড়ানি দেয়। এতে মাদকাশক্তটি বিন্দু মাত্র সংকুচ না করে ওখান থেকে সরে যায়। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। আর ধীর্ঘ শ্বাস ছেরে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, ''হয় পুলিশ বিভাগে কিছু লোক আছে এরকম। কিন্তু অনেকেই হয়তো মাদকের বিরোধ্যে।

উপরের ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পরে আমি যে চিন্তা ভাবনাটা করেছিলাম তা যে মিথ্যা তা প্রমানিত হয় কিছু দি আগেই।

বসন্তের বিকেলটা ছিল অসাধারন। কয়েকজন মিলে গুন্টিঘরের দিক দিয়ে কমলাপুর রেল স্টেষনের অভিমুখে হাটছিলাম। আবহওয়াটা যতটুকু সুখকর ঐ এলাকার পরিবেশটা ততটুকু সুখকর ছিল না। জায়গাটি যেন মাদকের আড্ডা। আমার ভাবতেই অবাক লাগলো যে এমন একটা পাবলিক প্লেসে তারা অনবরত মাদক গ্রহন করে যাচ্ছে। তাদের সংখ্যাটা আমাদের তুলনায় বেশি হওয়ায় তেমন কিছুই করতে পারলামনা তাদের বিরোধ্যে। ফিরে আসার সময় আশার আলো ফিরে পেলাম। একজন বন্দুক ধারী পুলিশকে হাতের কাছে পেয়ে তার দিকে দৌরে গিয়ে অনুরোধ করলাম মাদক আসক্তদের বিরোধ্যে যেন কিছু করে। কিন্তু প্রথম বারের মত এবারো বিথা গেলাম আমি। আর আমার চিন্তা চেতনাও ভুল প্রমানিত হল। কোনো আইন রক্ষাকারী বাহিনী মাদক নিধনে প্রকৃত পক্ষে কাজ করছে না দেখে সত্যি অবাক হলাম। অবাক হলাম বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা দেখে।

সে যাই হোক। হয়তো কেউ এখন প্রশ্ন করবেন উক্ত ঘটনা গুলো বর্নণা দেয়ার কারণ গুলো কি? কেনই বা আমি ঘটনা গুলো বললাম। মূলত প্রথম কারণটা হচ্ছে, ''আজ মতিঝিল শাপলা চত্বর দিয়ে আশার কালে দেখতে পেলাম একটা ব্যানার টাইপ জিনিসে লেখা 'পুলিশ সপ্তাহ!' আর নিচে কত গুলো নিয়ম-নীতি, বুলি কথা। প্রথম কথাটাই ছিল, ''মাদকের বিরোধ্যে সবাই রুখে দাড়ান। মাদককে না বলুন!''

কথাটির অর্থবহ এবং প্রয়োজনীয় হলেও সমাজে তার মূল কতটুকু আমি নিজেও জানিনা। কেননা যে আইন বানিয়ে নিজেই আইন ভাঙ্গে। সেই আইন অন্য কেউ মানবে না সেটাই স্বাভাবিক। আর দ্বিতীয়ত, সমাজের একজন স্বনির্ভরশীল চিন্তার অধিকারী নাগরিক হয়ে সমাজের মিথ্যা, অপরাদের বিরোধ্যে রুখে দাড়ানোটাই আমার উদ্দেশ্য।

এখন আসি মূল টপিকে। বর্তমান সমাজে মাদককে রুখতে কার বেশি ভুমিকা পালন করা উচিত প্রশ্নে অবশ্যই উত্তর আসবে 'জনগনের।' কিন্তু আমার ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। কেননা জনগণ চাইলেই সব কিছু পরিবর্তন করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ আইনের প্রয়োগ। যা এক মাত্র পারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কিংবা পুলিশরা। কারণ নীতি কথায় আছে, ''যা সরলতা দিয়ে হয়না তা জোর দিয়ে হয়, ক্ষমতা প্রয়োগ করে হয়।'' আজ যদি আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিষয়টিকে আরো একটু গুরুত্বের সাথে দেখতো তাহলে হয়তো আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ঝুকে পরত না। কিন্তু এই ব্যাপারটি সম্পুর্ণ রুপে পুলিশরা এরিয়ে যাচ্ছে। মাদকের আখরা রেল ওয়ে পুলিশ গুলো সর্বদায় এই ব্যাপারটিকে নিয়ে অবহেলায় মত্ত আছে। তারা কখনোই চেষ্টায় থাকেনা মাদক গ্রহন কারীদের শাস্তির ব্যাপারে। উল্টো যদি কয়েকটাকে ধরেও ফেলে তাদেরকেও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আর যতটুকু জানলাম এই সব মাদক ব্যবসা চালানোর কাজে প্রায় ৫০% সাহায্য পুলিশরা করে থাকে। যদি এই হয় মাদকের সাথে পুলিশের সম্পর্ক তাহলে মাদক গ্রহন কারীর পরিমানটা আগামি ৫ বছরে এর দ্বিগুন হবে।

এখন মাদক নির্মূল করার জন্য প্রথমেই চাচ্ছি আইনের হস্তক্ষেপ। যার মাধ্যমে মাদক গ্রহনকারীকে শাস্তির সাথে সাথে মাদকের বিরোধ্যে চিকিৎসা দান এবং এই মাদক নিতে কেউ যদি তাদের উৎসাহ করে কিংবা পুলিশ বাহিনী বা অন্যান্য আইন রক্ষাকারী বাহিনী যদি কমপ্লিন আসার পরেও ব্যবস্থা না নেয় তাহলে যেন সরকারের পক্ষ থেকে ঐ আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের বিরোধ্যে সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করে।

আর যদি অবশ্যই প্রত্যেকটা ব্যক্তি মাদকের বিরোধ্যে যায়। মাদককে না বলার শ্লোগানকে সামনে রেখে সত্যিকার অর্থে মাদক বিরোধী কার্যক্রম গুলো সফল করে তাহলে অবশ্যি আগামি বাংলাদেশ হবে মাদক মুক্ত। তরুণ সমাজ হবে বিশুদ্ধ মাদক মুক্ত।

বিষয়: বিবিধ

১১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File