ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী (পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আসাদুল ইসলাম ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৫৭:০৩ রাত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। শান্তি অবতীর্ণ হোক হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর।
আজকে আপনাদের এমন একজন ব্যক্তিত্বকে পরিচয় করিয়ে দিব যে পাশ্চত্যের চাকচিক্যময় পপ জগৎ ছেড়ে খৃস্ট ধর্ম বদলে শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে নিজের আশ্রয় খুজে নিয়েছেন। তাই প্রতিপদে তাকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার। তবু তার জনপ্রিয়তা কমেনি একদমই। চালিয়ে যাচ্ছেন ইসলামের সৌন্দর্য প্রচারে নিরলস কর্মযজ্ঞ।
■ ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী:
১৯৭৬ সালের ছোট একটি দূর্ঘটনা বদলে দেয় তার সারাটা জীবন। ঘটনার দিন আমেরিকার ম্যালিবু বিচে সাতার কাটতে যেয়ে প্রায় ডুবতে বসেছিল। তখন সে মৃত্যু ভয়ে চিৎকার করে উঠে,
“Oh God! If you save me I will work for you.”
বলতে না বলতেই অপ্রত্যাশিত উল্টো একটি ঢেউ তাকে তীরে আছড়ে ফেল ! এই ঘটনার পর থেকে ক্যাট স্টিভেন্সের মনে আমূল পরিবর্তন আসে। পাশ্চাত্যের জড়বাদী জগতের পিছনে না দৌড়ে মনের শান্তি এবং আধ্যাত্মিক সত্যানুসন্ধানের দিকে ঝুঁকে পরেন। শুরুতে বৌদ্ধ ধর্ম, জেন, রাশিফল, অ্যাস্ট্রলজি, নিউমারলজি, টেরট কার্ড ইত্যাদি তুলনামুলক বোঝার চেষ্টা শুরু করেন। আবার স্টিভেন্সের ভাই ডেভিড গর্ডন জেরুজালেম ঘুরতে যেয়ে ভাইয়ের জন্য একটি পবিত্র কোরান নিয়ে আসেন। ধারনা করা হয় এই সময় থেকেই ক্যাট স্টিভেন্সের ইসলামকে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। এমন সময় ছুটিতে স্টিভেনস মরোক্কো ঘুরতে যেয়ে প্রথম আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে অভিভূত হয়ে পরেন। জানতে চান, "এটা কিসের শব্দ?" উত্তরে জানতে পারেন, "এটা আজান, ঐশ্বরীয় বার্তা। যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে মুসলমানদের মসজিদ মুখে আহ্বান করা হয়।" স্টিভেন্স ভাবেন, জীবনে টাকার জন্য গান করতে শুনেছি, গান হয়েছে খ্যাতির জন্য.. ক্ষমতা.. কিন্তু ঐশ্বরিক গান? জীবনেও শুনি নি! অসাধারন কনসেপ্ট!
পবিত্র কুরআন পড়ে ক্যাট স্টিভেন্স এত অভিভূত হন যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে সার্বিক গবেষণা ও পড়াশুনা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “পবিত্র কুরআনের যে দিকটি সব কিছুর আগে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হল এ মহাগ্রন্থের কভারের ওপর লেখকের কোনো নাম ছিল না। এ উপহার ছিল এমনই মূল্যবান সম্পদ যে তা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে।
যাই হোক,শুরু করলাম কুরআন অধ্যয়ন। যতবারই এ মহাগ্রন্থ পড়তাম ততবারই প্রশান্তি অনুভব করতাম। মনে হত এ কুরআন যেন আমার জন্যই লেখা হয়েছে, তাই বার বার পড়েও তৃষ্ণা মিটত না। পবিত্র কুরআন পড়ে বুঝতে পারলাম যে ইসলামই হল সেই ধর্ম যার সন্ধান আমি করছিলাম। কারণ, আমার মনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি এ মহান ধর্মে।
পবিত্র কুরআন আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে কল্পনার চেয়েও অনেক গুণ বেশি। আমি বুঝতে পারলাম যে কুরআনের শাশ্বত বাণী নাজেল হয়েছে গোটা মানব জাতির চিরন্তন সৌভাগ্যের জন্যই। এ মহাগ্রন্থের বাণী খুবই সহজ ও স্পষ্ট। কুরআনের শব্দগুলো আমাকে খুবই বিস্মিত করে। এ পর্যন্ত জীবনে যত বই পড়েছি তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বা ব্যতিক্রমধর্মী লেগেছে এ মহাগ্রন্থ।
পবিত্র কুরআন পড়ার আগে পার্থিব জীবনকে আমার কাছে এক দুর্বোধ্য রহস্য বা ধাঁধা বলে মনে হত। এ বিশ্ব জগতের যে একজন স্রস্টা রয়েছেন তা বিশ্বাস করতাম। কিন্তু জানতাম না এই যে স্রস্টা যাকে চোখে দেখা সম্ভব নয় তিনি কে। এটা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ঠিক যেন এমন এক নৌকার অবস্থায় ছিলাম যা উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু যখন পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলাম তখন অনুভব করলাম যে এ বই যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। এভাবে এ মহাগ্রন্থের বাণীর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে পড়েছিলাম।”
পবিত্র কুরআন অধ্যয়নের পর ধীরে ধীরে ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে নিজ জীবনের ওপর প্রয়োগ করছিলেন ক্যাট স্টিভেন্স। মশগুল হতে থাকেন আল্লাহর ইবাদতে। মদ, ক্লাব ও পার্টি—এসব পাপপুণ্য অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলছিলেন। অবশেষে গ্রহণ করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম। এভাবে ক্যাট স্টিভেন্স পরিণত হন ইউসুফ ইসলামে।
ইউসুফ নামটি যোসেফ নামের আরবি রূপ। এই নামটি বেছে নেয়া প্রসঙ্গে সাবেক ক্যাট স্টিভেন্স বা নও-মুসলিম ইউসুফ ইসলাম বলেছেন: “আমি সব সময়ই যোসেফ নামটি পছন্দ করতাম। যে স্কুলে আমি প্রথম ভর্তি হই ও পড়াশুনা করেছিলাম সেই স্কুলটির নাম ছিল সেন্ট যোসেফ। অবশ্য এই নাম বেছে নেয়ার মূল কারণটি হল কুরআনের সুরা ইউসুফ অধ্যয়ন। এই সুরা দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে আমার মনকে।”
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ইউসুফ ইসলাম মুসলমানদের প্রথম কিবলা অধ্যুষিত বায়তুল মুকাদ্দাস শহর সফর করেন। এই পবিত্র শহর সফরের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “এই পবিত্র স্থানে আমার ভাইয়ের জিয়ারতের সুবাদেই আমি সুপথ তথা ঈমানের সম্পদ পেয়েছি। মসজিদুল আকসা জিয়ারতের সময় যারা আমাকে নও-মুসলিম হিসেবে সনাক্ত করে ফেলে তারা আমার চার দিকে জড় হয়। আমি এই মসজিদে নামাজ পড়লাম ও অনেক কাঁদলাম। হায় আলকুদস! এ পবিত্র স্থান মুসলিম বিশ্বের হৃৎপিণ্ড। যতদিন এ হৃৎপিণ্ড অসুস্থ থাকবে ততদিন গোটা মুসলিম বিশ্বই অসুস্থ থাকবে। এই মসজিদুল আকসাকে দখল মুক্ত করা আমাদেরই দায়িত্ব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাতিগুলো যদি কুরআন ও এর শিক্ষার আলোকে চলে তাহলে কুদস মুক্ত হবে। আসলে ফিলিস্তিন সংকট কেবল ফিলিস্তিনি জাতির সংকট নয়। বরং গোটা মুসলিম বিশ্ব এই সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
সাবেক পপ তারকা ইউসুফ ইসলাম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে সঙ্গীতের একটি অ্যালবাম রচনা করেছেন। তার কাছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সব সময়ই শান্তির প্রতীক বা আদর্শ বলে মনে হয়। নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম মনে করেন ইসলাম এমন এক ধর্ম যা অন্য সব ধর্মের কাছেও শান্তি ও সমঝোতার প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছে। তিনি বলেছেন, “বিশ্বনবী (সা.) নিয়ে রচিত সঙ্গীতের (সিডি) অ্যালবামটিতে আমি গোলাপ ফুলের সুঘ্রাণ দিয়েছি। তাই সিডিটি খোলার সাথে সাথেই শ্রোতা সুগন্ধ পান। এটা করার কারণ, গোলাপ ফুল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র অস্তিত্বের প্রতীক। আমি চাই শ্রোতারা যখন এই অ্যালবামের গান শুনবেন তখন যেন তারা এ মহামানবের প্রতীকী সুঘ্রাণ অনুভব করেন।”
নও-মুসলিম ইউসুফ ইসলাম এখন ইসলামী জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর প্রয়াস চালাচ্ছেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি কিছু দিন গান গাওয়া ও রেকর্ড করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিয়ে করার পর তিনি ব্রিটিশ মুসলিম সমাজের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। পপ তারকা হিসেবে তার বার্ষিক আয় ছিল দেড় মিলিয়ন ডলার। তার জমানো সেইসব অর্থ ও ভবিষ্যৎ আয়কে লন্ডন ও অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষার কাজে ও অন্যান্য দাতব্য খাতে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মানব-দরদি শান্তি মিশন নিয়েও দেশে দেশে সফর করছেন সাবেক ক্যাট স্টিভেন্স। পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে তার সফর।
এটা সত্য মুসলমান হওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের শীর্ষস্থানীয় পপ তারকার পদটি এখন আর তার দখলে নেই, কিন্তু যা তিনি পেয়েছেন তা হল সবচেয়ে বড় সম্পদ তথা ঈমান ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি।
ইউসুফ ইসলাম এর ওয়েব সাইট -- http://www.yusufislam.com/
-- লিখাটি আইআরআইবির লিখা থেকে নেওয়া।
collected by:
https://www.facebook.com/ISLAM.GROHONER.KAHINI
বিষয়: বিবিধ
২৩৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন